In this Article
পালং শাক একটি সবুজ সবজি এবং খুব স্বাস্থ্যকর হিসাবে বিবেচিত হয়। পালং শাক খাওয়া ক্যান্সার প্রতিরোধে, রক্তচাপের স্তর হ্রাস করতে এবং চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এই শাকগুলি এমনকি গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থ্যের জন্য প্রচুর উপকার করতে পারে। আপনি যদি গর্ভবতী হন তবে আপনি এটি ভালভাবেই জানেন যে আপনার শিশুর স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য আপনাকে সবকিছু স্বাস্থ্যকর জিনিস খেতে হবে। পালং শাক হল এমন একটি সবজি যা আপনাকে গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত, আরো বেশি পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে। গর্ভাবস্থায় পালং শাক কিভাবে আপনার ও আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী হতে পারে তা জানতে এই নিবন্ধটি পড়ুন।
পালং শাকের পুষ্টির তথ্য
পালং শাকের একটি পরিবেশনে (১০০ গ্রাম) আপনাকে নিম্নলিখিত পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে।
পুষ্টির উপাদান | প্রতি ১০০ গ্রামে মাত্রা |
ক্যালোরি | ২৩ ক্যাল |
প্রোটিন | ২.৩ গ্রাম |
শর্করা | ৪ গ্রাম |
ফ্যাট | ০ গ্রাম |
আয়রন | ৩ গ্রাম |
ফলিক অ্যাসিড | ১৯৪ মাইক্রোগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৯৯ মিলিগ্রাম |
পুষ্টির এই উপাদানগুলি ছাড়াও পালং শাক বিভিন্ন ভিটামিন, যেমন- ভিটামিন এ, বি, সি; ফসফরাস, সোডিয়াম, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামে পূর্ণ হয় – এইগুলি গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের বৃদ্ধি এবং বিকাশে প্রধান ভূমিকা পালন করে।
গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা
পালং শাক খুব স্বাস্থ্যকর এবং অনেক পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে। গর্ভাবস্থার ডায়েটে কেন এটি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত তা এখানে জানুন।
১. শিশুর জ্ঞানীয় বিকাশে সহায়তা করে
পালং শাক ফলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উত্স (এটি ফোলেট বা ভিটামিন বি৯ নামেও পরিচিত), যা গর্ভবতী মহিলার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়, কারণ এটি গর্ভপাত রোধ করে। এটি ভ্রূণের মেরুদণ্ড এবং জ্ঞানীয় বিকাশে অবদান রাখে। আয়রনের সমৃদ্ধ উত্স হওয়ায় পালং শাক লাল রক্তকণিকা তৈরিতে সহায়তা করে, ফলে রক্তাল্পতার ঝুঁকি হ্রাস পায় যা গর্ভাবস্থায় একটি সাধারণ সমস্যা।
২. মেজাজ ভালো রাখতে সহায়তা করে
পালং শাক ভিটামিন বি-এর উপস্থিতি গর্ভাবস্থায় আপনার মেজাজ উন্নত করতে সহায়তা করে। আপনি যদি সকাল বা বিকেলে খুব বেশি খারাপ মেজাজ অনুভব করেন, তবে আপনার ডায়েটে কিছু পালং শাক যোগ করার বিষয়ে বিবেচনা করুন। আপনার মস্তিষ্ক এবং শরীর আপনাকে এর জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ জানাবে। পালং শাক খাওয়া হতাশা এবং মানসিক চাপ ও উদ্বেগ রোধ করতে সহায়তা করে।
৩. হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে
ক্যালসিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য এবং দাঁতগুলির সঠিক বিকাশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান। আপনি পালং শাকে ১০০ গ্রাম পরিবেশনায় প্রায় ৯৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাবেন। হাড়ের বিকাশের পাশাপাশি ক্যালসিয়াম ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং স্নায়ু / পেশীগুলির কার্যকারিতাও উন্নত করার জন্য দায়ী।
৪. কোলেস্টেরলের মাত্রা ব্যালেন্স করতে সহায়তা করে
ভিটামিন ই গর্ভাবস্থায় ফ্রি র্যাডিক্যাল ক্ষরণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, আপনার দৃষ্টিশক্তি উন্নতি করতে এবং আপনার দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা ভারসাম্য করতে সহায়তা করে। সর্বোত্তম ভিটামিন ই পেতে গর্ভাবস্থায় সিদ্ধ করা শাক খেতে পারেন।
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
গর্ভাবস্থায়, আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হবে, তবে আপনার গর্ভে বেড়ে ওঠা ছোট্টটি বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সুরক্ষা প্রয়োজন। ভাগ্যক্রমে, পালং শাকগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে এবং রোগ প্রতিরোধে উপকারী বলে পরিচিত। গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার মাধ্যমে আপনি সাধারণ সর্দি এবং ঘন ঘন অসুস্থতাকেও বিদায় জানাতে পারেন। পালং শাক হজমে সহায়তা করবে!
৬. রক্তচাপের স্তর নিয়ন্ত্রণ করে
পালংশাকে থাকা নাইট্রেট শরীরে রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পরিচিত। গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ একটি সাধারণ সমস্যা, তবে আপনার গর্ভাবস্থার ডায়েটে পালং শাককে অন্তর্ভুক্ত করে আপনি রক্তচাপের স্তর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। পালং শাকের উচ্চ পটাসিয়াম সামগ্রী আপনার রক্তচাপকে কমাতে এবং এটিকে স্বাভাবিক স্তরে আনতে সহায়তা করে।
৭. দৃষ্টিশক্তি উন্নতি করতে সহায়তা করে
পালং শাক ভিটামিন বি১ এবং ভিটামিন বি২-এর সমৃদ্ধ উত্স। এই দুই ভিটামিন ভ্রূণের স্নায়ুতন্ত্রের দৃষ্টিশক্তি উন্নত এবং বিকাশের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে। আপনার গর্ভাবস্থায় ডায়েটে ভিটামিন বি১-এর অভাবকে ‘পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি’ হিসাবে অভিহিত সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে। ভিটামিন বি২ দেহের অভ্যন্তরে প্রজননের টিস্যু এবং অঙ্গগুলির বিকাশে সহায়তা করে। তাই আপনার ডায়েটে পালং শাককে অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে বি ভিটামিন গ্রহণ করুণ। তবে, একা এই শাকই আপনাকে সমস্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করবে না, আপনাকে আপনার ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত মাল্টিভিটামিন গ্রহণ করতে হবে। এই ভিটামিন ট্যাবলেটগুলি আপনার শিশুর সুস্বাস্থ্য এবং সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করবে।
৮. ত্বক উজ্জ্বল করে
পালং শাক প্রোটিনের একটি ভাল উত্স। কোষগুলি মেরামত করতে, দেহে অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরি করতে এবং ত্বক, পেশী এবং হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রোটিন প্রয়োজন। এবং পালং শাক আপনার প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তার কিছুটা পরিমাণে পূরণ করতে পারে। তাই স্বাস্থ্যবান থাকার জন্য এই সবুজ শাকটিকে আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করুন।
গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
পালং শাক খুব স্বাস্থ্যকর এবং গর্ভাবস্থার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, তবে এটির নির্দিষ্ট কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আপনি যদি খুব বেশি পরিমাণে এই শাক সেবন করেন তবে নিম্নলিখিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
১. কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেট ফাঁপা
পালং শাকে ডায়েটরি ফাইবার বেশি থাকে এবং আমাদের দেহ উচ্চ পরিমাণে ফাইবার গ্রহণের সাথে অভ্যস্ত হতে সময় নেয়। যদি আপনার পেট উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবারে অভ্যস্ত না হয় তবে আপনি অত্যধিক পালংশাক খেলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, পেট ফাঁপা এবং পেটে খিঁচুনি হতে পারে। এই সমস্ত সমস্যাগুলি আপনার গর্ভাবস্থাকে আরও অস্বস্তিকর করে তুলতে পারে।
২. ডায়রিয়া
হ্যাঁ, আপনি যদি আপনার ডায়েটে খুব বেশি পালং শাক অন্তর্ভুক্ত করেন তবে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। পালং শাকের মতো হাই-ফাইবার ভিত্তিক খাবার গ্রহণ করা আপনার হজমশক্তিকে সঙ্কটের মধ্যে ফেলতে পারে, যার জন্য ডায়রিয়া বা ঘন ঘন মলত্যাগের কারণ হতে পারে। পালং শাক অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার পরে ডায়রিয়ার পাশাপাশি জ্বর এবং পেটে ব্যথা হতে পারে।
৩. কিডনিতে পাথর
পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ‘পিউরিনস’ থাকে যা একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের যৌগ যা আমাদের দেহের অভ্যন্তরে ইউরিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয় যখন খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়। প্রচুর পরিমাণে ইউরিক অ্যাসিড আমাদের হাড়ের জয়েন্টগুলিতে ক্যালসিয়াম ছড়িয়ে দেয় এবং কিডনিতে পাথরের বিকাশের দিকে পরিচালিত করে। এগুলি ছাড়াও পালং শাকগুলিতে প্রচুর পরিমাণে অক্সালিক অ্যাসিড থাকে যা ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্ষরণের কারণ হয়। আপনার শরীরে কিডনিতে পাথর তৈরি রোধ করতে মাঝারিভাবে পালংশাক গ্রহণ করুন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. আপনার গর্ভাবস্থার ডায়েটে আপনার কতটা পালংশাক অন্তর্ভুক্ত করা উচিত?
গর্ভবতী থাকাকালীন, আপনি আপনার গর্ভাবস্থার ডায়েটে আধ কাপ পালং শাক অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। নিশ্চিত করুন যে আপনি এর পরিমাণ সীমিত রাখছেন, নাহলে গর্ভাবস্থায় জটিলতা দেখা দিতে পারে।
২. গর্ভাবস্থায় আমি কি পালং-এর সালাদ খেতে পারি?
হ্যাঁ, আপনি গর্ভাবস্থাকালীন পালং শাকের সালাদ খেতে পারেন যতক্ষণ আপনি নিশ্চিত থাকেন যে আপনি তাজা পালং শাক এবং সেগুলিতে দাগ বা ফুটো নেই। এছাড়াও, আপনার সালাদে পালং শাক যুক্ত করার আগে সেগুলি ভালভাবে ধুয়ে নিন এবং স্যালাড টাটকা অবস্থায় খান।
যদিও সমস্ত গর্ভাবস্থার অসুস্থতা রোধের জন্য পালং শাকই আপনার একমাত্র সবজি নয়, এটি আপনাকে গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত এবং আরও বেশি পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে যা আপনার প্রয়োজন হবে। আপনি যদি গর্ভাবস্থায় পালং শাক যোগ করার কথা বিবেচনা করছেন এবং আপনি নিয়মিত কোনো ওষুধ খান, আপনার কতটা পালং শাক খাওয়ার অনুমতি রয়েছে সে সম্পর্কে আপনার ডায়েটিশিয়ানের সাথে কথা বলুন। অল্প অল্প করে এটি আপনার ডায়েটে যোগ করুন, এবং আপনি ধীরে ধীরে এর সুবিধাগুলি লক্ষ্য করবেন।