গর্ভাবস্থায় স্তনের ব্যথা: কারণ, প্রভাব এবং প্রতিকার

গর্ভাবস্থায় স্তনের ব্যথা

গর্ভাবস্থায়, একজন মহিলা শারীরিক এবং মানসিক উভয় ক্ষেত্রেই অনেক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যান। স্তনগুলিতে সবচেয়ে লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটে। একজন গর্ভবতী মহিলা যখন বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য প্রস্তুত হন, তখন দেহ হরমোনগুলি নিঃসরণ করতে শুরু করে, যা স্তনের সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করে এবং সম্ভবত ব্যথাও ঘটায়। এই নিবন্ধটি আপনাকে গর্ভবতী হওয়ার সময় আপনার স্তনগুলি যে পরিবর্তনগুলির মধ্যে দিয়ে যায় সে সম্পর্কে আপনাকে জানায়।

গর্ভাবস্থায় স্তনে ব্যথা অনুভব করা কি সাধারণ?

স্তন কোমল হয়ে যাওয়া বা ব্যথা হওয়া গর্ভাবস্থাকালীন একটি সাধারণ অবস্থা, কারণ স্তনগুলি বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য প্রস্তুত হয়। স্তনের ব্যথাও গর্ভাবস্থার অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ। আপনি যখন আপনার গর্ভাবস্থার প্রায় 3 থেকে 4 সপ্তাহের মধ্যে থাকেন তখন স্তনের ব্যথা হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় স্তন ব্যথার কারণগুলি

গর্ভাবস্থায় স্তন ব্যথার কারণগুলি

 

স্তনের ব্যথার প্রাথমিক কারণ হ’ল ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি। স্তনের ভিতরে চর্বির স্তর আরও ঘন হয়, দুধের গ্রন্থিগুলির নালীগুলির সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং এই অঞ্চলে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এটি আপনার স্তনগুলিকে ভারী এবং বৃহত্তর করে তোলে, ব্যথা ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে।

গর্ভাবস্থায় স্তন ব্যথার প্রভাব

গর্ভাবস্থায়, স্তনগুলি আকার এবং আয়তনে পরিবর্তিত হয়। ক্রমবর্ধমান কোমলতার সাথে সংবেদনশীলতা বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে এবং এমনকি আপনার স্তন সংলগ্ন পোশাকের উপর সাধারণভাবে হাত বোলালেও চরম ব্যথা হতে পারে। নিম্নলিখিত পরিবর্তনগুলি লক্ষণীয় হবে:

1. স্তনবৃন্ত

আপনার ত্বকে টান পড়ার জন্য এবং প্রসারিত হওয়ার কারণে, আপনার স্তনবৃন্তগুলি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে সামনে এগিয়ে আসতে পারে।

2. এরিওলা

স্তনবৃন্তগুলির চারপাশের ত্বক এরিওলা নামে পরিচিত এবং এটি আগের চেয়ে আরও গাঢ় রঙের হয়ে উঠতে পারে। আপনি আশা করতে পারেন যে এরিওলাতে দাগ দেখা যাবে এবং আকারে বাড়বে। এরিওলা ঘিরে আপনি যে ব্রণগুলি লক্ষ্য করবেন তা হ’ল ক্ষুদ্র ঘামগ্রন্থি (যা মন্টগোমেরি টিউবারকলস নামেও পরিচিত) যা পুরো অঞ্চলটিকে তৈলাক্তকরণ করে।

3. শিরা

আপনার স্তনের চারপাশের ত্বক যেহেতু ক্রমবর্ধমান চর্বি এবং দুধের নালীগুলিকে জায়গা দেওয়ার জন্য জন্য নিজেকে প্রসারিত করে, আপনি সেখানে নীল শিরার একটি বিশাল জালি দেখতে পাবেন। এই শিরাগুলি শিশুকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং অপরিহার্য তরল সরবরাহ করে। আপনার স্তনগুলি আপনার গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে অস্বাভাবিক দ্রুতভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে অথবা গর্ভাবস্থা শেষ হওয়ার পথে এগোতে থাকলে আকারে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি যদি আপনার প্রথম গর্ভাবস্থা হয়, তবে আপনি নিজের কাপের আকারের উর্ধ্বমুখী পরিবর্তন আশা করতে পারেন। আপনি যদি এই পর্বটি মিস করে থাকেন তবে আপনার শিশু আসার পরে আপনার স্তনগুলি প্রসারিত হবে।

গর্ভাবস্থাকালে স্তনের ব্যথা থেকে মুক্তি

স্তনের কোমলতা বা ব্যথা গর্ভাবস্থায় বিশেষত প্রথম ত্রৈমাসিকে বেশ সাধারণ। স্তনগুলি পুরো গর্ভাবস্থায় আকার পরিবর্তন করতে থাকে এবং আপনার শিশুর প্রথম খাবার কোলোস্ট্রাম উৎপাদন করার সময় আকার পরিবর্তন বন্ধ করে দেয়। গর্ভাবস্থায় স্তনের ব্যথার জন্য প্রতিকার অবলম্বন করা ছাড়াও আপনার সঙ্গীকে আপনার অস্বস্তি সম্পর্কে অবহিত করা ভাল, যাতে তিনি যৌনতার সময় এবং আলিঙ্গনের সময়ও যথেষ্ট সতর্কতা ও সংযম রাখতে পারেন।

আপনি দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের দিকে যাওয়ার সাথে সাথে আপনার স্তনের কোমলতা বা ব্যথা ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে। ততদিন পর্যন্ত, নীচের পরামর্শগুলি আপনাকে পরিস্থিতি সামলে নিতে সহায়তা করবে:

  • হাঁটার বা ঘুমানোর সময়ও স্তনের ব্যথা একটি অস্বস্তিকর সমস্যা হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং, আপনার স্তনগুলিকে আরামে রাখতে একটি প্রসূতি ব্রা বা জিম ব্রা কিনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। নিখুঁত ফিটিংযুক্ত ব্রা পেতে, আপনি কোনও স্টোর বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে পারেন।
  • আপনার স্তন ক্রমাগত আকার পরিবর্তন করার কারণে আপনার গর্ভাবস্থায় একাধিকবার ফিটিংয়ের প্রয়োজন হতে পারে।
  • তারযুক্ত ব্রা এড়িয়ে চলুন কারণ এগুলি অস্বস্তি ঘটাতে পারে।

প্রাকৃতিক ঘরোয়া প্রতিকার

  • গর্ভবতী মহিলাদের স্তন ব্যথার অন্যতম সাধারণ ঘরোয়া প্রতিকার হ’ল জল খাওয়ার পরিমাণ বাড়ানো। জল ধরে রাখা স্তনের ফোলাভাব এবং বেদনাকে বাড়িয়ে তোলে। দিনের বেলা পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা অতিরিক্ত জল এবং হরমোনগুলিকে বের করে দিতে সহায়তা করবে। আপনি আপনার জলে আদা বা লেবু যোগ করতে পারেন, কারণ এটি ফোলাভাব এবং ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে।
  • কিছু সময়ের জন্য ডায়েটে সোডিয়াম গ্রহণ কম করলে স্তনের ব্যথা মোকাবিলা করতে সহায়তা করে। তবে রক্তের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য নুনের ব্যবহার অপরিহার্য, তাই কোনও উল্লেখযোগ্য ডায়েটারি পরিবর্তন করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
  • ফাইবারের একটি দুর্দান্ত উৎস, শণবীজ স্তনের ব্যথা হ্রাস করার জন্য পরিচিত। জল, ফলের রস বা দইয়ের সাথে এক টেবিল চামচ শণবীজের সুক্ষ্ণ গুঁড়া মিশিয়ে খেলে খুব আরাম পাওয়া যায়। আপনার ডায়েটে ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ খাবার যুক্ত করাও গর্ভাবস্থায় স্তনের ব্যথা লাঘব করতে পারে।

ওটিসি ওষুধ

অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন এবং নেপ্রোক্সেনের মতো অ্যাসিটামিনোফেন যুক্ত এবং স্টেরয়েডহীন প্রদাহরোধী ওষুধগুলি ব্যবহার করে আপনি গর্ভাবস্থায় স্তনের ব্যথা উপশম করতে পারেন। এগুলি প্রেসক্রিপশনবিহীন ওষুধ, তবে এই ওষুধ খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের সাথে চেক করা সর্বদা ভালো।

গর্ভাবস্থায়, আপনার শরীর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাবে। মানসিক চাপ, ব্যথা ও শারীরিক পরিশ্রম এড়াতে ভুলবেন না এবং সাহায্য চাইতে কোনো দ্বিধা করবেন না।