In this Article
গর্ভাবস্থা হল আপনার গর্ভদশার শুরু থেকে পরিণতির দিকে ক্রম অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে প্রতি মাসেই আপনার গর্ভস্থ ক্রমবর্ধিত ছোট্টটিকে স্বচক্ষে দেখার এবং নিজ বাহুদ্বয়ের মাঝে তাকে আলিঙ্গন করে ধরার এক অভূতপূর্ব উত্তেজনার সাথে এগিয়ে চলার এক অতি মনোরম অভিজ্ঞতার যাত্রাপথ।যাইহোক, তবে গর্ভাবস্থা আবার আপনার শরীরেও বহুবিধ পরিবর্তন নিয়ে আসে, যার মধ্যে কিছু সময়ের সাথে সাথে শেষপর্যন্ত ম্লান হয়ে যায় এবং কিছু আবার চিরতরে স্থায়ী রয়ে যায়।গর্ভাবস্থার একটি অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ হল আপনার স্তনের পরিবর্তন।এই সময় দুধ উৎপাদন এবং শিশুকে স্তন পান করানোর জন্য ক্রমে প্রস্তুত করতে দেহের মধ্যে কিছু হরমোনীয় পরিবর্তন ঘটার কারণে স্তনগুলি আকারে বড় হয়ে ওঠার পাশাপাশি অ্যারিওলা এবং স্তনবৃন্তগুলিও আরও বড় হয়ে ওঠে এবং ক্রমশ আরও গাঢ় হতে শুরু করে।
যাইহোক, এই সকল পরিবর্তনগুলি আপনার স্তন অবনমিত হয়ে যাওয়া বা ঝুলে যাওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে।প্রতিটি মহিলাই সুঠাম এবং দৃঢ় স্তনের অধিকারিণী হয়ে উঠতে চান, কিন্তু সেই স্তনগুলিই সাধারণত দমে যায় বা অবনমিত হয়ে পড়ে সন্তান প্রসবের পরে এবং বাচ্চাকে স্তনপান করানোর সময়।প্রসবের পরে স্তনের এই অবনমিত হয়ে যাওয়া এবং সেটি কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় সে ব্যাপারে আপনার যা কিছু জানা উচিত এখানে আলোচনা করা হলঃ
ব্রেস্ট টোসিস বা স্তন অবনমিত হয়ে পড়া ব্যাপারটা আসলে কি?
গর্ভাবস্থা পরবর্তীতে মহিলাদের মুখোমুখি হওয়া একটি অন্যতম সাধারণ সমস্যা হল ব্রেস্ট টোসিস বা স্তন অবনমিত হয়ে যাওয়া বা ঝুলে যাওয়া।সাধারণত বার্ধক্য, গর্ভাবস্থা, সন্তান প্রসব অথবা অত্যধিক ওজন হ্রাসের কারণে স্তন অবনমিত হতে পারে।এটি প্রতিটি মহিলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে সুস্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে।আপনার স্তনকে দৃঢ়তা প্রদানকারী লিগামেন্টগুলিই আপনার গর্ভাবস্থায় প্রসারিত হতে থাকে এবং অবশেষে সেটির কারণেই তা অবনমিত হয়ে পড়ে।
স্তনের এই অবনমিত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা কি অনিবার্য?
আমাদের দেহ বয়সের সাথে সাথে তার স্থিতিস্থাপকতা হারায়।সুতরাং আপনি কখনও গর্ভবতী না হয়ে থাকলেও এই অবনমিত হয়ে যাওয়া বা ঝুলে পড়ার ব্যাপারটা কিছুক্ষেত্রে অনিবার্য হতে পারে।তবে গর্ভাবস্থায়, আমাদের স্তন প্রসারিত হয় এবং পূর্ণ ও ভারী হয়ে ওঠে।এটি প্রতি গর্ভাবস্থার পরবর্তীতেই স্তন অবনমিত হয়ে যাওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে।গর্ভাবস্থার পরবর্তীতে স্তন অবনমিত হয়ে যাওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণটি হল হরমোনীয় পরিবর্তনগুলি।
এটি ছাড়াও ব্রেস্ট টোসিস বা স্তন অবনমিত হওয়ার জন্য অবশ্যই আরও কিছু কারণ আছে, সেগুলি হল ধূমপান করা, বার্ধক্য, খুব শীঘ্র অতি মাত্রায় ওজন হ্রাস, অতিরিক্ত ওজনলাভ, জীবনযাত্রার পছন্দগুলি, অনুশীলনের অভাব ইত্যাদি।
এক্ষেত্রে এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলি আপনি গর্ভধারণের আগে, অন্তঃসত্ত্বাকালে এবং গর্ভাবস্থার পরবর্তীতে করতে পারেন, যা আপনার স্তনের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।স্তনের অবনমিত হয়ে পড়া প্রতিরোধ করতে এর টিপস এবং কৌশলগুলি জানার জন্য আরও পড়ুন।
গর্ভাবস্থার পরবর্তী স্তন অবনমিত হয়ে যাওয়াকে কীভাবে প্রতিরোধ করা যেতে পারে
তাহলে গর্ভাবস্থার পরবর্তীতে কীভাবে স্তনের অবনমিত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটিকে এড়ানো যেতে পারে? এখানে এমনই কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করা হল যা গর্ভাবস্থার পরবর্তীতে স্তনের অবনমন হওয়া থেকে প্রতিরো্ধের ক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন।
1.আপনাকে অবশ্যই এমন একটি ব্রা ব্যবহার করতে হবে যা আপনার স্তনের পাশাপাশি আপনার স্তনের আশেপাশের অঞ্চলটিকে বেশ ভালমত সমর্থন দেয়।
2.ভিতর এবং বাইরে–দু‘ভাবেই হাইড্রেট থাকুন।প্রতিদিন কমপক্ষে 8 গ্লাস মত জল পান করুন।সোডা এবং কফি জাতীয় পানীয়গুলি থেকে দূরে থাকুন কারণ এগুলি আপনার ত্বককে শুষ্ক করে তুলতে পারে যা এটিকে অবনমিত হয়ে ওঠার প্রবণতাকে আরও বেশি বাড়িয়ে তোলে।হাইড্রেটিং ময়েশ্চারাইজার দিয়ে নিয়মিতভাবে প্রতিদিন আপনার ত্বককে ময়েশ্চারাইজার করার ব্যাপারটিকে নিশ্চিত করুন।
3.গর্ভধারণের পূর্বে, অন্তঃসত্ত্বাকালে এবং গর্ভবস্থার পরবর্তীতে একটা সুষম আহার বজায় রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।যতটা সম্ভব আপনার স্বাস্থ্যকর এবং জৈব আহার গ্রহণ করার ব্যাপারটিকে নিশ্চিত করুন।এমনকি গর্ভাবস্থার পূর্বেও ডায়েটিং করার মত খেপামিগুলি পারতপক্ষে এড়িয়ে চলুন কারণ ডায়েটং চালু–বন্ধ করার ব্যাপারটি আপনার পুষ্টি হরণ করার জন্য পরিচিত, যা শেষ পর্যন্ত পরিণাম হিসেবে আপনার স্তনের স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস করবে এবং সেটি অবনমিত হয়ে যাবে।
4.গর্ভাবস্থার পরবর্তীতেই ওজন হ্রাস করার জন্য দয়া করে হুড়োহুড়ি করবেন না কারণ এটি আপনার স্তনের ঝুলে যাওয়া বা অবনমিত হয়ে যাওয়ার প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
5.এছাড়াও আপনি আবার একটি ডিম, অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী এবং মধু মিশ্রিত একটি মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন যা আপনার স্তনকে হাইড্রেট রাখার পাশাপাশি সেটিকে দৃঢ় করে তুলবে।
6.নিয়মিত অনুশীলন করা দৃঢ় স্তনের জন্য এবং স্তন ঝুলে পড়া বা অবনমিত হওয়া প্রতিরোধ করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।অবনমিত স্তনের জন্য অনুশীলন যেকোনও সময়েই করা যেতে পারে, এমনকি আপনার গর্ভাবস্থাকালেও, তবে এটি শুরু করার যতটা আগে সম্ভব আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করে নেওয়াই শ্রেয়।
স্তন অবনমিত হয়ে যাওয়া প্রতিরোধের ব্যায়ামগুলি
এই ব্যায়ামগুলি অনুশীলন করলে তা আপনার পেশীগুলিকে টান টান রাখে এবং স্তনের অবনমন হওয়া বা ঝুলে পড়া অথবা কুঁচকে যাওয়া প্রতিরোধ করে।এটি কার্যকর করার জন্য, আপনাকে নিম্নলিখিত ব্যায়ামগুলির প্রতিদিন কমপক্ষে 20 বার করে পুনরাবৃত্তি করতে হবে।
1.বাহু প্রসারণ
আপনার মাথার উপরে আরামদায়কভাবে যতটা সম্ভব উঁচু করে আপনার বাহুদ্বয় প্রসারিত করুন এবং আপনার হাতের তালু দু‘টি জোড় করুন।এই ভঙ্গিমাটি 20 সেকেণ্ড বজায় রাখুন এবং তারপর ধীরে ধীরে আপনার বাহুদ্বয় নীচের দিকে নামিয়ে আনুন।
2.ওয়াল বা প্রাচীর পুশ–আপস
প্রাচীর বা দেওয়াল থেকে বাহুর দৈর্ঘ্যে দাঁড়ান এবং আপনার হাতগুলিকে আপনার কাঁধের উচ্চতায় সোজা দেওয়ালের উপর রাখুন।এখন আপনার পা দু‘টিকে আরামদায়কভাবে পরস্পরের থেকে একটু পৃথক করে সরিয়ে রাখুন।এবার দেওয়ালের বিপরীতে 10 টি পুশ–আপস করুন(ঠিক মেঝেতে পুশ–আপস করার অনুরূপই)।
3.বক্ষ চাপ
এটি করার জন্য আপনার ডাম্বেল নেওয়ার প্রয়োজন হবে(এছাড়াও এর জন্য আপনি আবার এক লিটার জলের বোতলকে ভরেও নিতে পারেন)।একটা সমতল পৃষ্ঠের উপর আপনি চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন, প্রতিটি হাতে একটি করে ডাম্বেল বা জল ভরা একটি করে বোতল নিয়ে।এবার আপনার হাতগুলিকে সোজা করে প্রসারিত করুন আর এই অবস্থাটি ধরে রেখে 10 অবধি গুণুন, আর তারপর আপনার হাতগুলিকে বুকের দিকে নিয়ে আসুন যতক্ষণ না সেগুলি প্রায় বুক স্পর্শ করে।এই অবস্থাতেও 10 গোণা অবধি ধরে রাখুন।প্রতিদিন কমপক্ষে 20 বার করে এই ব্যায়ামটির পুনরাবৃত্তি করুন।
স্তন পান করালে কি তা আপনার স্তন অবনমিত হওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে?
আপনি আপনার সন্তানকে স্তন পান করান বা না করান, গর্ভাবস্থার হরমোনগুলি এর মধ্যেই আপনার স্তনগুলিকে প্রসারিত করবে।এমনকি অ্যাসথেটিক সার্জারি জার্নাল অনুযায়ী, গবেষণায় প্রকৃতই দেখানো হয়েছিল যে, স্তন পান করানো, গর্ভাবস্থার পরে স্তনের কুঁচকে বা ঝুলে যাওয়া অথবা স্তনের অবনমিত হওয়ার জন্য একেবারেই কোনও ঝুঁকির কারণ হয়ে ওঠে না।আপনি যখন আপনার সন্তানকে স্তন পান করান, আপনার স্তনগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কুঁচকে যাবে।অন্যথায়, আপনি যদি একেবারেই স্তন পান না করান, তবে সেগুলি ফুলে ফেঁপে থাকবে, যা থেকে স্তনে যন্ত্রণা শুরু হবে।গবেষকদের মতে, গর্ভাবস্থা নিজেই– তার হরমোনীয় পরিবর্তনগুলির কারণে– স্তনের অবনমিত হওয়ার একটা সবচেয়ে বড় কারণ, স্তন পান করানোটা নয়।
গর্ভাবস্থার পর স্তনের অবনমিত হওয়ার অভিজ্ঞতাটি লাভ করাটা সাধারণ একটা ব্যাপার।তবে গর্ভাবস্থার পরে কীভাবে স্তনের অবনমিত হওয়া বা ঝুলে যাওয়া এড়ানো যায় তার সবচেয়ে কার্যকর উত্তরটি হল একটি স্বাস্থ্যকর জীবনশৈলী বেছে নেওয়া।সঠিক আহার, অনুশীলন, এবং ত্বকের যত্ন একত্রে আপনার স্তনগুলিকে দৃঢ় রাখতে সহায়তা করবে।