গর্ভাবস্থা আপনার জীবনের একটা ভীষণ সুন্দর মুহুর্ত, আর এই সময় আপনার কি খাওয়া উচিত, কি খাওয়া উচিত নয়–সে ব্যাপারে আপনার পরিবার এবং বন্ধু–বান্ধবরা হয়ত আপনাকে কিছু শলা–পরামর্শ দিয়ে থাকতে পারেন।আপনি যদি আপনার খাবার, চা এবং অন্যান্য খাদ্য–পদগুলিতে আদার স্বাদটা পছন্দ করেন এবং গর্ভাবস্থায় আদা খাওয়াটা নিরাপদ কিনা সে ব্যাপারে চিন্তা করতে থাকেন, তবে সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় এই আদা খাওয়া এবং আপনার ডায়েটের মধ্যে এই অত্যাশ্চর্যজনক ভেষজটি কীভাবে অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে সে ব্যাপারে আরও জানতে চট করে নিবন্ধটি পড়ে ফেলুন।
আদা একটা দুর্দান্ত সুপার–খাদ্য, যেটি এর মধ্যস্থ কিছু ঔষধি বৈশিষ্ট্যাবলীর জন্য প্রসিদ্ধ।এটি গৃহস্থলীর ভীষণ সাধারণ একটি উপকরণ।তবে গর্ভবতী হয়ে ওঠাটা আপনাকে কিছুটা সন্দেহপ্রবণ করে তুলতে পারে এবং তারই ফলস্বরূপ গর্ভদশায় আদা খাওয়া আপনার পক্ষে নিরাপদ কিনা সে ব্যাপারে আপনি হয়ত কিছুটা চিন্তান্বিত হয়ে উঠতে পারেন।তবে এক্ষেত্রে কাঁচা আদা সংযমের সাথে পরিমিত পরিমাণে সেবন করার পরামর্শই আপনাকে দেওয়া হচ্ছে আর শুকনো আদার মূল গর্ভাবস্থায় না খাওয়াই উচিত।
গর্ভাবস্থায় আদা খাওয়ার প্রসঙ্গটি যখন আসে, সেক্ষেত্রে সংযমের সাথে গ্রহণ করাই হল এর মূল মন্ত্র।একদিনে এক গ্রাম মত আদা গ্রহণ করা নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত, যেটিকে আবার দুই থেকে চারটি ডোজের মধ্যে ভাগ করা যেতে পারে।যদিও আদাকে এর কাঁচা রূপে খাওয়াই হল এর আদর্শ উপায়, তবে আপনি আবার আপনার গা–গুলানো বমি বমি ভাবে এবং মর্নিং সিকনেস বা প্রাতঃকালীন অসুস্থতার জন্য এটিকে এর ক্যান্ডি রূপেও গ্রহণ করতে পারেন।আদা চা পান করলে তা আপনার গর্ভদশার প্রথম ত্রৈমাসিকে প্রাতঃকালীন অসুস্থতা দূর করতে সহায়তা করতে পারে, তবে তাই বলে এটিকে অতিরিক্ত গ্রহণ করাও আপনার উচিত নয়।
গর্ভাবস্থায় আদা আপনার জন্য বহুবিধ উপকারিতা নিয়ে আসে।এখানে তারই কিছু উল্লেখ করা হলঃ
1.কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেঃ গর্ভাবস্থায় কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আদা কার্যকর।
2.আপনার গর্ভস্থ শিশুর জন্য পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ করেঃ আদা সেবন করলে আপনার দেহে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায় আর তার ফলে এটি ভ্রূণেও রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি করে।
3.সর্দি–কাশি, ঠাণ্ডা লাগার বিরুদ্ধে আপনাকে লড়াই করতে সাহায্য করেঃ গর্ভাবস্থায় আপনার রোগ–প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা মন্থর হয়ে পড়ে এবং ছোট–খাট সংক্রমণগুলির প্রতিও আপনাকে আরও বেশি সংবেদনশীল করে তোলে।আপনার অনাক্রম্যতা বৃদ্ধির জন্য আদা বেশ উপকারী এবং আপনাকে দ্রুত নিরাময় হয়ে উঠতেও সাহায্য করে।
4.প্রাতঃকালীন অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে সাহায্য করেঃ বমি বমি ভাব এবং প্রাতঃকালীন অসুস্থতা থেকে মুক্তি আনার কাজে আদা বেশ কার্যকর।আপনি আবার পেটের সমস্যাগুলির মোকাবিলায় আপনার চায়ের মধ্যে আদা কিম্বা পাচক আকারে আদা গ্রহণ করতে পারেন।
5.পুষ্টি উপাদানগুলি শোষণে সহায়তা করেঃ আদা সেবন করলে তা আপনার শরীরে গ্যাস্ট্রিক এনজাইম এবং অগ্ন্যাশয়ের উৎসেচকগুলিকে উদ্দীপিত করার মাধ্যমে আপনার গ্রহণ করা খাদ্য থেকে পুষ্টি উপাদানগুলি আপনার দেহে শোষিত হতে সহায়তা করতে পারে এবং এই একইভাবে ভ্রূণকেও সহায়তা করে থাকে।
6.আপনার রক্ত–শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখেঃ গর্ভাবস্থায় আদা সেবন করলে তা কেবল আপনার মধ্যে ক্লান্তি এবং অবসাদকেই দূর করে না, এটি আবার আপনাকে চনমনে বোধ করাতেও সাহায্য করে।বিভিন্ন গবেষণায় এটি প্রমাণিত যে, আদা রক্ত শর্করা স্বাভাবিক মাত্রায় রাখার ক্ষেত্রে কার্যকর।
7.পেট ফাঁপা বা ভার হয়ে থাকা লাঘব করতে সাহায্য করেঃ ঘুমের আগে আদা সেবন করলে তা গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত বদহজম, গ্যাস এবং পেট ফাঁপার মত সমস্যাগুলি লাঘব করতে সহায়তা করে।
8.অম্বল, বুক–জ্বালা হ্রাস করায় কার্যকরঃ গর্ভাবস্থায় অম্বল, বুক–জ্বালার জন্য দায়ী অ্যাসিডের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আদা সাহায্য করে।
আপনি যদি রক্ত–চাপ কিম্বা রক্ত জমাট বাঁধার জন্য কোনও ওষুধের আওতায় থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনার ডায়েটে আদা যোগ করার পূর্বে আপনার ডাক্তারবাবুর মতামতটি গ্রহণ করা উচিত।
আপনার ডায়েটের মধ্যে নানাভাবেই আদা যোগ করা যেতে পারে, যেমন পাচক, চা, ক্যান্ডি, চর্বণযোগ্য ট্যাবলেট অথবা আবার এমনকি ক্যাপসুল রূপেও।গর্ভাবস্থায় আপনার ডায়েটে আদা যোগ করার কয়েকটি উপায় এখানে উল্লেখ করা হলঃ
গর্ভাবস্থায় খাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাদ্য–পদগুলির ব্যাপারে নানা সংশয় এবং উদ্বেগ মনের ভিতরে গড়ে উঠতে পারে।গর্ভাবস্থায় আদা খাওয়া সংক্রান্ত কোনও প্রশ্ন যদি আপনার মনের ভিতর থেকে থাকে, তবে সে ব্যাপারে আরও ভালভাবে অবগত হতে নিম্নলিখিত প্রশ্ন–উত্তরগুলি পড়ে দেখুনঃ
যদি সংযমের সাথে পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা যায়, তবে তা গর্ভাবস্থার জন্য অসংখ্য উপকারিতা নিয়ে আসতে পারে।তবে যদি আপনি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে আদা সেবন করে থাকেন, তবে তা গর্ভপাতের কারণ হয়ে উঠতে পারে।ঠিক কতটা পরিমাণ আদা নিরাপদের সাথে আপনি গর্ভাবস্থায় গ্রহণ করতে পারেন তা দয়া করে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করে জেনে নিন।
হ্যাঁ, আদা চিউ (আদা শূক) গর্ভাবস্থায় সেবন করার পক্ষে নিরাপদ।এগুলি মূলত প্রকৃত আদা মূল থেকেই তৈরী হয়ে থাকে এবং গা গুলানো, বমি–বমি ভাব থেকে মুক্তি আনার পক্ষে ভীষণ কার্যকর।আপনি আবার এই আদা শূকগুলিকে আদা–চা তৈরীতেও ব্যবহার করতে পারেন।তবে এক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারবাবুর মতামত নেওয়ার পরেই আপনাকে আদা চিউ বা আদা শূকগুলি কেনার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
হ্যাঁ, নিয়মিত ভিত্তিতে কুকি খাওয়ার তীব্র বাসনা যদি আপনার অন্তরে ঘুরপাক খায়, সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় আপনি জিঞ্জার স্ন্যাপ বা আদা–কুকিগুলি গ্রহণ করতে পারেন।এ ধরণের কুকিগুলি যে কেবল নিম্ন শর্করা এবং ফ্যাট যুক্তই হয়, তা নয়, এগুলি আবার নানা ধরণের খনিজ এবং ভিটামিনেও পরিপূর্ণ থাকে।যেহেতু এগুলি প্রাতঃকালীন অসুস্থতা থেকে মুক্তি আনতে সাহায্য করে তাই আপনার হয়ত প্রথম ত্রৈমাসিকে এই আদা–কুকিগুলি ভাল লাগতে পারে।
গর্ভাবস্থায় আদার গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না কারণ এর মধ্যে একজন হবু মা এবং তার অনাগত গর্ভস্থ শিশুর জন্য বহুবিধ স্বাস্থ্য–উপকারিতাগুলি রয়েছে।
আদাকে বেশ কার্যকরভাবেই বহুবিধ উপায়ে আপনার ডায়েটের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে।আপনি এটিকে শুধুমাত্র এর পাতলা খোসাটিকে ছাড়িয়ে, কুঁচি–কুঁচি করে কেটে নিয়ে, কুঁড়ে নিয়ে, ঝিরি–ঝিরি করে, থেঁতো করে কিম্বা পেস্ট করে নিয়েই সেটিকে আপনার খাবারের প্লেটে এক বিশেষ সুগন্ধিযুক্ত মশলা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন, যার স্বাদও অতুলনীয়।আপনার ডায়েটে আদা সংযোজন করার আগে শুধুমাত্র যে বিষয়টি আপনার মনে রাখা দরকার তা হল– এটিকে সংযমের সাথে ব্যবহার করা।এই অতুলনীয় ভেষজটিকে শুধু একটু সংযমের সাথে গ্রহণ করুন আর তার থেকে সর্বোচ্চ উপকারিতাগুলি লাভ করুন।আর আপনার খাদ্য তালিকার মধ্যে আদা সংযুক্ত করার ব্যাপারে কোনও উদ্বেগ বা সংশয় যদি আপনার মনের মধ্যে থেকে থাকে, তবে তার জন্য আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।