আপনার আহার করা খাদ্য আপনার স্বাস্থ্য নির্ধারণ করে।আপনি যাই খান সেটা অপনার শরীরের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আর সেটাই আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যদি আপনি একটি সন্তানধারণের প্রচেষ্টা করেন।যদি আপনি গর্ভবতী হয়ে থাকেন, আপনার ভালোর জন্যই আপনার ডায়েটে অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে আর আপনার মুখের মধ্যে কোনওকিছু প্রবেশ করানোর আগেও সে ব্যাপারে আপনার অবশ্যই দু‘বার চিন্তা করা প্রয়োজন।এ ব্যাপারে, এমন বেশ কিছু খাদ্য আছে যেগুলি গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশে সহায়তা করে, তবে আবার এমন কিছু খাবারও আছে(ভেষজ এবং পরিপূরকগুলিও অন্তর্ভূক্ত)যা আপনার গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে, অতএব, সেগুলি কঠোরভাবে এড়িয়ে চলাই উচিত।আজ আমরা একটা নির্দিষ্ট ভেষজের বিষয়েই আলোচনা করব–লেমনগ্র্যাস, যা আবার সিমবোপোগন, সিলকি হেডস, কোচিন গ্র্যাস, মালাবার গ্র্যাস নামেও খ্যাত।গর্ভাবস্থায় এই লেমনগ্র্যাস সেবন করা নিরাপদ নাকি নয় জানতে আরও পড়ুন।
লেমনগ্র্যাস আবার সিট্রোনেল্লা নামেও অভিহিত।এটি এমন একটি গাছ, যা 2 মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।এটি আফ্রিকা, এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় উদ্ভিদ।লেমনগ্র্যাস একটি ভেষজ হিসেবে রান্নায় ব্যবহৃত হয় এবং এর পাতা ও তেল ওষুধ প্রস্তুতে ব্যবহার করা হয়।
অনেক লোক চায়ের সাথে লেমনগ্র্যাস যুক্ত করে থাকেন।তবে এর মধ্যস্থ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং প্রিজারভেটিভ বা সংরক্ষণ করে রাখার বৈশিষ্ট্যাবলী বজায় থাকার পাশাপাশি আবার এর মধ্যে তাজা লেবুর স্বাদের উপস্থিতি থাকায়, এটি রান্নার মধ্যে একটি উপকরণ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়, কারণ আর মধ্যস্থ সকল বৈশিষ্ট্যাবলীই কোনও খাদ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
লেমনগ্র্যাসের মধ্যে সিট্রাল এবং মাইক্রেন নামক দুটি যৌগ উপস্থিত থাকায়, গর্ভাবস্থায় সেটি গ্রহণ করা উচিত নয়, এগুলি গর্ভাবস্থার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।উচ্চ মাত্রায় মাইক্রেন সেবন করলে তা ভ্রূণের কঙ্কালতন্ত্রের বিকাশকে বিঘ্নিত করতে পারে এমনকি পরিণামস্বরূপ গর্ভপাত পর্যন্ত ঘটতে পারে।
লেমনগ্র্যাসের চা অথবা পরিপূরক হিসেবে গাঢ় কিম্বা ঘন আকারে গ্রহণ করলে তা গর্ভাবস্থায় মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।লেমনগ্র্যাস সবসময় অল্প পরিমাণে গ্রহণ করা যেতে পারে, যেমন থাই– ডিশগুলির মত, যেখানে এটিকে ফোঁড়ন হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তবে এটিকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলাটাই সবচেয়ে ভাল।
গর্ভাবস্থায় লেমনগ্র্যাস সেবনের প্রভাব ক্ষরিকারক হতে পারে কিন্তু এর প্রভাবগুলি মানুষের উপর ব্যবহারিক পরীক্ষা করা হয় নি।উচ্চ মাত্রায় লেমনগ্র্যাস সেবন এড়িয়ে চলার পরামর্শটি যৌক্তিক অনুমান এবং তার সাথে আবার ইঁদুরের উপর পরিচালিত গবেষণার উপর ভিত্তি করেই দেওয়া হয়ে থাকে।
পূর্বের উল্লেখ মত, লেমনগ্র্যাসের চা ঘনীভূত আকারে গ্রহণ করলে তা গর্ভাবস্থায় গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।সুতরাং আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন এবং নিয়মিত রুটিনমাফিক লেমনগ্র্যাসের চা পান করেন, তবে এর পরিবর্তে বিকল্প হিসেবে অন্য ধরণের চা যা গর্ভাবস্থার পক্ষে নিরাপদ, গ্রহণ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।এর জন্য আমরা নিম্নলিখিত বিকল্পগুলির প্রস্তাব দিলামঃ
আপনার ভেষজ চায়ের মধ্যে লেমনগ্র্যাসের বিকল্প স্বাদ প্রতিস্থাপন করতে নিম্নলিখিতগুলি সর্বোত্তম সংযোজন গড়ে তুলবেঃ
ত্বকে ম্যাসেজ বা মালিশ করার জন্য অথবা অ্যারোমাথেরাপির জন্য সুগন্ধি হিসাবে লেমনগ্র্যাস তেল ব্যবহার করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ নয়, তবে তা ব্যবহার করা এড়িয়ে চলাই ভাল। ম্যাসাজ বা মালিশের জন্য অপরিহার্য তেলগুলি যখন ব্যবহার করা হয় তখন সেগুলি ত্বকে শোষিত হওয়ার মাধ্যমে কাজ করে।যেহেতু অপরিহার্য তেলগুলিতে থাকা অণুগুলি বেশ ছোট হয়, তাই সেক্ষেত্রে ভয় হল এই যে, সেগুলি হয়ত প্লাসেন্টা বা অমরাটিকে অতিক্রম করে শিশুর রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় বা সংবন তন্ত্রে প্রবেশ করতে পারে।
তাছাড়াও অপরিহার্য তেলগুলিও আবার ভীষণ ঘনিভূত অবস্থায় থাকে, সুতরাং গর্ভাবস্থায় এগুলি ব্যবহার করা এড়িয়ে চলাই সর্বোত্তম।আর আপনি যদি লেমনগ্র্যাস তেল একান্তই ব্যবহার করতে চান, তবে সেক্ষেত্রে জল কিম্বা কোনও কেরিয়ার বা সাহায্যকারী হালকা তেলের সাথে মিশিয়ে সেটিকে পাতলা করে নেওয়ার পরামর্শ আপনাকে দেওয়া হয়।আপনি কোনও কেরিয়ার বা সাহায্যকারী হালকা তেলের সাথে 1-2 ফোঁটা লেমনগ্র্যাস তেল মিশিয়ে নিতে পারেন এবং তারপর সেটিকে ম্যাসাজ বা মালিশের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারেন।
আপনি যদি এই তেলের প্রতি অ্যালার্জি প্রবণ হয়ে থাকেন, তবে সেক্ষেত্রে এই তেল নিম্নোলিখিত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতা বা সমস্যাগুলি সৃষ্টি করতে পারে।এমনকি আপনি যদি এই তেলের প্রতি অ্যালার্জিপ্রবণ নাও হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রেও কিন্তু আপনি নিম্নোলিখিত উপসর্গগুলি লক্ষ্য করতে পারেনঃ
গর্ভাবস্থায় আপনি যদি লেমনগ্র্যাস (যেকোনও আকারে)ব্যবহারের পরিকল্পনা করে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনার মনে রাখা উচিত এমন কিছু বিষয় এখানে উল্লেখ করা হলঃ
গর্ভাবস্থায় লেমনগ্র্যাস হল একটি সম্ভাব্য ক্ষতিকারক মাধ্যম এবং অনুসরণ করার ক্ষেত্রে সহজ উপায়টি হল এটিকে পুরোপুরি ভাবে এড়িয়ে চলা।যদি কোনওক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় আপনি এটিকে ব্যবহার করতে চান, তবে সেক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিয়ে চলুন।