একজন গর্ভবতী মহিলার দেহে অন্তহীনভাবে নানা ধরনের পরিবর্তনগুলি হয়ে চলে।এগুলির সবগুলিই বিভিন্ন লক্ষণ এবং সঙ্কেতের প্রকাশ করে।যাইহোক, তবে তৃতীয় ত্রৈমাসিকের এমন কয়েকটি লক্ষণ রয়েছে যেগুলি কোনওভাবেই উপেক্ষা করা উচিত নয়, অথবা এমনকি যখন সেগুলি গর্ভাবস্থার কোনও সন্ধিক্ষণে এসেও উপস্থিত হয় তখনও না।এই সকল লক্ষণগুলি একটি গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে, তাই যত শীঘ্র সম্ভব সেগুলির দিকে মনযোগ দিয়ে তা কাটয়ে ওঠা প্রয়োজন।
গর্ভাবস্থার 15 টি লক্ষণ বা উপসর্গ যেগুলি আপনার কোনওমতেই অবহেলা করা উচিত নয়
আপনি গর্ভদশার 28 কিম্বা 37 যে সপ্তাহেই থাকুন, এই সময়ে দেখা দেওয়া গর্ভাবস্থার উপসর্গগুলি, এর মধ্যে যে কোনও সময়েই উত্থাপিত হতে পারে, যা সর্বদা ভাল লক্ষণ নাও হতে পারে। যদিও বেশিরভাগ লক্ষণগুলি যতটা মনে হয় ততটা বিপজ্জনক হয় না, তবে এর মধ্যে আবার এমন কিছুও রয়েছে যেগুলির দিকে আপনার নজর রাখা উচিত এবং সাথে সাথে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
1.যোনি থেকে তরল নির্গমন
গর্ভাবস্থায় আপনার যোনি সাধারণত অতিরিক্তভাবেই কাজ করে, সমানে স্রাব নির্গত হতে থাকে।সেই অঞ্চলটিতে ক্রমাগত একটি আদ্র বা ভিজে ভাব অনুভূত হতে পারে।কিন্তু এভাবে তরল লিকেজ পর্যবেক্ষণ করা যা ফোঁটা ফোঁটা রূপে কিম্বা প্রবাহের আকারে বেরিয়ে আসে, সম্পূর্ণরূপেই অন্যকিছুকে বোঝাতে পারে।এ ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গগুলি সাধারণত আপনার জল ভাঙ্গা বা পরবর্তী 24 ঘন্টার মধ্যে যেকোনও মুহুর্তেই আপনার শ্রম যন্ত্রণা শুরু হওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।তরলটি সাথে কিসের সাদৃশ্য আছে সেটা না বিবেচনা করে বরং বিষয়টি যত তাড়াতাড়ি ডাক্তারের নজরে এনে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
2.শিশুর নড়াচড়া কমে যাওয়া
যেই মুহুর্তে কোনও শিশু তার মায়ের গর্ভের অভ্যন্তরে থেকে চারপাশে পা ছুড়ে লাথি মারতে এবং ঘুষি মারতে শুরু করে, সেটি তখন তার মায়ের জন্য একটা বড় স্বস্তির পাশাপাশি এমন এক উত্তেজনা সৃষ্টি করে যা তার গর্ভের ভিতরে তার সন্তানের সার্বিকভাবে ভাল থাকার একটা সঙ্কেত দেয়।এর চেয়েও বড় বিষয় হল, পদাঘাতগুলির শক্তি এবং পুনরাবৃত্তির হার লক্ষ্য করা হল অনাক্রমণাত্মক উপায়ে শিশুর স্বাস্থ্যের উপর নজর রাখার একটা ভাল উপায়।পা ছুঁড়ে লাথি মারার হার খেয়াল করে তা চিহ্নিত করে রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ যদি তার পদাঘাতের সংখ্যা ও তীব্রতা কমে যায় তবে তা আপনাকে সে ব্যাপারে ভালভাবে একটা ধারণা দিতে পারে।গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে শিশুর পক্ষে আগের মতো পা ছুড়তে অসুবিধা হতে পারে, সুতরাং এক্ষেত্রে এটাই হল স্বাভাবিক। তবে তার আচরণে যদি এমন কোনও ত্রুটিযুক্ত লক্ষণের উপস্থিতি উপস্থিত থাকে যা সঠিক বলে মনে হয় না, তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটিকে আপনার ডাক্তারবাবুর নজরে আনতে হবে।
3.একদিনের বেশি জ্বর স্থায়ী হলে
গর্ভাবস্থা হল এমন একটি সময় যখন কোনও মহিলার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে তার দুর্বলতম অবস্থানে থাকে, কারণ এই সময় মায়ের শরীর বেশি ফোকাস করে গর্ভের মধ্যে তার সন্তানকে আরও ভালোভাবে সমর্থন করার দিকে এবং তার বৃদ্ধির ওপরে।গর্ভাবস্থা আবার কোনও মহিলাকে সাধারণ জীবাণুগুলির দ্বারা সহজেই সংক্রামিত হয়ে ওঠারও একটি সুযোগ খুলে দেয় এবং এর ফলে তার মধ্যে ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা, কাশি বা বিভিন্ন ধরণের ফ্লু দেখা দেয়। বেশিরভাগ সময়, এই সংক্রমণের ফলে জ্বর হয়, যা সাধারণত কয়েক ঘন্টা মতো থাকে এবং তারপর তা ম্লান হয়ে যায়। এটা তো তবু ঠিক আছে, কিন্তু এমন জ্বর যদি হয় যা আপনার দেহের তাপমাত্রাকে যথেষ্ট পরিমাণে বাড়িয়ে দেয় এবং কয়েক দিন বা তার বেশি সময় ধরে সেটি রয়ে যায়, তবে সেটি কিন্তু শিশুর পক্ষে ক্ষতিকারক এবং এমনকি মারাত্মক অসুস্থতারও ইঙ্গিত দিতে পারে।যেহেতু এ ধরনের সংক্রমণটি ক্রমবর্ধমান শিশুর মধ্যেও প্রবেশের পথটিকে নিজেই খুঁজে নিতে পারে তাই সেটি তৎক্ষণাৎ পরীক্ষা করিয়ে নিন।
4.অস্পষ্ট বা ঝাপসা দৃষ্টি
আপনি বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর হঠাৎ উঠে দাঁড়ালে মাথাটা ঘুরে যাওয়ার মত একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা আপনার হয় কি? এই একই ধরণের মাথা ঘোরা গর্ভাবস্থাতেও বেশ ঘন ঘন হয়, বিশেষত গর্ভদশার শেষের পর্যায়গুলিতে।এসময়ে বেশিরভাগ রক্ত সরবরাহ এবং শক্তি গর্ভাশয়ের দিকে সরে যায় , সেটিকে একটি যথাযথ অবস্থায় রাখার জন্য।এর ফলে আপনার দৃষ্টি স্পষ্ট না হওয়ার মত এধরনের একটি ছোট্ট দৃষ্টান্তও দেখা দিতে পারে, যেখানে আপনি সমস্ত জিনিসগুলিকে ঝাপসা দেখতে পারেন। তবে, যদি এইরকম অবস্থা অব্যাহত থাকে এবং এর সাথে ওজন বৃদ্ধি, মাথা ব্যথা কিম্বা ফোলাভাব জড়িত থাকে তবে এটি গর্ভাবস্থা–প্রণোদিত ডায়াবেটিস বা এক্ল্যামসিয়ার একটি তীব্র লক্ষণ হতে পারে, যার জন্য চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।
5.এমন একটি পিঠে ব্যথা যা কিছুতেই কমবে না বলে মনে হয়
শারীরিক ব্যথা–বেদনাগুলি হওয়া গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে নতুন কিছু নয়।এমনকি নানা কারণে পিঠে ব্যথাও মাঝেমধ্যে তাদের হয়ে থাকতে পারে।এটি কেবলমাত্র পেটের প্রসারণের জন্য দায়ী নয়, দেহের মাধ্যাকর্ষণ কেন্দ্রটি পিঠের দিকে স্থানান্তরিত হয় এবং পিঠের উপর চাপ বাড়ায়, তবে দেহও কিন্তু নিজের মধ্যেই বিভিন্ন শারীরিক সামঞ্জস্যগুলি করে থাকে, তার ফলে যে অঙ্গভঙ্গির পরিবর্তন হয় তা পিঠের ওপর কষ্টকর হয়ে ওঠে।যদিও এমন কিছু ছোট ছোট পর্যায় রয়েছে যেখানে এমন এক তীব্র পিঠে ব্যথা অনুভূত হয় যা কিছুতেই কমতে চায় না এবং সেটিকে সর্বব্যাপী বলে মনে হয়ে থাকে, এমনকি এর জন্য কোনও প্রতিকারই সাধারণ বলে মনে নাও হতে পারে।এক্ষেত্রে একজন চিকিৎসক আপনাকে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন যে সেটি মুত্রাশয় কিম্বা বৃক্কের সংক্রমণের কোনও লক্ষণ কিনা অথবা আবার এমনকি সেটি কোনও সম্ভাব্য গর্ভপাতের সঙ্কেত কিনা তাও দেখতে পারেন।
6.চুলকানি যা সময়ের সাথে বাড়তে বাড়তে বিরক্তিজনক হয়ে ওঠে
গর্ভাবস্থায় কোনও অন্তঃসত্ত্বা মহিলার ত্বক একটা চরম সীমায় প্রসারিত হয়ে থাকে এবং দেহ মধ্যস্থ স্বাস্থ্যকর আর্দ্রতাটি অপসারিত হয়, আর তার ফলে বাকি সমগ্র গর্ভাবস্থা জুড়েই তাদের দেহে চুলকানি সৃষ্টি হওয়াটা হল গর্ভাবস্থার একটা সাধারণ উপসর্গ। এক্ষেত্রে মহিলারা তাদের চুলকানির বিষয়ে অভিযোগ করেন তবে খুব কম ক্ষেত্রেই এটি র্যাশ আকারে প্রকাশ পেতে শুরু করে, যা মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে এবং সারা গায়ে লাল রঙের দাগের মতো হয়ে ফুটে ওঠে।অনেক সময় এগুলি কেবলমাত্র কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকে তবে যদি চুলকানি আপনার শরীরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে তবে সেটি একজন ডাক্তারকে দেখিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভাল।এ জাতীয় চুলকানি লিভারের ব্যাধি অথবা এমনকি গর্ভাবস্থায় কোলেস্টেসিসের উপস্থিতির ইঙ্গিত দিতে পারে।
7.হঠাৎ করে মারাত্মক ওজন বৃদ্ধি
গর্ভাবস্থায় ওজন বেড়ে যাওয়াটা বেশ স্বাভাবিক।সর্বোপরি একজন মহিলার গর্ভের ভিতরে একটি শিশু ক্রমশ বেড়ে ওঠে, তাই একটা স্বাস্থ্যকর ওজন লাভ করা কখনই কোনও উদ্বগের বিষয় হওয়া উচিত নয়।তবে সেই ওজন বৃদ্ধিটি যদি 1 সপ্তাহের মধ্যেই 1.8-2 কিলোগ্রাম ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়, তবে সেক্ষেত্রে সেটা আর স্বাস্থ্যকরের মধ্যে পড়ে না।খুব অল্প সময়ের মধ্যে অত্যধিক ওজন লাভ প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিতে পারে।আর সেটা পরীক্ষা করানোর জন্য আপনার ডাক্তারবাবুর কাছে যাওয়া প্রয়োজন।
8.মুখ এবং হাতগুলি ভীষণ ভাবে ফুলে যাওয়া
সাধারণত, গর্ভবতী মহিলাদের ফুলে যাওয়া সম্পর্কিত ঘটনাটির সাথে রয়েছে একটি খুব আলাদা অর্থ এবং ভাল কারণ।প্রথমত, পেটটি নিজেই দিনে দিনে বেড়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত, বর্ধিত জরায়ুটি দেহের অন্যান্য অংশগুলিতে যে চাপ ফেলে তার ফলে এমন অবস্থা হয় যেখানে পায়ের পাতা এবং কাভগুলি সাধারণভাবেই ফুলে উঠতে দেখা যায়।হালকা ফোলাভাব সাধারণত স্বাভাবিক।তবে মুখ এবং হাতের জায়গাগুলিতে অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন।যদি সেগুলি তুলনামূলকভাবে বেশি ফুলে উঠতে থাকে অথবা এমনকি আবার আপনার গোড়ালিগুলিও যদি সেই বিষয়ের মধ্যে পড়ে সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার কারণে হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ এবং এমনকি এক্ল্যাম্পসিয়া হওয়ারও উচ্চ সম্ভাবনা থাকে।
9.পেটে তীব্র যন্ত্রণা
গর্ভদশায় সারা শরীরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন যে জায়গাটিতে দেখা যায় তা হল পেটের অঞ্চল।ক্রমবর্ধিত শিশুর সাথে মানিয়ে জরায়ুটি প্রসারিত হওয়ার কারণে আভ্যন্তরীণ অঙ্গাণুগুলিকে ঘিরে প্রচুর প্রসারণ এবং ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়।এর ফলে মাঝে মাঝে পেটে যন্ত্রণা উদ্ভূত হয়, যার মধ্যে কিছু আবার বেশ তীব্রও হয়ে উঠতে পারে।এই যন্ত্রণা সাধারণত লিগামেন্টগুলির অধিক–প্রসারণের কারণে হয়ে থাকে এবং তা উদ্বগের কোনও কারণ হয় না।তবে কোনও যন্ত্রণা যদি তীব্রতার সাথে অবিরত হয়ে থাকে এবং তার সাথে রক্তপাত হতে থাকে অথবা অন্যান্য উপসর্গগুলি জড়িত থাকে, সেক্ষেত্রে চিকিৎসা সংক্রান্ত সহায়তা গ্রহণের প্রয়োজন।এ ব্যাপারে একটি এক্টোপিক গর্ভাবস্থা অথবা গর্ভপাতের সম্ভাবনার বিষয়টিকেও অস্বীকার করা যায় না।
10.মারাত্মক অথবা অবর্ণনীয় যোনি রক্তপাত
গর্ভাবস্থায় আপনার যোনি থেকে কেবলমাত্র স্রাবই নির্গত হতে দেখা যায় না।তার মধ্যে রক্তের যেকোনও উপস্থিতিই আপনাকে সবার আগে খারাপ ধারণাটি করার দিকেই নিয়ে যেতে পারে, তবে বেশিরভাগ সময়েই সেটা চিন্তার কিছু নেই।রক্তের অল্পস্বল্প দাগগুলি একটি অস্বস্তিকারক সার্ভিক্সের ফলে দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে আপনি যদি যৌন মিলনে লিপ্ত হয়ে থাকেন।তবে স্বাভাবিকের বাইরে যদি কোনওরকম রক্তপাত হয়ে থাকে তবে তা অবহেলা করা উচিত নয়, বিশেষত যদি তার সাথে খিঁচ লাগা অথবা কোনওরকম যন্ত্রণা জড়িত থাকে।এ ধরণের রক্তপাতের পিছনে কিন্তু প্ল্যাসেন্টা বা অমরার বিচ্ছিন্নকরণ অথবা গর্ভপাত হওয়ার মত কোনও ইঙ্গিত লুকিয়ে থাকতে পারে এবং এর জন্য আপনার প্রসূতি বিশেষজ্ঞের সাহায্যে সেটি যথাযথভাবে পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।
11.ভীষণ মাত্রায় ক্লান্তি বোধ করা
আপনার শরীর সর্বদা আপনার শিশুর সুরক্ষিত এবং সুস্থ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করবে।এর অর্থ হল এই যে আপনার শক্তির সঞ্চয় প্রচুর পরিমাণে ক্ষয়িত হচ্ছে যা আপনাকে আগের চেয়ে বেশি ক্লান্তি বোধ করতে পারে।তবে ভীষণ ভাবে ক্লান্তি বোধ থাইরয়েড হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রাকে নির্দেশ করতে পারে।গর্ভবতী মহিলার মধ্যে থাকা হাইপারথাইরয়েডিজমের কোনও উদাহরণ শিশুর পক্ষে বিপজ্জনক কারণ এটি অকাল প্রসবের কারণ হয়ে উঠতে পারে।একইরকমভাবে আবার এর মাত্রা যদি খুব নিম্ন হয়ে থাকে তবে শিশুর মধ্যে বিকাশমূলক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
12.অকালে শুরু হওয়া সঙ্কোচনগুলি
গর্ভাবস্থার চূড়ান্ত পর্যায়েগুলি সবচেয়ে বিভ্রান্তিকর।এটি আবার ব্র্যাক্সটন হিক্স সঙ্কোচনের গতিতে সেট হওয়ারও সময়।এগুলিকে রিহার্সালের পোশাক হিসেবে বোঝানো হয়, যেহেতু আপনার শরীরটি প্রকৃত প্রসবের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করে, তাই সংকোচনগুলি সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায় কিনা সেগুলি তা পরীক্ষা করে।এগুলি কিন্তু আপনার পূর্বে অভিজ্ঞতা হয়ে থাকা যেকোনও ধরনের খিঁচুনিগুলির থেকে পৃথক প্রকৃতির এবং আপনি চলাচল করতে শুরু করলেই তা ম্লান হয়ে যায়।তবে আপনার সঙ্কোচনগুলি যদি মাসিকের সময় হয়ে থাকা খিঁচুনির মতো হয়ে থাকে অথবা একটা নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে হওয়া শুরু করে, তবে আপনার শিশু হয়ত আপনার চিন্তা–ভাবনার আগেই তার পথে চলতে পারে।
13.মাঝে মধ্যেই মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
গর্ভবতী মহিলার দেহের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া অসংখ্য হরমোনীয় পরিবর্তনগুলি তার দেহের মধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে মিলিত হয়ে মাড়িকে আগের চেয়ে অনেক বেশি সংবেদনশীল এবং নরম করে তুলতে পারে।কখনও কখনও, এগুলি ফুলে উঠতে পারে এবং জিঞ্জিভাইটিস বা মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার দিকে পরিচালিত করতে পারে।যদিও এটি ক্ষতিকারক নয়, তবে একভাবে রক্তপাতের ফলে পেরিয়োডোন্টাল ডিজিজ বা দাঁতের সমস্যা হতে পারে যা ডেন্টাল হাইজিন হ্রাস করতে পারে এবং অন্যান্য সংক্রমণের প্রবেশদ্বারটিকে খুলে দিতে পারে।
14. প্রলম্বিত বমন উদ্রেক বা বমি বমি ভাব
গর্ভাবস্থার যথার্থ সংজ্ঞাটিকে বর্ণনা করতে গেলে, তার মধ্যে বমি করার সংবেদনটি এবং বমি বমি ভাবের অনুভূতিটি আবশ্যিকভাবেই সংযুক্ত হয়ে থাকে।যদিও এগুলির প্রকোপ প্রথম ত্রৈমাসিকেই তীব্র হয়ে থাকে, তবে সামগ্রিক গর্ভাবস্থা জুড়ে তা অব্যাহত থাকার দৃষ্টান্তও রয়েছে।সাধারণত এগুলি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও কারণ নেই ততক্ষণই, যতক্ষণ না সেগুলি অতিরিক্ত মাত্রায় হয়ে আপনাকে দুর্বল করে দেওয়া শুরু করে এবং এমন একটি সীমায় না পৌঁছায় যেখানে আপনি বমি হয়ে যাওয়ার মত একটা অনুভূতি অনুভব না করে কিছুতেই থাকতে পারেন না এবং কিছুতেই ঠিকমত খাবার খেতে ও তা পেটের মধ্যে ধরে রাখতে পারেন না।
15. শ্বাস–প্রশ্বাস সংক্ষিপ্ত হয়ে ওঠা এবং সমস্যা দেখা দেওয়া
সম্প্রসারিত জরায়ুটি আপনার ডায়াফ্রাম বা মধ্যচ্ছদা এবং ফুসফুসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং তা ঠিক মতো শ্বাস–প্রশ্বাস নেওয়াকে অথবা আবার গভীর শ্বাস নেওয়াকেও সমস্যাবহুল করে তুলতে পারে।গর্ভাবস্থার যাত্রাপথের ক্রম অগ্রগতির কারণে আপনার এরকম বোধ হওয়াটা স্বাভাবিক।কিন্তু যদি এটি গর্ভাবস্থার যাত্রাপথের প্রথম দিকেই হয়ে থাকে তবে তা শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুস বা হৃৎপিণ্ডের সমস্যার সাথে যুক্ত হতে পারে যা আপনার ডাক্তারবাবুকে দিয়ে পরীক্ষা করানো উচিত।
আপনার গর্ভাবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার সবচেয়ে ভাল একটি উপায় হল দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে দেখা দেওয়া যেকোনও লক্ষণ বা উপসর্গগুলির ব্যাপারে সম্পূর্ণ রূপে সচেতন থাকা।ছোটখাটো সামাণ্য সমস্যাগুলির ব্যাপারে আপনার চিন্তা করার কোনও কারণ নেই, কিন্তু কখন একজন ডাক্তারের নজরে তা আনা প্রয়োজন তা বুঝতে পারাটা একটি সুরক্ষিত ও নিরাপদ গর্ভাবস্থা বজায় রাখার জন্য আবশ্যক।