গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্ত-চাপ পরিচালনা করতে সেরা 10 টি প্রাকৃতিক প্রতিকার

গর্ভবতী মহিলার রক্তচাপ পরীক্ষা করা

গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্ত-চাপ হওয়া খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার,কিন্তু কীভাবে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নির্ধারন করা মহিলাদের জন্য একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। যেমন,আজকাল বাজারে সহজলভ্য ওষুধগুলিতে এমন কিছু রাসায়নিক এবং টক্সিনগুলি থাকে যেগুলির সম্পর্কে আমরা কখনও শুনিই নি,সুতরাং চিকিৎসার জন্য এবং সাধারণ পরিস্থিতি পরিচালনা করার জন্য প্রাকৃতিক প্রতিকারগুলিকে নির্বাচন করা নিরাপদ।বেশ কিছু প্রাকৃতিক প্রতিকারের মধ্যে আয়ুর্বেদিক এবং হোমিওপ্যাথি অন্তর্ভূক্ত এবং অন্যগুলি হতে পারে কিছু বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন,চীনা এবং তিব্বতীয় চিকিৎসা পদ্ধতি।বেশীরভাগ বিকল্প বা প্রাকৃতিক প্রতিকারগুলির ক্ষেত্রে কোনও নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকে না,যার ফলে এই কৌশলগুলি এবং নিরাময় পদ্ধতিগুলি আদৌ সঠিক কিনা তা জানা মুশকিল হয়ে ওঠে।ঠিক এই কারণের জন্যই আপনার পক্ষে বিশেষত গর্ভাবস্থায়,যেকোনও ধরনের প্রাকৃতিক প্রতিকার প্রয়োগের চেষ্টা শুরু করার আগে সে বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা করা প্রয়জন।গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্ত-চাপ পরিচালনা করতে এখানে আপনার জন্য 10 টি প্রতিকারের সুপারিশ করা হল।

গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্ত-চাপ (BP)এর জন্য ঘরোয়া প্রতিকারগুলি

গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্ত-চাপ কমাতে প্রাকৃতিক উপাদানগুলিকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সঠিকভাবে গবেষণা করে নেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোনওরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন না।আপনি গর্ভবতী থাকাকালীন রক্ত-চাপ কমানোর জন্য প্রয়োগিত কিছু পদ্ধতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে কিন্তু সেগুলিই আবার নিরাপদ হয়ে ওঠে যখন আপনি গর্ভবতী নন।এটি আপনার দেহে সাহায্য করার পরিবর্তে আপনার শরীরের ক্ষতি না করে তা নিশ্চিত করার জন্য এই পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে জানতে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্তভাবে আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি যে,যেকোনও ঘরোয়া প্রতিকারকে ওষুধের পরিবর্তে প্রতিস্থাপন করার বদলে সেটিকে একটি সম্পূরক হিসেবে কাজে লাগাতে।

1.ব্যায়াম

বাড়িতেই আপনার রক্ত-চাপকে পরিচালনা করার অন্যতম একটি কার্যকর উপায় হল ব্যায়াম করা,তবে এটি চরম পর্যায়ে করতে হবে না কিন্তু অনড়ভাবে 30 মিনিট ব্যায়াম করা আপনাকে স্বাস্থ্যকর রাখতে এবং আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করার জন্য পরিচিত।অতিরিক্তভাবে,ব্যায়াম করার ফলে পেশীগুলি শিথিল হয়,আপনার শারীরিক দৃঢ়তা প্রদান করে এবং রক্ত প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে।আপনার রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করাকে একটি প্রয়োজনীয়তা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এটিকে ততটা প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার করা হয় না যেহেতু এটি একটি জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয়তা, যা ঘরে বসেও করা যায় স্থির রক্তচাপের স্তর বজায় রাখতে সহায়তা করার জন্য। গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের একটি বাড়তি সুবিধা হ’ল এটি প্রসবকে সহজতর করে তুলতে, ব্যথাকে আরও ভালভাবে পরিচালনা করতে এবং গর্ভাবস্থা ভিত্তিক অবসন্নতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।

2.সোডিয়াম গ্রহণে নিয়ন্ত্রণ আনুন

আপনার রক্ত-চাপকে নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং সেটিকে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করে তুলতে সাহায্যের জন্য ব্যবহৃত অন্যতম একটি প্রাকৃতিক উপায় হল আপনার খাদ্য থেকে নুনকে পরিহার করা অথবা সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করা।যখন আপনি গর্ভবতী,আপনার হরমোনগুলি অত্যাধিক মাত্রায় ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে,এটি আপনার অনাক্রম্যতায় আঘাত করে এবং তাছাড়াও এটি আপনার দেহের প্রাকৃতিক কার্যকারিতাকে হ্রাস করে।এর অর্থ হল নুন বা নোনতা জাতীয় খাবারগুলি প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং হজম করা আরও বেশি কঠিন হয়ে ওঠে এবং যদি নুনটি সঠিকভাবে হজম না হয় বা আপনার খাদ্যে অতিরিক্ত পরিমাণে থেকে থাকে, তবে এটি অত্যাধিক রক্তচাপের প্রবণতা সৃষ্টি করতে পারে।লবণের মাত্রা কমানোর ফলে তা আবার গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরে শক্তির মাত্রা বাড়িয়ে তোলে এবং অনাক্রম্যতা বৃদ্ধিকারী হিসেবে কাজ করে।আপনার ডাক্তারবাবু বিশেষভাবে আপনাকে নুন পরিহার করার নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত,আমরা আপনাকে পরামর্শ দিই এটি গ্রহণের পরিমাণকে হ্রাস করার জন্য,যেহেতু নুনের মধ্যে রয়েছে এমন কিছু প্রাকৃতিক খনিজ যেগুলি পরিমিতভাবে গ্রহণ করা আপনার জন্য স্বাস্থ্যকর।

3.কলা খান

কলা খানগর্ভাবস্থায় প্রতিদিন একটি অথবা দুটি করে কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী,এটি কেবল হজম শক্তির বৃদ্ধিকারী একটি প্রাকৃতিক রেচক ব জোলাপ হিসেবেই কাজ করে না,এটি আবার পটাসিয়ামেও সমৃদ্ধ।এই গুণগুলি কলাকে অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর করে তুলেছে উচ্চ রক্ত-চাপ আছে এমন যেকোনও লোকের জন্য।

4.অ্যাপেল সীডার ভিনিগার

স্বাস্থ্যকর উপাদানগুলির মধ্যে অন্যতম একটি হল অ্যাপল সীডার ভিনেগার বা ACV এবং এটি কোলেস্টেরলের মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটি আবার আপনার রক্তচাপের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে বলেও জানা যায়।আনপাস্তুরাইজড ACV গ্রহণ অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর হিসাবে বিবেচিত হয়। যদিও সতর্ক হওয়া উচিত,যে জল মিশ্রণ বিহীন খাঁটি ACV অত্যন্ত অম্লীয় হতে পারে এবং এটি আপনার কণ্ঠনালী বা খাদ্য নালীকে পুড়িয়ে দিতে পারে এবং এমনকি আপনার পাকস্থলিরও ক্ষতি করতে পারে, এটি প্রস্তাবিত করা হয় যে আপনি প্রতিদিন এক গ্লাস ঈষদুষ্ণ জল এবং মধু্র সাথে বড় এক চামচ ACV গ্রহণ করুন।

5.ম্যাগনেসিয়াম

2011 সালে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালের এক গবেষণা অনুসারে জানা যায় যে, অত্যাধিক রক্তচাপ সম্পর্কিত সমস্যাগুলি পরিচালনা করতে ম্যাগনেসিয়াম সাহায্য করে থাকে।আদতে,বর্তমানে বেশিরভাগ চিকিৎসক পেশাদারেরাই সুপারিশ করেন যে গর্ভবতী মহিলাদের ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন টফু, অ্যাভোকাডো, কলা, আমণ্ড বাদাম এবং সয়া দুধ খাওয়া উচিত কারণ ম্যাগনেসিয়াম কেবল রক্তচাপের একটি স্বাস্থ্যকর মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে না, এটি আবার গর্ভাবস্থায় অকাল সংকোচনকে প্রতিরোধের মাধ্যমে জরায়ুর সম্পূর্ণতা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও একটি বিশাল ভূমিকা পালন করে।

6.চাপ-মুক্ত

আপনি গর্ভবতী হলে,উদ্বেগ,অবসাদ এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি হওয়া সাধারণ ব্যাপার,এগুলির কারণেও আপনার উচ্চ রক্ত-চাপ হয়ে থাকতে পারে।সেই সকল ক্রিয়াকলাপ অনুশীলন করুন যেগুলি আপনাকে শিথিল হতে সাহায্য করবে,যে সকল মহিলারা গর্ভবতী তাদেরকে সারা দিনে কমপক্ষে 3 বার 30 মিনিট করে গান শোনার সুপারিশ করা হয়,আপনার মানসিক চাপ পরিচালনা করতে সাহায্যের জন্য প্রসবপূর্ব যোগা অনুশীলন করুন এবং প্রসবপূর্ব মালিশ গ্রহণ করুন।এটি সুপারিশ করা হয় যে আপনি এমন সংগীত বাছাই করুন যেগুলি ধীর গতি সম্পন্ন মৃদু প্রকৃতির,যার মধ্যে এমন একটি ছন্দ রয়েছে যা আপনাকে শিথিল করে তুলবে কটু ভাবনা-চিন্তা থেকে মুক্ত রাখবে এক্ষেত্রে আপনি জ্যাজ বা ব্লুজ কিম্বা প্রশংসনীয় কোনও শাস্ত্রীয় সংগীত নির্বাচন করুন।

7.অ্যালকোহল বা মাদক দ্রব্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আনুন

অ্যালকোহল বা মাদক দ্রব্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আনুন

গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহলের জটিলতা এত বেশি যে ডাক্তাররা আপনাকে আপনার গর্ভাবস্থার সম্পূর্ণ সময়ের জন্য যে কোনও অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় বর্জন করার পরামর্শ দেন, এর পিছনে অনেকগুলি কারণগুলির মধ্যে একটি হল উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হওয়া। অ্যালকোহল গ্রহণ বিভিন্ন কারণে যে কোনও গর্ভাবস্থাকে জটিল করে তুলতে পারে, যদি আপনার কোনও পানীয় পান করতেই হয় তবে আমরা এক মাসে 10 মিলি ওয়াইন পানের প্রস্তাব দিই।

8.ধূমপান করবেন না

অনেকটা অ্যালকোহলের মতই,ধূমপান করার খারাপ দিকগুলির প্রভাব আপনার দেহের উপর পড়ে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার মাধ্যমে,এমনকি যখন আপনি গর্ভবতী নন তখনও,এটির ফলে ক্যান্সার,ওজন বৃদ্ধি,উদ্বেগ,অবসাদ এবং এমনকি উচ্চ রক্ত-চাপ পর্যন্ত হতে পারে।যখন আপনি গর্ভবতী থাকেন এই ঝুঁকিগুলি আরও চতুর্গুণ বেড়ে যায়।সুতরাং আপনি গর্ভবতী হলে ধূমপান করা থেকে সম্পূর্ণরূপে অব্যহতি নেওয়া হল সবচেয়ে সেরা বিকল্প।

9.ক্যাফিন পরিহার করুন

উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম প্রধান কারণ হল ক্যাফিন গ্রহণ, আমরা আপনার গর্ভাবস্থায় আপনাকে একটি স্বাস্থ্যকর রক্ত-চাপ বা ব্লাড প্রেসার(BP)এর মাত্রা বজায় রাখতে ক্যাফিন গ্রহণে সীমাবদ্ধতা আনতে বা সেটিকে পুরোপুরি ত্যাগ করারি পরামর্শ দিই।

10.মশলাদার খাবার বা জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন

জাঙ্ক ফুড বা মশলাদার খাবারগুলি সাধারণত প্রিজারভেটিভ দ্বারা প্যাকেট করা হয় এবং এটি অত্যন্ত অ-স্বাস্থ্যকর হিসাবে পরিচিত।যদিও এটি আপনার খাদ্যটির প্রতি তীব্র বাসনাকে তৃপ্ত করতে পারে, এটি কিন্তু পুষ্টির এক দুর্দান্ত উৎস নয়। সুতরাং, আপনার গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর থাকতে এবং আপনার রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে জাঙ্ক ফুডগুলি এড়িয়ে চলুন।

উচ্চ রক্ত-চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য উল্লিখিত এই 10 টি ঘরোয়া প্রতিকার কিন্তু জিনগত ভাবে বয়ে চলা উচ্চ রক্ত-চাপজনিত সমস্যায় ভুগে থাকা ব্যক্তিদের নিরাময় করতে পারে না,যদি আপনার ডাক্তারবাবু মনে করেন যে,আপনাকে ব্লাড প্রেসারের জন্য ওষুধ দেওয়ার প্রয়োজন আছে,তবে সেক্ষেত্রে আমরা এই কৌশলগুলিকে ওষুধের সাথে সম্পূরক হিসেবে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকি।গর্ভাবস্থায় আপনার জীবনে রুটিনের মধ্যে কোনও কিছু যোগ বা বিয়োগ করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন।আপনার ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোনওরকম পরিস্থিতেই কোনওরূপ ওষুধ সেবন বন্ধ করা উচিত নয়।এই পদ্ধতিগুলি আবার সাধারণ রক্ত-চাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও দুর্দান্ত।আমরা কঠোরভাবে সুপারিশ করছি যে,আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য উপরে উল্লিখিত যেকোনও পদ্ধতি ব্যবহার করার পূর্বে আপনি সেটিকে ভালভাবে গবেষণা করুন, কারণ কিছু অনিয়ন্ত্রিত কৌশল এবং ডায়েটগুলি আপনার পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।