গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য সেরা 10 টি ঘরোয়া প্রতিকার

গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য সেরা 10 টি ঘরোয়া প্রতিকার

গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া একটা সাধারণ ঘটনা।তবে,বেশিরভাগ মহিলারাই বিব্রতবোধ করেন এবং তাছাড়াও অন্যান্য নানা কারণে তারা এ বিষয়ে কথা না বলাই পছন্দ করে থাকেন।যদিও আপনি উপশমের জন্য ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধগুলি বা প্রেসক্রিপশন ছাড়াই যে ওষুধগুলি কিনতে পাওয়া যায় সেগুলি গ্রহণ করতে চাইতে পারেন,কিন্তু এই পর্যায়ে সেগুলি ক্ষতিকারক হতে পারে এবং আপনি যদি একান্তই ওষুধের খোঁজ করেন,তবে এ ব্যাপারে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করাটাই হবে বুদ্ধিমান বিকল্প।

গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণসমূহ

গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন কারণের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।সেগুলির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হলঃ

১. খাদ্য এবং জল গ্রহণে হ্রাস ঘটা

বেশীরভাগ মায়েরাই মর্নিং সিকনেসের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকেন এবং এটির ফলে তাদের খাদ্য গ্রহণ করা এবং মাঝেমধ্যে এমনকি জল পান করাও মুশকিল হয়ে ওঠে।

২. হরমোনের পরিবর্তন সাধিত হওয়া

প্রোজেস্টেরণ হরমোন উৎপাদনের হার বৃদ্ধির ফলে পাচন প্রক্রিয়ার ধীর গতি সম্পন্ন হয়ে পড়ে।

৩. ডায়েটের পরিবর্তনের ফলে

গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে তাদের ক্রমবর্ধমান সন্তানের জন্য খাদ্য সরবরাহের উদ্দেশ্যে তাদের ডায়েটের মধ্যে একটা পরিবর্তন আনার সুযোগের দিকে ঝোঁক থাকে।এই পরিবর্তনটিও কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।

৪. আয়রণ সম্পূরকের কারণে

গর্ভবতী মহিলাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার অন্যতম আরেকটি কারণ হল নির্ধারিত সম্পূরক হিসেবে আয়রণ গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে।

যদিও কোষ্ঠকাঠিন্য ভীষণই বিরক্তিকর একটা কারণ হয়ে উঠতে পারে,কিন্তু এটি সহজেই প্রতিকার করা যায় কিছু সাধারণ ডায়েট,জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনয়ন এবং কিছু সহজ ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহারের মাধ্যমে।যখন কিছু প্রতিকার গর্ভাবস্থায় তাৎক্ষণিক স্বস্তি প্রদান করে থাকে তখন অন্য উপায়গুলি আপনাকে ধীরে ধীরে ভালো করে তোলে।এখানে কিছু প্রতিকারের উল্লেখ করা হল যেগুলি গর্ভাবস্থাকালে কোষ্ঠকাঠিন্যের উপশমে সাহায্য করে থাকে।

যখন গর্ভবতী কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসার জন্য 10 টি কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার

১. লেবু

হজমের জন্য লেবু দুর্দান্ত,এবং এছাড়াও শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলি এবং অপাচিত খাদ্যবস্তুগুলিকে অপসারিত করতে সাহায্য করে থাকে।আপনি যদি এক গ্লাস ঈষদুষ্ণ জলের সাথে একটি লেবু যোগ করেন এটি আপনার ঘ্রানেন্দ্রিয় এবং স্বাদেন্দ্রিয়কে উদ্দীপিত করে এবং আপনার অন্ত্র সংকোচনকে প্ররোচিত করে যা মল অপসারণে সাহায্য করে।আপনি চাইলে এই ঘন রসটিকে পাতলা করেও নিতে পারেন এর সাথে সামান্য পরিমাণ জল মিশ্রিত করে।এটি লেবুর রসের ঘনত্বকে হ্রাস করে এবং এটিকে সামান্য তরলকৃত করে তোলে।

২. জল

আপনার প্রচুর পরিমাণে জল পান করা উচিত।একদিনে প্রায় 10 গ্লাস জল পান করার সুপারিশ করা হয়ে থাকে।এটি আপনার দেহকে পর্যাপ্ত জল পেতে সাহায্য করে।জল পাচন তন্ত্রের মধ্য দিয়ে খাবারটিকে সুচারুভাবে চলাচল করার বিষয়টিকে নিশ্চিত করে শক্ত মলকে নরম করা শুরু করবে।

জল

৩. সাইট্রাস ফ্রুট(কমলালেবু)

সাইট্রাস ফ্রুট যেমন কমলালেবুতে থাকে উচ্চ তন্তুযুক্ত উপাদান এবং ভিটামিন C.কোষ্ঠকাঠিন্যের একটা বড় কারণ হল আপনার দৈনন্দিন রুটিনে ফাইবার বা তন্তুযুক্ত খাবারের অভাব।আর এটি হল কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অন্যতম সেরা একটি প্রতিকার।একদিনে আপনার প্রায় 30 গ্রাম মত ফাইবার খাওয়া উচিত।আঙুর জাতীয় ফলগুলিতেও আবার উচ্চ তন্তুযুক্ত উপাদান থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় তাই এগুলিকেও গ্রহণ করা যেতে পারে।

৪. আলুবোখরা বা খেজুরের রস

আলুবোখরা বা খেজুরের রস হল কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ের জন্য অন্যতম একটি কার্যকর প্রতিকার।আপনার মলকে নরম করে কোষ্ঠকাঠিন্যকে সহজ করে তুলতে দিনে প্রায় পাঁচবার করে এই রস আপনি খেতে পারেন।আলুবোখরা বা খেজুরের রসের তীব্র স্বাদটি যদি খুব শক্তিশালী হয়ে থাকে তবে সামান্য জল সহযোগে এটিকে কিছুটা পাতলা করে নেওয়া যেতে পারে এবং এর সাথে এক টুকরো লেবু যোগ করে এর স্বাদের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে তোলা যেতে পারে।

৫. ইসবগুলের ভূষি

ভারতে ইসবগুলের ভূষি কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অন্যতম সুপরিচিত একটি ঘরোয়া প্রতিকার। ইসবগুলের ভূষিতে থাকে মিউসিলেজ বা এক ধরনের চটচটে আঠা বিশেষ যা তরল শোষণ করে এবং এই মিউসিলেজ মলের সাথে সংযুক্ত হয়। আপনি যদি এই প্রতিকারটিকে বেছে নেন সেক্ষেত্রে আপনার প্রতিদিন কমপক্ষে 10 গ্লাস জল খাওয়া প্রয়োজন।তবে আপনার যদি কোনও হার্টের রোগ বা রক্তচাপ থাকে তবে আপনার এই প্রতিকারটি বেছে নেওয়া উচিত নয়। এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি শুধুমাত্র ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত হলেই ব্যবহার করা উচিত।

৬. শণবীজ

গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় এটি অন্যতম আরেকটি জনপ্রিয় ঘরোয়া প্রতিকার।শণবীজ খাদ্যগত তন্তুতে ভরপুর যা আপনার ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় রাফেজ যুক্ত করে এবং এছাড়াও এতে রয়েছে ওমেগা-3 গুলি।এমনকি এটি নিরাময় করার জন্য, আপনাকে প্রায় 10 গ্লাস জলের সাথে এই সম্পূরকটি গ্রহণ করতে হবে।এছাড়াও আবার আপনি শণবীজের তেল ব্যবহারের কথাও বিবেচনা করতে পারেন।

শণবীজ

৭. মালিশ

গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া অনিবার্য, তবে আপনার এটিকে অবহেলা করা উচিত নয়, অন্যথায় এটি আরও গুরুতর সমস্যার দিকে এগিয়ে যেতে পারে। পেটে আলতোভাবে চাপ দিয়ে মালিশ করলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। এটি ঘড়ির কাঁটা যে দিকে ঘোরে সেইদিক বরাবর মালিশ করতে হবে। আপনি যদি অকাল প্রসবের অথবা নিম্নবর্তী অমরার মত ঝুঁকিতে অবস্থান করেন তবে সেক্ষেত্রে এই প্রতিকারটিকে এড়িয়ে চলা উচিত।

৮. রিফ্লেক্সোলজি

বহু রোগের জন্য ব্যবহৃত এটি একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার।এটি একটি নিরাপদ পদ্ধতি,যেখানে দেহাঙ্গের বিভিন্ন অনন্য বিন্দুগুলিতে চাপ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত এবং প্রাকৃতিক।আপনার পাচন প্রক্রিয়াকে সহজ করে তুলতে এবং কিছুটা আরাম পেতে আপনার পায়ের পাতার উপরিভাগে ধীরে ধীরে হালকা করে মালিশ করে দেওয়ার জন্য আপনার পরিবারের কারুর কাছে সাহায্য চাইতে পারেন।তবে আপনি যদি একা থাকেন তবে সেক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে উপশম পেতে আপনার হাতের তালুর রিফ্লেক্সোলজি অঞ্চলগুলিকে ব্যবহার করতে পারেন।ঘড়ির কাঁটার ঘূর্ণনের দিক বরাবর আপনার হাতের তালুর কিনারাগুলির চারপাশে মালিশ করার মধ্য দিয়ে আপনার কাজটি চালিয়ে যান।এছাড়াও আপনি আবার আপনার প্রতিটি পায়ের পাতার তলায় একটি করে জলের বোতলকে রাখতে পারেন এবং উপশমের জন্য সেই বোতলকে মেঝের উপর সামনে এবং পিছনে পায়ের পাতার চাপ দিয়ে কিছুটা গড়াতে পারেন।

রিফ্লেক্সোলজি

৯. অ্যাকুপ্রেশার

প্রাচীন নিরাময়ের এই শিল্পটি কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর বলে জানা যায়।
নিরাময়কারী বা সম্পাদনকারীরা বিশ্বাস করেন যে কোষ্ঠকাঠিন্য সাধারণত শক্তির বাধা (Qi) দ্বারা ঘটে থাকে।এই বাঁধাটিকে মুক্ত করার জন্য, আপনার পেটের কেন্দ্রের সঠিক চাপ বিন্দুটি খুঁজে বের করা প্রয়োজন। এটি নাভির প্রায় 5 সেন্টিমিটার মত নীচে অবস্থিত। প্রতিদিন এই বিন্দুটিতে প্রায় 30 মিনিট ধরে ধীরে ধীরে চাপ দিলে তা এক্ষেত্রে কিছুটা সাহায্য করে থাকে।এই প্রতিকারটির প্রয়োগ আপনার গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আপনার যদি অকাল প্রসবের বৈশিষ্ট্য থাকে, তবে এই বিন্দুটিতে প্রায় 30 বার চাপ প্রয়োগ করা প্রয়োজন হতে পারে এবং দিনের বেলা পুনরাবৃত্তি করতে হবে।

১০. ল্যাক্সেটিভ বা জোলাপ বা রেচক ঔষধ

দু-ধরনের রেচক ঔষধ পাওয়া যায়।এক ধরণের ল্যাক্সেটিভ মলের পরিমাণ প্রচুর বাড়িয়ে তোলার সাথে যুক্ত এবং অন্য ধরণটি অন্ত্র সংকোচনকে প্ররোচিত করে।যে ধরণের ল্যাক্সেটিভ মলের পরিমাণ প্রচুর বাড়িয়ে তোলার সাথে যুক্ত সেটি প্রয়োগ করুন জল গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানোর সাথে।তবে,এটি প্রয়োগের ফলে অন্ত্রে খিঁচ ধরতে পারে।নির্বোধের মত ল্যাক্সেটিভের ব্যবহারের ফলে প্রচুর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।সুতরাং,সেগুলিকে অবশ্যই দক্ষতার সাথে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে।জোলাপ দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সাহায্য করে থাকে।আবার দীর্ঘদিন ধরে একনাগাড়ে ল্যাক্সেটিভের ব্যবহার একটি শ্রমবিমুখ অন্ত্র গড়ে তোলে এবং এর ফলে অন্ত্রে মোচড় দেখা দেয়।এই রেচক ওষুধগুলি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের সাথে সর্বদা আলোচনা করে নেওয়া উচিত।

এই সকল ঘরোয়া প্রতিকারগুলি আপনাকে কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য হয়ে থাকা অস্বস্তি থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করতে পারে।এর কোনও ঘরোয়া প্রতিকারেই অথবা এর কোনও বিকল্প নিয়ামক কৌশলে যদি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের উপশমের কোনওরূপ প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে আপনার মনে হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে আপনি আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন,এই পরামর্শই দেওয়া হচ্ছে।