গর্ভাবস্থা

গর্ভাবস্থায় জিরা-জল- এটি কি নিরাপদ?

স্থানীয় ভাবে পরিচিত জিরা উৎপাদন সবচেয়ে বেশি যেমন হয়ে থাকে ভারতে, আবার তা তেমনি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়ও এখানে।জিরা কেবল খাবারের দুর্দান্ত স্বাদ বর্ধক একটি উপাদানই নয়, এটি আবার ভারতীয় রন্ধনশালায় একটি ভেষজ ওষধি হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে।আর সেই কারণেই প্রতিদিনের রান্নায় এই মশলাটির ব্যাপক ব্যবহার সুস্পষ্ট।জিরাজল পান করাও স্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন এবং সেই সময় আপনার গর্ভাবস্থাকালীন ডায়েটে জিরাজল অন্তর্ভূক্ত করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার দুবার সে ব্যাপারে ভাবতে হতে পারে।একজন অন্তঃসত্ত্বা মা হওয়ার দরুণ, গর্ভাবস্থায় আপনি যাই খাবেন সে ব্যাপারে আপনার বিশেষ সচেতন হওয়াটা জরুরি।আপনি হয়ত শুনে থাকতে পারেন যে জিরা বেশ উপকারী, কিন্তু তাই বলে কি সেটা গর্ভাবস্থার জন্যও নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর? অতএব গর্ভাবস্থাকালে জিরাজল পান করা উচিত কিনা তার সন্ধান পেতে নিবন্ধটি পড়ুন।

গর্ভাবস্থায় জিরাজল পান করাটা কি নিরাপদ?

ভারতবর্ষে, অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই তাদের দৈনন্দিন রান্নায় জিরা ব্যবহারের বেশ ভাল একটা চল রয়েছে।সীমিত পরিমাণে জিরা সেবন করাকে গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক ও নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় কিন্তু এর অত্যধিক গ্রহণ গর্ভবতী মহিলাদের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে।সুতরাং জিরাজল পান করা অবশ্যই এড়িয়ে চলা উচিত।এটি বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য নিরাপদ নয়, যেহেতু খুব বেশি জিরা (জিরাজল রূপে)গ্রহণ করলে তা গলাবুক জ্বালা কিম্বা শারীরিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির মত কয়েকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।

জিরার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি

গর্ভাবস্থায় যদি সঠিক মাত্রায় জিরা সেবন করা যায় তবে তা সেক্ষেত্রে বেশ উপকারী হয়ে উঠতে পারে।তবে এর খুব বেশি মাত্রায় সেবন আবার বেশ কিছু বিশেষ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ারও কারণ হয়ে উঠতে পারে।বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভোগা মহিলারা অতিরিক্ত পরিমাণে জিরা গ্রহণ করলে সেক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।গর্ভাবস্থায় অত্যধিক জিরা খাওয়ার কিছু সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এখানে উল্লেখ করা হলঃ

  1. যদি এটি খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া হয় তবে জিইআরডিতে ভোগা ব্যক্তিদের মধ্যে তা গলাবুক জ্বালা অম্বল দেখা দেওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
  2. এটা আবার কিছু মহিলার দৈহিক তাপমাত্রাকেও বাড়িয়ে তোলে, যা গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব ফেলতে পারে।
  3. খুব বেশি জিরা সেবন ক্রমাগত ঢেকুর ওঠারও কারণ হয়ে উঠতে পারে।
  4. অত্যধিক জিরা সেবনের ফলে তা লিভার এবং কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
  5. রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকা মহিলাদের জন্য এটি নিরাপদ নয় কারণ জিরা গ্রহণ করলে তা রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে।তবে উচ্চ রক্ত শর্করা যুক্ত মহিলাদের পক্ষে এটি নিরাপদ হতে পারে।
  6. জিরা নামক মশলাটির প্রতি অ্যালার্জি আছে এমন মহিলাদের মধ্যে এটি থেকে আবার স্কিন র‍্যাশ বা ত্বক জনিত ফুসকুড়িগুলিও দেখা দিতে পারে।

গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা প্রয়োজন এরকম আরও অন্যান্য মশলাগুলি

এখানে আরও অন্যান্য কিছু মশলার একটি তালিকা দেওয়া হল যা গর্ভাবস্থার পক্ষে ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারেঃ

1.মেথি দানা

মেথি দানাগুলি গ্যাস এবং ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে আর তাছাড়াও পাচনতন্ত্রকেও প্রভাবিত করতে পারে।আবার জরায়ুর উপরেও এর একটা উদ্দীপক প্রভাব রয়েছে, আর তাই গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটির পরামর্শ দেওয়া হয় না।

Related Post

2.রসুন

খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া হলে রসুন, অম্লতা এবং গলাবুক জ্বালা বা হৃদয় জ্বলনের কারণ হয়ে উঠতে পারে।অতএব, গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে খুব বেশি রসুন খাওয়া এড়িয়ে চলাই উচিত।

3.পিপারমিন্ট বা মেন্থল

যদিও পিপারমিন্ট বা মেন্থল কোনও প্রকার মশলার মধ্যে পড়ে না, বিভিন্ন ধরণের খাদ্যপদের মধ্যে এটিকে স্বাদ ও গন্ধ বর্ধক একটি উপাদান হিসেবেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে।পিপারমিন্ট বা মেন্থল জরায়ুকে শিথিল করতে পারে, সুতরাং গর্ভাবস্থায় এটিকে এড়িয়ে চলাই সবচেয়ে ভাল, বিশেষ করে পিপারমিন্ট বা মেন্থলচা রূপে।

4.হিং

খুব বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা হলে এটি গর্ভপাতের মত দুঃসহ ঘটনার কারণ হয়ে উঠতে পারে।অতএব গর্ভাবস্থায় যতটা সম্ভব এটিকে গ্রহণ করা থেকে সংযত ও দূরে থাকার চেষ্টা করুন।

যদিও জিরাজল গর্ভাবস্থায় নিরাপদ নাও হয়ে থাকতে পারে, তবে প্রসবের পর সেটি উপকারী হয়ে উঠতে পারে।যাইহোক, যেকোনও মশলারই অতিরিক্ত সংযোজন এড়িয়ে চলা উচিত, যেহেতু শরীরের উপর সেগুলির একটি তীব্র প্রভাব রয়েছে, আর জিরাও সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়।

Share
Published by
দেবশ্রী ব্যানার্জী