গর্ভাবস্থায় দই সেবন করা-এটি কি নিরাপদ?

গর্ভাবস্থায় দই সেবন করা-এটি কি নিরাপদ?

গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য দই হল একটি স্বাস্থ্যকর জলখাবার।এটি ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিনের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর উপাদানে ভরপুর,যেটি গর্ভাবস্থার জন্য চমৎকার, কারণ গর্ভাবস্থায় প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি হয়।পাস্তুরাইজড দুধ থেকে তৈরী হলে এবং মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে খাওয়া পর্যন্ত দইকে স্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।গর্ভাবস্থায় দই খাওয়ার উপকারিতাগুলি সম্পর্কে আরও জানতে আগে আরও পড়ুন।

দইয়ের পুষ্টি মান

দই দুধ থেকে প্রস্তুত হওয়ার কারণে,এটিতেও দুধের অনুরূপ পুষ্টি মান আছে।একবার দই পরিবেশন থেকে প্রাপ্ত পুষ্টিগুলির উল্লেখ নীচে করা হল।এর শতকরা মানগুলি নির্দেশ করে প্রতি পরিবেশনে কতটা খাদ্যগত পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করা প্রস্তাবিত।প্রতি 100 গ্রাম দইয়ে থাকা পুষ্টি তথ্যটি নিম্নরূপঃ

পুষ্টি উপাদান পরিমাণ % পুষ্টি উপাদান পরিমাণ %
মোট ফ্যাট 0.4g 0% খাদ্যগত তন্তু 0g 0%
সম্পৃক্ত ফ্যাট 0g 0% শর্করা 4g 16%
ট্রান্স ফ্যাট 0g 0% প্রোটিন 15g 30%
কোলেস্টেরল 5mg 1% ভিটামিন A 0g 0%
পটাসিয়াম 210mg 6^ ভিটামিন C 0g 0%
সোডিয়াম 55mg 2% ক্যালসিয়াম 300mg 15%
মোট কার্বোহাইড্রেট 6g 2% আয়রণ 0g 0%
ক্যালোরি 80Kcal 4% ফ্যাট থেকে ক্যালোরি 0 0

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য দই কি নিরাপদ?

পাস্তুরাইজড এবং পরিশোধিত না করা কাঁচা-এই দুই ধরণের দুধ দিয়েই দই তৈরী করা যেতে পারে।মহিলারা প্রায়শই চিন্তা করে থাকেন যে গর্ভাবস্থায় দই খাওয়া ভাল কিনা।এর উত্তর হল ‘হ্যাঁ’, যতক্ষণ সেটি পাস্তুরাইজড দুধ দ্বারা প্রস্তুত হয়ে থাকে।

গর্ভাবস্থায় দই সেবনের উপকারিতাগুলি

গর্ভাবস্থায় দই খাওয়ার উপকারিতাগুলির কথা এখানে আলোচনা করা হলঃ

1. হজমের উন্নতি ঘটায়

দই হল অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যাকটেরিয়ায় ভরপুর। এটিআবার পাচনতন্ত্রেরদ্বারাখাদ্যেরসামগ্রিকহজমএবংতার মধ্যস্থ পুষ্টিরশোষণেউন্নতি ঘটায়।এটিতেপ্রোবায়োটিকব্যাকটিরিয়ারয়েছেযাভালহজমের সহায়ক।

2. শরীর ঠাণ্ডা রাখে

যখনই আপনি কোনও মশলাদার খাবার খাবেন সেগুলির সাথে অল্প কিছুটা দইও আপনার খাবারের সাথে যোগ করুন।এটি মশলাদার খাবারের প্রভাবটিকে হ্রাস করে এবং তার ফলে অ্যাসিডিটি এবং গলা-বুক জ্বালা-অম্বল এড়াতেও সহায়ক হয়। গর্ভাবস্থায় নানা রকম মশলাদার খাবার খাওয়ার বাসনা বেড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক, সুতরাং সেই সকল খাবারগুলির পাশাপাশি কিছুটা দই রাখাও সর্বদাই একটি ভাল ধারণা হয়ে ওঠে।

3.ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ

দই ক্যালসিয়ামে ভরপুর এবং নিয়মিত খাদ্য গ্রহণের প্রস্তাবিত পরিমাণের অর্ধেক পূরণের জন্য এর তিনটি পরিবেশনই একদিনের জন্য যথেষ্ট।ভ্রূণের হাড় এবং দাঁত গঠণের জন্যও ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ, এছাড়াও এটি শরীরের আরও অন্যান্য ক্রিয়াকলাপগুলিতেও একটি মূখ্য ভূমিকা পালন করে।আবার এর পাশাপাশি শরীরে ভিটামিন D শোষণের ক্ষেত্রেও ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ।

4.অনাক্রম্যতার উন্নতি ঘটায়

দইয়ে ভাল ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত থাকার কারণে এটি পেটের সমস্যা এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।দই প্রোবায়োটিকের সংখ্যা বৃদ্ধি করে যা অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ফ্লোরা পুনরুদ্ধার করে এবং হজমের উন্নয়নের সময় যেকোনও রোগে স্বস্তি আনে।

অনাক্রম্যতার উন্নতি ঘটায়
5.উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সহায়তা করে

উচ্চ রক্তচাপ গর্ভাবস্থায় হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা যা মা এবং সন্তান উভয়ের উপরেই খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।দই খেলে তা রক্তচাপ কমায় এবং দেহকে প্রশমিত করে।এছাড়াও এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে এবং তা হৃদয়ের স্বাস্থ্যের জন্যও ভাল।

6.মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ লাঘব করে

গর্ভাবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠাটা স্বাভাবিক এবং এক্ষেত্রে এমন অনেক গর্ভবতী মহিলাদের দেখা যায় যারা মানসিক চাপে ভুগে থাকেন।দই হল একটি প্রশমনকারী খাদ্য, যেটি স্বাস্থ্যকর এবং আইসক্রীম, কেকের মত অন্যান্য রসস্বাদনকারী ডেজার্ট জাতীয় খাদ্যের একটি দুর্দান্ত বিকল্প।

7.শুষ্ক ত্বক এবং ত্বক-রঞ্জকের(পিগমেন্টেশন)বিরুদ্ধে লড়াই করে

গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন এবং অসামঞ্জস্যতা অনেক গর্ভবতী মহিলার মধ্যে অবাঞ্ছিত ত্বকের ট্যান পড়া এবং শুষ্ক দাগের সৃষ্টি করে।ভিটামিন E-তে পরিপূর্ণ দই, ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখতে এবং পিগমেন্টেশন প্রতিরোধ করতে পারে।

8.দেহস্থ সঠিক ওজন বজায় রাখে

যদিও ওজন বৃদ্ধিকে গর্ভাবস্থার একটি ভাল লক্ষণ হিসেবে দেখা হয়, কিন্তু অতিরিক্ত ওজন আবার সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।দীর্ঘমেয়াদে মা এবং শিশু উভয়েরই ওজন বাড়িয়ে তুলতে পারে এমন ধরণের স্ট্রেস হরমোন, কর্টিসল শরীরের মধ্যে বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে দই।

9.মাংস পেশীর জন্য ভাল

দই হল প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য যা মাংস পেশীর বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।পেশীর সংকোচনে ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, আর এই কারণে দই মাংস পেশীর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

গর্ভাবস্থায় প্রোবায়োটিকপূর্ণ দই

আমাদের অন্ত্রে শত শত ধরণের প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া বাস করে যারা আমাদের পাচন তন্ত্রের ক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনা করে থাকে।গর্ভাবস্থায় পাচন ক্ষমতা হ্রাস পায়, যার ফল স্বরূপ কোষ্ঠকাঠিণ্য দেখা দেয়।যেহেতু দই হল প্রোবায়োটিকের এক পরিপূর্ণ আধার তাই এই সময়ে এটি পাচন নালীর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে বিপুল সাহায্য করে।

কি ধরণের দই খাবার জন্য ভাল?

যেকোনো ধরণের দই যা পাস্তুরাইজড দুধ থেকে তৈরী তা খাওয়ার জন্য সব থেকে ভাল।বাজারে প্রচলিত বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত সমস্ত ধরণের পুষ্টি পদার্থপূর্ণ যেগুলো পাস্তুরাইজড এবং কম ফ্যাট যুক্ত দুধ থেকে প্রস্তুত সেটি গ্রহণ করাই হল আদর্শ।

একজন গর্ভবতী মহিলা সারাদিনে কতটা পরিমাণ দই খেতে পারেন?

সমস্ত ধরণের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলি পাওয়ার জন্য দৈনিক 600 গ্রাম দই খাওয়া সর্বোত্তম।প্রতিবারে 200 গ্রাম করে মোট তিনবারে এটি গ্রহণ করাই শ্রেয়।

গর্ভাবস্থায় কি কি ধরণের দই খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত?

আপনার গর্ভদশায় দুই ধরণের দই খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।প্রথমত যেটি পাস্তুরাইজড নয় এমন কাঁচা দুধ থেকে প্রস্তুত দই।যেহেতু এই ধরণের দই থেকে লিস্টেরিয়া জাতীয় অসুখ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।অবশ্যই এটাকে বর্জন করা উচিত।আর দ্বিতীয়টি হল অতি ফ্যাটযুক্ত দই যা আপনার অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি করবে।

বিভিন্ন ফ্লেভারযুক্ত দই সেবন করা কি নিরাপদ?

সাধারণত বিভিন্ন স্বাদের দই খাওয়া কোনও ক্ষতিকারক নয়।যদি সেটি কম মিষ্টি, কম ফ্যাট যুক্ত এবং প্রাকৃতিক উপকরণ দ্বারা প্রস্তুত হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে বিভিন্ন স্বাদের দইগুলি না খাওয়ার কোনও কারণই নেই।কিন্তু আপনি যদি ওজন বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত রাসায়নিকগুলি যোগ করার ব্যাপারে চিন্তিত হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনি একজন সৃজনশীল হয়ে উঠতে পারেন এবং আপনার নিজের পছন্দ মত স্বাদগুলি দইয়ের সাথে যোগ করতে পারেন।ঘরেতে আপনার নিজের প্রস্তুত করা দইয়ের সাথে বেরী, তাজা ফলেরে খণ্ড, মধু অথবা প্রাকৃতিক কোনও মিষ্টতা যোগ করাই হল আদর্শ।

মনে রাখার বিষয়গুলি

পাস্তুরাইজড দুধ থেকে প্রস্তুত দই আপনার খাদ্য তালিকায় সংযুক্ত করা উপকারী যেহেতু এটি প্রচুর পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে।

কম ফ্যাটের দই সেবন করা সর্বোত্তম কারণ এটি অহেতুক ওজন বৃদ্ধি হ্রাস করে।অতিরিক্ত মিষ্টিযুক্ত দই গ্রহণ করা এড়িয়ে চলাই হল বুদ্ধিমানের কাজ।

আপনি যদি বাজার চলতি ফ্লেভারযুক্ত দই সেবন করা এড়িয়ে চলতে চান, আপনি নিজের পছন্দানুযায়ী ফল এবং প্রাকৃতিক মিষ্টিগুলি ব্যবহার করে নিজেই নিজের পছন্দের স্বাদের দই তৈরী করে নিতে পারেন।

দই দ্বারা প্রস্তুত সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর স্মুদির রেসিপি

বিভিন্ন ধরণের স্মুদিগুলি হল আপনার প্রতিদিনের পুষ্টিগুলি পরিপূরণ করে তোলার একটি চমৎকার সুস্বাদু উপায়।এর সবচেয়ে ভাল দিকটি হল, আপনার পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা এবং স্বাদ মেটাতে আপনি সেই সকল উপকরণগুলিই এর সাথে যোগ করতে পারেন যেগুলি আপনি পছন্দ করেন, যার পরিব্যাপ্তি হতে পারে বিভিন্ন ধরণের বাদাম থেকে শুরু করে শুকনো ফল, তাজা ফল এবং আমনকি সবুজ শাক-পাতাও। এখানে একটি সহজ অথচ সুস্বাদু স্মুদির রেসিপি উল্লেখ করা হল যা দিয়ে আপনি দিনের সূচনা করতেই পারেন!

উপকরণ

  • 1/2 কাপ দই
  • 1 কাপ স্ট্রবেরী
  • 1/2 কলা
  • 4-5 টি আমণ্ড বাদাম
  • 2 চা-চামচ শণ বীজ
  • 2 চা-চামচ কুমড়োর দানা
  • 1/2 চা-চামচ ভ্যানিলার নির্যাস
  • পাস্তুরাইজড দুধ(যদি প্রয়োজন হয়)

কীভাবে প্রস্তুত করবেনঃ

  • একটি ব্লেন্ডারের মধ্যে শণের বীজ এবং কুমড়োর বীজগুলি নিয়ে সেগুলিকে পাউডারের মত গুঁড়ো করে নিন।
  • এর সাথে এরপর দই, ভ্যানিলার নির্যাস এবং আমণ্ড বাদাম যোগ করে ব্লেণ্ড করে নিন যতক্ষণ না সেটি একটি মসৃণ হয়ে ওঠে।
  • এবার এর সাথে কলা এবং স্ট্রবেরী যোগ করে পুনরায় এটিকে ব্লেন্ড করে নিন যতক্ষণ না সেটি স্মুদির ন্যায় একটি মসৃণ ঘনত্বে আসে।এরপর এর সাথে প্রয়োজন মত দুধ যোগ করুন।
  • এভাবে প্রস্তুত করার পর সেটির উপরে স্ট্রবেরীর টুকরো যোগ করে পরিবেশন করুন।

দই গর্ভবতী মহিলার খাদ্য তালিকায় একটি উচ্চ পুষ্টিকর এবং নিরাপদ সংযোজন হয়ে উঠতে পারে।সুতরাং, এটি সাধারণভাবে সাদা দই হিসেবে অথবা কোনও কিছুর সাথে মিশ্রিত করে সেটিকে আরও সুস্বাদু করে তুলে আপনার পছন্দের দইটিকে আস্বাদন করুন!