গর্ভাবস্থায় দাঁত ব্লিচ করানো-এটি কি নিরাপদ?

গর্ভাবস্থায় দাঁত ব্লিচ করানো-এটি কি নিরাপদ?

গর্ভাবস্থা একজন মহিলার দেহের এমন পরিবর্তন ঘটায় যা সে হয়ত কখনও কল্পনাও করতে পারে না, যার জন্য আপনার খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রাসবকিছুতেই পরিবর্তন আসে।মূল যে বিষয়টি মনে রাখা প্রয়োজন তা হল, এই নয় মাস যাবৎ আপনি যে যে শারীরিক পরিবর্তনগুলি অতিক্রম করেন সেগুলি সবই অস্থায়ী এবং সম্পূর্ণরূপে মূল্যবান।আপনি আবার হয়ত গর্ভাবস্থায় আপনার দাঁতগুলিকে বিবর্ণ কিম্বা ছোপ দাগযুক্ত হয়ে থাকতে লক্ষ্য করতে পারেন, প্রায় সকল গর্ভবতী মহিলাই এই সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন।এ সমস্যার মোকাবিলা করতে আপনি যদি আপনার দাঁতগুলিকে ব্লিচ করার কথা চিন্তা করে থাকেন তবে সাবধানতার সাথে সেটি করুন।প্রথমে খোঁজ নিয়ে দেখুন যে গর্ভাবস্থায় আপনার দাঁত ব্লিচ করাটা নিরাপদ কিনা

দাঁত ব্লিচ করাটা আসলে কি?

দাঁত ব্লিচ করা হল দাঁত সাদা করার একটি কৌশল যে প্রক্রিয়ায় দাঁতগুলি ঝকঝকে এবং উজ্জ্বল করে তোলা হয়।আপনার দাঁত ব্লিচ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারার মত দুটি ডেন্টাল বা দাঁত সংক্রান্ত বিকল্প আছে।আপনি দাঁত সাদা করার টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারেন অথবা পেশাদারের সহায়তায় আপনার দাঁতগুলি সাদা করে তুলতে পারেন।দুটি কৌশলেই দাঁত ব্লিচ করতে বিভিন্ন ঘনত্বে পারক্সাইড ব্যবহার করা হয়।

গর্ভাবস্থাকালে আপনি কি আপনার দাঁতগুলিকে ব্লিচ করাতে পারেন?

গর্ভাবস্থাকালে আপনি কি আপনার দাঁতগুলিকে ব্লিচ করাতে পারেন?

গর্ভবতী থাকাকালীন আপনার দাঁত সাদা করাটা কি নিরাপদ?এই প্রশ্নের কোনও পরিষ্কার উত্তর নেই, গর্ভাবস্থায় আপনি আপনার দাঁত সাদা করতে পারেন, কিন্তু সেটি করা এড়িয়ে চলাই সর্বোত্তম।প্রাথমিক অবস্থায় গর্ভাবস্থা কোনও সহজ পর্যায় নয়, সুতরাং সম্ভাব্য স্বাস্থ্য জটিলতাগুলি আছে এমন ক্রিয়াকলাপগুলি করা কখনই একটি সমীচীন ধারণা হতে পারে না।আবার সেরকমই এমন কোনও গবেষণা হয় নি যা গর্ভাবস্থায় দাঁত ব্লিচ করার ভয়ানক প্রভাব নিশ্চিত করে।তবে শরীরে একটি নির্দিষ্ট ঘনত্বের উপরে পারক্সাইডগুলির প্রভাব কলায় আঘাতের কারণ হিসেবে দেখা গেছে।এটি বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ যখন পারক্সাইড যুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করা হয়, যেখানে এটি গিলে ফেলার উচ্চ সম্ভাবনা থাকে।সবচেয়ে ভাল ব্যাপার হল প্রসব না হওয়া পর্যন্ত ব্লিচিং চিকিৎসা পদ্ধতিটিকে বিলম্বিত করে রাখা।

গর্ভাবস্থাকালীন জিঞ্জিভাইটিস এবং দাঁত সাদা করা

সন্তানের জন্মদানের পর আপনার দাঁত সাদা করার আরও একটি কারণ হল গর্ভাবস্থাকালীন জিঞ্জিভাইটিস।গর্ভাবস্থায় নিরন্তর হরমোনের পরিবর্তন হওয়ার কারণে এই অবস্থাটির জন্য মাড়িতে প্রদাহ হয়ে থাকে।এই সকল হরমোনগুলি মাড়িতে রক্ত প্রবাহের মাত্রা বৃদ্ধি করে যা সেগুলিতে প্রদাহ এবং রক্তক্ষরণের প্রবণতা গড়ে তোলে। দাঁতের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার দ্বারা আপনি এটি এড়িয়ে চলতে পারেন, কিন্তু দাঁত সাদা করার জন্য ব্লিচ করানোর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত পারক্সাইড আপনার সংবেদনশীল মাড়িগুলিকে ইতিমধ্যেই আরও খারাপ করে তুলতে পারে।

প্রাকৃতিক টিথ হওয়াইটনার বা দাঁত শুভ্রকারী বস্তু যেগুলি গর্ভাবস্থায় ব্যবহারের পক্ষে নিরাপদ

আপনার দাগ ধরা বা বিবর্ণ দাঁতগুলি যদি আপনার আত্মসম্মানে আঘাত হানে এবং সেই কারণে আপনি যদি আপনার গর্ভাবস্থায় দাঁত সাদা করানোর কথা চিন্তা করে থাকেন, তবে আপনি তা করতে পারেন…কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রাকৃতিক টিথ হওয়াইটনারগুলিই ব্যবহার করুন।নিম্নে গর্ভাবস্থায় জন্য নিরাপদ দাঁত সাদা করার কৌশলগুলির একটি তালিকা দেওয়া হল যেগুলি আপনি ব্যবহার করতে পারেনঃ

1.স্ট্রবেরী এবং বেকিং সোডা

একটি তাজা স্ট্রবেরী নিন এবং সেটিকে একটি বাটির মধ্যে চটকে নিন।এর মধ্যে প্রায় আধ চাচামচ বেকিং সোডা যোগ করুন।এবার এই মিশ্রণটিকে আপনার দাঁতে প্রয়োগ করার জন্য আপনার আঙুল বা টুথব্রাশ ব্যবহার করুন।পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর মিশ্রণটি ধুয়ে ফেলুন এবং তারপর ব্রাশ এবং যথাযথভাবে ফ্লস করুন দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা যোকোনও টুকরো বা দানাকে দূর করার জন্য।তবে এটি খুব বেশি দিন ধরে চালিয়ে না যাওয়া নিশ্চিত করুন, কারণ স্ট্রবেরীর ম্যালিক অ্যাসিডটি আপনার দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করতে পারে।একটি হালকা বেকিং সোডা কার্যকর ভাবে দাঁতের কিছু দাগ দূর করতে পারে।

2.কমলার খোসা

কমলার খোসা

আপনি একটা কমলালেবুর খোসা নিতে পারেন এবং সেটি দিয়ে আপনার দাঁত মাজতে পারেন।আপনার দাঁতের সামনে এবং পিছনে উভয় দিকই সেটি দিয়ে ভালভাবে মাজাকে নিশ্চিত করুন।কয়েকবার এটি পুনরাবৃত্তি করার পর আপনার মুখটিকে ভালভাবে কুলি করে ধুয়ে নিন।কমলায় উপস্থিত ফলের হালকা অ্যাসিড এবং ভিটামিন C দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য দুর্দান্ত এবং কোনওরকম বিবর্ণতা বা দাগ ধরা দূর করার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে।

3.লেবুর রস এবং লবণ

একটি পাতি লেবু নিয়ে তার রস চিঁপে নিন এবং তার সাথে আধ চাচামচ লবণ যোগ করে ভালভাবে মিশিয়ে নিন।এই মিশ্রণটি দিয়ে সবদিক থেকে ভালভাবে আপনার দাঁতগুলি ঘষে নিন।আপনার মাড়ি যদি সংবেদনশীল হয়ে থাকে অথবা আপনি যদি আপনার ডায়েটে লবণের পরিমাণ হ্রাসের প্রয়াস চালান, সেক্ষেত্রে এই কৌশলটি একদমই ব্যবহার করবেন না।

4.হলুদ

আপনার ভিজে টুথ ব্রাশের উপর কিছুটা হলুদ গুঁড়ো নিন এবং সেটি দিয়ে বৃত্তীয় গতিতে ধীরে ধীরে আপনার দাঁতগুলি ব্রাশ করুন।এটি আপনার জামাকাপড়ে দাগ ধরিয়ে দিতে পারে সুতরাং সাবধানতার সাথে এটি করুন।

5.আপেল সীডার ভিনিগার

আপেল সীডার ভিনিগারের(ACV) মধ্যেও রয়েছে ম্যালিক অ্যাসিড ঠিক স্ট্রবেরীর মতই।আপনি এই তরলটিকে আপনার দাঁতে প্রয়োগ করতে পারেন এবং কয়েক মিনিট পরে সেটিকে কুলি করে ধুয়ে ফেলুন।তবে আপনার দাঁত মাজার আগে কয়েক মিনিটের জন্য অপেক্ষা করুন অন্যথায় আপনি দাঁতের ক্ষয় অনুভব করতে পারেন।

আপনার দাঁত সাদা করার জন্য যেকোনও নতুন পন্থা খোঁজার পূর্বে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে একবার আলোচনা করে নিন।এছাড়াও আবার আপনি গর্ভাবস্থায় দাঁত ব্লিচিং সম্পর্কিত আপনার বিকল্পগুলি সম্পর্কে আপনার দন্ত বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করে নিতে পারেন।অন্য আরেকটি উপায় হল নিয়মিত ভিত্তিতে আপনার দন্ত চিকিৎসকের সাথে সাক্ষাৎকারের কথা মাথায় রাখা যাতে আপনার দাঁতে পড়া ছাতা বা হলদেটে শক্ত ফলক যা আপনার দাঁতগুলিতে দাগ সৃষ্টি করে, সেগুলিকে পরিষ্কার করা যেতে পারে।তাছাড়াও অকাল প্রসব এবং কম ওজনের নবজাতকের জন্মের দিকে পরিচালিত করে এমন ধরণের দাঁত সংক্রান্ত পর্যায়ক্রমিক ব্যাধিগুলির দিকে আপনার দন্ত চিকিৎসকের সজাগ দৃষ্টি বজায় রাখাটাও গুরুত্বপূর্ণ।