In this Article
বেশীরভাগ ক্রান্তীয় দেশগুলিতে ঐতিহ্যগত ভাবে রান্নায় নারকেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।গর্ভাবস্থায় নারকেল দুধ, নারকেল তেল এবং নারকেল খাওয়া এবং বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করার সাথে জড়িত সুবিধা এবং ঝুঁকিগুলির ব্যাপারে আজকাল প্রচুর উন্মাদনা গড়ে উঠেছে।
গর্ভাবস্থায় নারকেল খাওয়ার অত্যাশ্চার্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি
প্রতিটি মানুষেরই শারিরীক অবস্থা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় প্রত্যেকেরই ঠিকমত খাওয়া প্রয়োজন।মা কি খাচ্ছে তার উপর নির্ভর করে গর্ভস্থ শিশুটি পুষ্ট হয়ে ওঠে।চলুন দেখা যাক গর্ভাবস্থায় নারকেল খাওয়ার উপকারিতাগুলি কিঃ
- নারকেল– খাদ্যমধ্যস্থ তন্তু বা ডায়াটরি ফাইবার, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বিভিন্ন খনিজ, হরমোন, উৎসেচক ইত্যাদিতে সমৃদ্ধ।রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া, মুত্রনালীর সংক্রমণ, প্রাতঃকালীন অসুস্থতা এবং কম রক্ত সঞ্চালনের কারণে পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া রোধ করতে সংযমের সাথে নরম নারকেল খেলে তা দারুণ কাজ করে।
- নারকেল মধ্যস্থ ফ্যাটগুলি হল মাঝারি–ট্রাইগ্লিসারাইড শৃঙ্খল এবং এগুলি দেহস্থ ফ্যাট দহনে সহায়তা করে বলে জ্ঞাত।সুতরাং গর্ভাবস্থায় নারকেল দুধ ভাল ফ্যাটের একটা দুর্দান্ত উৎস হিসেবে কাজ করে, একটি সুস্থ শিশুর বৃদ্ধিকে প্ররোচিত করে আর প্রস্রাব এবং স্তনদুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
- একটি কোল্ড প্রেস ব্যবহার করে নারকেল থেকে নারকেল তেল পাওয়া যায়।আর এর সাথে হিটিং, ব্লিচিং, ডিওডোরাইজিং ইত্যাদির মত কোনও প্রক্রিয়া জড়িত না থাকায়, এটিকে ভার্জিন বা বিশুদ্ধ নারকেল তেল বলা হয়ে থাকে।
- রান্নায়, ত্বকের যত্নে এবং তৈলাক্তকরণে অন্যান্য জিনিসগুলির সাথে এটিকেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- গর্ভ দশায় নারকেল তেল ব্যবহার করলে তা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং গর্ভাবস্থার কারণে হয়ে থাকা পেটের প্রসারণ রেখা দেখা দেওয়া এবং চুলকানো রোধ করে।এর মধ্যে থাকা ভাল পরিমাণ ভিটামিন E এবং লরিক অ্যাসিড এটিকে, সমগ্র গর্ভাবস্থাকাল ব্যাপী এবং গর্ভদশার পরবর্তীতেও সুন্দর হয়ে ওঠার এক গোপন প্রণালী করে তুলেছে।
- নারকেল জলে থাকে 94% জল এবং মোটের উপর কম ক্যালোরি।গর্ভাবস্থায় নারকেল জল পান করলে তা রক্তের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে, জলশূণ্যতা বা ডিহাইড্রেশন, ক্লান্তি এবং বমি বমি ভাব রোধ করে আর খুব সহজে হজম হয় এবং রক্তের মাধ্যমে শোষিত হয়ে যায়।
- নরম নারকেল একটা রেচক হিসেবে কাজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে।
- ভিটামিন B, পটাসিয়াম, ইলেক্ট্রোলাইট, অ্যামাইনো অ্যাসিড, উদ্ভিজ্জ হরমোন এবং এনজাইমের একটি ভাল উৎস বলে নারকেলকে মনে করা হয়।এটি একটি অ্যান্টঅক্সিডেন্ট, এবং ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করার ক্ষেত্রে দাবিদার।
- ত্বকের টান এবং স্থিতিস্থাপকতার উন্নতি ঘটাতে এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে এছাড়াও ত্বকের কোনও চুলকানির সমস্যাতেও কাজে আসে।
- নারকেলের মধ্যে শোষণযোগ্য আয়রণের উপস্থিতির কারণে এটি উদর স্ফীতি, হৃদয় জ্বলন বা অম্বল এবং রক্তাল্পতা মোকাবিলায় সহায়তা করে।গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে অ্যানিমিয়া দেখা দেওয়াটা অত্যন্ত সাধারণ একটা ঘটনা এবং তা মা এবং বাচ্চা উভয়ের ক্ষেত্রেই বিপর্যয়কর পরিণামগুলি ডেকে আনতে পারে।
- নারকেলের জলে থাকে লরিক অ্যাসিড যা স্তন দুধের পরিমাণ বৃদ্ধিতে এবং স্তনের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় নারকেল খাওয়ার সাথে জড়িত জটিলতাগুলি
গর্ভাবস্থায় স্বল্প পরিমাণে নারকেল সেবন ক্রমবর্ধিত শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য নানাবিধ উপকারিতা নিয়ে আসে।তবে এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি জটিলতাও থাকতে পারে যেগুলি আপনার বিবেচনা করা প্রয়োজনঃ
- নারকেল সমৃদ্ধ ডায়েটের দীর্ঘকাল ব্যবহারের ফলে স্থূলকায় মহিলাদের মধ্যে ডাইস্লিপিডেমিয়ার মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে যা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে।
- কিছু মানুষ অ্যারেস্যাসি বা নারকেল পরিবারের গাছগুলি এবং পোলেনে অ্যালার্জিপ্রবণ হয়ে থাকতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় নারকেল জলের ব্যাপারে জনশ্রুতিগুলি
1.জনশ্রুতিঃ নারকেল জল বাচ্চাকে আরও পরিষ্কার করে তোলে
সত্যঃ শিশুর ত্বকের বর্ণ জিনগত কারণগুলির উপরেই কেবল নির্ভর করে এবং নারকেল জল বা অন্য কোনও খাদ্য গ্রহণের দ্বারাই তার পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
2. জনশ্রুতিঃ নারকেল জল বাচ্চার চুলকে করে তোলে আরও বেশি ঘন এবং মজবুত
সত্যঃ বাচ্চার চুলের ধরণ, গঠন এবং মজবুত ক্ষমতা জিন এবং স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে।গর্ভাবস্থায় নারকেল জল পান করলেও আপনার গর্ভস্থ শিশুর চুলের বৃদ্ধিতে তার কোনও প্রভাব পড়তে দেখা যাবে না।
3. জনশ্রুতিঃ নারকেল জল থেকে অ্যাসিডিটি–অম্বল হয়ে থাকে
সত্যঃ গর্ভাবস্থায় নারকেল জল গ্রহণ করলেও তা থেকে সাধারণত কোনও অ্যাসিডিটি বা অম্বল দেখা দেয় না।আপনি যে অ্যাসিডিটি ভোগ করে থাকেন তা সাধারণত হয়ে থাকে আপনার বর্ধিত পেটের কারণে যা হজম প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে।
গর্ভাবস্থায় নারকেল এবং নরম কচি নারকেল খাওয়া নিরাপদ এবং তা খাওয়ার উচ্চ সুপারিশ করা হয়ে থাকে তবে পরিমিত পরিমাণে।গর্ভদশা কালে নারকেল জলও সংযমের সাথে পান করা উচিত এবং তা কখনই জলের বিকল্প হিসেবে নয়।আপনার নারকেল গ্রহণ করার পরিমাণের ব্যাপারের আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করুন এবং গ্রহণের ক্ষেত্রে আপনার মধ্যে কোনও বিপরীত ইঙ্গিত দেখা দিতে পারে কিনা তা পরীক্ষা করিয়ে নিন।