গর্ভাবস্থায় ফুট ম্যাসাজ বা পা মালিশ

গর্ভাবস্থায় ফুট ম্যাসাজ বা পা মালিশ

গর্ভাবস্থা কেবল আপনার পেটের আকারই বড় করে তোলে না, এর সাথে আবার আপনার পা এবং পায়ের পাতাও বেশ ফুলে যেতে পারে।প্রায় প্রতিটি মহিলাই এই ফোলার সাথে আসা ব্যথার ব্যাপারটিও জানেন, যা সময়বিশেষে বেশ তীব্র হয়ে উঠতে পারে।এক্ষেত্রে প্রেসার পয়েন্ট বা চাপ বিন্দুগুলিতে চাপ দিলে তা কিছুটা স্বস্তি নিয়ে আসতে পারে, তবে একটা হালকা মালিশএটা শোনা মাত্রই তা এতটা স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আসবে যে সেই ব্যথাযন্ত্রণাগুলি প্রতিহত করার জন্য তা ভীষণ ভাল একটা কিছু বলে মনে হতে পারে।কিন্তু এর সত্যই কি কোনও উপকারিতা আছে? নাকি তাতে আরও বেশি ঝুঁকি দেখা দিতে পারে? চলুন তার সন্ধান করা যাক

গর্ভাবস্থায় ফুট ম্যাসাজ করাটা কি নিরাপদ?

অনেক মহিলাই তাদের গর্ভাবস্থায় একটা পেডিকিওর ফুট ম্যাসাজের বিকল্পকে বেছে নিতে এবং ব্যথাযন্ত্রণাগুলি থেকে স্বস্তি পেতে চান, বিশেষকরে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য যে এক্ষেত্রে বিশেষ কিছু ম্যাসাজ বা মালিশ আছে সেটি জানার পরেও।যাইহোক, তবে এগুলি কিন্তু কোনও চিকিৎসা কতৃপক্ষ কতৃক অনুমোদিত হয়নি, তাই সেগুলির উপকারিতাগুলি পুরোপুরি স্থির নির্ধারণ করা যায় না।অনেক স্পাই গর্ভবতী মহিলাদের গ্রহণ করে না এবং তার পাশাপাশি আবার অনেক ডাক্তারই কোনও ম্যাসাজ থেরাপিস্টের জন্য পরামর্শ দেওয়ার ব্যাপারটাকে এড়িয়ে চলেন।

তবে একজন ভাল অভিজ্ঞ পেশাদার দ্বারা গর্ভাবস্থায় করার উপযোগী সঠিক ধরণের ম্যাসাজ করানোটা একজন হবু মায়ের পক্ষে নিরাপদ এবং তার সাথে তা প্রয়োজনীয় উপকারিতাগুলিও নিয়ে আসে।এইসকল পেশাদারেরা বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হওয়ায় তার শংসাপত্র পেয়ে থাকেন এবং কোথায় ম্যাসাজ করতে হবে ও কোন অঞ্চলটি এড়িয়ে চলতে হবে সে সম্পর্কে তাঁরা সঠিক জ্ঞানের অধিকারী হয়ে থাকেন।

গর্ভাবস্থায় ফুট ম্যাসাজ বা পা মালিশের উপকারিতাগুলি কি?

গর্ভাবস্থায় ফুট ম্যাসাজ বা পা মালিশের উপকারিতাগুলি কি?

গর্ভাবস্থায় ফুট ম্যাসাজ করার অনেক উপকারিতা আছেসেগুলির মধ্যে কয়েকটি হলঃ

  • সাধারণের তুলনায় একজন গর্ভবতী মহিলার মধ্যে জলধারণের সমস্যাটি বেশি হয়ে থাকে।এর সাথে আরও যুক্ত হয় শিরায় টান বা সংকোচন যেহেতু জরায়ুর বৃদ্ধি এগুলির উপর চাপ দিতে থাকে।এক্ষেত্রে ফুট ম্যাসাজ বা পায়ে মালিশ করানোর মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনা বৃদ্ধি পাওয়ায় গর্ভবতী মহিলা কিছুটা স্বস্তি বোধ করতে পারেন।
  • ম্যাসেজ বা মালিশের প্রক্রিয়াটি একটি শান্ত ও প্রশান্তিপূর্ণ অনুভূতি জাগিয়ে তোলে এবং মানসিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।এটি প্রথমবারের জন্য হওয়া মায়েদের ক্ষেত্রে বেশ উপকারী ও প্রয়োজনীয় কারণ এটি করানোর মাধ্যমে একটা স্বাস্থ্যকর প্রসবের পথ খুঁজে পেতে গর্ভাবস্থায় দেখা দেওয়া চাপ এবং উদ্বেগগুলি থেকে কিছুটা মুক্তির উপায় পাওয়া যায়।
  • যেসকল মায়েদের মধ্যে হতাশা ও অবসাদের লক্ষণগুলি দেখা যায় এবং তার জন্য ওষুধ গ্রহণ করেন, তারা নিয়মিত ম্যাসাজ গ্রহণ করলে তা তাদের মেজাজকে উন্নত করতে সহায়তা করে।তাছাড়াও এটি একটি সুস্থ এবং স্বাস্থ্যকর বাচ্চার জন্ম দিতেও সাহায্য করতে পারে।

গর্ভাবস্থাকালে পায়ে ম্যাসাজ করার সঠিক উপায়গুলি

আপনার গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকে যদি সঠিকভাবে পায়ে ম্যাসাজ করা হয় তবে তা তার সঠিক উপকারিতাগুলি নিয়ে আসতে পারে।আর এর জন্য শুধু প্রয়োজন সঠিক কৌশলে সঠিক তেলের ব্যবহার করা।এখানে তার কয়েকটি ধাপ দেওয়া হল যেগুলি আপনার সঙ্গী অথবা আপনার তত্ত্বাবধায়ক আপনার পায়ে যথাযথভাবে ম্যাসাজ করার জন্য অনুসরণ করতে পারেন।

  1. এর প্রথম ধাপটি হল গর্ভবতী মহিলার পা এবং তার সঙ্গীর হাতে ভাল পরিমাণে তেল মাখিয়ে নেওয়া।এটি পায়ে ম্যাসেজ করার কাজটিকে সহজ করে তুলবে
  2. পায়ের পাতা থেকে শুরু করে, চাপ প্রয়োগ করার সময় পায়ের আঙ্গুল থেকে গোড়ালী পর্যন্ত মালিশ করা শুরু করুন।আপনার সঙ্গীর করমুষ্ঠিটি খুব কড়া বা দৃঢ় যাতে না হয়ে থাকে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করুন।মোটামুটি প্রায় 5-8 মিনিট ধরে এই ফুট ম্যাসাজটি করুন।
  3. এটি করা হয়ে গেলে, গোড়ালী থেকে উপরের দিকে যান। গোড়ালি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশটিতে ফোকাস করতে হবে এবং সেটি মালিশ করা শুরু করুন।পা এবং কাফ মাসলের জায়গায় যতটা বেশি সম্ভব কভার করার জন্য দুটি হাতই ব্যবহার করা নিশ্চিত করুন।উভয় হাতের ক্ষেত্রেই চাপ অবিচল রাখুন এবং গোড়ালি থেকে হাঁটু অবধি একক, অবিরামগতিতে বিস্তৃত স্ট্রোকের গতি বজায় রাখুন।প্রায় 10 মিনিট বা তার বেশি সময়ের জন্য এটি করা চালিয়ে যান
  4. এটিও করা হয়ে গেলে, অন্তিম পর্যায়ে চলে যেতে হবে।এখন হাঁটু থেকে থাই অঞ্চলের উপর ফোকাস করতে হবে।যদি অঞ্চলটি তৈলাক্ত রাখার প্রয়োজন বোধ হয়, অল্প আরও কিছুটা তেল লাগিয়ে নিতে হবে।এই জায়গাটার ব্যাপারে একটু সচেতন হন, তবে দৃঢ় ও অবিচলিত একটা চাপ বজায় রাখতে হবে।থাইটা বেশ প্রশস্ত একটা জায়গা, তাই দুই হাত ব্যবহার করা এবং পর্যায়ক্রমে পাশের অংশগুলি এবং তারপরে উল্লম্ব ভাবে ম্যাসেজ করা সবচেয়ে ভাল।এভাবে ম্যাসাজ করলে সেটি আপনার পুরো পাটিকে কভার করা এবং তার সাথে আপনার সম্পূর্ণ স্বস্তি আনার বিষয়টিকে নিশ্চিত করে।5-8 মিনিটের জন্য এটি করা অবিরতভাবে চালিয়ে যেতে হবে।তারপর অন্য পায়ে যাওয়ার আগে একটু বিরতি নিন

গর্ভাবস্থায় পা মালিশ করানোর ঝুঁকিগুলি কি কি?

পা ম্যাসাজ করা থেকে অপরিমেয় স্বস্তি পাওয়া যায় ঠিকই, তবে তার সাথে আবার কিছু ঝুঁকিও জড়িত।এখানে সেরকমই কিছু সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়গুলি তুলে ধরা হল যেগুলি আপনার মনে রাখা দরকার।

1.DVT

এটা আবার ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস হিসেবেও পরিচিত।এটি সাধারণত একটি রক্ত জমাট বাঁধার ফলস্বরূপবেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি পায়ে হতে দেখতে পাওয়া যায়।এই রক্ত ​​জমাট বাঁধে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পায়ের মধ্যে গভীরে থাকা শিরাগুলির একটিতে অথবা আবার এমনকি সেগুলির কয়েকটিতেও।এর ফলে পাগুলি বেশ ফুলে যায় আর তার সাথে যুক্ত হয় তীব্র ব্যথা।অনেক মহিলারই কেবলমাত্র একটি পায়েই এটি হয়ে থাকে যা এটি চিহ্নিত করাকে সহজ করে তোলে।

এইসব ক্ষেত্রে পা ম্যাসাজ করা জীবনঘাতী হয়ে উঠতে পারে।এর কারণ শিরার উপর দেওয়া কোনও চাপ জমাট বাঁধা রক্তকে শিরার প্রাচীর থেকে আলগা করে এবং সংবহন তন্ত্রের মাধ্যমে চলাচল শুরু করে দেয়।আর ফুসফুসে পৌঁছানোর পরে, এই জমাট রক্ত রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধা দিতে পারে এবং এম্বলিজম সহ বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

2.পিটিং এডিমা

গর্ভাবস্থায় দেখা দেওয়া ফুলে যাওয়া রোগটা আবার এডিমা নামেও পরিচিত।এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়, এটা সাধারণত হয়ে থাকে গর্ভাবস্থায় ক্রমবর্ধমান জরায়ু এবং তার পাশাপাশি হরমোনীয় পরিবর্তনের কারণে।এই দুটিই শিরাগুলিকে প্রভাবিত করতে শুরু করে এবং স্বাভাবিক রক্ত ​​সঞ্চালনে বাধা দেয়আর এইজন্যই এরকম পরিস্থিতিতে একটা মালিশ স্বস্তি নিয়ে আসে, যেহেতু এটা ফোলা হ্রাস করে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে।

তবে চাপ দেওয়ার সময় ফোলাগুলিতে গর্ত গড়ে ওঠার প্রবণতা দেখা যায়, তবে এটা সাধারণত পিটিং এডিমারই একটা লক্ষণ।এটা সত্বর ডাক্তারকে দিয়ে পরীক্ষা করানো প্রয়োজন কারণ এটি DVT বা প্রিক্ল্যাম্পসিয়াকে সঙ্কেত হতে পারে।

ম্যাসাজ করার সময় যে জায়গাগুলি এড়িয়ে চলা উচিত

গর্ভবতী মহিলার পা ম্যাসাজ করার সময় পায়ের 3 টি মূখ্য জায়গা এড়িয়ে চলা উচিত।

  • SP6 আকুপ্রেসার পয়েন্টএটা ভেতরের গোড়ালিটির হাড়ের উপরের গোড়ালি অঞ্চলে অবস্থিতএই চাপ পয়েন্টটি তলপেটকে উত্তীপ্ত করে, যা গর্ভবতী মহিলার পক্ষে উপকারী নাও হতে পারে
  • ইউরিনারী ব্লাডার 60- মূল হাড় এবং অ্যাকিলিস টেনডনের মাঝে বাইরের দিকে গোড়ালী হাড়ের পিছনে এটি অবস্থিত, এই পয়েন্টটা ব্যথা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে শ্রমের সময় ব্যবহৃত হয়।সুতরাং এটি থেকে দূরে থাকার জন্য অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • ইউরিনারী ব্লাডার 67- পায়ের নখের কাছে শিশুর পায়ের আঙ্গুলের কোণে অবস্থিত, সঙ্কচনকে উদ্দীপ্ত করতে এবং প্রসবের জন্য শিশুকে সঠিক অবস্থানে আনার জন্য এটি একটি অতি পরিচিত আকুপ্রেসার পয়েন্ট

গর্ভাবস্থায় আপনার প্রয়োজনীয় শিথিলতা ও স্বস্তি পেতে পায়ের ম্যাসাজ করা বেশ দুর্দান্ত একটা উপায়।ঝুঁকির জায়গাগুলি এড়ানো এবং হালকা চাপ প্রয়োগ করা নিশ্চিত করে গর্ভাবস্থাকালে রিফ্লেক্সোলজি ফুট ম্যাসাজকে বেছে নিয়ে তা করা যেতে পারে। নিয়মিত পা ম্যাসাজ করলে তা একটা ভাল মানসিক এবং শারীরিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং গর্ভাবস্থার চাপ থেকে মুক্তি এনে আপনাকে এবং আপনার গর্ভস্থ শিশুকে সুস্থ ও ভাল রাখে।