গর্ভাবস্থায় মুরগির মাংস খাওয়া

গর্ভাবস্থায় মুরগির মাংস খাওয়া

গর্ভাবভস্থায় গর্ভস্থ শিশুর সুস্বাস্থ্যের তাগিদে সুষম আহার গ্রহণ নিশ্চিত করা মায়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি।গর্ভাবস্থাকালে এমন বহু শারীরিক পরিবর্তনগুলি হয়ে থাকে যেগুলি নিশ্চয়তার সাথে গর্ভবতী মায়েদের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনে।সুতরাং এই সময় গর্ভবতী মহিলাদের খাদ্য তালিকায় কোন কোন খাদ্য পদগুলিকে সংযোজন এবং কোনগুলি পরিহার করে চলতে হবে তা জানাটা গুরুত্বপূর্ণ।মুরগির মাংস হল গর্ভবতী মহিলাদের দ্বারা গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাবিত খাদ্যগুলির মধ্যে একটি,কারণ এটি প্রোটিনের খুব ভাল একটি উৎস এবং এছাড়াও এটি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজগুলি সরবরাহ করে থাকে।

গর্ভাবস্থায় চিকেন অর্থাৎ মুরগির মাংস খাওয়া কি নিরাপদ?

মুরগির মাংস হল উচ্চ পুষ্টি সমন্বিত একটি খাদ্য যা প্রোটিন এবং নয়টি অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিডে পরিপূর্ণউভয়েই মাংস পেশীগুলি গঠণকারী বিল্ডিং ব্লক হিসেবে কাজ করে।মুরগির মাংসে ফ্যাট জাতীয় উপাদান কম থাকে,আর সেই কারণে এটি মানবদেহে স্থূলতার কোনও কারণ হয়ে ওঠে না,যা এটিকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের একটি সমৃদ্ধ উৎস করে তুলেছে।

গর্ভবতী মহিলাদের গ্রহণের জন্য মুরগির মাংসটি ভালভাবে রান্না হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন।কাঁচা বা পুরোপুরি রান্না না করা মুরগির মাংস খাওয়া গর্ভবতী মহিলাদের বর্জন করা উচিত কারণ এটি লিস্টেরিয়া নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়ার দ্বরা দূষিত হয়ে থাকতে পারে।মুরগীর মাংসকে 160 ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রায় উত্তপ্ত বা রান্না করলে তা মাংস মধ্যস্থ ব্যাকটেরিয়াকে হত্যা করে সেবনের জন্য মুরগীর মাংসটিকে নিরাপদ করে তোলে।

গর্ভাবস্থায় মুরগির মাংস খাওয়ার উপকারিতাগুলি

চর্বিহীন প্রোটিন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজে মুরগির মাংস ভরপুর।গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে মুরগির মাংস খেলে তা গর্ভের মধ্যে শিশুটির স্বাস্থ্যকর বিকাশে সাহায্যের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলি সরবরাহ করবে।

গর্ভাবস্থায় মুরগির মাংস খাওয়ার আরও বেশ কিছু উপকারিতাগুলি নিম্নরূপঃ

  • মুরগির মাংস হল নিয়াসিন বা ভিটামিন B-3 এর একটি সমৃদ্ধ উৎস,যা মস্তিষ্কের বিকাশকে উদ্দীপিত করে এবং মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখে।
  • মুরগিতে রয়েছে নয়টি অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড যা মাংস পেশী গঠণ করতে এবং সেগুলিকে শক্তশালী করে তুলতে প্রয়োজনীয় সহায়তা সরবরাহ করে।
  • মুরগির মাংসে ফ্যাট জাতীয় উপাদান কম মাত্রায় থাকে।এটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানগুলি সরবরাহ করে এবং অকেজো বা বর্জ্য ফ্যাট গঠণে প্রতিরোধ করে।ফ্যাট বা চর্বিযুক্ত উপাদান হ্রাস করার জন্য মুরগীর মাংসকে তার ত্বক ছাড়াই খাওয়া উচিত।
  • প্রতিদিন 100 গ্রাম করে মুরগির মাংস খেলে তা একজন গর্ভবতী মহিলার দেহে প্রাত্যহিক প্রয়োজনীয় প্রোটিনের প্রায় 50% ই পূরণ করে।
  • মুরগীর মাংস ওমেগা-3 এবং ওমেগা-6 ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি সমৃদ্ধ উৎস এবং এতে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম থাকে।
  • মুরগির মাংসের লিভার বা মেটে ভিটামিন কোলিনের একটি ভাল উৎস। এটি জন্মের পরবর্তী প্রথম দিকের বছরগুলিতে শিশুদের মস্তিষ্ক এবং স্মৃতিশক্তির ক্রিয়াকলাপে সহায়তা করে।
  • মুরগির মাংসের মেটেতে আবার ফোলেটও থাকে যা শিশুদের নিউরাল টিউবের ত্রুটি প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • এছাড়াও মুরগির মাংসে রয়েছে ভিটামিন A,E,সেলেনিয়াম এবং থিয়ামিন।এই সকল ভিটামিন এবং খনিজগুলিতে অ্যান্টঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলি থাকায় তা বিপাকে উন্নতি ঘটায় এবং শক্তির মাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • মুরগির মাংস দেহে আয়রণ এবং জিঙ্কের যোগান দেয়,যা নতুন কোষের বিকাশে সহায়তা করে।আবার মুরগির মাংসে উপস্থিত আয়রণ দেহ দ্বারা সহজেই শোষিত হয়।

এই সকল পুষ্টিগুলি দেহের অস্থি,কোষ এবং অঙ্গাণুগুলির বিকাশে সহায়তা করে থাকে।মুরগির মাংস আবার ডায়াবেটিস,কোলেস্টেরল এবং হৃদরোগের মত দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতাগুলি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।

একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য প্রতিদিন রান্না করা 100 গ্রাম মুরগির মাংস গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়।

গর্ভাবস্থায় আপনি মুরগির মাংস খাওয়ার ব্যাপারটিকে উপভোগ করতে পারেন এমন কিছু সুস্বাদু উপায়ের উল্লেখ এখানে করা হলঃ

1.আপনার পুষ্টির ক্ষেত্রে আরও কিছু প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে আপনি ভালভাবে পালক এবং চামড়া ছাড়ানো,হাড়বিহীন মুরগির ব্রেস্টের কিছুটা অংশ নিয়ে সেগুলিকে কড়াইয়ে ভালভাবে সাঁতলে রান্না করে নিয়ে আপনার প্রিয় স্যালাডটির সাথে যোগ করে সেটিকে সেরা করে তুলতে পারেন।

2.আপনি আবার জিভে জল আনা সুস্বাদু চিকেন কারিও রান্না করে সেটি ভাত,রুটি অথবা পাউরুটি দিয়ে খেতে পারেন।

3.এছাড়াও আবার আপনি ঘরে প্রস্তুত কিছু মেয়োনীজের সাথে রান্না করা চিকেনের টুকরোগুলি মিশিয়ে নিতে পারেন এবং সেটিকে স্যান্ডুইচের ভিতরের সুস্বাদু পুর হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

4.আপনি কিছু মশলা সহযোগে মুরগির মাংসের ছোট ছোট টুকরোকে সেদ্ধ করে নিয়ে সেটিকে একটি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর স্যুপ হিসেবেও পান করতে পারেন।

5.আপনি যদি রান্নার ব্যাপারে চিকেন দিয়ে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে চান,সেক্ষেত্রে বাড়িতেই আপনি মুরগির কিমা দিয়ে প্যাটিস মত বানিয়ে কিম্বা ঘরে প্রস্তুত গ্রিলড চিকেন বার্গার বানিয়ে নিজেকেই একটি চমৎকার সুস্বাদু উপহার দিতে পারেন।

মুরগির মাংস খাওয়ার ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি

মুরগির মাংসে এমন কোনওরকম ক্ষতিকারক উপাদান অথবা খনিজ থাকে না যা একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য সহনীয় নয় বা অনুপযুক্ত এবং এটিকে গর্ভাবস্থায় একটি নিরাপদ খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

মুরগির মাংস খাওয়ার সাথে জড়িত একমাত্র ঝুঁকিটি হল লিস্টারিয়া নামক সংক্রমণজনিত ব্যাকটেরিয়া।এটি দূষিত মুরগিতে পাওয়া যায় এবং এটির কারণে লিস্টারিওসিস নামক সংক্রমণটি হয়ে থাকে।লিস্টারিওসিস আবার গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে নির্ধারিত সময়ের পূর্বে প্রসব,গর্ভপাত,নবজাতকের সংক্রমণ অথবা আবার এমনকি অকাল মৃত্যুর মত ঝুঁকিগুলি বাড়িয়ে তোলে।গবেষণা অনুসারে,22% জন্মপূর্ববর্তী লিস্টারিওসিসের ক্ষেত্রে পরিণাম হিসেবে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।

গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে,লিস্টারিয়া সংক্রমণের ব্যাপারগুলি মোটেই স্বাভাবিক নয়।তবে গর্ভবতী মহিলারা গর্ভবতী নন এমন মহিলাদের তুলনায় যেকোনও ধরণের ব্যাধি বা সংক্রমণের ঝুঁকির সম্ভাবনায় বেশি থাকেন।

এই ব্যাকটেরিয়াটি 160 ডিগ্রী ফারেনহাইটের বেশি তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে পারে না।আর সেই কারণেই মুরগির মাংস মধ্যস্থ ব্যাকটেরিয়াটিকে অপসারিত করতে, খাওয়ার আগে সর্বদা সেটিকে এই নির্ধারিত তাপমাত্রার বেশি তাপে রান্না করে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।একজন গর্ভবতী মহিলার সর্বদা ভালভাবে রান্না করা মুরগির মাংসই খাওয়া উচিত এবং কাঁচা বা অর্ধ রান্না করা মাংসগুলিকে খাওয়া এড়িয়ে চলাই উচিত।

হবু মায়েদের আবার রেডিমেট বা বাজারে কেনা রান্না করা মাংসগুলি এড়িয়ে চলা উচিত যেগুলি সাধারণত স্যান্ডুইচ,বার্গার এবং অন্যান্য তাৎক্ষণিক খাদ্য পদগুলি তৈরী করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।এর কারণ হল এই রান্না করা মাংসগুলি প্রস্তুত করার সময় মুরগি দূষিত হয়ে যাওয়ার উচ্চ সম্ভাবনা থাকে।

তবে যাই হোক না কেন,গর্ভাবস্থাকালে আপনার খাদ্য তালিকায় যেকোনও রকম খাদ্যকে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিয়ে নেওয়াই হল সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা।