সদ্য হাঁটতে শেখা ছোট শিশুদের বমি হওয়া

সদ্য হাঁটতে শেখা ছোট শিশুদের বমি হওয়া

নিঃসন্দেহে যেকোনও মা-বাবার পক্ষে তাদের সদ্য হাঁটতে শেখা ছোট্ট শিশুটিকে ঘন ঘন বমি করতে দেখাটা অত্যন্ত পীড়াদায়ক।এই চিন্তাটি ভীষণ দ্রুত ধাপে-ধাপে বৃদ্ধি পেতে পারে যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে আপনার বাচ্চার বেশ ঘনঘন বমির প্রবণতা থাকে এবং আপনি তার কারণটিকে সনাক্ত করতে পারেন নি।যদিও এটির সূত্রপাতের কারণটিকে বুঝতে আপনি হয়ত সমর্থ নাও হতে পারেন,একটি ঘনিষ্ঠ নিরীক্ষণ এর কারণটির রহস্য উন্মোচনের সহায়ক হতে পারে।

কারণগুলি

শিশুরা সংবেদনশীল হয়ে থাকে এবং তখনো তাদের অনাক্রম্যতা গড়ে উঠতে থাকে সুতরাং তারা বমনেচ্ছাবোধ করতে পারে এবং পরিশেষে বিভিন্ন কারণের জন্য তারা বমি করে ফেলে।টলমল করে হেঁটে চলা ছোট শিশুদের বমি করার কয়েকটি কারণ এখানে দেওয়া হলঃ

  • পেটের সংক্রমণঃ স্টমাক ফ্লু বা ভাইরাল গ্যাস্ট্রোএন্টারটাইটিস হল অন্যতম একটি ভীষণ সাধারণ পেটের সংক্রমণ,যেটির কারণে শিশুরা বমি করে থাকে।পেটের এই জীবাণু পেটের গহ্বরে যন্ত্রণাদায়ক খিঁচুনির কারণ হয়ে উঠতে পারে যা আপনার ছোট্ট সোনাটিকে পরিচালিত করতে পারে ওয়াক তোলা এবং বমি করার দিকে।পেটের সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকা বমির সাথে আবার যুক্ত হতে পারে ডায়রিয়া,খিঁচুনি,গা গুলিয়ে বমি বমি ভাব এবং জ্বর।ডায়রিয়া থেকে ডিহাইড্রেশন এমনকি এটি আবার হালকা মাথা ব্যথারও কারণ হয়ে উঠতে পারে।
  • অন্ত্রের সংক্রমণঃ জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়া যেমন সালমোনেল্লা এবং স্ট্যাফাইলোকক্কাস আপনার সন্তানের মধ্যে সংক্রমণ ঘটাতে পারে যা আপনার টলটলায়মান ছোট্ট সোনাটির বমির কারণ হয়ে উঠতে পারে।একটি অন্ত্রের সংক্রমণে হয়ত তলপেটে খিঁচুনি,জ্বর এবং ডায়রিয়ার মত কিছু লক্ষণ থাকতে পারে।
  • একটি পেডিয়াট্রিক হার্নিয়াঃ যখন তলপেটের গহ্বর থেকে ক্ষুদ্রান্ত্র এবং বৃহদন্ত্র পিছলে যায়, তখন এটি হার্নিয়া সৃষ্টি করে।এটি অস্বস্তির কারণ হতে পারে এমনকি সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলতে পারে।টলমল করে হেঁটে চলা ছোট শিশুরা সাধারণত দুই ধরণের হার্নিয়াপ্রবণ হয়ে থাকতে পারে, ইনজুইনাল হার্নিয়া এবং আম্বেলিক্যাল হার্নিয়া। যদি অন্ত্রটি ইনজুইনাল নালীতে স্থানান্তরিত হয়, তবে এটি কুঁচকি অঞ্চলে কাছে একটি বড় গোঁজ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে ইনজুইনাল হার্নিয়া হয়। নাভির পিছনে ক্ষতিগ্রস্থ তলপেটের প্রাচীরে ক্ষুদ্রান্ত্রটি যখন পিছলে যায় তখন একটি আম্বেলিক্যাল হার্নিয়া হয়। এই হার্নিয়াগুলি পেটের গহ্বরের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং তার ফলে শিশুটি খাবার উগড়ে ফেলে।
  • বিষাক্ত পদার্থ গ্রহণের ফলেঃ টলমল করে হেঁটে চলে বেড়ানো ছোট শিশুদের সব কিছু তাদের মুখে পুড়ে দেওয়ার মত একটি সাধারণ স্বভাবের কারণে,তাদের বিষাক্ত পদার্থগুলিকে খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা থেকে যায়।এটি তাদের পাকস্থলীর আস্তরণে জ্বালা করতে পারে এবং তাদের পেশীগুলিকে সংকুচিত করে,যা আপনার টডলার পদাধিকারীর বমি হওয়ার কারণ হয়ে ওঠে।এর ফলস্বরূপ সে আবার তার তলপেটে যন্ত্রণা অনুভব করতে পারে অথবা তার মধ্যে বমি বমি ভাবও দেখা দিতে পারে।
  • খাদ্যজনিত অ্যালার্জিঃ যদি আপনার সন্তান কোনও নির্দিষ্ট খাদ্য গ্রহণের পরেই বমি করে,তবে সেটি কোনও অ্যালার্জির কারণে হয়ে থাকতে পারে।খাদ্যজনিত অ্যালার্জির অন্যান্য সংকেতগুলির মধ্যে একটি হল বমি হওয়া।অন্যান্য উপসর্গগুলির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হল ঠোঁট এবং চোখের পাতা ফুলে ওঠা,তলপেটে ব্যথা,ত্বকে আমবাত,চুলকানি ইত্যাদি।যদি আপনার ছোট শিশুটি তার মুখ থেকে সাদা দুধের অংশবিশেষ উগড়ে তোলে,তবে সেক্ষেত্রে সে হয়ত ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু হয়ে থাকতে পারে।এটি হয়ে থাকে যখন দুধকে হজম করার জন্য দেহে যথেষ্ট ল্যাকটেজ উৎসেচক থাকে না সেই সময়ে।
  • অ্যাসিড এবং পিত্ত রিফ্ল্যাক্সঃ যখন গ্রাসনালীর স্ফিংটার যা পাকস্থলী এবং গ্রাসনালীকে পৃথক করে রাখে তা উন্মুক্ত থাকে তখন পাকস্থলী থেকে অ্যাসিডের সাথে খাদ্যবস্তু বিপরীত পথে গিয়ে গ্রাসনালীতে ফিরে আসে।এর ফলে জ্বলনের সৃষ্টি হয় এবং বমি বা বমি বমি ভাব দেখা দেয়।অন্যদিকে যখন পাইলোরিক ভালব, যেটি ক্ষুদ্রান্ত এবং পাকস্থলীর সংযোগ স্থলে বর্তমান সেটি ঠিকমত কাজ করে না, তখন পিত্ত ক্ষুদ্রান্ত থেকে পাকস্থলীতে চলে আসে।এর ফলে পাকস্থলীতে জ্বলনের সৃষ্টি হয় এটা সংকুচিত হয় এবং সবুজাভ-হলুদ বর্ণের তরল মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসে অনেকটা বমির মত।
  • বায়ু গিলে ফেলা এবং অতিরিক্ত খেয়ে ফেলাঃ আপনার টডলার পদাধিকারীটি যদি তার পেটে যে পরিমাণ খাদ্য ধরতে পারে তার থেকেও অতিরিক্ত পরিমাণে খেয়ে ফেলে অথবা সে যদি খাবার সময় বাতাস গিলে ফেলে,সে সেগুলিকে উগড়ে তুলে ফেলতে পারে যেহেতু তার পেট কানায় কানায় পূর্ণ থাকে।বাতাস গিলে ফেলার কারণ হয়ে থাকতে পারে শিশুর মুখের মধ্যে মায়ের স্তনবৃন্তটির ভুল অবস্থানের জন্য।
  • বদহজমঃ যদি আপনার বাচ্চার খাদ্য ভালভাবে হজম না হয়,তবে তার পেটে পুঞ্জীভূত সেই অপাচিত খাদ্যগুলিকে সে উগরে দিতে পারে।দুর্বল হজম প্রক্রিয়ার কারণে,খুব দ্রুত খাওয়ার ফলে,মশলাদার এবং গ্যাস হতে পারে এমন ধরনের খাদ্য গ্রহণের ফলেও তার বমি হতে পারে।
  • ওষুধঃ কিছু ধরনের ওষুধ বিশেষ করে সেগুলি যখন খালি পেটে তাদের খাওয়ানো হয়ে থাকে,আপনার ছোট্টটি তখন বমি করে ফেলতে পারে।
  • গতি অসুস্থতাঃ ভারসাম্যহীনভাবে অবিরত পরিবর্তন করা্র কারণে আপনার বাচ্চার অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য বিচলিত হয়ে উঠতে পারে।এটি দেখা যেতে পারে রোলার কোষ্টার রাইডের পরে।কানের আভ্যন্তরীণ অংশ যা দেহের ভারসাম্যকে পরিচালিত করে,সেটি ভারসাম্যের এই স্থানান্তরের কারণে মস্তিষ্কে এই অস্থির যন্ত্রণার সংকেত পাঠাতে পারে।পরবর্তীকালে তার মস্তিষ্ক পেটের পেশীর স্নায়বিক যন্ত্রণারে সংকেতকে প্রেরণ করে সেই কারণে আপনার টলটলায়নকারীটির বমি হয়ে থাকে।মাথা ঘোরা এবং মাথা ব্যথাও এই একই প্রভাব তৈরী করতে পারে।
  • কানের সংক্রমণঃ ল্যাবিরিন্থিটাইসের মত কানের সংক্রমণ তৈরী হতে পারে যেখানে অন্তঃকর্ণ মস্তিষ্কে অস্থির প্রকৃতির একটি সংকেত প্রেরণ করতে পারে,এটি গতি অসুস্থতা এবং মাথা ঘোরারই অনুরূপ।যার ফলে আপনার ছোট্টটি হয়ত তার মাথা ঝিম ঝিম অনুভব করতে পারে,ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে এবং তীব্র বমি বমি ভাব উপলব্ধি করতে পারে।
  • নিউমোনিয়াঃ ব্যাকটেরিয়াজনিত এবং ভাইরাল সংক্রমণগুলি ফুসফুসের অ্যালভিওলাইয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে যা নিউমোনিয়ার দিকে পরিচালিত করে।যদিও শ্বাস কষ্ট এবং কাশি হল এর সাধারণ লক্ষণ,ছোট শিশুরা এর সাথে আবার বমিও করতে পারে যা অনবরত কাশির দ্বারা পরিচালিত হয়।সংক্রমণের কারণে ক্ষুধা না থাকায় বাচ্চা যখনই কিছু খায় সবসময়ই তা বমি করে তুলে ফেলে।
  • অন্যান্য সংক্রমণ এবং ব্যাধিঃ বমি হওয়া হল বিভিন্ন সংক্রমণ এবং ব্যাধির লক্ষণ,যার মধ্যে সেপ্টিসেমিয়া এবং ম্যানিনজাইটিসের পাশাপাশি অন্যান্য উপসর্গগুলি যেমন জ্বর,সারা দেহে যন্ত্রণা মাথা ব্যথা ইত্যাদিও অন্তর্ভুক্ত।
  • রিউমিনেশন সিন্ড্রোমঃ এটি একটি বিরল ঘটনা যখন কোনও রকম সমস্যা অথবা যন্ত্রণা ছাড়াই খাবার পুনরায় মুখে ফিরে আসে।এটি হওয়ার সময় শিশুর মধ্যে কোনওরকম অস্বস্তি বা হৃদয় জ্বলন বা অম্বল থাকে না।এছাড়াও রিউমিনেশনের সময় এর একটি আকর্ষণীয় লক্ষণীয় ব্যাপার হল, যে খাবারগুলি শিশুটির মুখে পুনরায় ফিরে আসে সেগুলি একদম পূর্বের মতই সতেজ থাকে যেগুলিকে শিশুরা খুব স্বাভাবিকভাবেই চিবিয়ে নেবে এবং পুনরায় গিলে ফেলবে।
  • অ্যাপেন্ডিসাইটিসঃ টলমল করে হেঁটে চলে বেড়ানো ছোট শিশুদের মধ্যে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হওয়া বিরল একটি ঘটনা এবং এটি সাধারণত হয়ে থাকে 10-20 বছর বয়সের মধ্যে।অ্যাপেন্ডিক্সের সংক্রমণের কারণে বমি বমি ভাব আসে এবং যা বমিকে পরিচালিত করে।এটি এমনকি তীব্র পেট যন্ত্রণা,হালকা জ্বর এবং ক্ষুধামান্দ্যের কারণ হয়ে উঠতে পারে।পেটের পেশিগুলি একটি অস্বাভাবিক ভাবে চালিত হতে থাকে যেহেতু সংক্রমণটির সমগ্র পেট গহ্বর জুড়ে ব্যথাকে পরিচালিত করার প্রবণতা থাকে।

যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে আপনার টলটলায়মান শিশুটি রাত্রি বেলায় বমি করছে তবে এটি হতে পারে এই কারণগুলির জন্য অথবা অন্য কোনও কারণের ফলে যেমন নৈশভোজের পর তৎক্ষণাৎ ঘুমিয়ে পড়া,সাইনাসের সমস্যা,তীব্র কাশি অথবা রাত্রে পেটের মধ্যে শ্লেষ্মা জমে ওঠা ইত্যাদির কারণে।কিছু বিরল ক্ষেত্রে,এটি টিউমার হওয়াকেও চিহ্নিত করে থাকতে পারে।সুতরাং,যদি এটি ক্রমশ বেড়ে উঠতে থাকে তবে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শই আপনাকে দেওয়া হয়।

শুকনো উত্তলন বা ওয়াক তোলা কি?

শুকনো উত্তলন বা ওয়াক তোলা হল যখন আপনার টডলার পদাধিকারীটির পেটের এবং মুখের পেশীগুলি ঠিক বমি হওয়ার সময় সংকুচিত হয়,তবে সে অপরিহার্য ভাবে কিছুই বমি করে না।এটিকে আবার উদ্বমনও বলা হয়ে থাকে এবং এটি হতে পারে বমি বমি ভাবের বা বমি হয়ার পরে অথবা আপনার বাচ্চা যদি গা গুলিয়ে বমি বমি ভাব অনুভব করে থাকে।এটি আবার এমনকি শ্বাসাঘাত এবং অস্বস্তিরও লক্ষণ হতে পারে।

বমি করার পরে টলটলায়নকারী শিশুদের ওষুধ দেওয়া কি ঠিক?

একজন ডাক্তার সুপারিশ না করা পর্যন্ত শিশুদের কোনও রকম নির্ধারিত অথবা ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধগুলি দেবেন না।অ্যাসপিরিন আছে এমন জাতীয় ওষুধগুলি আপনার সন্তানকে দেবেন না কারণ এটির ফলে রেয়ের সিনড্রোম হতে পারে যার প্রভাব শিশুর মস্তিষ্কে,হৃদপিন্ডে এবং লিভারের উপর পরে।

কীভাবে আপনার সদ্য হেঁটে চলে বেড়ানো ছোট শিশুটিকে ভাল অনুভব করাবেন?

যদি আপনার সন্তান বমনেচ্ছা বোধ করে এবং বমি পাচ্ছে এমন একটি অনুভূতি তার মধ্যে হয়ে থাকে,সেক্ষেত্রে এখানে এমন কিছু জিনিস দেওয়া হল যেগুলি আপনি তাকে কিছুটা ভাল বোধ করানোর জন্য এবং তার অস্বস্তিগুলিকে সহজ করে তোলার ক্ষেত্রে সহায়তা করার জন্য ব্যবহার করার চেষ্টা করতে পারেন।

1.তাকে খাওয়ার জন্য জোরাজুরি করবেন নাঃ অনবরত একনাগাড়ে বমি করার পর যদি আপনার বাচ্চা কিছুই খেতে না চায়,তাকে খাওয়ার জন্য জোর করবেন না।যদি সে তার পেটকে শান্ত করার জন্য একবার খাওয়া বাদও দেয় সেটি ঠিক আছে।আবার তাকে কঠিণ খাবার খাওয়ানোর ফলে তা তার পেটের যন্ত্রণাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে যা তার মধ্যে অস্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে।

2.তাকে পর্যাপ্ত তরল পান করানঃ বমি করার কারণে শরীর খুব দ্রুত ডিহাইড্রেট বা জলশূণ্য হয়ে উঠতে পারে,এবং এমনকি সেটি যদি ডায়রিয়ার সহিত যুক্ত থাকে তবে সেটি আরও বেশি গভীর করে তলে।বমি করার কারণে সে আবার সোডিয়াম এবং পটাসিয়ামের মত ইলেক্ট্রোলাইটগুলিকেও হারাবে।তাকে পুনরায় হাইড্রেট করে তুলতে জলের মধ্যে রিহাইড্রেশন সল্ট(ORS) কে দ্রবীভূত করে সেই দ্রবণকে ছোট ছোট চুমুকে তাকে খাওয়ানো প্রয়োজন।এটি তার পুনরায় কঠিন খাবার খেতে না পারা পর্যন্ত তার শক্তি ধরে রাখতে পর্যাপ্ত ক্যালোরি সরবরাহ করবে।এই সময় তাকে কোনও রকম দুধ বা জ্যুস দেওয়া থেকে বিরত থাকুন কারণ এটি তার হজমের পক্ষে মুশকিল হয়ে উঠতে পারে।

3.তাকে বিশ্রাম নিতে দিনঃ অনবরত বমি করার ফলে আপনার বাচ্চা ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারে এবং তার হারানো শক্তিকে পুনরায় ফিরে পাওয়ার জন্য তার প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম।যথাযথ বিশ্রাম আবার তার শরীরকে বমি করার কারণ হিসেবে দায়ী সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় দেবে।

4.ডাক্তারের দ্বারা নির্ধারিত ওষুধের কোর্সটি অনুসরণ করুনঃ ডাক্তারবাবু আপনার সন্তানের জন্য বিভিন্ন ধরণের ওষুধের একটি কোর্স করতে দেবেন। সংক্রমণটির যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য প্রেসক্রিপশনের নির্ধারিত ওষুধগুলিকে যথাযথ অনুসরণ করুন।

বমি করার পর আপনার ছোট্টটিকে কি খাওয়ানো উচিত?

বমি করার পর আপনার বাচ্চার পুষ্টিগুলিও বেরিয়ে যায় যেগুলি সে খাবারের সাথে গ্রহণ করেছিল।এমনকি বমি করার পরে এই অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার কারণে তৎক্ষণাৎ সে কোনওকিছুই খেতে অনিচ্ছুক হতে পারে।আপনার বাচ্চা যাতে শক্তি হারিয়ে না বসে তা নিশ্চিত করার জন্য এখানে কিছু পরামর্শ রয়েছে।

1.তাকে জল এবং ইলেক্ট্রোলাইটগুলি খাওয়ানঃ আপনার বাচ্চা বমি করার পরে কয়েক ঘন্টা,আপনার তাকে যথেষ্ট পরিমাণে তরল এবং ইলেক্ট্রোলাইটগুলি দিতে হবে।তাকে কোণও রকম কঠিন খাবার দেবেন না কারণ এটি তার অবস্থাকে আরও খারাপ করে তুলবে।

2.তরল খাদ্য দেওয়া শুরু করুনঃ আপনার টডলার পদাধিকারীটিকে তরল ডায়েটের মধ্যে রাখা শুরু করার পর একবার যখন সে ভাল অনুভব করবে সেটা হবে সবচেয়ে ভাল।আপনি তাকে কোনও রকম মশলা ছাড়া সবজি অথবা চিকেনের সিদ্ধ ঝোল বা ব্রথ সামান্য নুন সহযোগে দিতে পারেন।এক্ষেত্রে ভাতের পাতলা ফ্যানও খুব ভাল একটি বিকল্প।তবে মুসুরের ব্রথ দেওয়াকে এড়িয়ে চলুন কারণ কিছু মুসুর হজম করা কঠিণ হতে পারে।এমনকি আপনি আবার তাকে অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং খনিজে সমৃদ্ধ কচি নারকেলের জলটিকেও দিতে পারেন।

3.তাকে সহজপাচ্য কঠিণ খাবার দিনঃ আপনার বাচ্চা আরও কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে আপনি তাকে খুব সাধারণভাবে ভাত চটকে এবং শাকসবজি বা চিকেনের স্টক দিতে পারেন।হজমের পক্ষে কঠিন এমন কোনও উচ্চ ফাইবারযুক্ত শাকসব্জি তাকে না দেওয়ার বিষয়টিকে নিশ্চিত করুন।আপনি এমনকি আবার শাকসবজিগুলিকে ব্লেন্ড করে সেটিকে ছেঁকে নিয়ে চেষ্টা করতে পারেন এমন স্যুপগুলি তৈরি করতে যেগুলি হজম করা সহজ।আপনার শিশুকে কঠিন খাবার দেওয়া শুরু করার জন্য তার বমি করার পরে আট ঘন্টা অপেক্ষা করুন।

4.তাকে রোজের খাবারগুলিই দিনঃ আপনার সদ্য হাঁটতে শেখা ছোট্টটি একবার সম্পূর্ণরূপে সেরে উঠলে অথবা তার শেষবারের মত বমি করার পর 24 ঘন্টা পেরিয়ে গেলে,আপনি তাকে তার রোজের খাবারগুলিকেই দিতে পারেন।আপনি তাকে রুটি অথবা অন্যান্য খাবারগুলির সাথে খুব অল্প পরিমাণে দুধ দিতে পারেন।যদি সে তার খাবারগুলিতে ভাল প্রতিক্রিয়া দেখায়,তবে আপনি তাকে তার নিয়মিত রোজের খাদ্যগুলির মধ্যে পরিচালিত করতে পারেন।

সদ্য হাঁটতে শেখা ছোট বাচ্চাদের বমির জন্য ঘরোয়া প্রতিকারগুলি

নিম্নে বর্ণিত হল বেশ কয়েকটি ঘরোয়া প্রতিকার যেগুলি বমি করার পর আপনার ছোট্টটিকে শান্ত করে তুলতে সহায়তা করতে পারেঃ

  • ঝোল বা জলের মতো পরিষ্কার তরল আপনার শিশুকে পুনরায় হাইড্রেট করার জন্য দুর্দান্ত বিকল্প হতে পারে।ORS এর মতো ইলেক্ট্রোলাইট দ্রবণটিও হারিয়ে যাওয়া পুষ্টির পরিপূরক হিসাবে সহায়ক হতে পারে।আদা মিশ্রিত পানীয় বা হালকা গরম জলে সামান্য সোডা পুরোপুরি মিশ্রিত হয়ে গেলে অল্প পরিমাণে দেওয়া যেতে পারে।এর মধ্যস্থ কার্বনেসন গুলির ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠতে পারে তাই কিছু বুদবুদগুলিকে দ্রবীভূত করতে আপনাকে এটিকে ভালভাবে নাড়িয়ে নিতে হবে।
  • নরম নারকেলের জল পুষ্টিকর উপাদানে পরিপূর্ণ এবং এটি আপনার শিশুকে তরল ডায়েটে ধরে রাখতে সহায়তা করতে পারে।
  • ক্যামোমাইল অথবা মেন্থল চা পেটকে শান্ত করতে পারে।এই চা আপনি আপনার সোনাকে দিনে 2-3 বার করে অল্প পরিমাণে দিতে পারেন যদি সে সেটিকে সহ্য করে নিতে পারে।জ্বলন প্রতিরোধ করতে সর্বদা হালকা গরম চা দিন।
  • আপনার সদ্য হাঁটতে শেখা ছোট্ট সোনাটি একবার সাফল্যের সাথে তার তরল ডায়েটটিকে ধরে রাখতে পারলে,আপনি তাকে কিছু টোস্ট বা কুড়মুড় করে খাওয়া যেতে পারে এ ধরনের কিছু খাবার দিতে পারেন।সে কিছুটা সেরে উঠলেই আপনি তাকে সবজির হালকা ঝোল অথবা চটকানো ভাতের মত সহজপাচ্য খিছু খাবার অথবা মিশ্রণ দেওয়া শুরু করতে পারেন।এরপর সে সম্পূর্নরূপে সেরে ওঠার পর ধীরে ধীরে তাকে পুনরায় তার নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের খাবারগুলিকে দেওয়া শুরু করুন।

আপনার সদ্য হাঁটতে শেখা ছোট্টটি কখন পুনরায় কঠিণ খাবার খেতে পারবে?

অধিকাংশ মানুষই বলে থাকেন যে,আপনার বাচ্চার বমি হওয়ার পর তাকে কঠিণ খাবার দেওয়া শুরু করার পূর্বে কমপক্ষে 24 ঘন্টা অপেক্ষা করা উচিত।যদি আপনার বাচ্চা এর মাঝে আর বমি না করে থাকে এবং সে তার তরল ডায়েটে ভাল প্রতিক্রিয়া দেখায়,আপনি তবে ধীরে ধীরে কিছু সহজপাচ্য কঠিণ খাবারগুলিকে তাকে দেওয়া শুরু করতে পারেন।

বমি করা প্রতিরোধের সাবধানতাগুলি

বাহ্যিক কারণে হওয়া বমি থেকে আপনার ছোট্টটিকে রক্ষা করতে আপনি কয়েকটি সতর্কতা অনুসরণ করতে পারেনঃ

1.তার খাবার পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া নিশ্চিত করুনঃ আপনার রান্না ঘরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।আপনার সোনার জন্য খাদ্য প্রস্তুত করার এবং তাকে পরিবেশন করার বাসনগুলিকে নির্বীজিত করুন।ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের কারণে হওয়া সংক্রমণকে প্রতিরোধ করার এটি একটি দুর্দান্ত উপায়।

2.বদহজমের সহায়ক খাবারগুলিকে হ্রাস করুনঃ কিছু বিশেষ ধরনের খাদ্য যেমন চকলেট,আম্লিক জাতীয় ফল এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্যগুলির কারণে আপনার শিশুর মধ্যে অ্যাসিড রিফ্লাক্স হয়ে থাকতে পারে।আপনার সন্তানের যদি এর আগেও অ্যাসিড রিফ্লাক্সের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে,তবে এই ধরণের খাদ্য আইটেমগুলিকে সার্বিকভাবে বাদ দিয়ে দেওয়াই ভাল।এছাড়াও বদ-হজমকে প্রতিরোধ করতে তাকে খাবারগুলিকে গিলে ফেলার পূর্বে সেগুলিকে ধীরে ধীরে এবং সঠিকভাবে চিবিয়ে খেতে শেখান।

3.ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি সম্পর্কে জানুনঃ যদি আপনার সন্তানের কোনও ওষুধ চলতে থাকে,তবে সেই ওষুধগুলির কারণে হওয়া সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি সম্পর্কে আপনার জেনে নেওয়া উচিত ।কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ওষুধ বমির কারণ হয়ে ওঠে,বিশেষ করে সেগুলি যদি খালি পেটে গ্রহণ করা হয়।

4.আপনার টডলার পদাধিকারীটির অ্যালার্জির দিকে নজর রাখুনঃ আপনি যদি আপনার বাচ্চার যে কোনও খাবারের অ্যালার্জি সম্পর্কে অবগত হন তবে তাকে সেই বিশেষ খাবারটি দেওয়া বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। এছাড়াও, আপনার প্যাকেটজাত খাবারের আইটেমগুলির উপাদানগুলি পরীক্ষা করে দেখুন যাতে আপনার সন্তানের অ্যালার্জি হতে পারে এমন কোনও উপাদান আছে কিনা।

5.গতি অসুস্থতার দিকে নিয়ে যেতে পারে এমন পরিস্থিতি থেকে দূরে থাকুনঃ যদি আপনার বাচ্চার গতি অসুস্থতা বা মাথা ঘোরার ঝোঁক থাকে তবে তাকে রোলার কোস্টার রাইডে নেওয়া বা তীক্ষ্ণ বক্ররেখা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করা এড়িয়ে চলুন,যা তার মাথা ঘোরা রোগটিকে বাড়িয়ে দিতে পারে এবং তাকে ফেলে দিতেও পারে।

6.আপনার টলমল করে হেঁটে চলে বেড়ানো ছোট্টটিকে হাইড্রেট রাখুনঃ ডায়রিয়ার সাথে বমি জড়িত হয়ে শরীরের জলের পরিমাণ হ্রাস করতে পারে। সুতরাং, তাকে হাইড্রেটেড রাখতে আপনার তাকে পর্যাপ্ত তরল সরবরাহ করা জরুরী।

যদি কোনও শিশু বিষাক্ত কিছু গ্রাস করে ফেলে কি হবে?

বিষাক্ত কিছু পদার্থ গ্রহণ করার পর আপনার বাচ্চা যদি বমি করা শুরু করে, তৎক্ষণাৎ একজন ডাক্তার ডাকা উচিত যাতে আপনি দ্রুত সবথেকে কার্যকরী ওষুধের কোর্সটি শুরু করতে পারেন।আপনি যদি সেই বস্তুটিকে সনাক্ত করতে পারেন,যেটি সে গ্রাস করে ফেলেছে,তবে সেটি চিহ্নিত করে একটি নোট করে রাখুন এবং ডাক্তারবাবুকে জানান যে সেই জিনিসটি ঠিক কি ছিল।তখন সেই গ্রাস করে ফেলা জিনিসটির উপর নির্ভর করে আপনার ডাক্তারবাবু আপনাকে বলতে সমর্থ হবেন যে আপনার কি করা প্রয়োজন।

কখন একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?

বমি হওয়া সম্ভাব্য গুরুতর কিছুর সংকেত দিতে পারে।নিম্নলিখিত ক্ষেত্র বিশেষে, আপনার সদ্য হাঁটতে শেখা ছোট্ট শিশুটিকে সঠিক চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার জন্য সর্বদা একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

  • বমির মধ্যে আপনি রক্ত লক্ষ্য করলেঃ আপনার ছোট্ট সোনাটির বমিতে রক্তের উপস্থিতি বহু গুরুতর সম্যার সংকেত দিতে পারে যেমন পেটের মধ্যে একটি গুরুতর সংক্রমণ,অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণে গ্রাসনালীর আস্তরণে চিঁড়ে যাওয়া বা ক্ষত সৃষ্টি হওয়া,ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রদাহ ইত্যাদি।এই সবক্ষেত্রে আপনি যত দ্রুত সম্ভব আপনার ছোট্টটিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
  • তীব্র ডায়রিয়া এবং উচ্চ জ্বরের সহিত বমি হওয়াঃ ডায়রিয়ার সহিত বমি হওয়া জড়িত হলে তা আপনার বাচ্চাকে খুব দ্রুত ডিহাইড্রেট করে তোলে অর্থাৎ তার দেহ মধ্যস্থ জল শুকিয়ে যায়।অবস্থাটি ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে যদি এর সাথে আবার বাচ্চার উচ্চ মাত্রায় জ্বর থাকে।আরও কোনও বড় ধরনের জটিলতা রোধ করতে ডাক্তারকে দেখানোরই পূর্বাভাস দেয় এটি।
  • বমি যদি সবুজ অথবা কালো রঙের হয়ে থাকেঃ একটি পিত্ত রিফ্লাক্সের কারণে আপনার ছোট্ট সোনাটির বমি সবুজ প্রদর্শিত হতে পারে।এটি আবার আপনার শিশুর অন্ত্রের মধ্যে আলসার অথবা একটি গুরুতর সংক্রমণ হতে পারারও ইঙ্গিত দিতে পারে। অন্যদিকে, একটি বাদামী বা কালো রঙের বমি অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কারণে রক্ত ​​জমাট বাঁধাকে চিহ্নিত করতে পারে।এটি ভিটামিন K এর অভাবজনিত কারণে কিম্বা দুধের অ্যালার্জির কারণে হতে পারে।
  • পেট ফুলে যাওয়াঃ যদি আপনার সন্তানের পেট ফুলে যায়,তবে সেটি তার পেটে কোনও গুরুতর সংক্রমণ অথবা তরল ধারণকে সূচিত করতে পারে,উভয় ক্ষেত্রেই চিকিৎসাগত হস্তক্ষেপের প্রয়োজন।
  • দুর্বল নাড়ি এবং ক্লান্তিঃ যদি আপনার বাচ্চার মধ্যে অস্বস্তিবোধ হয় এবং সারা দিনে খুব সামাণ্য পরিমাণে মূত্র ত্যাগ করে থাকে,তবে জল এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ঘাটতির কারণে এটি তার ডিহাইড্রেট হওয়ারই সংকেত হতে পারে।

যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ হল শিশুদের বমির ঝুঁকি হ্রাস করার দুর্দান্ত উপায়।তবে যদি অন্য শর্তগুলির কারণে আপনার বাচ্চার ঘন ঘন বমি হয়ে থাকে,এটি সুপারিশ করা হয় যে,এ বিষয়ে আপনার চিকিৎসার দিকে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন।