গর্ভাবস্থায় মুলো সেবন করা

গর্ভাবস্থায় মুলো সেবন করা

মুলো ভারতীয় খাবারের একটি সাধারণ এবং সুস্বাদু অঙ্গ। এটি অনেক রঙে দেখা যেতে পারে, যদিও তার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ একটি হল সাদা।এগুলি আবার এমনকি আকারে ছোট এবং গোলাকারের পাশাপাশি লম্বা এবং বক্র দুরকমেরই বিভিন্ন আকারে হয়ে থাকে।মুলো কাঁচা, রান্না করা, ভাজা বা বেক করে নিয়ে খাওয়া যাতে পারে।তবে গর্ভাবস্থাকালে, আপনি যে খাবারগুলিই খান না কেন সেগুলির দিকে অতিরিক্ত নজর রাখাটা আবশ্যক।

গর্ভবতী মহিলারা কি মুলো খেতে পারেন?

অনেক খাদ্য উপাদানই গর্ভাবস্থায় খাওয়ার পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনিরাপদ।যদিও আগে হয়ত মুলো খাওয়ার ব্যাপারে আপনার মনে কোনওরকম সন্দেহ দানা বাঁধে নি, তবে এখন সেটা ভাববার সময়।গর্ভাবস্থায় সাদা মুলো খাওয়ার সাথে কিছু বিপদ সম্পর্কিত, তবে তা পরোক্ষভাবে।অতএব, এর ছোট্ট উত্তরটি হল হ্যাঁ, আপনি সেগুলি খেতে পারেন, তবে শুধুমাত্র কয়েকটি নির্দিষ্ট সাবধানতা অবলম্বনের পরেই, যেগুলি এই নিবন্ধটিতে তালিকাবদ্ধ করা হলঃ

মুলোর পুষ্টিমূল্য

কেবল এক কাপ মুলোই আপনাকে সরবরাহ করবে পটাশিয়াম, ফোলেট, ক্যালসিয়াম, আয়রণ, ভিটামিন C, ভিটামিন A, B গ্রুপের ভিটামিনগুলি, জিঙ্ক এবং ম্যাঙ্গানিজ থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজগুলির এক বিরাট সম্ভার পর্যন্ত।বিশেষত, ফোলেট আপনার সন্তানের সুস্থ বিকাশের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, যখন আবার ভিটামিন C এবং আয়রণ সংবহন তন্ত্র এবং বিভিন্ন অঙ্গাণুর বিকাশের জন্য জরুরি।তদ্যুপোরি, দাঁত, কঙ্কালতন্ত্র এবং মাংসপেশীর বিকাশের জন্য ক্যালসিয়াম অপরিহার্য।

অন্তঃসত্ত্বাকালে মুলো খাওয়ার অত্যশ্চার্যজনক উপকারিতাগুলি

আপনার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় মুলোকে অংশীভূত করে তোলার বহুবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে।সেগুলির মধ্যে কয়েকটি হলঃ

1.ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে

মুলো আপনার ক্যালোরি গ্রহণ হ্রাস করতে আপনার ক্ষুধা পরিচালনা করার জন্য বেশ সহজেই আপনার পেট ভার করে রাখে।অতিরিক্তভাবে, এটি আবার কম মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট এবং শর্করা যুক্ত হয়ে থাকে যদিও তা গ্রহণ করলে উচ্চ পরিমাণে ডায়াটরি ফাইবার বা খাদ্য মধ্যস্থ তন্তু দেহে প্রবেশ করে যা কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা হ্রাস করতে পারে।

2.ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

আইসোথিওসায়ানেট এবং সালফোরাফেনের মত বিভিন্ন শক্তিশালী অ্যান্টিকার্সিনোজেনগুলি মুলোর মধ্যে উপস্থিত থাকে বলে জানা যায়।

3.কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য অনুকূল রাখে

মুলো মধ্যস্থ পটাসিয়ামের প্রাচুর্য রক্ত ​​সঞ্চালন উন্নত করে রক্তচাপ হ্রাস করতে পরিচিত।অ্যান্থোসায়ানিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলিও আবার কার্ডিওভাসকুলার ব্যাধিগুলির ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে।

4.মুত্রসংক্রান্ত সমস্যাগুলির উন্নতি ঘটায়

মুলো মধ্যস্থ মুত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্যগুলি প্রস্রাবের প্রবাহকে উন্নত করে এবং এর প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলি মুত্রনালীর ফুলে যাওয়া, সংক্রমণ হওয়া এবং এ ধরণের আরও অন্যান্য সমস্যাগুলির চিকিৎসায় সাহায্য করে।

5.ডায়াবেটিস

মুলোর মধ্যে গ্লাইসেমিক সূচক কম থাকে, যার অর্থ হল এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে প্রভাবিত করে না।ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এ ব্যাপারটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ, যাদের নিয়মিতভাবে নিজেদের ডায়েটে দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

6.ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখে

ভিটামিন C, B-ভিটামিনগুলি এবং জিঙ্ক বা দস্তা ত্বক নিরাময় এবং উৎপাদনের জন্য দারুণ।এই পুষ্টি উপাদানগুলি সংশ্লেষণ এবং ত্বকের কোষগুলিকে একত্রে ধরে রাখা প্রোটিন কাঠামোকোলাজেনের বিকাশের জন্য ব্যবহৃত নির্দিষ্ট এনজাইমের কার্যকারিতাকে উন্নত করে।

7.অনাক্রম্যতা

মুলোর মধ্যে ভিটামিন C এর উপস্থিতির কারণে সেগুলি আপনার সাথে সাথে আপনার শিশুর দেহেও প্রতিরোধ কোষগুলি উৎপাদনে সহায়তা করে।এমনকি এক কাপ রান্না করা মুলো আপনাকে সরবরাহ করবে আপনার দেহে ভিটামিনের দৈনিক প্রয়োজনের প্রায় 30 শতাংশ।

মুলো খাওয়ার সময় অনুসরণীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলি

যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও মুলোগুলি ভারসাম্যযুক্ত খাদ্যতালিকায় একটি অভূতপূর্ব সংযোজন তবে সেগুলি গ্রহণের আগে অনুসরণ করার জন্য বেশ কয়েকটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা রয়েছেঃ

  • সংক্রমণ এড়ানোর প্রথম পদক্ষেপটিই হল মুলোগুলি তার কঁচি পাতা সহ খুব ভালভাবে ধুয়ে নিয়ে তার গায়ে লেগে থাকা ধূলোময়লা, মাটি দূর করা।এর কারণ হল মুলো মাটির নিচে হওয়া ফসল এবং প্রায়শই বিক্রির সময় এর গায়ে কাদামাটি ও ময়লা লেগে থাকে।প্রয়োজন হলে মুলোর খোসা বা ছালটিকে খাওয়া পুরোপুরি এড়াতে এর পাতলা চামড়াটিকে ছাড়িয়ে বাদ দিয়ে দিন।
  • এই একই কারণের জন্য কাঁচা মুলো খাওয়াও পরিহার করুন, ওর মধ্যে উপস্থিত যেকোনও ক্ষতিকারক প্যাথোজেন বা জীবাণুগুলিকে প্রথমেই মেরে ফেলতে সেগুলিকে ভালমত রান্না করুন।
  • মুলো কাটার পর অন্যান্য সবজি কাটার আগে আপনার কাটিং বোর্ডটি অনুগ্রহপূর্বক পরিষ্কার জল এবং ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
  • আপনার নিজের জন্য খাবার প্রস্তুত করার আগে সর্বদা ভালমত হাত ধুয়ে নিন, বিশেষ করে মুলো এবং গাজর, বীট, আলু ও শালগমের মত মাটির তলায় জন্মানো সবজিগুলির ক্ষেত্রে।

গর্ভাবস্থায় মুলো খাওয়ার ঝুঁকি এবং পরিণতিগুলি

উপরের উল্লেখ মত সাবধানতাগুলি আপনি যতদূর অনুসরণ করতে পারবেন ততক্ষণ আপনার ডায়েট থেকে এ ধরণের একটা পুষ্টিকর খাবার বাদ দেওয়ার কোনও কারণই নেই।তবে সেগুলি যদি ভালমত ধোয়া বা রান্না করা না হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার সালমোনেলসিস, টক্সোপ্লাজমোসিস এবং সিগেলসিসের মত মারাত্মক সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।এগুলির ফলে অতিরিক্ত জ্বর, জলশূণ্যতা বা ডিহাইড্রেশন, সারা দেহে ব্যথা এবং অন্যান্য উপসর্গগুলি দেখা দেয় যা আপনার গর্ভাবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে।সংক্রমণটি যদি বিশেষ গুরুতর হয়ে ওঠে, তবে এটি অকাল শ্রম, গর্ভপাত বা মৃত সন্তান জন্মের কারণ হতে পারে।

আপনার গর্ভাবস্থার ডায়েটে মুলোর অন্তর্ভূক্তিকরণ কীভাবে করাবেন

আপনার ডায়েটে মুলো যোগ করার কয়েকটি উপায় এখানে রইলঃ

  • একটা সুস্বাদু জলখাবার হিসেবে স্যুপ বা স্ট্যু বানাতে অন্যান্য সবজির সাথে মুলোর ব্যবহার করতে পারেন।
  • পাস্তা কিম্বা ঘিভাতের সাথে এটিকে রান্না করে সেগুলিতে আরও অতিরিক্ত কিছু পুষ্টিগুণ যোগ করতে সাহায্য করুন।
  • সাধারণত পরোটা, চাটনি এবং সাম্বারের মত বিভিন্ন ভারতীয় খাবারে মুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

একজন মহিলার জীবনে তার গর্ভদশাটি হল একটা কঠিন সময়, সুতরাং আপনার গর্ভস্থ শিশুর পাশাপাশি আপনার নিজেরও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এই সময় আপনার ডায়েটের ব্যাপারে কড়া মনোযোগ দেওয়াটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।যত দীর্ঘ সময় ধরে সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলি বিবেচনা করে বাস্তবায়িত করা হয়, ততকাল আপনার একটি সফল গর্ভদশা বজায় না রাখার কোনও কারণ নেই।