In this Article
গর্ভদশা হল একজন হবু মায়ের পক্ষে একটি অতি উত্তেজনাপূর্ণময় সময়কাল।গর্ভাবস্থায় একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলার নিজের অতিরিক্ত যত্ন নেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাতে তার গর্ভস্থ শিশুটি সুরক্ষিত থাকে, আর মহিলাদের মধ্যে হয়ে থাকা সবচেয়ে স্পষ্ট উদ্বেগগুলির মধ্যে একটি হল এই যে, এই সময় সিঁড়ি দিয়ে ওঠা–নামা করাটা তাদের পক্ষে নিরাপদ কিনা।এই গুরুত্বপূর্ণ সময়কালে সিঁড়ি দিয়ে চলাচল সংক্রান্ত যা কিছু আপনার জানা প্রয়োজন তার সবকিছুই এই নিবন্ধটিতে বলা হল।
অন্তঃসত্ত্বাকালে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা কি নিরাপদ?
যতক্ষণ আপনি অত্যন্ত সচেতন থাকবেন, গর্ভাবস্থায় সিঁড়ি দিয়ে ওঠা–নামা করাটা নিরাপদ।সিঁড়ি দিয়ে ওঠা কিম্বা নামার সময় সবচেয়ে বড় চিন্তার ব্যাপারটা হল পিছলে পড়ে যাওয়া ও আহত হওয়া।গর্ভাবস্থায় পাওয়া আঘাতগুলি ভ্রূণের পক্ষে নানা ভাবে ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে, আর সেই কারণেই সবচেয়ে ভাল হল সাবধানতা অবলম্বন করা।
গর্ভাবস্থায় সিঁড়ি বেয়ে ওঠা ভাল কেন?
একটা স্বাভাবিক ও সুস্থ গর্ভাবস্থায়, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা একেবারে নিরাপদ।গর্ভদশায় সিঁড়ি দিয়ে ওঠার বেশ কিছু উপকারিতাগুলি হলঃ
- প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার ঝুঁকি হ্রাস করেঃ প্রকাশিত কিছু সমীক্ষা অনুসারে, গর্ভাবস্থায় যে সকল মহিলারা সক্রিয় থাকেন এবং সিঁড়ি দিয়ে ওঠা–নামা করেন, তাদের মধ্যে প্রিক্ল্যাম্পসিয়া হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।এটি একটি প্রাণঘাতী অবস্থা যেখানে, গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, হাত–পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া এবং কিডনির সমস্যা বেড়ে ওঠে।
- গর্ভাবস্থাকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার কম সম্ভাবনা থাকেঃ এটা বলা হয়ে থাকে যে, গর্ভদশার প্রথম ত্রৈমাসিকে সিঁড়ি দিয়ে উঠলে তা গর্ভাবস্থাকালীন ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে হ্রাস করতে পারে।এটি এমন এক অবস্থা, যেখানে রক্ত শর্করার মাত্রা হয় অত্যন্ত উচ্চ আর দেহ এই ক্রমবর্ধিত পরিমাণটি গ্রহণ করতে সক্ষম হয়ে ওঠে না।
- পিঠে যন্ত্রণা এবং কোষ্ঠকাঠিণ্য হ্রাস করেঃ অন্তঃসত্ত্বাকালে, শারিরীক ক্রিয়াকলাপগুলি যেমন জগিং করা, হাঁটা কিম্বা সিঁড়ি বেয়ে ওঠা পিঠে যন্ত্রণা এবং কোষ্ঠকাঠিণ্যের মত সমস্যাগুলিকে হ্রাস করতে পারে।এগুলি আবার ফুলে যাওয়া ও ফোলাভাব কমাতেও সাহায্য করে।সিঁড়ি দিয়ে ওঠা আবার শ্রমের সাথে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাকেও উন্নত করতে পারে।
প্রাথমিক গর্ভাবস্থায় সিঁড়ি দিয়ে ওঠা–নামা করা কখন এড়িয়ে চলা দরকার
প্রাথমিক গর্ভাবস্থায় এমন কিছু পরিস্থিতি আছে যখন সিঁড়ি বেয়ে চলাচল করা এড়ানো উচিতঃ
- যদি পূর্বে কখনও আপনার মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত হয়ে থাকে।আপনি যদি ভাবতে থাকেন যে সিঁড়ি বেয়ে উঠলে তা আপনার গর্ভপাতের কারণ হতে পারে, আর আপনার যদি ইতিমধ্যেই পূর্বে গর্ভপাত হওয়ার কোনও ইতিহাস থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে সেটি হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে।
- আপনার যদি ক্র্যাম্প বা খিঁচুনি লাগা অথবা রক্তপাতের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে।
- মাথা টলতে থাকা, ঘোরা বা মাথা ঝিমঝিমে যদি ভুগে থাকেন।
- আপনি যদি একাধিক সন্তান গর্ভে ধারণ করেন।
- আপনার অমরাটি যদি নিচের দিকে নেমে থাকে।
- যদি আপনার উচ্চ কিম্বা নিম্ন রক্তচাপ থেকে থাকে।
- আপনার ডাক্তারবাবু যদি বেড রেস্ট নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
গর্ভাবস্থার পরবর্তী দিকে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা নিরাপদ নয় কেন?
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় কিম্বা তৃতীয় ত্রৈমাসিকের দিকে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা–নামা করাটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।কেন? তার কারণগুলি এখানে দেওয়া হলঃ
- হোঁচট লাগাঃ সিঁড়ি বেয়ে চলার সময় আপনি যদি হোঁচট লেগে হুমড়ি খান বা পিছলে যান, তবে তা আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ শিশুর গুরুতর আঘাত পাওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
- পিছনে চাপ পড়েঃ আপনার পেট ক্রমশ বেড়ে ওঠার সাথে সাথে সাথে ক্রমবর্ধিত ওজনের চাপটি আপনি খুব সম্ভবত অনুভব করা শুরু করবেন।আর এটি সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় আপনার মাথা ঘোরাতে পারে এবং এর ফলে আপনি নিচের দিকে হুমড়ি খেয়ে পরে যেতে পারেন।
- পায়ের পাতা ফুলে যাওয়াঃ গর্ভাবস্থায় আপনার পায়ের পাতা যদি ফুলে গিয়ে থাকে, তবে সেই সময় সিঁড়ি দিয়ে উঠলে তা আপনার পায়ের পাতার ওপর আরও চাপ ফেলতে পারে এবং ফুলে যাওয়াটি আরও বেড়ে যেতে পারে।
- শ্বাস–প্রশ্বাসের কষ্টঃ সিঁড়ি দিয়ে চলাচলের সময় আপনি শ্বাস–প্রশ্বাসের কষ্ট অনুভব করতে পারেন।আর এটি ভ্রূণের উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে যেহেতু আপনার শ্বাস কষ্টের সময় অক্সিজেন সরবরাহটা কমে যায়।
- ভারসাম্য হারিয়ে ফেলাঃ আপনার পেটটি আরও বড় হয়ে ওঠার সাথে সাথে আপনার দেহের ভরকেন্দ্রটি পরিবর্তিত হয় যা আপনার ভারসাম্য বজায় রাখাকে আরও মুশকিল করে তোলে।
সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় অবলম্বিত সতর্কতাগুলি
সিঁড়ি দিয়ে চলার সময় আপনার নিরাপদ এবং অক্ষত থাকা নিশ্চিত করার জন্য এখানে কিছু সাবধানতার উল্লেখ করা হলঃ
- ধীরে ধীরে হাঁটাচলাঃ ধীরে ধীরে এমনকি একই গতিতে সিঁড়ি বেয়ে চলাচল করুন।সিঁড়িতে হুড়োহুড়ি করে উপর–নিচ করা এড়ান আর একেকবারে একটা একটা করে সিঁড়ি বেয়ে উঠুন বা নামুন।
- হ্যান্ডরেইল ব্যবহার করুনঃ সমর্থনের জন্য অন্তত পক্ষে আপনার এক হাত দিয়ে সিঁড়ির হ্যান্ডরেইলটিকে ধরে রাখা নিশ্চিত করুন।আপনার হাতে যদি ভারি ব্যাগ বা লাগেজ থাকে, সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় সেগুলি বয়ে দেওয়ার জন্য কারুর সাহায্য চান।
- আলোঃ সিঁড়িগুলিতে যাতে ভাল মত আলো থাকে তার বন্দোবস্ত করুন যাতে আপনি পায়ের ভুল স্টেপ ফেলাকে এড়াতে পারেন এবং আহত হওয়ার ঝুঁকি থেকে নিজেকে ও গর্ভস্থ শিশুকে রক্ষা করতে পারেন।
- পিছল সিঁড়িগুলির দিকে নজর রাখুনঃ গর্ভবতী থাকাকালীন ভিজা অথবা তেলতেলে পিচ্ছিল সিঁড়িগুলি বেয়ে ওঠা–নামা করা্র চেষ্টা করবেন না কারণ আপনি পিছলে যেতে পারেন এবং আঘাত পেতে পারেন যার ফলে আপনার গর্ভস্থ শিশুটিও আহত হতে পারে।
- পা লুটানো পোশাক পরবেন নাঃ গর্ভাবস্থায় সিঁড়ি দিয়ে চলাচলের সময় আপনি যদি পা লুটানো পোশাক কিম্বা শাড়ি পরেন, সেক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত আপনার পোশাকে হোঁচট লেগে পা জড়িয়ে পড়ে যাওয়ার এবং তার সাথে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- কার্পেট বিছানো সিঁড়ির ক্ষেত্রে ভীষণ সাবধান হনঃ সিঁড়িতে যদি কার্পেট বিছানো থাকে, সেটি টানটান ও সমান ভাবে পাতা আছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিন অন্যথায় এলোমেলো ও অগোছালো অবস্থায় থাকলে আপনি তাতে হোঁচট খেতে পারেন।কার্পেটের উপর জড়িয়ে পড়ে যাওয়া এড়াতে, পায়ের পাতা তুলে তুলে চলুন।
একটি সুস্থ গর্ভাবস্থায় সিঁড়ি দিয়ে চলাচল করাটা নিরাপদ এবং এমনকি উপকারীও বটে।তবে আপনার ডাক্তারবাবু যদি আপনাকে শারিরীকভাবে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার সিঁড়ি বেয়ে চলাচল না করাই উচিত।চূড়ান্ত ত্রৈমাসিকে সিঁড়িকে এড়িয়ে চলাই সবচেয়ে ভাল যেহেতু এই সময় আপনার আহত হওয়ার ঝুঁকি বেশি মাত্রায় থাকে।