জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি-পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য

জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি-পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য

কার্যকরি জন্ম-নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা খুবই জরুরী সেই সকল দম্পতিদের জন্য যারা শীঘ্র গর্ভধারণের ক্ষেত্রে ভীত যেহেতু তারা এবিষয়ে এখনই প্রস্তুত নয়।যদিও সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থাব্যবস্থাপনার কিছু কৌশল আছে, তবুও এটি মনে রাখা প্রয়োজন প্রতিরোধ সবসময় সব চেয়ে ভালো বিকল্প।সকল স্বাস্থ্য-কর্মীদের দ্বারা এটি ভীষণ ভাবে সুপারিশ করা হয় যে,আপনার একটা জন্ম-নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন যার উপর নির্ভর করে এগিয়ে যাবেন। কিন্তু পুরুষ ও মহিলাদের জন্য প্রাপ্ত এতগুলি বিকল্পের মধ্যে আপনার জন্য কোনটি সঠিক বিকল্প হবে? কিছু পদ্ধতি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজন নাও হতে পারে যখন অন্যগুলি দারুণ ভাবে কার্যকরি হবে।বিভিন্ন ধরণের জন্ম-নিয়ন্ত্রণ পরিমাপের সাথে আসে বিভিন্ন খুঁটিনাটি দৃষ্টিভঙ্গি এবং কার্যকারিতার ভিন্ন মাত্রা। এক্ষেত্রে জন্ম-নিয়ন্ত্রণের অনেক ধরণের গ্রহণযোগ্য অনুশীলন রয়েছে যেগুলি সমাজে ব্যবহৃত হয়, যেগুলি সর্বদা নিরাপদ ও কার্যকরি রূপে বিবেচিত হয় না।এখানে আমরা আলোচনা করেছি পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য জন্ম-নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন বিকল্পগুলি সম্পর্কে যেগুলি বেশীর ভাগ স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞদের দ্বারা বিবেচিত নিরাপদ হিসেবে।

জন্মনিয়ন্ত্রণ কি?

গর্ভাবস্থা প্রতিরোধে বা এর সম্ভাবনাকে হ্রাস করতে ব্যবহৃত যেকোনো কৌশল বা পদ্ধতিকেই বলা হয় জন্মনিয়ন্ত্রণ; এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের জন্ম-নিয়ন্ত্রণ কৌশল আছে। সেগুলির মধ্যে কিছু বৈজ্ঞানিকভাবে বিবেচিত নয় অথবা ধর্মীয় ভাবাবেগ সমন্নিত, গর্ভাবস্থা প্রতিরোধে সেরকম একটি হল রোজমেরীর ব্যবহার। তবে এটি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে,যেকোনোরকম জন্ম-নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের আগে একবার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

কিছু ধরণের জন্ম-নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আছে যেগুলি কম এলার্জিকারক, জন্মনিয়ন্ত্রণের এইপ্রকার গুলি সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জনতে অনুগ্রহ করে আপনার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করুন।

জন্ম নিয়ন্ত্রণ যে কোনো পদ্ধতিতে হতে পারে, ডিভাইস অথবা ঔষধ ব্যবহৃত হয় গর্ভধারণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে অনেক পদ্ধতি আছে যেগুলি গর্ভনিরোধের জন্য চিকিৎসাগতভাবে বিশ্বাসযোগ্য এবং বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত, যেগুলি কম ঝুঁকি সম্পন্নও হয়। এগুলির মধ্যে এমন একটি আপনার নির্বাচন করা প্রয়োজন যেটি আপনার স্বাস্থ্য এবং সন্তান নেওয়ার ইচ্ছের উপর নির্ভর করে, এবং যৌনবাহিত রোগ সমূহ থেকেও প্রয়োজনীয় রক্ষা দেয়।

কোনটি সব চেয়ে ভালো জন্ম-নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি?

কোনটি সব চেয়ে ভালো জন্ম-নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

এখানে এমন কোনো একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই যাকে বলা যেতে পারে সবচেয়ে ভালো জন্ম-নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির রূপক। এক্ষেত্রে অসংখ্য কার্যকরি উপাদান আছে যেগুলি জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আপনাকে প্রভাবিত করবে,এবং যদি আপনার সঙ্গী থাকে, এমনকি তাদের পছন্দগুলি এবং স্বাস্থ্য-ও জন্মনিয়ন্ত্রণের পছন্দের কারণ হবে। যদি আপনি খুশি হন জন্মনিয়ন্ত্রণের একটি পদ্ধতি এখন ব্যবহার করে, তার এটিই সম্ভাবনা থাকে যে, আপনি এই পদ্ধতি টি পরিবির্তন করতে পারেন আপনার পছন্দ অনুযায়ী এবং পরিবর্তনের অগ্রাধিকার অনুযায়ী। জন্ম নিয়ন্ত্রণ পছন্দের ক্ষেত্রে যে কারণগুলি প্রভাব বিস্তার করে সেগুলি হল-

  • যখন এবং যদি আপনি সন্তান চান
  • পদ্ধতিটির কার্যকারিতা
  • পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
  • আপনার যৌন ক্ষমতা
  • আপনার স্বাস্থ্য
  • এই পদ্ধতির সাথে আপনার সুবিধার মাত্রা

জন্ম নিয়ন্ত্রণের কোন নির্দিষ্ট পদ্ধতি প্রয়োগের স্থির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনি অবশ্যই ডাক্তারের সাথে এই সকল বিষয় নিয়ে ভালোভাবে কথা বলে নেবেন।যদি আপনার পছন্দের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিটি আপনার অসুবিধাজনক লাগে অথবা এই ধরণের জন্ম-নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে আপনি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া পান তবে সেক্ষেত্রে একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। মনে রাখবেন আপনার ডাক্তারের সাথে নিয়মিত আলোচনা ও আপনার নিয়মিত STD চেকের রুটিনকে সম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রে একটি বড় সুযোগ হয়ে দাঁড়ায়, এই পরীক্ষাগুলি কঠিন আপনার ও আপনাকে ঘিরে যারা থাকেন তাদের সুরক্ষার জন্য।এটি সুপারিশ করা হয় যে,আপনি প্রতি 3 মাসে STD এর রুটিনের একটি প্যানেল করুন যখন আপনার যৌনকার্য আরো রুটিন মাফিক হবে সেই সময়ের।

জন্ম-নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন ধরণের বিকল্প-পুরুষ ও মহিলাদের জন্য

জন্মনিয়ন্ত্রণকে বিস্তৃতভাবে ভাগ করা যায় দুটি প্রধান ভাগে।

1. কন্ট্রাসেপশন

কন্ট্রাসেপশন হল জন্মনিয়ন্ত্রণের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পদ্ধতি, এটির সহজপ্রাপ্যতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি কম হওয়ার কারণে এই পদ্ধতিটি নিশ্চিত করে যে ডিম্বাণুটি শুক্রাণুর দ্বারা নিষিক্ত হয় না।

2. কন্ট্রাজেশন

এটি জরুরী গর্ভনিরোধক হিসেবে বেশী পরিচিত। মর্নিং আফটার পিল গ্রহণের কারণে নিষিক্ত ডিম্বাণু নিজেকে জরায়ুর দেওয়ালে প্রতিস্থাপিত করতে প্রতিহত করে, যা গর্ভাবস্থা রোধ করে।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলির তুলনামূলক সারণী

জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি শিশু জন্মের সম্ভবনা কার্যকারিতা STD বিরুদ্ধে প্রতিরোধ
পরিহার নাই সম্পূর্ণ কার্যকর হ্যাঁ
জন্ম নিয়ন্ত্রক ইমপ্ল্যান্ট খুব কম 100এর মধ্যে 1 অত্যন্ত কার্যকর না
IUD খুব কম 100এর মধ্যে 1 অত্যন্ত কার্যকর না
জন্মনিয়ন্ত্রক প্যাচ 100 এর মধ্যে 9 কার্যকর না
জন্মনিয়ন্ত্রক পিল 100 এর মধ্যে 9 কার্যকর না
ভ্যাজাইনাল রিং 100 এর মধ্যে 9 কার্যকর না
জন্মনিয়ন্ত্রক ইঞ্জেকশান 100 এর মধ্যে 6 কার্যকর না
আপৎকালীন জন্মনিয়ন্ত্রক 100 এর মধ্যে 11 জন(যদি নির্দেশ মত ব্যবহৃতহয়) কার্যকর না
পুরুষ কন্ডোম 100 এর মধ্যে 18 মাঝারি কার্যকর না
ডায়াফ্রাম 100 এর মধ্যে12 কম কার্যকর না
ফিমেল কন্ডোম 100 এর মধ্যে 21 কম কার্যকর না
গর্ভসঞ্চারের সচেতনতা 100 এর মধ্যে 24 কম কার্যকর না
স্পার্মিসাইড 100 এর মধ্যে 29 কম কার্যকর না
উইথড্রল(প্রত্যাহার) 100 এর মধ্যে 27 কম কার্যকর না
জন্মনিয়ন্ত্রক ছাড়া সঙ্গম 100 এর মধ্যে 85 কার্যকর নয় না

 

পুরুষদের জন্য জন্ম-নিয়ন্ত্রণ বিকল্প

মহিলা এবং পুরুষ উভয়ের জন্যই জন্মনিয়ন্ত্রণের কিছু বিকল্প রয়েছে। যাই হোক, পুরুষদের জন্য বিকল্প গুলি কিছুটা কম ধরণের হয় মহিলাদের যতটা সহজলভ্য হয় তার তুলনায়।এটি সবসময় সুপারিশ করা হয় জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিভিন্ন ধরণগুলি সম্মিলিত ভাবে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে, যা প্রতিরোধের গভীর সম্ভাবনাকে নিশ্চিত করে, এটি ঘটে, সেই মুহূর্তের জন্য, ফল পাওয়া যায় আপনার সঙ্গী কন্ডোম পরিধান করলে, আপনি পিল বা বড়ি সেবন করলে এবং যৌন মিলনের সময় বাইরে নির্গমনের পদ্ধতি ব্যবহার করলে।

এটা প্রশ্ন করা যেতে পারে আজকাল বাজারে যে সকল জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত বিকল্প সহজেই পাওয়া যায় সেগুলির মধ্যে কোনগুলি উভয় লিঙ্গের জন্যই নিরাপদ? এখানে কিছু জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি দেওয়া হল যেগুলি পুরুষেরা ব্যবহার করেন।

1.আউটারকোর্স

আউটার কোর্স খুব সাধারণ একটি শব্দ যেটি যোনিতে যৌনমিলন ছাড়া যেকোনো রকম যৌনকর্মের ক্ষেত্রে বোঝায়।এটি ওরাল-সেক্স বা মৌখিক মিলনকেও বোঝায়। সুতরাং এক্ষেত্রে যোনিতে কোনরকম প্রবেশ ঘটেনা, ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা দূর্দান্ত ভাবে কমে যায়।

সুবিধা

  • আউটার কোর্সের সময় আপনার সঙ্গী অনেকটা বেশী সময় নিতে পারবে একে অন্যের পছন্দগুলি বোঝার জন্য এবং যা তাদের যৌন আনন্দ দেবে
  • যোনিতে কোন রকম প্রবেশ না ঘটায় গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যায়।
  • এক্ষেত্রে হরমোনের প্রভাবে কোন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না
  • যৌনরোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা হ্রাস করে

অসুবিধাগুলি

  • যদি পূর্বনির্গমন ঘটে বা যোনি অঞ্চলে ভুলবশত নির্গমন হয়ে পড়ে তবে সেক্ষেত্রে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে
  • উদ্দীপনার পরে যোনিতে প্রবেশ করানো থেকে সংযত হওয়া আপনার সঙ্গীর পক্ষে কঠিন হবে।

2.কন্ডোম

ল্যাটেক্স থেকে কন্ডোম গুলি প্রস্তুত হয় এবং লিঙ্গের উপরের দিকে এগুলি দ্বারা আবৃত করা হয়। এটি লিঙ্গের চামড়া এবং যোনির মধ্যে বাধার সৃষ্টি করে।যার অর্থ কোনো শুক্রাণু যোনিতে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে বাধা পায়।

সুবিধা

  • গর্ভনিরোধের ক্ষেত্রে কন্ডোম উচ্চমাত্রায় কার্যকরি
  • কন্ডোম হল এক সঙ্গীর থেকে অন্য সঙ্গীর মধ্যে যৌন রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সবচেয়ে ভালো উপায়।
  • এগুলি সস্তা এবং সহজলভ্য
  • অন্য সঙ্গীর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটায় না।

অসুবিধা

  • জনসংখ্যার খুব কম শতাংশ লোকেরই ল্যাটেক্স-এ (যা থেকে অধিকাংশ কন্ডোম প্রস্তুত হয়)এলার্জি থাকে।
  • যেভাবে কন্ডোমটি পূর্ণ হয় তা কিছু পুরুষ পছন্দ করেন না।
  • কন্ডোমে অনেক সময় ফাটল হয় যার সাধারণ অর্থ হল নির্গমন পদ্ধতিটির বিফলতা।

3.উইথড্রল ( প্রত্যাহার )

এটি বহিঃনির্গমনের একটি অন্যতম পুরানো পদ্ধতি। উইথড্রল পদ্ধতিতে লিঙ্গ-কে বের করে সরিয়ে নিয়ে আসা হয় নির্গমনের ঠিক আগের মুহূর্তে।

সুবিধে

  • সঙ্গী যোনিতে যৌনমিলনে আনন্দ উপভোগ করতে পারে কোনও রকম বাধা ছাড়াই।
  • যোনিতে নিঃসরণের আগেই লিঙ্গকে বের করে সরিয়ে নিয়ে আসা হয় যা গর্ভধারণ রোধ করে।

অসুবিধে

  • বহিঃনির্গমনের পুর্বে সামান্যতম শুক্রাণুর উপস্থিতিও মহিলাদের গর্ভধারণের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
  • যদি পুরুষের অপরিণত বহিঃনিঃসরণের ইতিহাস থাকে, তবে সেক্ষেত্রে সঠিক সময়ে দ্রুত বাইরে বের করে আনা কষ্টকর হতে পারে।
  • এই পদ্ধতিটি আপনাকে কোনো রকম যৌনবহিত রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে না।

4.ভ্যাসেক্টোমি

গর্ভনিরোধের ক্ষেত্রে ভ্যাসেক্টোমি একটি স্থায়ী ও প্রায় 100% কার্যকরি একটি পদ্ধতি।এটি লিঙ্গের টিউবটিকে বন্ধ করতে বা আটকে দিতে ব্যবহৃত হয়, যার দায়িত্ব শুক্রাণু বহন করা।এক্ষেত্রে পুরুষটির শরীর ছেড়ে যাওয়ার সম্মতি পায় না শুক্রাণু এবং সেটি তার নিজের শরীরের মধ্যেই শোষিত হয়ে যায়।আপনি অবশ্যই মনে রাখবেন যে, ভ্যাসেক্টোমি বিপরীত প্রক্রিয়াতেও কাজ করতে পারে।

সুবিধা

  • ভ্যাসেক্টোমি প্রায় 100% কার্যকরি হয়
  • এটি সেই সকল পুরুষদের জন্য আদর্শ যারা আর কখনও কোনো সন্তান না নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।
  • পদ্ধতিটি খুব সাধারণ এবং আপনার ডাক্তারখানায় এটি 20 মিনিটের মধ্যে করানো হয়।
  • আপনার কোনও হরমোনে প্রভাব পড়ে না।
  • পদ্ধতিটি বিপরীতমুখী।

অসুবিধা

  • পদ্ধতিটি তৎক্ষনাৎ কার্যকরি হয়না যেহেতু লিঙ্গে ইতিমধ্যেই কিছু শুক্রাণু গঠিত হবে সেগুলি দূরিভূত করতে কয়েক মাস সময় লাগবে।
  • এই পদ্ধতিটি আপনাকে বা আপনার সঙ্গীকে যৌনবাহিত রোগের সংক্রমণের থেকে সুরক্ষা দিতে পরে না।

কোনো নির্দিষ্ট ধরণের জন্ম-নিয়ন্ত্রণ পদ্ধিতি ব্যবহারের আগে একবার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।সকল প্রকার ঝুঁকি এবং উপকারিতাগুলি সম্পর্কে ভালোভাবে জানা থাকলে সঠিক পদ্ধতিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনার সুবিধে হবে।

মহিলাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিকল্পগুলি

মহিলাদের জন্য বিভিন্ন জন্মনিয়ন্ত্রক পদ্ধতি রয়েছে।এগুলি সবকটি সুরক্ষিত এবং আপনি সঙ্গম করলেও গর্ভবতী হবার সম্ভবনা কম। এর কোন্টাই আপনার ডিম্বানুর ক্ষতি করে না,ফলে আপনি ভবিষ্যতে চাইলে সন্তান ধারণ করতে পারেন। যৌন সংক্রামক ব্যাধির হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য এবং যাতে কোনোভাবে গর্ভসঞ্চার না হয় তার জন্য আপনার সঙ্গীকেও গর্ভনিরোধক যেমন কন্ডোম ব্যবহার করতে বলুন। এখানে কয়েকটি মহিলা গর্ভনিরোধকের আলোচনা করা হল।

1. জন্ম নিয়ন্ত্রক পিল বা বড়ি

মনে করা হয় এগুলো হল মহিলাদের গর্ভনিরোধকের সবচেয়ে ভাল উপায়।

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো শত শত গর্ভনিরোধক পিল বা বড়ি বাজারে বিক্রি করে, এবং প্রত্যকেই দাবী করে নানা গুণের অধিকারী কিন্তু আসলে এগুলো মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। প্রথম ধরনের গুলো হল দুটি হুরমোন ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টিন এর সমন্বয়।আর দ্বিতীয় ধরনের গুলো হল শুধুমাত্র প্রোজেস্টিন থাকে।আপনি অবশ্যই আপনার ডাক্ত্রবাবু বা গাইনোকলজিস্ট এর সাথে কথা বলে নেবেন কোনটা আপনার জন্য সবথেকে ভাল হবে।

সুবিধাগুলি

  • এটি হল মহিলাদের জন্য সব থেকে কার্যকরি গর্ভনিরোধক পদ্ধতি।
  • রজস্রাবের সময়কার লক্ষণের ব্যাপকতা কমায়।
  • এই পদ্ধতিতে কোনো জিনিস শরীরে প্রবেশ করাতে বা ইমপ্ল্যান্ট করতে হয় না।

অসুবিধাগুলি

  • যেহেতু পিল গুলো আপনার হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন ঘাটায় তাই কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
  • কিছু পিল আছে যেগুলো প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খেতে হয় অনেক মহিলার কাছে এটা শক্ত ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
  • যে সকল মহিলারা ব্লাডসুগার, ব্লাডক্লট, লিভার এবং হার্টের সমস্যায় ভুগছেন তারা এটা ব্যবহার করতে পারেন না।

2.ফিমেল কন্ডোম

এটা একটা উলটানো থলি বিশেষ যা যোনিতে পড়তে হয় এবং এটি নির্গত হওয়া পদার্থকে সংগ্রহ করে এবং শুক্রাণুকে যোনিতে প্রবেশে বাঁধা দেয়।এটা অপসারন যোগ্য এবং সঙ্গমের আট ঘন্টা আগে পড়তে হয়।

সুবিধাগুলি

  • দেহের হরমোনের মাত্রায় কোনো পভাব ফেলে না।
  • এটা যৌন সংক্রামক ব্যাধি থেকে কিছুটা রক্ষা করে।
  • এটা খুব সহজলভ্য

অসুবিধাগুলি

  • এটা জন্ম নিয়ন্ত্রণের সেরা উপায় নয়।
  • ফিমেল কন্ডোম ল্যাটেক্স দিয়ে তৈরী যার ফলে কারও কারও ক্ষেত্রে অ্যালার্জি দেখা যায়।
  • এতে শব্দ হয়।

3. ডায়াফ্রাম

এটা সারভিক্সের ওপর সঙ্গমের ঠিক আগে লাগাতে হয়।এটা রাবারের তৈরী হয় এবং দেখতে গম্বুজের মত।এগুলো স্পার্মিসাইডের সাথেও ব্যবহার করা হয়।

সুবিধাগুলি

  • এটা খুব সস্তার,একটা ডায়াফ্রাম দুই বছর পর্যন্ত চলতে পারে।
  • এতা শরীরের হরমওনের ওপর কোন প্রভাব ফেলে না।
  • কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই
  • সস্তা এবং খুব সহজেই পাওয়া যায়

অসুবিধগুলি

  • দূর্ভাগ্যবশত এটি আপনাকে যৌন সংক্রামক ব্যাধিগুলো থেকে সুরক্ষা দেয় না।তাই অপরিচিত বা অল্পপরিচিত কার অ সাথে যৌনসঙ্গম না করাই ভাল।
  • আপনাকে ডাক্তারবাবুর কাছে যেতে হবে এটাকে লাগাতে।
  • এটার অসফ্লতার হার 16%
  • ঋতুস্রাবের সময় ব্যব হার করলে শক সিন্ড্রোমের সম্ভবনা বেড়ে যায়।

4. ভ্যাজাইন্যাল রিং

.ভ্যাজাইন্যাল রিং হল একটা আংটির মত গোলাকার বস্তু যা যোনিতে আটকানো হয় এবং এটা খাবার পিল গুলোর মত ই হরমোন ক্ষরণ করে।এটা মাসে একবার লাগাতে হয়।

সুবিধাগুলি

  • আপনাকে মাসে একবার মাত্র রিং টি বদলাতে হবে।
  • এটা গর্ভনিরোধক বড়ি বা পিলের মতই কার্যকর।
  • রজস্রাবের লক্ষণগুলোকে সহজ করে।

অসুবিধাগুলি

  • এটার খরচ অপেক্ষাকৃত বেশি।
  • হরমোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।
  • যোনীতে জ্বলন হতে পারে।
  • এটা খুব সামান্য পরিমানে যোউন সংক্রামক রোগ প্রতিহত করে তাই এর ভরসায় অপরিচিত সঙ্গীর সাথে যৌনসঙ্গম করলে বিপদ ঘটতে পারে।

5.আই ইউ ডি

আই ইউ ডি কথাটির অর্থ হল ইন্ট্রাইউটেরাইন ডিভাইস। এটা হল T আকৃতির প্লাস্টিকের তৈরী একটি ডিভাইস যা দুটি ভ্যারাইটির হয়। প্রথমটি হল হরমোন আই ইউ ডি যা প্রোজেস্টেরন নিসৃত করে গর্ভধারণ রোধ করে আর দ্বিতীয়টি হল কপারের (তামার) তৈরী। দুটি জিনিসই শুক্রাণুকে ওভাতে পৌঁছাতে বাঁধা দেয়।

সুবিধাগুলি

  • আপনি কি ধরনের আই ইউ ডি ব্যবহার করছেন তার উপর নির্ভর করে,মোটামুটি একবার প্রতিস্থাপিত করার পর 3 থেকে 12 বছর পর্যন্ত এটি চলে।
  • মহিলাদের জন্য যে সকল গর্ভনিরোধনের পদ্ধতি আছে তারমধ্যে এটি সবথেকে ভরসাযোগ্য এবং কার্যকর।
  • সঙ্গমের 120 ঘন্টার পর থেকে এতা আপৎকালীন গর্ভনিরোধক হিসাবে কাজ করে।
  • রজস্রাবের লক্ষণগুলোকে সহজ করে।
  • কপার আই ইউ ডি হরমোনের মাত্রার কোন পরিবর্তন ঘটায় না।

অসুবিধাগুলি

  • খিঁচুনি, অনিয়মিত ঋতুস্রাব, বমি বমি ভাব প্রভৃতি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
  • এই জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতিটি আপনাকে যৌন সংক্রামক ব্যাধিগুলো থেকে সুরক্ষা দেয় না।

6.টিউব লাইগেশান

এতা হল জন্মনিয়ন্ত্রণের স্থায়ী পদ্ধতি যা শুধুমাত্র মহিলাদের প্রয়োগ করা যায় সেই সব ক্ষেত্রে যেখানে তারা আর পরবর্তিকালে কোনও সন্তান জন্ম দিতে চান না। এক্ষেত্রে ফ্যালোপিয়ান টিউবগুলো বে৬ধে দেওয়া হয়,ফলে ডিম্বাশ্অয় থেকে ডিম্বাণুর নিঃসরণ আটকে যায়।

সুবিধাগুলি

  • এটা হল এক ধরনের স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রন প্রক্রিয়া এবং 100% কার্যকর।
  • হরমোনের ওপর প্রভাব নেই।

অসুবিধাগুলি

  • আপনি যদি পরবর্তিকালে সন্তান চান তাহলে বিপরীতমুখী প্রক্রিয়াটির খরচ অনেক।
  • এই প্রক্রিয়া চলা কালীন কিছু জটিলতা তৈরী হতে পারে।
  • এটা আপনাকে যৌন সংক্রামক ব্যাধিগুলো থেকে সুরক্ষা দেয় না।
  • যদি আপনার বিমার আওতায় না থাকে তাহলে এটির খঅরচ অনেক।

7.জন্মনিরোধোক ইঞ্জেকশান

এটা এমন একটা ইনজেকশান যা প্রতি তিন্মাস অন্তর নিতে হয়।

এই গর্ভনিরোধক শট গর্ভসঞ্চারের সম্ভবনা কমায় নাটকীয় ভাবে,এবং বছ্রে মাত্র চারবার আপনাকে এটা নিতে হয়।

সুবিধা

  • এই সহজ পদ্ধতিটি আপনাকে উঁচুমানের সুরক্ষা প্রদান করে।
  • আপনাকে শটগুলি বছ্রে মাত্র চারবার নিতে হবে।

আসুবিধাগুলি

  • এটার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে।
  • আপনার বিমার আওতার মধ্যে না থাকলে এটা বেশ ব্যয়সাধ্য।
  • এটা আপনাকে কোনোরকম যৌন সংক্রামক রোগ থেকে সুরক্কঘা দেয় না।

8. জন্মনিয়ন্ত্রন প্যাচ

এটা হল এমন একটি প্যাচ যা হরমোন নিঃসরণ করে আপনার শরীরে একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর। এইভাবে এটি গর্ভধারণ রোধ করে।এটা সরা সরি আপনার ত্বকে প্রতিস্থাপন করা হয়,প্রতি সপ্তাহে একটা করে প্যাচ লাগাতে হয়।

সুবিধাগুলি

  • প্রতিদিন একই সময়ে পিল খাওয়ার ঝঞ্ঝাট থেকে মুক্তি।
  • অপেক্ষাকৃত সস্তা পরে।
  • এটা রজঃস্রাবের সমস্যা কিছুটা কমায়

অসুবিধাগুলি

  • এটা আপনার শরীরের হরমোনাল মাত্রার পরিবর্তন ঘটায়
  • কেঊ কেউ সামান্য অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হন।
  • এটা আপনাকে যৌন সংক্রামক রোগের হাত থেকে সুরক্ষা দেয় না।

অতএব আপনিদেখলেন যে জন্মনিয়ন্ত্রনের জন্য পুরুষ ও মহিলাদের অনেক ধরনের বিকল্প আছে। সব গুলির খুঁটি নাটি জেনে আপনাকে বেছে নিতে হবে কোনটি আপনার জন্য সবথেকে ভাল তার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। উপরে উল্লেখিত সব গুলো পদ্ধতিপ্রত্যকের জন্য আদর্শ নয়। আপনার ডাক্তারবাবু আপনার এবং আপনার সাথীর চিকি ৎ সার পুরো ইতিহাস জানতেচাইবেন যদি কিছু থেকে থাকে।

আপনি আপনার ডাক্তারবাবুকে বলুন আপনাদের সন্তান ধারনের পরিকল্পনা, কবে নাগাদ আপনারা সন্তান নিতে চান।এই প্রশ্নের ঠিক ঠাক উত্তর দেওয়া সমসস্যার বিষয় যে ঠিক কোন সময়ে আপনি সন্তান চাইছেন।তবুও আপনি আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করেলে একটা সমাধানের রাস্তা খুঁজে পাবেন যা আপনার স্বাস্থ্য এবং চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখবে। কোনো একটি গর্ভনিরোধ পদ্ধতি ব্যবহার করার আগে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো নিয়ে আলোচনা করতে ভুলবেন না।

যৌন্তা সম্বন্ধে নিজেকে শিক্ষিত করে তুলুন,জন্মনিরোধক, STD এবং সুরক্ষিত যৌন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুন।এই ব্যাপারে আপনাকে পরামর্শদেওয়া হচ্ছে যে বিষয়তির উপর গবেষ্ণা করুন এবং আপনার ডাক্তারবাবুর সঙ্গে খোলামেলা ও বিষয়ের গভীরে গিয়ে আলোচনা করুন। আপনি যখন প্রস্তুত নন তখন গর্ভধারন না করাই ভাল।আপনার গর্ভধারণের পরিকল্পনাতে আপনার সঙ্গীকে যুক্ত করুন এবনহ সেই সময়ে গর্ভধারণ করুন যখন আপনি জীবনে প্রতিষ্ঠিত,আপনার বাচ্চাকে প্রতিপালন করার জন্য আপনার হাতে যথেষ্ট সময় আছে। এইটি হল অন্যতম কারণ যা নিয়ে আপনি আপনার সাথীর সাথে আলোচনা করুন এবং তাকে গর্ভনিরোধক ব্যবহার করতে উৎসাহিত করুন।