In this Article
প্রজননের সাথে একটি মহিলার বয়স ভীষণভাবে সম্পর্কযুক্ত। কুড়ি তিরিশ এবং 40 বছর বয়সের মহিলাদের গর্ভবতী হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের প্রয়োজনে তাদের বয়সের প্রভাব কতখানি। তার খুঁটিনাটি বিষয় গুলি জানা যাক।
বয়স এবং নারীর গর্ভধারণ ক্ষমতা
মহিলাদের বয়স তাদের প্রজনন ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। জৈবিক নিয়ম অনুযায়ী ২০– এর ঘরে মহিলারা যে স্বাভাবিক নিয়মে সহজেই গর্ভবতী হতে পারেন তা খুব বেশি দিন স্থায়ী হয় না,বয়স বাড়তে সাথে সাথে এটি ক্রমশই জটিল হতে থাকে। তবুও সেই সম্ভাবনা পুরোপুরি অসম্ভব নয়। ৩৫ বছরের পরেও মহিলারা সফলভাবে গর্ভবতী হতে পারে। যদি আপনি দুটি বা তার বেশি সন্তান নিতে চান তবে, এটি মানা ভালো যে,আপনি আপনার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি আগে থেকেই শুরু করুন
এখন দেখা যাক মহিলাদের গর্ভবতী হওয়ার ক্ষেত্রে তার। জীবনে তিন দশক ধরে চলে আসা কিছু খুটিনাটি বিষয় সমূহ।
২০–তে আপনার প্রজনন ক্ষমতা
২০–তে গর্ভবতী হওয়ার জন্য অনুকূল প্রভাব
- বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী এই সময়টি হলো সন্তানধারণের আদর্শ সময়। জৈবিক ঘড়ি অনুযায়ী এটি নির্দেশ করা হয় যে মেয়েদের ২৪ বছর বয়স হল গর্ভধারণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
- ২০ বছর বয়সে উৎপাদিত ডিম্বাণু গুলিতে জেনেটিক সমস্যা সাধারণত কম থাকে ফলে সুস্থ শিশুর জন্ম দেয়া সুবিধেজনক।
- এই সময় গর্ভপাত, নানান রকম মহিলা রোগ সংক্রান্ত সমস্যা –যেমন সিস্ট, ফাইব্রয়েড ইত্যাদি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
- এই বয়সে একজন মহিলা গর্ভবতী ও মা হতে পারেন খুব সহজেই। যেহেতু তারা সুস্থ শক্তিশালী যুবতী হন। এবং ব্লাড প্রেসার ডায়াবেটিস এবং এই ধরনের অন্যান্য রোগের শিকার সাধারণত হন না।
২০–তে গর্ভবতী হওয়ার প্রতিকুলতা
- এই সময়ের মধ্যে আপনি এবং আপনার সঙ্গীটি সন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার মতন আর্থিক সঙ্গতিপূর্ণ না হতেও পারেন
- দায়িত্বের বোঝা আপনার ক্যারিয়ারের প্রভাব ফেলতে পারে(যার জন্য প্রয়োজন অনেক বেশি সহনশক্তি ও এনার্জি)। যেহেতু আপনার শিশুটিকে দেখাশোনা করার জন্য এবং তার সঙ্গ দেয়ার জন্য অনেকটা সময় দিতে হয়।
- এখনই মা হওয়ার জন্য প্রস্তুত নাও হতে পারেন। এবং আরো কিছুদিন স্বাধীন ভাবে কাটাতে চান ও স্বামী স্ত্রী দুজনেই জীবনটা উপভোগ করতে চান
- এটা মনে হতেই পারে যে সন্তানদের নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার বয়স টি এখনো যথেষ্ট কম এবং আপনি এখনই তার দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত নন।
৩০–এ আপনার প্রজনন ক্ষমতা
৩০–এ গর্ভবতী হওয়ার জন্য অনুকূল প্রভাব
- আর্থিক দিক থেকে একটি সন্তান নেওয়ার জন্য এটি আদর্শ সময়,যেহেতু এই সময়ে আপনি ও আপনার স্ত্রী কেরিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রতিষ্টিত হন। এবং একটি সন্তান নেওয়ার ও তাকে ভালভাবে প্রতিপালনের যথেষ্ট ক্ষমতা আপনাদের থাকে।
- এই সময় প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করার মতন সহ্যশক্তির মাত্রা অনেক বেশি থাকে।
- যেহেতু জীবনের দ্বিতীয় দশকটি ভালোভাবেই উপভোগ করতে পেরেছেন তাই এই বয়সে আশা করবেন একজন ভালো মা/ বাবা হওয়ার জন্য।
৩০– গর্ভবতী হওয়ার প্রতিকুলতা
- ৩৫ বছরের পরে গর্ভবতী হওয়ার ক্ষেত্রে নানান অস্বাভাবিকতার ঝুঁকি থাকে। যেমন, ডাউন সিনড্রোম যুক্ত শিশুর জন্ম হতে পারে।( এরকম শিশুর জন্মের হার প্রতি ১২০০ জনের মধ্যে ১ জন,গর্ভাবস্থায় দম্পতিরা তাই ডাউন সিনড্রোম টেস্ট করিয়ে নিতে পারেন).
- যদি আপনি ৩৫ বছরের পর গর্ভবতী হতে চান তবে আপনার এক বছরের বেশি সময় লেগে যেতে পারে যেহেতু এই সময় থেকে প্রজনন ক্ষমতা কমতে থাকে।
- ৩০ এর পর থেকে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা আপনার বেড়ে যেতে পারে
৪০–এ আপনার প্রজনন ক্ষমতা
৪০– গর্ভবতী হওয়ার অনুকূল প্রভাব
- এই সময় আপনি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল এবং আপনার কেরিয়ারে আপনি সু–প্রতিষ্ঠিত হন.
- মা হিসেবে আপনি নিশ্চিন্ত হতে পারেন, আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। এবং আর্থিকভাবে আরো বেশি স্বচ্ছল হন।
৪০ –এ গর্ভবতী হওয়ার প্রতিকুলতা
- এই সময় গর্ভধারণ করা অপেক্ষাকৃত সমস্যাজনক।
- আপনার ডিম্বাণুর গুনাগুন কিছুটা কমে যায় ফলে আপনার শিশুর জন্মের সময় ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- নানা রকম শারীরিক সমস্যা যেমন হাই ব্লাডপ্রেশার, ডায়াবেটিস, প্লেসমেন্ট প্রবলেম প্রভৃতি কারণে গর্ভবতী হওয়া খুব ঝুঁকিবহুল হয়ে পড়ে।
- এই বয়সের মহিলাদের গর্ভধারণ থেকে শিশুর জন্ম দেওয়া পর্যন্ত পুরো সময়সীমাটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়।
- ৪০–এর মহিলাদের সহ্যশক্তির মাত্রা কমে যায় তাই সন্তান জন্ম দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
বহু সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে বয়সের প্রভাব
যমজ সন্তান বা তার বেশি সন্তান ধারণের সম্ভাবনা বেড়ে যায় বয়স বাড়ার সাথে সাথে। বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী যেসব মহিলাদের বয়স ৩৫ বছরের বেশি তাদের FSH –হরমোন এর ক্ষরণ বেশি মাত্রায় হয় অপেক্ষাকৃত তাদের কম বয়সী মহিলাদের থেকে। এই হরমোন নিঃসৃত হয়ে একাধিক ডিম্বানুকে মুক্ত করে যেগুলি শুক্রানু দ্বারা নিষিক্ত হয়ে যমজ অথবা তার বেশি সন্তান উৎপাদন করে।। যমজ সন্তান ধারণ অনেক গুলি বিষয়ের উপ্র নির্ভর করে যেমন যদি আগে জমজ সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকেন বা আপনার পারিবারিক ইতিহাসে যদি এই ধরণের ঘটনা ঘটে থাকে। আপনি এবং আপনার সঙ্গী দুইজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিন সন্তানধারনের বিষয়ে। মানসিক, শারীরিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। শুভ কামনা রইল।