প্রসবের পর গণ্ডের লাড্ডু সেবন-উপকারিতাগুলি এবং রেসিপি

প্রসবের পর গণ্ডের লাড্ডু সেবন-উপকারিতাগুলি এবং রেসিপি

বাড়ির বয়স্ক মহিলারা সদ্য শিশুর জন্মদানকারী একজন মাকে প্রথম যে জিনিসগুলি্র কথা বলে থাকেন তার মধ্যে একটি হল শিশুর জন্মদানের পর গণ্ডের লাড্ডু সেবন করা যা সমগ্র প্রক্রিয়াটিতে সম্পন্নতা আনে।প্রজন্ম সূত্রে চলে আসা এই রীতিটির রেওয়াজ এখনও অব্যহত।যদিও এই রেওয়াজটি ভারতের বিভিন্ন অংশে লক্ষ্য করা যায়,তবে এর সাধারণ যে গুণটি তাদের একত্রে আবদ্ধ করে রেখেছে সেটি হল,একজন মা পর্যাপ্ত পরিমাণে এই লাড্ডু খাওয়ার দ্বারা প্রভূত উপকারিতা লাভ করে থাকেন।ঠিক গর্ভাবস্থাকালীন অবস্থার মতই মাতৃত্বও দৈহিক একটি চ্যালেঞ্জের এবং চাহিদার পর্যায়,আর এই লাড্ডু যা দিতে পারে সেই সকল যত্নগুলিই একজন মায়ের দেহের জন্য প্রয়োজন।

গণ্ডের লাড্ডুর পুষ্টিকর উপকারিতাগুলি

গণ্ডের লাড্ডু কেন সুপারিশ করা হয় তার সবচেয়ে জোরালো কারণগুলির মধ্যে একটি হল এর বৃহৎ পরিসরে পুষ্টিকর উপকারিতাগুলি যা একটি ছোট্ট মোড়কের মাধ্যমে এই লাড্ডুটি সরবরাহ করে থাকে।এগুলি নতুন মায়েদের জন্য ভীষণভাবে কার্যকরী যেহেতু এই লাড্ডুগুলি এমনভাবে প্রস্তুত করা হয় যা পরিবারের প্রত্যেকেই গ্রহণ করতে পারে।এই লাড্ডুতে যে পরিমাণে শক্তি এবং উষ্ণতা থাকে তা এগুলিকে শীতকালের জন্য দুর্দান্ত পছন্দ করে তুলেছে।নতুন মা,পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পাশাপাশি আবার এই লাড্ডু শিশুদের টিফিনের ক্ষেত্রেও তাদের একটি চটজলদি এবং স্বাস্থ্যকর জলখাবারের জন্যও প্রস্তাবিত।এগুলি কেবল সুস্বাদুই নয়,এটি আবার ছোট্টটির জন্য বেশ ভাল পরিমাণে শক্তিও সরবরাহ করে যা সারাদিন ধরে তাদের মধ্যে বজায় থাকে এবং তাদের নিত্য ক্রিয়াকলাপের স্রোতে স্বাভাবিক গতিতেই বয়ে নিয়ে চলে।

একটি মাঝারি মাপের গণ্ডের লাড্ডু পরিবেশনের মধ্যে নিচে বর্ণিত পরিমাপ অনুসারে বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান থাকেঃ

পুষ্টিকর উপাদান পরিমাণ
আয়রণ 17%
ভিটামিন C 0.9%
ক্যালসিয়াম 15%
কোলেস্টেরল 35 গ্রাম
প্রোটিন 5 গ্রাম
শর্করা 75 গ্রাম
ফাইবার বা তন্তু 5 গ্রাম
সম্পৃক্ত ফ্যাট 20 গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট 100 গ্রাম
সম্মিলিত ফ্যাট বা চর্বি 34 গ্রাম
সোডিয়াম 65 মিলিগ্রাম
ক্যালোরি বা শক্তি 755

সূত্রঃ myfitnesspal.com

গণ্ডের লাড্ডুর রেসিপি

গণ্ডের লাড্ডুর রেসিপি

একজন মহিলার প্রসবের পর আবশ্যিকভাবেই গণ্ডের লাড্ডু খাওয়া উচিত,কারণ এটি শরীরকে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি ও শক্তি সরবরাহ করে থাকে।এই লাড্ডু প্রস্তুত করা কোনও কঠিন প্রক্রিয়া নয়,যেমন এর রেসিপিটি আপনি নিচে লক্ষ্য করতে পারেনঃ

উপকরণ

  • জায়ফল গুঁড়ো-1
  • এলাচ-50 গ্রাম
  • মৌরি দানা-50 গ্রাম
  • তিল বীজ -50 গ্রাম
  • পোস্ত দানা-50 গ্রাম
  • আমণ্ড বাদাম-125 গ্রাম
  • ঘি-500 গ্রাম
  • ঝুড়ো গুড়-500 গ্রাম
  • নারকেল কোড়া,শুকনো-500 গ্রাম
  • খেজুর গুঁড়ো,শুকনো-500 গ্রাম
  • গণ্ড(বাবুল গাছের শুকনো আঁঠা)-125 গ্রাম

কীভাবে প্রস্তুত করবেন

  • নারকেল কোড়াটিকে সঠিকভাবে ভাজার মধ্য দিয়ে এটি প্রস্তুত করার প্রক্রিয়াটি শুরু করুন।হালকা বাদামী বর্ণ ধারণ করা না পর্যন্ত সেটি ভাজতে থাকুন। এলাচ,আমণ্ড বাদাম,পোস্ত দানা,খেজুর,মৌরি দানা,তিল বীজ,জায়ফল এবং অন্যান্য উপকরণগুলির ক্ষেত্রেও এই একই ব্যাপারটির পুনরাবৃত্তি করুন।
  • এই সমস্ত উপকরণগুলি একবার ভালভাবে ভাজা হয়ে গেলে,সেগুলি সব একসাথে একটি ব্লেন্ডারের মধ্যে ঢালুন।এবার সমস্ত উপাদানগুলি মিহি পাউডার রূপে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত ব্লেন্ডারটিকে চালিয়ে রাখুন।কতটা মিহি ভাবে সেগুলিকে গুঁড়ো করবেন সেটি আপনার পছন্দের উপর নির্ভর করে।
  • একটি বড় রান্নার কড়াই নিন,এবার এর মধ্যে সামাণ্য ঘি নিয়ে সেটিকে গরম করুন।
  • ঘি গরম হয়ে গেলে তার মধ্যে সামাণ্য গণ্ড নিয়ে সেটিকে কয়েক সেকেন্ডের জন্য রেঁধে নিন।একবার গণ্ড ফুলো-ফুলো হয়ে ফেপে উঠলে,সেটিকে একটি অন্য বাটির মধ্যে আলাদা করে রাখুন।অবশিষ্ট গণ্ডটির জন্যও এই একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন।এটি মাথায় রাখা জরুরি যে সমস্ত পরিমাণ গণ্ডটি একসাথে একেবারে যোগ করা যাবে না,কারণ এক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রোটিন ঠিকমত রান্না না হওয়ার একটা ভাল সম্ভাবনা থেকে যায়।
  • যখন আপনার সবটা গণ্ড রান্না করা শেষ হয়ে যাবে,তখন রান্নার কড়াইয়ে আরও বেশ কিছুটা ঘি ঢেলে সেটিকে গরম করুন এবং একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাতে গুঁড় ঢালুন।এবার গুঁড়টিকে সম্পূর্ণরূপে গলতে দিন এবং সেটি যখন গলতে থাকবে সেটিকে সমানে নাড়তে থাকুন।একবার বুদবুদ কাটতে শুরু হলে সেটিকে আগুন থেকে সরিয়ে দিন।
  • এবার এই গলে যাওয়া গুঁড়টিকে গণ্ডের সাথে একটা বড় বাটির মধ্যে ঢেলে ভালভাবে মিশিয়ে নিন।তারপর ব্লেন্ডারে পাউডার আকারে গুঁড়ো করে রাখা উপকরণটিকেও এর মধ্যে একইভাবে ঢেলে মিশিয়ে নিন।
  • সমগ্র মিশ্রণটিকে এবার যতটা সম্ভব ঠিকমত ঘোরাতে থাকুন যাতে সেটি একটি সমজাতীয় ময়দার তালের মত হয়ে ওঠে।
  • এবার আপনার হাতের তালুতে সামাণ্য ঘি নিয়ে দুটি হাতের চেটো ভালভাবে ঘষে নিন।আর সেই মিশ্রণের তালটি থেকে অল্প অল্প পরিমাণে নিয়ে হাতের চেটোর চাপে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সেগুলিকে লাড্ডু আকারে গড়ে তুলুন।এবার আপনি এই লাড্ডুগুলিকে ঘরের তাপমাত্রায় একটি বায়ু নিরুদ্ধ কৌটোর মধ্যে মজুত করে রাখতে পারেন।

গর্ভাবস্থার পরবর্তীতে গণ্ডের লাড্ডু সেবন করার উপকারিতাগুলি

গর্ভাবস্থার পরবর্তীতে গণ্ডের লাড্ডু সেবন করার উপকারিতাগুলি

প্রসবের সময় একজন মহিলার দেহ তীব্র শারীরিক এবং মানসিক আঘাতের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করে।সন্তান জন্মদানের পরে,একজন মহিলার শক্তির উৎসগুলি এবং তার পুনরুদ্ধারের জন্য ও তার পাশাপাশি তার সন্তানের যত্ন নেওয়ার জন্য যে পরিমাণ শক্তির তার দেহে প্রয়োজন তার মধ্যে একটি ব্যাপক ব্যবধান দেখা দেয়।এরূপ পরিপ্রেক্ষিতে,গণ্ডের লাড্ডু সেবন করলে তা একটি দুর্দান্ত পরিমাণ সমর্থন সরবরাহ করতে পারে।

  • যদি শীতকালে প্রসব হয়ে থাকে,তবে নিজেকে উষ্ণ রাখতে এবং তার সাথে সন্তানকেও নিরাপদ রাখতে শরীরকে অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় করতে হয়।গণ্ডের লাড্ডু খেলে তা মায়ের দেহে প্রয়োজনীয় সেই অতিরিক্ত ক্যালরি সরবরাহ করতে সহায়তা করতে পারে।
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে যথাযথ রক্ত সরবরাহের প্রয়োজনে হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করাও জরুরি।এই ক্ষেত্রেও গণ্ডের লাড্ডু সহায়তা করতে পারে।
  • প্রসবের পর আবার সন্তানকে স্তন দুধ পান করানোর কারণে নতুন মায়ের দেহে প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়।গণ্ডের লাড্ডুতে একটা ভাল পরিমাণে প্রোটিন থাকায় তা সহজেই খাওয়া যেতে পারে।
  • দীর্ঘ গর্ভাবস্থাকাল এবং একটি চাপযুক্ত প্রসবকালীন মুহূর্ত কাটিয়ে ওঠার পরে,একজনমায়েরদেহতারশারীরিকশক্তিপুনরুদ্ধারেএবংনিরাময়কার্যসম্পাদনকরারজন্যযথাসাধ্যচেষ্টা করে চলে।গন্ডের লাড্ডুতে ব্যবহৃত উপকরণগুলিতে অভিযোজন ক্ষমতার বৈশিষ্ট্যগুলি রয়েছে যা দেহকে নিজে থেকেই মেরামতে সহায়তা করে।
  • সন্তান প্রসবের পর মায়ের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটি কমে যায়,যা তাকে সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে ফেলে এবং চট করে ঠাণ্ডা লাগা,সর্দি-কাশি,ডায়রিয়া এবং এমনকি আলসারের মত সমস্যাগুলিতেও ভুগে থাকেন।গণ্ডের লাড্ডু অনাক্রম্যতা শক্তিকে পুনরায় গড়ে তুলতে সাহায্য করে এবং এই সকল পরিস্থিতিগুলির চিকিৎসায় কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
  • সন্তান প্রসবের পর মাসিক চক্রটি যখন পুনরায় শুরু হয়,তখন প্রাথমিক পর্যায়গুলিতে বেশ জোরালো মাসিক ক্র্যাম্প বা খিঁচুনিগুলির সাথে রক্ত প্রবাহ বেশ মারাত্মক হতে পারে।বাচ্চাকে দেখাশোনার পাশাপাশি এই ব্যাপারে যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে এটি আপনার কাছে বেশ বড় একটি উপশুল্ক স্বরূপ হয়ে উঠতে পারে।গণ্ডের লাড্ডু সেবন মাসিকের এই প্রাথমিক পর্যায়ের অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখে।
  • প্রসবের পরে যদি আপনার ত্বকের জেল্লা এবং কোমলতা হারিয়ে যায়,সেক্ষেত্রে গণ্ডের লাড্ডু মধ্যস্থ উপকরণগুলি আপনার ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে এবং আপনার প্রত্যাশার ঔজ্জ্বল্য পুনরায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।
  • প্রসবের পর মায়েরা অনেক সময় মূত্রনালীর সংক্রমণ অথবা প্রস্রাবের স্থান সম্পর্কিত আরও অন্যান্য সমস্যায় ভুগে থাকতে পারেন।প্রস্রাবের অসংযমতার চিকিৎসার একটি উপায় হিসেবে আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় গণ্ডের লাড্ডু ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।গণ্ডের লাড্ডু সেবন করার ফলে এই সকল সমস্যায় এই একই সুফলটি পাওয়া যায়।
  • কোষ্ঠকাঠিণ্য,গর্ভাবস্থায় ভোগ করা খুব সাধারণ একটি সমস্যা যা খুব কম মহিলার ক্ষেত্রেই তাদের গর্ভাবস্থায় সীমাবদ্ধ থাকে।অনেক মায়েরাই সন্তান প্রসবের পরেও এটি অবিরতভাবে ভোগ করে থাকেন,এবং এর জন্য হয়ত তারা প্রাথমিক পর্যায়ে বেশ সমস্যার মুখেও পড়তে পারেন।গণ্ডে রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু রেচক এবং জোলাপের বৈশিষ্ট্য যা পাচন তন্ত্রে প্রভাব ফেলে এবং এটিকে নিজে থেকে পরিষ্কার হতে সহায়তা করে।তাই এই ধরণের পরিস্থিতিতে গণ্ডের লাড্ডু খাওয়ার উচ্চ সুপারিশ করা হয়ে থাকে।

অনেক ভারতীয় পরিবারে এবং ঐতিহ্যে সন্তান প্রসবের পর গণ্ডের লাড্ডু খাওয়ার উপর জোর দেওয়া হয়।যদিও এই প্রেরণার কারণগুলি বিভিন্ন হতে পারে,তবে শেষ পর্যন্ত এর ফলাফলটি নতুন মায়ের পক্ষে সর্বদা উপকারীই হয়ে থাকে।তবে যেকোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে অবশ্যই এই লাড্ডু সর্বদাই সংযমের সাথে খাওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত জল পান করাও অপরিহার্য।