ফাটা বা চিড়ে যাওয়া অথবা রক্ত ক্ষরিত হওয়া স্তনবৃন্তের সাথে কীভাবে মোকাবিলা করবেন

ফাটা বা চিড়ে যাওয়া অথবা রক্ত ক্ষরিত হওয়া স্তনবৃন্তের সাথে কীভাবে মোকাবিলা করবেন

একটি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোটা মোটেই কোনও সহজ কাজ নয় এবং অধিকাংশ নতুন মায়েরই তাদের ছোট্ট সোনাকে সঠিকভাবে বুকের দুধ পান করানোর প্রক্রিয়াটি শিখতে কিছুটা সময় লাগে।একবার মা এটি রপ্ত করে নিলে, তার শিশুটিও ঠিকভাবে খেতে শিখে যায়, আর স্তন্যপান করানোর এই সময়পর্বটি মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই সামগ্রিকভাবে একটি সুদৃঢ় বন্ধন গড়ে তুলতে প্রভূত সহায়ক হয়ে ওঠে।যাইহোক, তবে সব মায়ের ক্ষেত্রে কিন্তু স্তন্যপান করানোটা সহজ হয়ে ওঠে না।একজন স্তন্যদানকারী মা হিসেবে আপনি হয়ত আপনার আদরের ছোট্টটিকে বুকের দুধ খাওয়ানোকে আনন্দের সাথে উপভোগ করবেন তবে তার সাথে আবার ক্ষত যুক্ত, ফাটা, চিড়ে যাওয়া কিম্বা রক্ত ক্ষরণ হতে থাকা স্তনবৃন্তের মত কিছু নিরানন্দজনক অভিজ্ঞতাগুলিরও মুখোমুখি হতে পারেন।এগুলি হল এমন কিছু ব্যাপার যেগুলি বেশিরভাগ মায়েরাই তাদের ছোট্ট শিশুর জন্য সহ্য করে নেন।আপনারও যদি এরকম ফেটে যাওয়া, চিড়ে যাওয়া কিম্বা রক্ত ক্ষরিত হতে থাকা স্তনবৃন্ত দেখা দেওয়ার মত সমস্যা সৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে সেগুলি হওয়ার কারণ কি এবং কীভাবেই বা তার চিকিৎসা করা যায় তা জানতে আমাদের লেখনিটি পড়ুন।

ফাটা বা চিড়ে যাওয়া স্তনবৃন্ত কি?

আপনি যখন বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করেন, তখন আপনার স্তনবৃন্তে নমনীয়তা উপলব্ধি করাটা বেশ সাধারণ।যদিও জ্বলন এবং দংশন সংবেদন ও তার সাথে জড়িত কিছু ব্যথাবেদনা থাকাটা সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক, কিন্তু ফেটে বা চিড়ে যাওয়া, রক্ত ক্ষরিত হতে থাকা কিম্বা ক্ষত যুক্ত স্তনবৃন্তের ক্ষেত্রে চিকিৎসাগত মনোনিবেশ করানোর প্রয়োজন হতে পারে।বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের মধ্যে স্তনবৃন্ত ফেটে বা চিড়ে যাওয়া অথবা তা থেকে রক্ত ক্ষরিত হতে থাকা সাধারণত বহুবিধ কারণে হয়ে থাকতে পারে যেগুলি সম্পর্কে আমরা পরবর্তী অংশে আলোচনা করব।

বুকের দুধ পান করানোর সময় ফাটা, চিড়ে যাওয়া বা রক্তক্ষরণ যুক্ত স্তনবৃন্ত থাকাটা কি স্বাভাবিক?

বুকের দুধ খাওয়ানোর শুরুর দিকে, বাচ্চারা সাধারণত স্তন চোষণ করে পান করতে পারে না আর তা তাদেরকে শেখানোটা মায়েদের কাছে যেন একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে।বাচ্চা যদি মায়ের স্তন ঠিকমত চোষণ না করে সেক্ষেত্রে মায়ের স্তনবৃন্ত ফেটে বা চিড়ে যেতে পারে অথবা তার থেকে রক্তও ক্ষরিত হতে থাকে।বাচ্চা কীভাবে তার মায়ের স্তনের সাথে সংযোগ স্থাপন করে তা নির্দেশ করে তার ল্যাচিং বা চোষণ করার প্রক্রিয়াটি।বেশিরভাগ মায়েরাই এই সমস্যাটি ভোগ করে থাকেন তাদের বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরুর প্রথম কয়েকটি দিন এবং ধীরে ধীরে সঠিকভাবে শিশুরা তা চোষণ করতে শিখে গেলে তা দূর হয়ে যায়।

চিড়ে যাওয়া, ফাটা/ ক্ষতযুক্ত স্তনবৃন্তের লক্ষণ এবং উপসর্গ

আপনি যখন বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করেন, মাঝে মাঝেই আপনি আপনার বুকের দুধে রক্ত ​​লক্ষ্য করতে পারেন।তবে, যদি আপনার কোনও ব্যথা না থাকে তবে সেক্ষেত্রে স্তন্যপান করানোর প্রথম সপ্তাহে আপনার স্তনবৃন্ত থেকে হওয়া এই ক্ষরণটির মধ্যে রক্তপাত হয়ে থাকতে পারে শুধুই আপনার স্তনের মধ্যে বর্ধিত রক্ত ​​প্রবাহের জন্য এবং দুগ্ধ উৎপাদনকারী টিস্যুগুলির বৃদ্ধির কারণে।এটি কোনও চিকিৎসা জনিত হস্তক্ষেপ ছাড়াই কয়েক দিনের মধ্যে সেরে ওঠা উচিত।তবে, যদি প্রতিবার খাওয়ানোর পরেই আপনার স্তনবৃন্তগুলি লাল, সূচালো এবং ক্ষত যুক্ত হয়ে ওঠে(গোলকাকার এবং মসৃণ হওয়ার পরিবর্তে) সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারবাবু কিম্বা একজন স্তন্যদান বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করার প্রয়োজন হতে পারে।

ফাটা বা চিড়ে যাওয়া স্তনবৃন্তের কারণ সমূহ

স্তনবৃন্তের সংবেদনশীল ত্বকটি নিম্নলিখিত যেকোনও কিম্বা সবগুলি কারণেই প্রভাবিত হতে পারেঃ

1.ভুল চোষণের দ্বারা স্তন্যপানঃ শিশু যদি ঠিকমত স্তন চোষণ না করে দুধ পান করে সেক্ষেত্রে স্তনের ক্ষত বেড়ে যেতে পারে।খাওয়ানোর জন্য শিশুর স্তন চোষণ প্রক্রিয়াটির পরিবর্তন করলে তা হয়ত এই সমস্যাটির সমাধান করতে পারে।

2.শুষ্ক ত্বক বা একজিমাঃ জামাকাপড়ের ডিটারজেন্ট, পারফিউমের উত্তেজকগুলি, সাবান, ক্রিম এবং লোশন, এয়ারকন্ডিশন, কুলার ও হিটার ব্যবহারের ফলে শুষ্ক বায়ুএই সবকিছুই একজিমার কারণ হতে পারে।আর এগুলি স্তনবৃন্তে ক্ষত ও বেদনার সৃষ্টি করতে পারে।

3.ব্রেস্ট পাম্পের ভুল ব্যবহারঃ ব্রেস্ট পাম্পের ভুল ব্যবহার আপনার স্তনের টিস্যু বা কলাতে আঘাতের কারণ হতে পারে এবং তার ফলে স্তনবৃন্ত ফেটে বা চিড়ে যেতে পারে ও তার থেকে আবার রক্তও ক্ষরিত হতে পারে।ফ্ল্যাঞ্জের আকারটি যদি ভুল হয় এবং অস্বস্তিকারক গতিতে পাম্প করা এবং সাকশান সেটিং করা হয়, তবে সেটিও স্তনবৃন্ত ফেটে বা চিড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে।

4.থ্রাশঃ এটি হল স্তনবৃন্তের ত্বকের ওপর হয়ে থাকা ইস্ট জনিত একটি সংক্রমণ, যেটিও স্তনবৃন্তে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে।আর এই সংক্রমণটি আবার আপনার শিশুর মুখের ভিতরেও হতে পারে।

5.শিশুদের মধ্যে টঙটাই(বদ্ধজিহ্বা):আপনার শিশুর জিহ্বাটি যদি বদ্ধ বা অবরুদ্ধ প্রকৃতির হয়ে থাকে,সে খাওয়ার সময় সমস্যার মুখে পড়বে এবং স্তনবৃন্তগুলিকে তাদের জিহ্বা দ্বারা ঠেলতে থাকবে।এটি বেদনাদায়ক স্তনবৃন্ত এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করতে পারে।

ফাটা, চিড়ে যাওয়া/ক্ষত স্তনবৃন্তের চিকিৎসা

যন্ত্রণাবহুল স্তনবৃন্ত থাকা মায়েদের পক্ষে তাদের বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।স্তন্যপান করানোর চিকিৎসায় শিশুকে দুধ পান করানো, দেখাশোনা এবং পরিচর্যার কৌশলের মধ্যে কিছু সাধারণ এবং সামান্য সামঞ্জস্য রয়েছে যা আপনাকে স্তনবৃন্তে আঘাত পাওয়া বা বেদনাদায়ক স্তনবৃন্তগুলি এড়াতে সহায়তা করে।আসুন আমরা রক্ত ক্ষরণ হওয়া স্তনবৃন্তগুলির জন্য এমন কিছু চিকিৎসার সন্ধান করি যা কোনও মাকে তার স্তনবৃন্ত ফেটে বা চিড়ে যাওয়া অথবা সেখানে ক্ষত সৃষ্টি হলে তা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করতে পারে।

স্তন পানের জন্য শিশুর চোষণ প্রক্রিয়ার সংশোধন

ফাটা বা চিড়ে যাওয়া স্তনবৃন্তের চিকিৎসা শুরু করা হয় শিশুর স্তন চোষণ করার পদ্ধতির সাথে।যদি চোষণের সময় স্তনবৃন্তের সম্মুখভাগটা বাচ্চার মুখের ভিতরে থাকে, তখন বাচ্চার জিভটি সামনের দিকে উঠে আসলেই মা একটা চিমটির ন্যায় ব্যথা বোধ করবে, আর তা মা এবং শিশু উভয়ের মধ্যেই একটা অস্বস্তি সৃষ্টি করে।

স্তন পানের জন্য শিশুর চোষণ প্রক্রিয়ার সংশোধন

তবে, যদি আপনার শিশুটি তার মুখটি প্রশস্ত করে এবং স্তনের টিস্যুগুলির একটি অংশ জুড়ে চোষণ করে, তবে স্তনবৃন্তগুলি শিশুর মুখের পিছনের দিকে আরামদায়কভাবে অবস্থান করে, যেখানে শক্ত এবং নরম তালু মিলিত হয়, আর চিমটি লাগার কোনও জায়গাই থাকে না।এই অবস্থায় স্তনবৃন্তগুলি আঘাতপ্রাপ্ত হয় না।

ক্রিমের ব্যবহার

ফাটা বা চিড়ে যাওয়া স্তনের জন্য অনেক মায়েরা ল্যানোলিন মলম ব্যবহার করেন।রক্ত ক্ষরণ যুক্ত স্তনবৃন্তগুলির জন্য এই চিকিৎসাটিকে আবার আর্দ্র ক্ষত নিরাময় হিসাবেও উল্লেখ করা হয়।এটি ব্যথা প্রশমিত করে এবং স্তনের উপরের ক্ষতটি শীঘ্রই নিরাময় করতে সাহায্য করে

সাবান এবং লোশনগুলি এড়িয়ে চলা

ফাটা বা চিড়ে যাওয়া অথবা ক্ষত যুক্ত স্তনবৃন্তের ওপর কোনওরকম সাবান, লোশন এবং পারফিউম ব্যবহার না করার পরামর্শই সর্বদা দেওয়া হয়ে থাকে।ফেটে বা চিড়ে যাওয়া স্তনবৃন্তের সবচেয়ে ভাল চিকিৎসাটি হল পরিষ্কার জল দিয়ে সেটি ধুয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া।

বিঃদ্রঃ আপনি যদি নিপল শিল্ড ব্যবহার করেন তবে সংক্রমণ এড়াতে সেগুলি ভালমত নির্বীজন করে নেওয়া সুনিশ্চিত করুন।

ফাটা বা চিড়ে যাওয়া স্তনবৃন্তের মোকাবিলা

বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় ফাটা বা চিড়ে যাওয়া স্তনবৃন্তের মোকাবিলা করার বিভিন্ন উপায় আছে।এই চিকিৎসাটি বেশ কিছু সহজ উপায়ের দ্বারা পরিচালনা করা যেতে পারে।বাচ্চাকে স্তন পান করানো, দেখাশোনা ও পরিচর্যা করার সময় আপনার ফাটা ও চেড়া স্তনবৃন্তের মোকাবিলা করার বেশ কিছু উপায়ের ইঙ্গিত এখানে দেওয়া হল কারণ যন্ত্রণাদায়ক স্তনবৃন্তের সাথে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোটা মায়ের পক্ষে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।

স্তন্যদানের পূর্বে

  • আপনার হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখুনঃ এটি একদিকে আপনার ্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে এবং সংক্রমণ ও র‍্যাশ এড়াতে সহায়তা করে।
  • আরামদায়কভাবে বসুন এবং শিথিল হনঃ এটি আপনাকে এবং আপনার শিশু উভয়কেই শান্ত করতে সাহায্য করে এবং বাচ্চাকে অনায়াসে স্তন্যপান করানোর জন্য (দুগ্ধ প্রবাহের) গতি কমিয়ে দেয়।
  • দুগ্ধ প্রবাহের গতি কমানোর জন্য প্রস্তুত হনঃ দুগ্ধ প্রবাহে সহায়তার জন্য আপনার স্তনে একটি উষ্ণ ওয়াশক্লথ লাগিয়ে আলতোভাবে ম্যাসাজ করতে পারেন।আপনার যদি বেদনাদায়ক বা ফাটলযুক্ত বা চিড়ে যাওয়া স্তনবৃন্ত থেকে থাকে তবে আপনি দুধ বের করে তা আপনার শিশুকে খাওয়ানো বিবেচনা করতে পারেন।যদি আপনি দুধ বের করেন তবে আপনার ব্রেস্ট পাম্পের সাকশনটি খুব শক্তিশালী যেন না হয় তা নিশ্চিত করুন।

স্তন্যদানের সময়

  • ঠিকমত চোষণের দ্বারা স্তন্যান করানঃ আপনার বাচ্চা যে আপনার স্তনে ঠিকমত চোষণ করে দুধ পান করছে তা নিশ্চিত করুন।আদর্শগতভাবে, অ্যারিওলা টিস্যুটি অন্ততপক্ষে এক ইঞ্চি মত বাচ্চার মুখ থাকা উচিত।
  • আপনি অস্বস্তিবোধ করলেই থামিয়ে দিনঃ 30 সেকেন্ডের পর আপনি যদি কোনও অস্বস্তি বোধ করেন বাচ্চাকে তুলে নিন এবং কিছু পর পুনরায় তাকে খাওয়ান।বাচ্চার অবিচ্ছিন্ন চোষণে বিরতি ঘটাতে আপনার একটা আঙ্গুলকে তার মুখের একটা কোণে আলতো করে রাখুন, যেহেতু তাদের টেনে তুলতে গেলে তা আঘাত লাগার একটা কারণ হতে পারে।

স্তন্যদানের পরবর্তীতে

  • স্তনবৃন্তগুলি লাল হয়ে উঠেছে কিনা তা পরীক্ষা করুনঃ ক্ষত সৃষ্টি হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণটি হতে পারে সেটি লালচে হয়ে ওঠা, আর সেগুলি লক্ষ্য করে সনাক্ত করতে পারলে তা সেগুলিকে আরও খারাপ হওয়া থেকে রোধ করতে সাহায্য করবে।
  • পরিষ্কার জল দিয়ে স্তনগুলিকে ধুয়ে পরিষ্কার করুন এবং শুকোতে দিনঃ এটি র‍্যাশ এবং ত্বক জনিত রোগগুলি রোধ করতে সাহায্য করবে।
  • আপনি যদি ব্রেস্ট প্যাডগুলি ব্যবহার করে থাকেন, তবে মাঝেমধ্যেই সেগুলি পরিবর্তন করুনঃ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা, বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় বেদনাদায়ক স্তনবৃন্তগুলি এড়াতে সহায়তা করে।
  • ভালফিটিংএর ব্রা পরা নিশ্চিত করুনঃ স্তন্যদানের কারণে ভারী স্তনগুলিকে পর্যাপ্ত সমর্থন সুরক্ষা দেয়
  • স্তনের দুধ প্রয়োগ করুনঃ আপনি যদি জ্বলন ও যন্ত্রনা অনুভব করেন তবে সেক্ষেত্রে আপনারই স্তনের দুধ নিয়ে আপনার স্তনবৃন্তে এবং তার চারপাশে লাগিয়ে দিন।বুকের দুধে চমৎকার ময়শ্চারাইজিং ক্ষমতা রয়েছে, এটি কার্যকরভাবে ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করবে।
  • আপনার স্তনবৃন্তগুলি বাতাসে শুকিয়ে নিনঃ স্তনবৃন্ত শুকনো থাকলে তাতে জ্বলন এবং সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।সুতরাং আপনি বাচ্চাকে স্তন্যপান করানোর পর এবং আপনার স্তনের ওপর বুকের দুধ লাগানোর পর তা বাতাসে শুকিয়ে নিন।

ফাটা বা চিড়ে যাওয়া স্তনবৃন্তের জন্য ঘরোয়া প্রতিকার

বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় ফাটা বা চিড়ে যাওয়া স্তনবৃন্তের জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে আপনি বেশ কয়েরকটি ঘরোয়া প্রতিকার প্রয়োগ করতে পারেন।তার মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিকার আমরা ইতিমধ্যেই উপরিল্লিখিত অংশে আলোচনা করে ফেলেছি।এরপর আরও অতিরিক্তভাবে আপনি যেগুলি করতে পারেনঃ

  • স্তনবৃন্তের ওপর একটু দুধ বের করুন এবং সেটিকে বাতাসে শুকোতে দিন। বুকের দুধের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যটি স্তনবৃন্তের ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে।
  • বাচ্চাকে খাওয়ানোর আগে আপনি একটি আইস প্যাক ব্যবহার করুন।আপনি বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় এটি আপনার স্তনবৃন্তগুলিকে অসাড় করে তোলে, আর এটি আপনার ফেটে বা চিড়ে যাওয়া স্তনবৃন্তের জন্য একটি অন্যতম সহজ প্রতিকারও হয়ে ওঠে।
  • তেল মালিশঃ উষ্ণ তেল দিয়ে মালিশ বা ম্যাসেজ করলে তা প্রভাবিত স্থানকে ময়শ্চারাইজ কর, শুষ্কতা হ্রাস করে ত্বককে রাখে নরম এবং স্বাস্থ্যকর।জলপাই তেল, মিষ্টি আমণ্ড বাদাম তেল এবং নারকেল তেলের মতো তেলগুলি প্রভাবিত অঞ্চলটিকে ময়শ্চারাইজ করতে এবং নিরাময়ের প্রক্রিয়াটিকে জোরদার করতে কার্যকর।

ফাটাচিড়ে যাওয়া স্তনবৃন্তের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

ফাটাচিড়ে যাওয়া স্তনবৃন্তের জন্য কয়েকটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলি নিম্নরূপঃ

  • বাচ্চাদের স্তন্যান করার সহজাত প্রবৃত্তি থাকে এবং তারা নূন্যতম সহযোগিতাতেই তাদের মায়ের স্তন বেশ ভালভাবে পান করতে পারে।সুতরাং, বাচ্চাকে সময় দিয়ে তার মায়ের দুধ কার্যকরভাবে পান করতে শিখতে দিলে তা মায়ের স্তনবৃন্ত ফেটে বা চিড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে।যেসকল বাচ্চারা ঠিকমত দুধ পান করতে অসুবিধায় পড়ে তাদের সামাণ্য কিছু সহযোগিতা করলে তা তারা সহজেই শিখতে পারে।
  • বাচ্চার খিদে পাওয়ার ইঙ্গিতগুলি পর্যবেক্ষণ করা এবং যথাসময়ে তাদের খাওয়ানো শিশুর পক্ষে প্রতিবারই চোষণ মারফৎ ভালমত খাওয়ার ব্যাপারটিকে সহজ করে তোলে।ভীষণ ক্ষুধার্ত শিশুরা তাদের মায়ের স্তনবৃন্তগুলিকে হয়ত খামচে ধরতে পারে আর এতে আরও ব্যথা হয়।

ফেটে বা চিড়ে যাওয়া স্তনবৃন্তের অবস্থাটি কি শিশুর উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে?

ফেটে বা চিড়ে যাওয়া স্তনবৃন্তগুলি যদিও মায়েদের জন্য ভীষণই যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে তথাপি বাচ্চারা সাধারণত সেগুলিকে অবজ্ঞা করে চলে।দুধের মধ্যে সামাণ্য রক্তের উপস্থিতি বাচ্চার ক্ষতি করবে না।আপনি যদি যন্ত্রণাটা সহ্য করতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে আপনার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শই আপনাকে দেওয়া হয়।আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত বাচ্চাকে দক্ষতার সাথে খাওয়ানো শিখতে সহায়তা করা যাতে আপনার স্তনবৃন্তগুলি দ্রুত নিরাময় হয়ে উঠতে পারে যদি সেটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে তবে আপনার বুকের দুধ পাম্প করে বের করে তা ফিডিং বোতলে ভরে সেই বোতলটির সাহায্যে আপনার শিশুকে খাওয়ানোর বিষয়ে বিবেচনা করুন।

কখন একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন

যদিও বুকের দুধ পান করানোর সময় স্তনবৃন্ত ফেটে বা চিড়ে যাওয়ার বিষয়টি হল একটি স্বাভাবিক ও সাধারণ ঘটনা, তবুও যদি সেটি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে এবং আপনার পক্ষে সহ্য করা কঠিন হয়ে যায়, তবে সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করা নিশ্চিত করুন।অবস্থার আরও অবনতির জন্য একদম অপেক্ষা করবেন না।যদি সময়ের মধ্যে আপনার স্তনবৃন্তের ক্ষত নিরাময় হয়ে না ওঠে আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন।

স্তন্যদান হল মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই একটি আনন্দদায়ক অনুভূতির অভিজ্ঞতা। সুতরাং এটিকে উপভোগ করুন, আর যদি ফাটা বা চিড়ে যাওয়া স্তনবৃন্তের মত সমস্যাটি অব্যাহত রয়ে যায়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই একজন চিকিৎসক অথবা স্তন্যদান বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা মারফৎ পরামর্শ গ্রহণ করুন।