ভগবান গণেশের 10 টি জনপ্রিয় গল্প শিশুদের জন্য নীতি কথা সহ

ভগবান গণেশের 10 টি জনপ্রিয় গল্প শিশুদের জন্য নীতি কথা সহ

হিন্দু পুরাণে যে সকল দেব দেবীর উল্লেখ করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে ভগবান গণেশকে মনে করা হয় সবথেকে অন্যতম জনপ্রিয় একজনতার মূর্তি দেশের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে দেখতে পাওয়া যায় এবং গণেশ চতুর্থী উৎসবটি অত্যন্ত ধুমধামের সঙ্গে উদযাপন করা হয়এর একটি কারণ হতে পারে যেভাবে গণেশ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে তার মধ্যেই এর জনপ্রিয়তা লুকিয়ে আছে, গণেশ শব্দটি দুটি অংশ নিয়ে গঠিত প্রথম অংশ গণশব্দ যার অর্থ হলো জনগণ এবং ঈশযার অর্থ হল ভগবানএই দুই এর মিলনে তৈরী হয়েছে গণেশআক্ষরিক অর্থেই গণেশ শব্দটিকে জনগণের ভগবান হিসেবে প্রতিপন্ন করে গণেশ বহু বছর ধরেই পূজিত হয়ে আসছেন এবং তার গল্পগুলি বেশ ভালই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে

শিশুদের জন্য ভগবান গণেশের কয়েকটি আকর্ষণীয় গল্পগুচ্ছ

বাচ্চাদের গণেশ পূজার দীর্ঘ সময় ধরে পূজাপাঠ এবং নিয়মকানুন খুব একটা আগ্রহ সৃষ্টি করে নাযদিও আপনি তাদের সাথে এই পৌরাণিক দেবতার পরিচয় ঘটাতে পারেন তাঁকে ঘিরে সৃষ্টি নানা ধরনের গল্প দিয়ে এবং যে গুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি আবার খুবই সুন্দর যা তাদের বিস্মিত করে তুলতে পারে

1.তাঁর জন্মের গল্প

শুরু করা যাক ভগবান গণেশের জন্ম বৃত্তান্তের গল্প দিয়ে

দেবাদিদেব মহাদেব এবং দেবী পার্বতী কৈলাস পর্বতে, যেটি ছিল তাঁদের আবাসস্থল সেখানেই একসাথে অবস্থান করতেনবেশিরভাগ সময়ই শিবকে তার নানা দায়িত্ব পালনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় চলে যেতে হত ফলে দেবী পার্বতীকে তখন একা একাই সেই পর্বতে অবস্থান করতে হত

এরকমভাবেই দিন অতিবাহিত হতে থাকে, দেবী পার্বতী একদমই পছন্দ করতেন না যে তাঁর স্নান করার সময় তাঁকে কেউ বিরিক্ত করুক, আর এই উপলক্ষে একদিন, দেবী হলুদ দিয়ে একটি শিশুর মূর্তি বানান এবং তাতে তিনি প্রাণ দান করেনতিনি শিশুটির নাম দেন গণেশ এবং শিশুটি সম্পূর্ণভাবে দেবীর অনুগত ছিলতিনি তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যখন তিনি স্নান করতে যাবেন তখন গণেশ যেন ঘরে পাহারা দেয়যদিও আবার ভগবানশিব ঠিক সেই সময়েই এসে সেখানে উপস্থিত হন এবং তিনি ঘরে প্রবেশ করতে চানকিন্তু এইবার গণেশ তাকে বাধা প্রদান করে এবং শিবকে ঘরে প্রবেশ করতে দেওয়ার জন্য এক পাশে সরে যেতে অস্বীকার করেশিব জানতেন না বালকটি কে, তাই তিনি তার বাহিনীকে আদেশ করেন ছেলেটি কে ধ্বংস করার জন্যকিন্তু গণেশ ছিলেন দেবী পার্বতীর আশীর্বাদে বলীয়ান তাই খুব সহজেই তিনি শিবের সৈন্যবাহিনীকে পরাজিত করেনএর ফলে চরম ক্রোধের জন্য পরিচিত মহাদেব প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং তার ধৈর্য হারিয়ে অবশেষে গণেশের মুন্ডচ্ছেদ করেন

এই সময় দেবী পার্বতী ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসেন এবং তাঁর সৃষ্টির মৃতদেহ দেখে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন এবং তাঁর ক্রোধ বাঁধনহারা হয়ে ওঠেতিনি শিবকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন এবং শিবের এই কাজের ফলস্বরূপ তিনি সমস্ত বিশ্বকে ধ্বংস করে দেওয়ার হুমকি দেনআবার ব্রহ্মাবিষ্ণুমহেশ্বর এর উপর রয়েছে এই মহাবিশ্বের দায়িত্ব রক্ষার ভার। ব্রহ্মা কারণ বুঝতে পারেন এবং শিবের পক্ষ থেকে তার কাছে ক্ষমা চান এবং মহাবিশ্বকে যাতে তিনি ধ্বংস না করেন সেই অনুরোধ জানানদেবী পার্বতী একটি শর্তে রাজী হন যে, গণেশকে আবার জীবিত করে তুলতে হবে এবং সর্বাগ্রে তার পূজা করতে হবেশিব তার নিজের ভুল বুঝতে পারেন এবং দেবী পার্বতীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেনশিব তার বাহিনীকে নির্দেশ দেন, যে প্রাণীটির প্রথম দেখা পাওয়া যাবে তার মুন্ড যেন নিয়ে আসা হয়ঘটনাচক্রে তারা সর্বপ্রথম একটি হাতিকে দেখতে পান এবং তার মুন্ডু নিয়ে চলে আসেনতারপর সেই হস্তিমুণ্ডটি গণেশের দেহের উপর স্থাপন করা হয় এবং শিব তাতে প্রাণ সঞ্চার করেন এবং নিজের পুত্র বলে মেনে নেনএই হলো সংক্ষেপে গণেশের জন্ম বৃত্তান্ত যেটা আমরা জানি এবং তিনিই এখন সমস্ত দেবতার দেবতা হিসেবে পূজিত হন

নীতিকথা

এই গল্পটিতে যেমন গণেশের জন্ম বৃত্তান্তের কথা বলা হয়, তার সাথে সাথে আবার একটি দারুণ শিক্ষাও আমাদের দেয় যে, ক্রোধ বা রাগ কীভাবে আমাদের নিজেদের কাছের ও প্রিয় মানুষদেরও ক্ষতি করে তুলতে পারে আর যদি তা হয়েও যায় তবে ভুল মেনে নিয়ে সেটিকে দ্রুত সংশোধন করা কতটা প্রয়োজন

শিশুদের জন্য ভগবান গণেশের কয়েকটি আকর্ষণীয় গল্পগুচ্ছ

2.হারানো শঙ্খের গল্প

এটি একটি দারুণ চমকপ্রদ গল্প যেখানে দেখানো হয়েছে ভগবান বিষ্ণু পর্যন্ত কীভাবে নমনীয় হয়ে যান গণেশের অদ্ভুত ভাবভঙ্গীমা ও ইচ্ছের কাছে

ভগবান বিষ্ণুর প্রিয় শঙ্খটির কথা সকলেই জানেন যেটিকে তিনি সর্বদা তাঁর নিজের কাছে রাখতেনএকদিন তিনি তাঁর প্রিয় শঙ্খটিকে কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলেন নাএই বিষয়টি তাকে খুবই মর্মাহত করে তুলল, তিনি তার সমস্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করলেন শঙ্খটিকে খুঁজে বের করার জন্য

যখন এই খোঁজাখুঁজির পালা চলছিল তখন ভগবান কৃষ্ণ হঠাৎ করে সেই শঙ্খটির আওয়াজ শুনতে পেলেন কিছুটা দূর থেকে এবং সেই শব্দ শুনে সেটু কোন দিক থেকে আসছে তার অনুসন্ধান করে তিনি অনুধাবন করলেন যে শব্দটির উৎস হল কৈলাস পর্বততিনি কৈলাস পর্বত চলে এলেন এবং দেখতে পেলেন স্বয়ং গণেশ সেই শঙ্খটিকে ফুঁ দিয়ে বাজাতে ব্যাস্ততিনি জানতেন গণেশ সহজে নমনীয় হওয়ার পাত্র নন, তাই তিনি সেটি ফেরত পাওয়ার জন্য দেবাদিদেব শিবকে বললেন যাতে তিনি গণেশকে শঙ্খটি ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন

শিব জানালেন যে তাঁরও ক্ষমতা নেই গণেশের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করার এবং তাঁকে প্রশমিত করার একমাত্র পথ হল গণেশের পূজা করাতাই বিষ্ণু গণেশের পূজা করতে উদ্যোগী হলেনতিনি পূজার সমস্ত উপকরণ দিয়ে শ্রী গণেশকে হৃদয় থেকে আহ্বান করলেনএটি দেখে গণেশ অত্যন্ত প্রীত হলেন এবং বিষ্ণুর শঙ্খটিকে তাঁকে ফিরিয়ে দিলেন

নীতিকথা

এই গল্পটিতে ভগবান গণেশ এবং তার অদ্ভুত ইচ্ছের মজার দিকটিকে বেশ আগ্রহজনক ভাবে তুলে ধরা হয়েছে এছাড়াও এও গল্পটি থেকে এটি শিক্ষণীয় যে, ভগবান বিষ্ণুর মত ক্ষমতাবানও কতটা নমনীয় যে, তিনি গণেশের পূজার জন্য সামান্যতমও দ্বিধান্বিত হননি

3.শিবের যুদ্ধে হেরে যাওয়ার গল্প

ভগবান শিব এবং ভগবান গণেশের অনেকগুলি গল্পই একসাথে আছেযাইহোক এই গল্পটি পিতাপুত্রের সম্পর্কের ঊর্ধ্বে উঠে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষাদান করে

যখন হস্তিমুন্ড গণেশের দেহের উপর প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল এবং পুনরায় গণেশের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল তখন পার্বতীর ইচ্ছা অনুসারে শিব তাঁকে খুশি করার জন্য এ কথাও বলেছিলেন যে সমস্ত দেবতার পূজার পূর্বে গনেশ পূজা প্রচলিত হবেযাইহোক, এ কথা বলার সময় মহাদেব ভুলে গিয়েছিলেন যে তাঁর এই কথাটির অর্থ তাঁর নিজের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে

একবার এমন একটা ঘটনা ঘটল যখন শিব অসুরদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য তার সমগ্র সৈন্যবাহিনী নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে ছুটলেন কিন্তু তাড়াহুড়োর চোটে তিনি প্রথমে ভগবান গণেশের পূজা করতে ভুলে গেলেনএর ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছানোর আগেই তাঁদের নানা সমস্যার মুখে পড়তে হলযুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার রাস্তাতেই যোদ্ধাদের ব্যবহৃত যানবাহনগুলির চাকা ভেঙে গেল এবং যুদ্ধযাত্রা মাঝপথে থমকে দাঁড়ালোএই বিষয়টি দৈব কারণ বলেই প্রতীয়মান হল এবং দেবাদিদেব মহাদেবের অচম্বিতেই এ কথা স্মরণ হল যে তিনি যুদ্ধে বেরোবার আগে গণেশের পূজা করতেই ভুলে গিয়েছিলেন।

তার সমস্ত সেনাবাহিনীকে থামার নির্দেশ দিলেন এবং সেখানেই গণেশের পূজা সমাপন করলেন অতঃপর গণেশের আশীর্বাদ লাভ করে শিব যুদ্ধ গমন করলেন এবং তার সেনাবাহিনী অসুরদেরকে সম্পূর্ণভাবে পর্যুদস্ত করলেন

নীতিকথা

এটি ব্যক্ত করে যে আপনি কত বড় এবং মহান ব্যক্তি সেটি বড় কথা নয় যখন কোন নীতি আপনি প্রয়োগ করবেন তখন সেটি সকলের জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য হবে এমনকি আপনার নিজের ক্ষেত্রেও

শিশুদের জন্য ভগবান গণেশের কয়েকটি আকর্ষণীয় গল্পগুচ্ছ

4.গণেশের বুদ্ধিমত্তার গল্প

গণেশ হলেন বুদ্ধি এবং জ্ঞানের দেবতা আর এটি হল সেরকমই একটি দুর্দান্ত গল্প যা এই বিষয়টিকেই তুলে ধরে

গণেশের একজন ছোট ভাই ছিল যার নাম ছিল কার্তিকতাঁরা দুজনেই খুব ভালোভাবেই মানুষ হচ্ছিলেন যেমন দুই ভাইয়ের মধ্যে হয়ে থাকে ঠিক তেমনি কার্তিক ও গণেশের মধ্যেও নানা বিষয়ে মতভেদ, তর্কাতর্কি ও যুদ্ধ হয়ে থাকতোএকদিন জঙ্গলের মধ্যে গণেশ এবং কার্তিক দুজনেই একটি অদ্ভুত ফল পেলেন এবং তাঁরা দুজনেই সেটিকে নিতে চাইলেনতাঁরা একে অপরকে ফলের ভাগ দিতে নারাজ এবং প্রত্যেকেই সেটিকে নিজের বলে দাবী করতে শুরু করলেন

এই নিয়ে যখন তারা কৈলাস পর্বতে পৌঁছালেন এবং এই বিষয়টি দেবাদিদেব মহাদেব এবং মাতা পার্বতীর কাছে ব্যক্ত করলেন তখন শিব একটি প্রস্তাব দিলেনতিনি ফলটিকে চিনতে পারলেন এবং বললেন এই ফলটি দুর্দান্ত বুদ্ধি এবং অমরত্ব এনে দেবে সেই ব্যক্তিকেই যিনি তা বহন করে এনেছেন যদি তিনি সেটি ভক্ষণ করেনকে এই ফলটি খাবেন তার জন্য শিব একটি উপায় বের করেনতিনি কার্তিক এবং গণেশকে বলেন যে সবার প্রথমে পৃথিবীকে 3 পাক ঘুরে প্রথমে কৈলাশে ফিরে আসবে তিনিই হবেন ফলটির প্রাপক

কার্তিক সঙ্গে সঙ্গেই তার বাহন ময়ূরের পিঠে চেপে দ্রুত পৃথিবী পরিক্রমায় বেরিয়ে পড়লেন গণেশ ছিলেন কার্তিকের থেকে তুলনায় একটু ধীর আর তার বাহন ইঁদুর, সে উড়তেও পারে নাগণেশ শিবের প্রস্তাবটি খুব মনোযোগ সহকারে শুনেছিলেন এরপর তিনি পিতা মহাদেব এবং মাতা পার্বতীর চারদিকে ঘুরতে শুরু করলেন, যখন শিব তাকে এর কারণ ব্যাখ্যা করতে বললেন তখন তার উত্তরে গণেশ বললেন শিব তাদেরকে তাদের পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে বলেছেনগণেশ এও জানালেন তার কাছে তার পিতামাতাই হলেন তার পৃথিবী এবং তারাই হলেন সমগ্র বিশ্ব

শিব এই উত্তর শুনে অত্যন্ত প্রীত হলেন এবং তার বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করলেন আর তাকেই ফলটির সুযোগ্য উত্তরাধিকার মনে করে তাকেই সেটি দিলেন

নীতিকথা

যেকোনও কঠিন পরিস্থিতিতে বুদ্ধিমত্তার সাথে কীভাবে সেটি কেমোকাবিলা করতে হবে এই গল্পটি শুধু তার উদাহরণ নয় বরঞ্চ এটি এই শিক্ষা দেয় যে কীভাবে একজন শিশু তার পিতা মাতাকে শ্রদ্ধা করবে এবং তাদের প্রতি ভালোবাসা জানাবে

5.দেবী পার্বতীর ক্ষত

সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডটি যে কীভাবে একটিমাত্র অখন্ড অংশ তারই এক দুর্দান্ত উদাহরণ হল এই অসাধারণ গল্পটি

গণেশ একটি দুষ্টু ছেলে হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছিলেনএবং তিনি নিমগ্ন থাকতেন নানারকম দুষ্টুমি ভরা কার্যকলাপের মধ্যেএকবার যখন গণেশ খেলছিলেন তখন একটি বিড়াল তার সামনে এসে পড়ে এবং তিনি সেটিকে নিয়ে নানারকম উৎপাত শুরু করে দেন, সেটিকে তুলে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেন আবার তার লেজ ধরে ঘোরাতে থাকেন বিড়ালটি কাতর স্বরে মিউমিউ শব্দ করে আর্তনাদ করতে থাকে এই ভাবে গণেশ খেলতেই থাকেন যতক্ষণ না তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন ততক্ষণ পর্যন্ত এবং অবশেষে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন

কৈলাস পর্বতে ফেরার পর গণেশ চমকে ওঠেন পার্বতী কে দেখেতিনি দেখেন দেবী পার্বতী ঘরের বাইরে আহত অবস্থায় পড়ে আছেন আর তার সারা শরীর ক্ষততে পরিপূর্ণ এবং তিনি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেনগণেশ ছুটে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন কে তাঁর এমন অবস্থা করেছেতার উত্তরে দেবী পার্বতী বলেন গণেশ তার এই অবস্থার জন্য দায়ীআসলে বিড়ালটি ছিল দেবী পার্বতীর একটি রূপ এবং সে তার ছোট্ট ছেলেটির সঙ্গে খেলতে চেয়েছিলেন বিড়াল রূপে কিন্তু গণেশ তার সাথে বাজে ব্যবহার করে এবং তাকে নৃশংসভাবে অত্যাচার করে আর তার এই কর্মের ফল তার মায়ের শরীরে প্রতিভাত হয়েছে

গণেশঅত্যন্ত ব্যথিত হন এবং তার ব্যবহারের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং শপথ গ্রহণ করেন তিনি সমস্ত প্রাণীদের সাথে সহৃদয়তার সঙ্গে ব্যবহার করবেন, তাদের যত্ন নেবেন এবং ভালোবাসবেন

নীতিকথা

উপরের গল্পটি এই শিক্ষাই দেয় যে অন্যদের সাথে সেই রকম ব্যবহার করা উচিত নয় যা আমরা নিজেরদের সাথে করতে চাইনাএটি পশু প্রাণীদের ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য

শিশুদের জন্য ভগবান গণেশের কয়েকটি আকর্ষণীয় গল্পগুচ্ছ

6.কুবেরের পতনের গল্প

কুবের অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন দেবতা ছিলেন কারণ তিনি ছিলেন মহাবিশ্বের ধনসম্পদের অধীশ্বরতার তার কাছে ছিল অগাধ গুপ্তধন এবং তার ভান্ডারে সবকিছুই ছিল যার জন্য তিনি খুবই গর্বিত ছিলেনএকদিন তিনি সমস্ত দেবতাদের নৈশভোজে আমন্ত্রণ করেন এবং তাদের মধ্যে শিব এবং পার্বতীও ছিলেনকিন্তু তারা দুজনেই সেই ভোজ সভায় উপস্থিত না হয়ে তারা গণেশকে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানগণেশ কুবেরের ব্যবহার লক্ষ্য করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন তার গর্ব খর্ব করারতিনি সমস্ত খাবারই দ্রুত খেয়ে ফেলেন এবং তার ফলে অন্যান্য আমন্ত্রিতদের জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকে না যদিও তাতেও তার ক্ষুধানিবৃত্তি হয়নিতখন সে কুবেরের সঞ্চিত সম্পদ এবং ঐশ্বর্যগুলি খেতে শুরু করেন এর মধ্যে ছিল স্বর্ণ এবং অন্যান্য দামি বস্তু সমূহ তাতেও তার পেট না ভরাতে তিনি কুবেরকে খেতে চান সেইসময় কুবের কৈলাস পর্বতে দৌড়ে যান আশ্রয়ের খোঁজে

মহাদেব শিব গণেশের ক্রিয়াকর্মের প্রকৃত কারণ কি তা বুঝতে পেরে গণেশকে এক বাটি ভাত খেতে দেনগণেশ সেই ভাত খাওয়ার সাথে সাথে তার ক্ষুধা নিবৃত্তি ঘটে কুবের বুঝতে পারেন লোভীর মতো সম্পদ গ্রহণ করা উচিত নয় এবং তিনি সম্মত হন তার সমস্ত সম্পদ সকলের মধ্যে বিলিয়ে দিতে

নীতিকথা

এই গল্পটি আমাদের এই শিক্ষাই দেয় যে লোভ এবং গর্ব একজন ব্যক্তির পক্ষে কতটা ক্ষতিকর এবং প্রতিটি মানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ এবং মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহার করাই হল গুরুত্বপূর্ণ জিনিস

7।কাবেরী নদীর উৎপত্তির গল্প

এই গল্পের শুরু ভারতের দক্ষিণ অংশে বসবাসকারী জনসাধারণের উপকারের জন্য ঋষি অগস্ত্যের ইচ্ছে অনুযায়ী একটি নদী উৎপত্তির কাহিনী থেকেভগবান তার প্রার্থনায় সাড়া দেন এবং তাকে একটি জলপূর্ণ পাত্র প্রদান করেন এবং জানান যেখানে তিনি সে পাত্রটি থেকে জল ঢালবেন সেখান থেকেই নদীর উৎপত্তি হবে

অগস্ত্য সিদ্ধান্ত নেন যে নদীটি কুর্গ পাহাড়ের পাশ থেকে উৎপন্ন হবে এবং তিনি সেই পর্বতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেনযাত্রা পথে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং একটু জায়গা খুঁজতে থাকেন যেখানে কিছুটা সময়ের জন্য তিনি বিশ্রাম নিতে পারবেনঠিক তখনই তাঁর কাছে আসে একটি ছোট্ট বালক সে একা দাঁড়িয়ে ছিলঋষি তাকে অনুরোধ করেন যদি জলের পাত্রটি সে একটু ধরে যখন তিনি প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে যাবেনআসলে এই বালকটি ছিল গণেশআর গণেশ জানতেন পাত্রটিতে যে জল আছে সেটা কিসের জন্যগণেশ বুঝলেন ঐ অঞ্চলটি নদীটির জন্যই যথোপযুক্ত তাই তিনি সেখানেই পাত্রটিকে রাখলেন

যখন অগস্ত্য ফিরে এলেন তখন তিনি দেখলেন পত্রটি মাটিতে রাখা আছে এবং একটি কাক সেখান থেকে জল পান করার চেষ্টা করছেতিনি কাকটিকে তাড়িয়ে দিলেন কিন্তু কাকটি উড়ে যাওয়ার আগেই সেখান থেকে কিছুটা জল মাটিতে ফেলে দিল তার ফলে সেই অঞ্চল থেকেই একটি নদীর জন্ম হলবর্তমানে সেটিই কাবেরী নদী নামে পরিচিত

নীতিকথা

অনেক ক্ষেত্রেই যেরকম আমরা চাই অনেক কাজ সেরকম ভাবে সম্পন্ন হয় নাতবে মনে রাখা উচিত যা হয় তার পেছনে একটি ভাল কারণ থাকে

শিশুদের জন্য ভগবান গণেশের কয়েকটি আকর্ষণীয় গল্পগুচ্ছ

8.গণেশের একদন্ত হওয়ার গল্প

গণেশের একদন্ত হওয়ার অনেকগুলি গল্প প্রচলিত আছে তবে তার মধ্যে এই বাল গণেশ গল্পের কথিত বিষয়টি সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক

একজন প্রখ্যাত কবি বেদব্যাস রচনা করেছিলেন মহাভারত কিন্তু সেটি লিখেছিলেন গণেশবেদব্যাস গণেশকে বলেছিলেন যে তিনি মুখে মুখে যে কাব্য বলবেন তা যেন গণেশ লিখে দেনতবে একটা শর্ত ছিল তা হলো বেদব্যাস যা বলবেন তা একটানা বলবেন আর গণেশ সেটি একটানাই লিখবেন

যখন এইভাবে কাজটি এগোচ্ছিল তখনই এমন একটি সময় এল যখন গণেশের কলমটি ভেঙে গেল কিন্তু গণেশের কাছে আর কোন অতিরিক্ত কলম ছিল নাবেদব্যাস কিন্তু তার কাব্য রচনা থেকে এক মুহূর্তের জন্যও বিরত হলেন না যেহেতু সেইরকমই শর্ত ছিলগণেশ এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে দ্রুততার সঙ্গে তাঁর একটি দাঁত ভেঙে ফেললেন এবং সেটিকে কলম হিসেবে ব্যবহার করে লিখতে শুরু করলেন এবং এই মহাকাব্য কোনরকম ছেদ ছাড়াই সম্পন্ন করলেনএর জন্যই এই মহাকাব্যটি একটি পূণ্য গ্রন্থে পরিণত হল যা গণেশ এবং ব্যাসদেবের যৌথ প্রচেষ্টার ফসল

নীতিকথা

এই গল্পে গণেশের কাছ থেকে পরিষ্কারভাবে এই শিক্ষাই পাই যে একটি কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য কতটা নিয়মানুবর্তী এবং একাগ্র থাকতে হয়, যে কাজ করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছি যা কিছুই ঘটুক না কেন তা সম্পন্ন করতে হয়বৃহৎ কোন কাজ সম্পন্ন করার জন্য ব্যক্তিগত ত্যাগ স্বীকার অবশ্যই করতে হয়

9.চাঁদের অভিশপ্ত হওয়ার গল্প

গল্পটি শুরু হচ্ছে কুবেরের ঘরে গণেশের ভোজ খাওয়ার পর থেকে

কুবেরের ঘরে তার ইচ্ছামত খাওয়ার ফলে গণেশের পেটটি বিরাট বড় হয়ে উঠল এবং তা পরিণত হল একটি ঢাকের ন্যায় পেটে।এই বিরাট পেট নিয়ে তাঁর হাঁটাচলা করা দুষ্কর হয়ে উঠলযখন তিনি হাঁটতে শুরু করলেন তখন তিনি তার ভারসাম্য হারালেন এবং পড়ে গেলেনচন্দ্র যিনি প্রথম থেকেই গণেশের সকল কাণ্ডকারখানাগুলি দেখছিলেন, তিনি হেসে উঠলেন চাঁদের এই অবমাননা গণেশ বরদাস্ত করলেন না, তিনি চন্দ্রকে ভেঙে ফেললেন এবং সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য করে দিলেনযাইহোক চন্দ্র তার নিজের ভুল বুঝতে পারে এবং গণেশের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেতার বারংবার ক্ষমা প্রার্থনার ফলে গণেশ তখন তাকে মুক্তি দিলেন এবং তার জন্য একটি সময়চক্র তৈরী করলেন যাতে 15 দিন অন্তর অন্তর চন্দ্র একবার সম্পূর্ণরুপে প্রকাশিত হবেন এবং একবার করে অদৃশ্য থাকবেন

অপর একটি গল্পতে যেখানে চন্দ্রকে ভাঙছেন সেখানে একটি সর্পের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় একদিন দেবী পার্বতী গনেশের প্রিয় খাদ্য মোদক বানিয়ে ছিলেনগণেশ তার মনের ইচ্ছামত যতগুলো বেশি সম্ভব মোদক খেয়ে ফেলেছিলেনতারপর রাত্রে তিনি তার বাহন এর উপর চেপে বেড়াতে বেরোলেনকিন্তু তার বাহন ইঁদুরটি মোদক পরিপূর্ণ গণেশের ভার বহন করতে পারছিল না এমন সময় হঠাৎ করে একটি সর্প ইঁদুরটির সামনে এসে উপস্থিত হয়ইঁদুরটি ভয় পেয়ে যায় এবং গণেশ তার পিঠের উপর থেকে পড়ে যায়গণেশ মাটিতে আঘাত পাওয়ার সাথে সাথেই সমস্ত মোদক গুলি তার পেট থেকে বেরিয়ে আসেগণেশ সেগুলিকে কুড়িয়ে নিয়ে গোগ্রাসে গিলে ফেলেন আর যাতে সেগুলি তার পেট থেকে না বেরিয়ে আসে সেই জন্য সেই সাপটিকে দিয়ে কোমরবন্ধন করে ফেলেনসেই জন্য বেশ কিছু মূর্তিতে গণেশের পেটে একটি সর্পরজ্জু দেখতে পাওয়া যায় যাইহোক এই বিষয়টি দেখে চন্দ্র দেবতা হেসে ফেলেনগনেশ এতে প্রচণ্ড রেগে যান এবং চন্দ্র দেবতাকে অভিশপ্ত করেন এবং বলেন কেউই গণেশ চতুর্থীর দিন চন্দ্রকে দেখতে পাবেন না যদিও বা কেউ চন্দ্রকে দেখেন তবে তার বিরাট ক্ষতি হবে।

নীতিকথা

কারোরই অন্যের বিপদ দেখে অথবা তার কোন বিকলাঙ্গতা দেখে পরিহাস করা উচিত নয়এটি অভদ্রতা এবং অসভ্যতার লক্ষণ প্রকাশ করে

শিশুদের জন্য ভগবান গণেশের কয়েকটি আকর্ষণীয় গল্পগুচ্ছ

10.মিষ্টি ক্ষীরের গল্প

একবার একটি গ্রামে গণেশ বালকের বেশে প্রবেশ করেন, তাঁর এক হাতে ছিল কিছু চাল অন্য হাতে ছিল দুধপ্রত্যেকের কাছে ওই গুলি দিয়ে ক্ষীর বানিয়ে দেওয়ার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করেন কিন্তু প্রত্যেকেই তখন ব্যস্ত ছিলেন

তিনি এরপর এক দরিদ্র রমণীর গৃহে প্রবেশ করেন এবং সেই রমণী ক্ষীর বানিয়ে হনচাল দুধ মিশিয়ে পাত্রে ক্ষীর রান্না করতে করতে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন আর বালকটি বাইরে খেলতে থাকেযখন তার ঘুম ভাঙে তখন তিনি বুঝতে পারেন ক্ষীর রান্না হয়ে গেছে এবং সেটি অত্যন্ত সুস্বাদু হয়েছে

কিন্তু সেই মহিলা এতই ক্ষুধার্ত ছিলেন যে তিনি কিছুতেই নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছিলেন নাযাইহোক তিনি নিজে খাবার আগে কিছুটা ক্ষীর পাত্র থেকে বের করে নেন এবং সর্বাগ্রে গণেশের মূর্তিকে উৎসর্গ করেন তারপর তিনি খেতে শুরু করেনআশ্চর্যের ব্যাপার হল কতটা খেলেন সেটা কোন ব্যাপারই হল না কারণ পাত্রটি সবসময় পূর্ণই থাকছিলযখন বালকটি ফিরে এল তখন তিনি ক্ষীর ভর্তি পাত্রটি তাকে দিলেন এবং তার ক্ষুধার্ততার জন্য তিনি যে পূর্বেই কিছুটা খেয়েছেন সেটি স্বীকার করলেনতখন বালকটি জানাল পূর্বেই সে ক্ষীর খেয়েছে যখন সেই রমণী সেটি গণেশের মূর্তির উদ্দেশ্যে নিবেদন করেছিলেনসেই মহিলা তখন গণেশের পায়ে পড়ে কাঁদতে লাগলেনগণেশ তাকে সুস্বাস্থ্য এবং সম্পদের অধিকারী হওয়ার জন্য আশীর্বাদ করলেন

নীতিকথা

নিজের জন্য কিছু করার আগেই আপনার প্রয়োজন ভগবানের আরাধনা করা এবং সামান্য কিছু অন্যের জন্য উৎসর্গ করা

আপনার সন্তানকে ভগবান গণেশের গল্পগুলি বলার সাথে সাথে ভারতীয় পৌরাণিক আখ্যানের গুপ্তধনের ভান্ডারে বর্ণিত ভগবান গণেশের সাথে তার পরিচয় ঘটাতে সক্ষম হবেননানা পূজা অনুষ্ঠান এবং ধর্মীয় রীতিনীতি আপনার বাড়ির একটি অংশ কিন্তু যেটা প্রয়োজন তা হল ভগবানকে আপনার হৃদয়ে প্রতিষ্ঠা করা এবং তাঁর প্রদর্শিত নীতিগুলি অনুসরণ করা