মা–বাবা হতে পারাটা হল এই পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তির এক অন্যতম বৃহৎ আনন্দ লাভ করা।কিন্তু সকল দম্পতির কপালেই সেই সৌভাগ্য থাকে না,একটি শিশুর জন্ম দিয়ে নিজ হাতে করে তাদের নিজ সন্তানকে লালন পালন করে বড় করে তোলার মাধ্যমে তাদের জৈবিক মা–বাবা হয়ে উঠতে তারা অনেক ক্ষেত্রেই সক্ষম হন না।কিন্তু আপনারা যদি প্রকৃতই মা–বাবা হয়ে উঠতে চান,আপনি সর্বদাই দত্তক গ্রহণ করাকে বেছে নিতে পারেন।দত্তক গ্রহণের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে যেগুলির ব্যাপারে আপনি বিবেচনা করে দেখতে পারেন।এখানে নিম্নলিখিত নিবন্ধটিতে আমরা আলোচনা করতে চলেছি ভারতবর্ষে দত্তক গ্রহণের বিভিন্ন প্রকারভেদ এবং সেগুলির সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি সম্পর্কে।
দত্তক গ্রহণ করা হল একটি দত্তক সংস্থা থেকে একটি শিশুকে পাওয়ার আইনী পন্থা এবং সেই শিশুটির সকল দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে আপনার নিজের মত করে প্রদত্ত শিশুটিকে বড় করে তোলার অধিকার পাওয়া।কিন্তু একটি শিশুকে দত্তক গ্রহণ করার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই দত্তক গ্রহণের প্রকারভেদগুলি সম্পর্কে অবগত হতে হবে।দত্তক গ্রহণকারী মা–বাবা এবং শিশুর জন্মদাত্রী মায়ের উপর দত্তক গ্রহণের প্রভাবের ভিত্তিতে ভারতবর্ষে দত্তক গ্রহণের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে।দত্তক গ্রহণ আবার উভয় পক্ষের অবস্থানের উপরেও নির্ভর করতে পারে।নিম্নলিখিতগুলি হল ভারতে দত্তক গ্রহণের বিভিন্ন প্রকারভেদঃ
নামানুসারেই বোঝা যাচ্ছে যে,এই ধরণের দত্তক গ্রহণ খোলাখুলিভাবেই হয়ে থাকে,যার মানে হল দত্তক গ্রহণকারী পিতামাতা এবং শিশুর জন্মদানকারী পিতামাতারা একে অপরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখেন।
খোলাখুলিভাবে সরাসরি দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়াটি কীভাবে কাজ করে তা ভেবে আপনি হয়ত অবাক হতে পারেন,বেশ,আসুন তবে আপনার মনের ভিতরে এ ব্যাপারে হয়ে চলা সকল প্রশ্নের দ্বার উদঘাটন করার চেষ্টা করা যাক,এই প্রক্রিয়ায় উভয় পক্ষের মধ্যে একটি সরাসরি যোগাযোগ বজায় থাকে।এক্ষেত্রে বাচ্চার জন্মদাত্রী মা বা মা–বাবা উভইয়েই চিঠিপত্র,ই–মেইল অথবা টেলিফোন কলের মাধ্যমে হয়ত যোগাযোগের মধ্যে থাকতে পারেন,আবার এমনকি উভয় পক্ষের মা–বাবারাই একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন এবং শিশুটির জন্মদাত্রী মা আবার এমনকি মাঝে মধ্যে তার সন্তানের সাথে দেখা করতেও পারেন।এই ধরনের দত্তক গ্রহণের সাথে এমন এক পরিকল্পনা জড়িত থাকে যা প্রত্যেকের চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তার সাথে খাপ খায়।সন্তানের উপর অধিকারের ক্ষমতাটি এক্ষেত্রে সাধারণত শিশুটির বয়স 18 (অধিকাংশ দেশে)হলেই সেটি মঞ্জুর হয়।এছাড়াও আবার এক্ষেত্রে শিশুটির জন্মদাত্রী মা দত্তক গ্রহণকারী পিতা–মাতার সাথে দেখা করতে পারেন এবং শিশুটির কোন দম্পতির কাছে যাওয়া উচিত তার সিদ্ধান্তও হয়ত স্থির করতে পারেন।
খোলাখুলিভাবে সরাসরি দত্তক গ্রহণের কিছু সুবিধার কথা এখানে উল্লেখ করা হলঃ
এখানে খোলাখুলিভাবে সরাসরি দত্তক গ্রহণের কিছু অসুবিধার কথা উল্লেখ করা হলঃ
এটি হল এমন এক প্রকার দত্তক গ্রহণ পদ্ধতি যেখানে দত্তক গ্রহণকারী পিতামাতা এবং জন্মদানকারী পিতামাতার মধ্যে কোনও সরাসরি যোগসূত্র থাকে না।
আংশিক–খোলাখুলি দত্তক গ্রহণ বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে দত্তক গ্রহণে শিশুর জন্মদানকারী পিতা–মাতা এবং সেই শিশুটিকেই দত্তক গ্রহণকারী পিতা–মাতার মধ্যে পরস্পরের সাথে সংস্পর্শে থাকার বা যোগাযোগ রাখার কোনও প্রয়োজন পড়ে না।তবে জন্মদাত্রী মা দত্তক গ্রহণকারী পিতা–মাতার কাছ থেকে চিঠিপত্র বা ছবিগুলি গ্রহণ করতে পারেন এবং দত্তক গ্রহণকারী সংস্থার মাধ্যমে তিনি তাদের সাথে নিবন্ধভূক্ত থাকতে পারেন।আর এটি ততদিন চলতে পারে যতদিন না শিশুটি সাবালক হয় অর্থাৎ 18 বছর না হওয়া পর্যন্ত।আর যেকোনও সময়ের যেকোনও মুহূর্তে আংশিক দত্তকগ্রহণটি উন্মুক্ত বা বদ্ধ দত্তক গ্রহণে রূপান্তরিত হয়ে যেতে পারে।
এখানে আংশিক–সরাসরি দত্তক গ্রহণের কিছু সুবিধার কথা উল্লেখ করা হলঃ
নম্নলিখিতগুলি হল আংশিক–সরাসরি দত্তক গ্রহণের কিছু অসুবিধাসমূহঃ
যেমন নাম,ঠিক সেরকমই এই ধরণের দত্তক গ্রহণে দত্তক গ্রহণকারী পিতা–মাতা এবং শিশুর জন্মদানকারী মা–বাবার মধ্যে কোনও রকমই যোগাযোগ থাকে না।
বদ্ধ দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়াটির মধ্যে উভয় পক্ষের বাবা–মায়ের মধ্যে একে অপরের সাথে কোনও রকম যোগাযোগ অথবা খবরাখবর দেওয়া নেওয়ার ব্যাপার থাকে না।তবে কিছু ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে জন্মদাতা মা–বাবার কিছু চিকিৎসাজনিত তথ্য দত্তক গ্রহণোকারী মা–বাবার সাথে ভাগ করে নিতে হয়ত পারেন।যাইহোক,তবে কখনও কখনও আবার নিয়ন্ত্রণের কঠোর প্রয়োগ করা হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে দত্তক গ্রহণকারী পিতামাতার সাথে কোনও তথ্যই ভাগ করা হয় না।এধরণের ঘটনা ঘটতে পারে যখন কোনও শিশুকে উদ্ধার করা হয় বা কোনও আপত্তিজনক পরিবেশ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
বদ্ধ দত্তক দত্তক গ্রহণের কিছু সুবিধাগুলি নিম্নরূপঃ
বদ্ধ দত্তক গ্রহণের কিছু অসুবিধাগুলি নিম্নরূপঃ
এটি এমন এক ধরণের দত্তক গ্রহণ পদ্ধতি যেটি পরিবারের মধ্য থেকেই ঘটে।
যদি শিশুর জৈবিক মা–বাবার মধ্যে কারুর মৃত্যু হয় বা অন্য কাউকে বিয়ে করেন অথবা তাদের সন্তানের ভরণপোষণ করার সামর্থ্য তাদের না থেকে থাকে,সেক্ষেত্রে সেই পরিবারের কোনও সদস্য বা সৎ মা–বাবা আইনত সেই শিশুটির দায়িত্ব নিয়ে তাকে দত্তক গ্রহণ করতে পারেন।
পরিবারের মধ্য থেকেই দত্তক গ্রহণের অনেক সুবিধাগুলির মধ্যে কয়েকটি হল নিম্নরূপঃ
এই ধরণের দত্তক গ্রহণের সাথে সম্পর্কিত কিছু অসুবিধার মধ্যে রয়েছেঃ
স্বদেশীয় বা দেশীয় দত্তক গ্রহণ এমন এক ধরনের দত্তক গ্রহণকে নির্দেশ করে যেটি দেশের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে থাকে।
দত্তক গ্রহণকারী পিতামাতা এবং জন্মদানকারী পিতামাতা একই দেশের বাসিন্দা হলে যে ধরণের দত্তক গ্রহণ পদ্ধতি অনুসৃত হয় তা দেশীয় দত্তক গ্রহণ বলে পরিচিত।যে সকল দম্পতিরা দত্তক গ্রহণ করতে চান তারা সরকার স্বীকৃত কোন দত্তক গ্রহণ কেন্দ্রে নাম নথিভূক্ত করান।একজন তদন্তকারী অফিসার সমস্ত তথ্য পরীক্ষা করেন এবং সেই দম্পতি দত্তক গ্রহণ করার যোগ্য নাকি যোগ্য নন তা বিচার করেন।যখন সমস্ত ধরণের আনুষ্ঠিকতা সম্পন্ন হয়ে যায় তখন তারা দত্তক নিতে পারেন।
দেশীয় বা স্থানীয় শিশু দত্তক গ্রহণের কয়েকটি সুবিধা হল নিম্নরূপঃ
এখানে দেশীয় বা স্থানীয় দত্তক গ্রহণের কয়েকটি অসুবিধার কথা উল্লেখ করা হলঃ
আন্তর্জাতিক দত্তক গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশের বাইরের কোনও শিশুকে দত্তক নেওয়া হয় অথবা অন্য কথায় বলতে গেলে,এই প্রক্রিয়াটির সাথে এ দেশের অধিবাসী নন এমন মা–বাবা দত্তকগ্রহণকারী মা–বাবাকে তাদের শিশুটিকে দত্তক দিয়ে থাকার বিষয়টি জড়িত।
যখন এক দেশের নাগরিক অন্য দেশ থেকে একটি শিশুকে দত্তক গ্রহণ করতে চান তখন সেই প্রক্রিয়াটিকেই বলা হয়ে থাকে আন্তর্জাতিক দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়া।আন্তর্জাতিক দত্তক গ্রহণ আইনটি প্রতিটি দেশেই পৃথক হয়ে থাকে,এবং কিছু দেশে আবার আন্তর্জাতিক দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়াটি অনুমোদিত নয়।আমাদের দেশ ভারতবর্ষে স্বদেশীয় বা দেশীয় দত্তক গ্রহণ পদ্ধতিটিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।পরের সারণীতে অনাবাসী ভারতীয়(NRI)বা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি (PIO) এবং তারপরে আন্তর্জাতিক নাগরিকদের ভারতে আন্তর্জাতিক দত্তক গ্রহণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
এখানে আন্তর্জাতিক দত্তক গ্রহণের কিছু সুবিধার কথা উল্লেখ করা হলঃ
এখানে আন্তর্জাতিক দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়ার কিছু অসুবিধার কথা উল্লেখ করা হলঃ
আপনি কোন ধরণের দত্তক গ্রহণকে বেছে নেবেন সেটি কিছু যায় আসে না,যেটি সবচেয়ে বশি গুরুত্বপূর্ণ তা হল যেভাবেই আপনি যে শিশুকেই দত্তক নিন না কেন, আপনি আপনার বাড়িতে উষ্ণতা ও ভালবাসার সাথে একটি শিশুকে পাবেন আর সারা বাড়িতে আপনি আপনার সন্তানের উপস্থিতি পরতে পরতে অনুভব করবেন,যা আপনার একরাশ অপার্থিব আকাঙ্খিত আনন্দকে অচিরেই আপনার হাতের মুঠোয় এনে দেবে।