In this Article
বেশীরভাগ মহিলার অভিজ্ঞতায় তাদের মাসিক চক্র চলাকালীন সময়ে হালকা থেকে মাঝারী মানের অস্বস্তি হওয়াটা খুবই সাধারণ একটা ঘটনা।কিছু মহিলার মধ্যে আবার এই যন্ত্রণা ও অস্বস্তিটা একটা ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছায়–তারা তাদের মাসিক চলাকালীন সময়ে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করেন।
যাইহোক, আপনি যদি ডায়মেনোরিহিও অথবা মাসিকের যন্ত্রণায় ভুগে থাকা একজন মহিলা হয়ে থাকেন আপনি জানতে চাইতে পারেন যে এই যন্ত্রণা আপনার গর্ভধারণের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করবে কিনা।আরও জানতে হলে পড়ুন।
মাসিক ক্রাম্প বা খিঁচুনির কারণ সমূহ
প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক রাসায়নিকটি আপনার দেহের বিভিন্ন অংশ সহ জরায়ুতেও অবস্থান করে,যা মাসিক ক্র্যাম্প বা খিঁচুনির কারণের জন্যও দায়ী।এই রাসায়নিকের মূল কাজ হল শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ,প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ,কোষের বৃদ্ধিতে সাহায্য করা,পেশীর প্রসারণ এবং সংকোচন ঘটানো।
আপনার মাসিক চলাকালীন সময়ে এই রাসায়নিকটি আপনার জরায়ুর পেশীর সংকোচনের কারণ এবং এছাড়াও জরায়ুর আস্তরণের অপসারণে সাহায্য করে থাকে।যাইহোক,আপনার শরীরে এই রাসায়নিকটি উচ্চ পরিমাণে থাকার ক্ষেত্রে,আরও তীব্র সংকোচন ঘটায়।
এই তীব্র সংকোচন মাসিকের তীব্র যন্ত্রণা এবং ক্র্যাম্প বা খিঁচুনি ঘটিয়ে থাকে। ডায়মেনোরিহিওকে পুনরায় দুই ভাগে ভাগ করা হয়–প্রাথমিক ডায়মেনোরিহিও যা হালকা থেকে মাঝারি মানের যন্ত্রণার কারণ এবং যা সাধারণত শুধুমাত্র জরায়ুর আস্তরণের স্খলনের সাথে সম্পর্কিত।
অপরদিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর ডায়মেনোরিহিও তীব্র যন্ত্রণার কারণ হতে পারে এবং একটি অন্তর্নিহিত চিকিৎসা অবস্থার ইঙ্গিত দিতে পারে যা আপনার প্রজননে বা গর্ভধারণ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
মাসিকের তীব্র খিঁচুনি কি আপনার প্রজননকে প্রভাবিত করতে পারে?
তীব্র মাসিক ক্র্যাম্প অথবা সেকেন্ডারি বা দ্বিতীয় পর্যায়ের ডায়মেনোরিহিও নিম্নোলিখিত ডাক্তারী শর্তগুলিকে ইঙ্গিত করতে পারে,যা মহিলাদের গর্ভধারণের ক্ষমতার উপর বা সন্তানধারণের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
1. PID বা পেলভিক ইনফ্ল্যামাটরী ডিজিজ বা পেলভিকের প্রদাহজনিত রোগ
পেলভিক ইনফ্ল্যামাটরী রোগ সাধারণত (চিকিৎসা বহির্ভূত) যৌন সংক্রামিত সংক্রমণ অথবা STI এর দ্বারা আলোড়িত হয়,যাইহোক,কিছুক্ষেত্রে আবার PID প্রজনন অঙ্গাণুর সাথে সম্পর্কহীন সংক্রমণের দ্বারাও আলোড়িত হতে পারে। এই শর্তের সাথে একটা অন্যতম সাধারণ সমস্যা হল এটা মাঝেমধ্যে চিহ্নিত করা খুবই কঠিন হয়ে ওঠে কারণ এর প্রধান উপসর্গগুলি যেমন অস্বাভাবিক যোনি স্রাব এবং সঙ্গমের সময় যন্ত্রণা হয় লক্ষ্য করা হয় না অথবা উপস্থিতই থাকে না।মঝেমধ্যে কখনও কখনও এটা তীব্র যন্ত্রণার উদ্রেক করে না,কিন্তু তবুও এটা তখনও কারুর প্রজননকে প্রভাবিত করতে পারে।এর কারণ সিফিলিস অথবা ক্ল্যামাইডিয়ার মত চিকিৎসা বহির্ভূত যৌন সংক্রামিত সংক্রমণগুলি প্রজনন অঙ্গাণুর (ফ্যালোপাইন টিউব,ডিম্বাশয় অথবা জরায়ুর)ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং এভাবেই একজন মহিলার প্রজননকে প্রভাবিত করে।
2. এন্ডোমেট্রিওসিস
এই অবস্থাটি হল তীব্র মাসিক ক্র্যাম্পের একটা অন্যতম সাধারণ কারণ যা আবার মহিলাদের প্রজননকেও প্রভাবিত করে।এন্ডোমেট্রিওসিস ঘটে যখন আস্তরণটি যা সাধারণত জরায়ুর অভ্যন্তরে বৃদ্ধি পায়, তা ফ্যালোপাইন টিউব এবং ডিম্বাশয়গুলির মত অন্যান্য প্রজননকারী অংশে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।অন্যান্য প্রজননকারী অঙ্গাণুতে আস্তরণ বৃদ্ধির ফলে সেগুলিকে দুর্বল করে তোলে যার ফল হল বন্ধ্যাত্বজনিত সমস্যা।ল্যাপ্রোস্কপিক পদ্ধতির দ্বারা এন্ডোমেট্রিওসিসকে সহজেই নির্ণয় করা যেতে পারে।যদি আপনার পিছনের দিকে নিম্নাংশে বা কোমড়ে যন্ত্রণার,সঙ্গমের পরে যন্ত্রণা,বমি বমি ভাবের অভিজ্ঞতা থাকে,তবে সেক্ষেত্রে আপনার এই অবস্থা হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।যাইহোক,এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে,মাসিকের তীব্র ক্রাম্প হওয়ার অর্থ এই নয় যে,আপনার এই অবস্থাটি আছে অথবা বিপরীতভাবে,আপনার যদি এন্ডোমেট্রিওসিস থাকে আপনি সন্তানধারণে সক্ষম হবেন না।অন্য কথায়,যদি আপনার যন্ত্রণাদায়ক মাসিক হয়ে থাকে এবং আপনি গর্ভবতী না হতে পারেন সেক্ষেত্রে এমন কোনও যৌক্তিকতা নেই যে, আপনার এন্ডোমেট্রিওসিস আছে।
3. অ্যাডিনোমায়োসিস
এই অবস্থাটা কিছুটা এন্ডোমেট্রিওসিসের মতই,কিন্তু এই ক্ষেত্রে,জরায়ুর আভ্যন্তরীণ আস্তরণ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে অন্যান্য প্রজননকারী অঙ্গাণুর পরিবর্তে জরায়ুর প্রাচীরের উপর।এই ডাক্তারি অবস্থাটিকে মূলত তলপেটের যন্ত্রণা,যন্ত্রণাদায়ক ক্র্যাম্প,এবং মাসিকের সময় ব্লটিং–এর দ্বারা চিহ্নিত করা যেতে পারে।মহিলাদের মধ্যে এই অবস্থাটি কেন ঘটে তা বোঝার জন্য অনেক গবেষণা করা হচ্ছে।কিছু গবেষণা নির্দেশ করে যে,এটা শরীরের হরমোনের ওঠানামার কারণে হতে পারে,যার মধ্যে প্রোজেস্টেরণ, ফলিক্যাল স্টিমুলেটিং হরমোন এবং ওস্ট্রোজেন অন্তর্ভূক্ত।অ্যাডিনোমায়োসিস তীব্র মাসিক ক্র্যাম্পের কারণ।তবে এরকম পরিস্থিতিতে মাসিকের তীব্র যন্ত্রণা এবং প্রজননের মধ্যে কোনও সংযোগ আছে কিনা তার সীমিত প্রমাণ উপলব্ধ রয়েছে।
4. ফাইব্রয়েডস এবং ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের সিস্ট
30-45 বছর বয়সের সীমারেখায় মোটামুটি 30 শতাংশ মহিলার মধ্যেই ফাইব্রয়েডস থাকতে পারে,যেগুলি ক্যান্সার হয় না এমন ধরণের টিউমার।এই টিউমার গুলি হয় জরায়ুর আস্তরণের ভিতরে অথবা সেগুলির কাছাকাছি জায়গায় অবস্থান করে।এগুলি সাধারণত রক্ত প্রবাহের বাধার সৃষ্টি করে যা মাসিকের সময় তীব্র যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাড়ায়।আপনার গর্ভধারণের সক্ষমতা নির্ভর করে অবস্থার তীব্রতার উপর,যার মানে হল ফাইব্রয়েডের আকার এবং অবস্থান আপনার প্রজননে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।কিছু ক্ষেত্রে,যদি কোনও মহিলার ফাইব্রয়েড থাকে এবং গর্ভধারণ করে থাকেন,সেক্ষেত্রে কিছু সময়ে গর্ভপাত অথবা গর্ভস্রাব ঘটতে পারে।
ওভারিয়ান সিস্টের নাম প্রস্তাবানুযায়ী,এগুলি হল তরল পূর্ণ থলি যেগুলি ডিম্বাশয়ের ভিতরে অবস্থান করে।ফাইব্রয়েডের মতই ওভারিয়ান সিস্টও ক্যান্সারযোগ্য নয়।এগুলি সাধারণত নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়;যাইহোক,যদি এগুলি আকারে বড় হয় এবং ফ্যালোপাইন টিউব বা ডিম্বাশয়ের মধ্যে অবস্থান করে সেগুলি এই ধারণা গঠনের ক্ষেত্রে বাধার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
যন্ত্রণাদায়ক মাসিকের চিকিৎসা কি বন্ধ্যাত্বের কারণ?
যদি আপনি তীব্র যন্ত্রণার মধ্যে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে সেটিকে আরও খারাপ কঠোর পরীক্ষার মধ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।এইজন্য একজন পেশাদার সাহায্যের প্রয়োজন।বেশীরভাগ ক্ষেত্রে,আপনার ডাক্তারবাবু আপনার যন্ত্রণাকে লাঘব করার জন্য হরমোনাল জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি গ্রহণের পরামর্শ দিতে পারেন।যাইহোক,যদি আপনি গর্ভধারণের জন্য চেষ্টা করেন তবে সেক্ষেত্রে এটা সুপারিশ করা হয় না।সহজেই উপলভ্য কিছু ওভার–দা–কাউন্টার বা OTC যন্ত্রণা উপশমের ওষুধগুলি খুবই সাহায্যকারী প্রমাণিত হতে পারে,কিন্তু অনেক মহিলাই এই ধরণের ওষুধগুলি গ্রহণ তাদের গর্ভধারণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে ভেবে ভয় পান।
কিছু উপলব্ধ গবেষণা প্রজননের উপর আইবুপ্রোফেনের মত কিছু ওষুধ গ্রহণের নেতিবাচক প্রভাবের সুপারিশ করেন।এছাড়াও আরেকটি গবেষণায়,মহিলাদের বিলম্বিত ওভ্যুলেশনের ক্ষেত্রে ন্যাপ্রক্সেনের প্রভাব খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল এবং পুনরায় বিলম্বনা লক্ষ্যণীয় সেই সকল মহিলাদের ক্ষেত্রে যারা উচ্চ ডোজের এই একই ধরণের ওষুধ গ্রহণ করেছিলেন।এর প্রভাব গুরুতর ছিল না কিন্তু যথেষ্ট ছিল।
যন্ত্রণাদায়ক মাসিকের থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আবার কিছু মহিলাকে অস্ত্রোপচার পদ্ধতির জন্য যেতে হতে পারে।যাইহোক,অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে,আপনার গর্ভধারণের ক্ষমতার উপর এই অস্ত্রোপচারের প্রভাব কতখানি তা জেনে নেওয়ার জন্য আপনার এণ্ডোক্রীনোলজিস্টের সাথে কথা বলে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।যদি আপনার ডাক্তারবাবু আপনাকে এক্ষেত্রে সবুজ সংকেত দেন,তবে অস্ত্রোপচারের জন্য যাওয়াটা একটা ভাল সিদ্ধান্ত হতে পারে কারণ এটা আপনাকে শুধুমাত্র বিরক্তিকর মাসিকের ক্র্যাম্প বা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতেই সাহায্য করে না এটা আপনার গর্ভধারণের সম্ভাবনাকেও বহুলাংশে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
আপনি যদি কোনও ধরনের তীব্র মাসিক ক্রাম্প বা যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা অনুভব করেন এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যে সেটি পরীক্ষার মাধ্যমে ডাক্তারের নজরে আনানো যে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে সেটি প্রভাবিত করতে পারে কিনা।