শিশুদের একজিমা- কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

শিশুদের একজিমা- কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

শিশুদের গায়ের  চামড়া খুব সুক্ষ্মএবং সহজেই সংক্রমিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। একজিমা একটি খুব সাধারণ চর্মরোগ যেটা বাচ্চাদের খুব অল্প বয়সে হয়ে থাকে যাইহোক, এই ব্যাপারে আরো জানবার আগে একজিমা কী সেটা আগে জানা দরকার। একজিমা হলে চামড়া শুকনো হয়ে যায় ও লাল লাল ফুসকুড়ি হয়, যার ফলে খুব চুলকানি হয়। সাধারণভাবে বলতে গেলে, এটিতে লাল লাল ফুসকুড়ি হয়।

এ বিষয়ে পরস্পরবিরোধী মতামত আছে, কেউ বলে এটি এলার্জির জন্য হয়, আবার অন্যরা বলে এটি বংশানুক্রমিক কারণে হয়ে থাকে । এই রোগটি এতটাই সাধারণ যে একে বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়েছে যেমন ডার্মাটাইটিস, এটপিক একজিমা বা এটপিক ডার্মাটাইটিস।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে পাঁচ বছরের থেকে কম বয়সী বাচ্চাদের একজিমা বেশি হয়ে থাকে। যাইহোক, এখন এটি প্রমাণ হয়ে গেছে যে শুধু বংশানুক্রমিক ব্যাপারটি ছাড়াও, একজিমা হল শুকনো চামড়া ও এলার্জির সমাহার।

বডি একজিমা কি ?

কেন একজিমা হয় তা বোঝার জন্য, আমাদের বুঝতে হবে কোন কারণে এরকম চর্ম-অবস্থা হয়ে থাকে। যে বাচ্চারা এই ব্যাধির শিকার হয়েছে তাদের বেশিরভাগকেই চিকিৎসার ভাষায় বলা হয় এটোপিক ডার্মাটাইটিস বেবিস। . এটোপিকের মানে হল যে বাচ্চাটি বংশানুক্রমিক ভাবে একজিমা, হাঁপানি বা  হে জ্বর হওয়ার প্রবণতা অর্জন করেছে, এবং ডার্মাটাইটিস মানে প্রদাহ।

বাচ্চার জন্মের প্রথম বছরে এই রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি যদিও, এরকম সম্ভাবনা আছে যে ওরা নিজের থেকেই এটি প্রতিরোধ করতে পারে। এই রোগের অন্তর্নিহিত রহস্য হল যে ত্বকের ছিদ্রগুলি ত্বককে শুকিয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারে না। এইভাবেই ত্বক সংক্রমণপ্রবণ হয়ে ওঠে। সংক্রমণটির ফলে বিশেষ করে স্ক্যাল্প, মুখ,পা বা হাতের পিছনে দাগ দেখা যায়। একজিমার কখনো প্রতিকার করা যায় না কিন্তু চিকিৎসার মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্বব।

বাচ্চাদের একজিমা হওয়ার কারণ

একজিমা হওয়ার কারণ নিয়ে গবেষকরা এখনো বিতর্ক করেন। এখানে কিছু সম্ভাব্য কারণ দেওয়া হল:

1. বংশানুক্রমিক ভাবে

বংশানুক্রমিক কারণে ও ইমিউন ব্যাবস্থা ঠিকভাবে কাজ না করার কারণে শিশুদের একজিমা হয়ে থাকে। ত্বকের মধ্যে দিয়ে জল-হাওয়া চলাচল করার ক্ষমতা কম থাকলে  ও পরিবেশে বেশি উন্মুক্ত হলে, ত্বকের এই জ্বালা তৈরি হতে পারে।

2. এর সাথে সম্পর্কিত অসুখগুলি

যদি বাচ্চার পিতা-মাতার হাঁপানি রোগ বা হে জ্বর হয়ে থাকে তাহলে এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই ব্যাপারটি এই তত্বটিকে আরো সমর্থন করছে যে অন্য রোগগুলি একজিমা হবার প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেয়।

3. এলার্জি

এই ব্যাপারটা আমরা সবাই জানি যে একজিমা হল শুস্ক ত্বক ও এলার্জির সম্মেলন। একজিমার গোড়ার দিকের লক্ষণগুলি হল বাচ্চাদের শুস্ক ত্বক ও লাল লাল ফুসকুড়ি হওয়া এবং সেটা মুখ, পা বা হাতে ছড়িয়ে পড়া। এইসব এলার্জি স্তনের দুগ্ধপানের ফলে ছড়িয়ে পড়তে পারে যেখানে মায়ের খাদ্যাভ্যাস দায়ী।

একজিমা প্রধানত বাচ্চার ত্বকের ফাটা অংশগুলিকে প্রভাবিত করে যেখানে শুস্ক ও চুলকানিযুক্ত ত্বক এই ফাটা জায়গাগুলিতে বেশি সমস্যা তৈরি করে। শিশুর প্রতিরোধক ব্যবস্থা কোন এলার্জিতে বেশী প্রতিক্রিয়া দিলেও এরকম হতে পারে। এইরকম সময়ে, যেসব লক্ষণগুলি প্রদর্শিত হয়েছে সেগুলিকে লক্ষ্য করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুদের একজিমার লক্ষণ

শিশুদের একজিমার লক্ষণ

প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ নির্ভর করে বাচ্চার বয়সের উপর। প্রাথমিক লক্ষণগুলি হল মুখের চারপাশের ত্বক শুস্ক হয়ে দাগ হওয়া এবং এর ফলে শিশুর জ্বালা করতে পারে। ফুসকুড়িফেটে গিয়ে রস বেরোনো ও ব্যথা করাও আর একটি লক্ষণ হতে পারে।

খুব চুলকানির কারণে চামড়া শুষ্ক বা শক্ত হয়ে যাওয়াও একজিমার কারণ হতে পারে। যদি আক্রান্ত অঞ্চলে রক্তক্ষরণ হয়, তবে ফুসকুড়িগুলি তীব্র অবস্থায় আছে বলে ধরতে হবে। শুধুমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমেই বলা যেতে পারে যে এটি বংশানুক্রমিক নাকি এলার্জির কারণে হয়েছে। সাধারণভাবে মনে করা হয় যে বাচ্চারা বয়সের সাথে সাথে এটি কাটিয়ে ওঠে। অল্প কয়েকটি লক্ষণ সহজেই বাচ্চাদের মধ্যে সনাক্ত করা যেতে পারে।

যেসব লক্ষণ থেকে বোঝা যায় বাচ্চাটি একজিমাতে ভুগছে সেগুলি হল –

1. ত্বকের উপর ফুসকুড়ি বা ফোস্কা হওয়া

শিশুর ত্বকে লাল লাল ফুসকুড়ি দেখতে পাওয়া যায় যেগুলি ফেটে যায় এবং যেগুলি রুক্ষ হয়

2. ধীরে ধীরে হলুদ রস বের হয়

শুস্ক ত্বকের নিচে হলুদ রস জমা হয় ও বেশিজমলে বের হতে শুরু করে

3. ত্বকের লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া

অনবরত চুলকানো ও আঁচড়ানোর কারণে, ত্বকের রং লাল হয়ে যায়

4. পুঁজ বেরোনোর স্থান তৈরি হওয়া

রক্ত চলাচল না হওয়ার কারণে ত্বকের কিছু অংশে পুঁজ তৈরি হয় যা শিশুকে বেদনা দিতে শুরু করে

5. ফ্লু-এর মতো লক্ষণ

যেহেতু একজিমা ইমিউন ব্যবস্থাকে বেশ কিছুটা প্রভাবিত করে, তাই শিশুর ফ্লু-এর মতো লক্ষণ দেখা যায় যেমন কাশি, হাঁচি ও শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া

যদি ওগুলোর মধ্যে কোনো একটিও দেখা যায়, তাহলে কোনো সময় নষ্ট না করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। চূড়ান্ত অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শই একান্ত কাম্য।

শিশুর একজিমার চিকিৎসা

একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের কাছে পরীক্ষা করলে শিশুর চিকিৎসা সহজ হয়ে যাবে। তাঁরা সামনে থেকে ফুসকুড়িকে পরীক্ষা করবেন ও রোগের ইতিহাস বিশদভাবে জানবেন যাতে বোঝা যায় শিশুটির এমন কোনো রোগ আছে কিনা যার জন্য ওই ফুসকুড়িগুলি বাড়ছে। প্রাথমিকভাবে, তাঁরা হালকা লোশন লাগানোর পরামর্শ দিতে পারেন একজিমা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।

তাঁরা নিম্ন মাত্রার স্টেরয়েড ক্রিম লাগানোর পরামর্শও দিতে পারেন। ফলাফলের উপর নির্ভর করে, তাঁরা প্যাচ পরীক্ষা করতে পারেন যাতে তাঁরা নিশ্চিত করে জানতে পারেন এলার্জির কারণ কী। ভালো খবর হল যে এই রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব কারণ এটি ছড়িয়ে পড়ে না।

ওষুধ ও থেরাপি দেওয়া হয় চুলকানি নিয়ন্ত্রণের জন্য, জ্বালাভাব কমানোর জন্য, নতুন ক্ষত না তৈরি হতে দেওয়ার জন্য ও সংক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল বাচ্চার ত্বককে ময়েশ্চারাইজ বা সিক্ত করে রাখা।

ঘরোয়া প্রতিকার

ঘরোয়া প্রতিকার

উপরে উল্লিখিতগুলি ছাড়াও থেরাপির মাধ্যমের চিকিৎসা, বাচ্চার একজিমার প্রাকৃতিক প্রতিকার যা বাড়িতেই করা যেতে পারে:

  • বাড়িতে পরিস্কার, সুন্দর, শুষ্ক ও ঠান্ডা আবহাওয়া থাকা গুরুত্বপূর্ণ। যদি দরকার হয় তবে বাড়িতে আদ্রতাপূর্ণক যন্ত্র (হিউমিডিফায়ার) লাগানো উচিত যেটি ত্বকের শুকিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করবে।
  • শিশুকে স্নান করানোর জন্যে অথবা কাপড় কাচার জন্য সাবান অথবা কাপড় কাচার সাবান ব্যবহার করা যাবে না, কারণ শিশুর এলার্জি থাকলে এগুলি জ্বলনের কারণ হয়ে উঠবে। স্নানের পরেই ত্বকে ময়শ্চারাইজিং ক্রিম লাগানো যেতে পারে।
  • খুব কম শতাংশে কর্টিসোন যুক্ত ক্রিম ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়। আঁটসাঁট জামাকাপড়, সিন্থেটিক দিয়ে তৈরী কাপড়, ব্যবহার করা চলবে না।
  • আক্রান্ত জায়গাগুলিতে অলিভের তেল বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। খাঁটি এলোভেরার জেল হালকা করে চুলকানির জায়গাতে লাগলে আরাম পাওয়া যায়। এই ধরনের বেশিরভাগ তেলে থাকে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড যেটি ত্বকের অবস্থার উন্নতি ঘটায় ও একজিমার লক্ষণগুলিকে কমায়।

স্থায়ী একজিমার ফুসকুড়ির চিকিৎসা

একজিমার ফুসকুড়ির চিকিৎসা নির্ভর করে ফুসকুড়ির তীব্রতার উপর। যদি ফুসকুড়িগুলি আগেই লক্ষ্য করা যায়, তাহলে শুধু লোশন লাগানোর মাধ্যমে চুলকানি কমানো যেতে পারে। এটি নিশ্চিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে ফুসকুড়িগুলি যেন শুকিয়ে না যায়, নাহলে, চুলকানি থেকে বেশি ঘষা খাওয়ার কারণে চামড়া ফেটে বেরিয়ে আসবে।

ফুসকুড়িগুলিকে শুকিয়ে যাওয়া থেকে আটকানোর জন্য, ঘন ঘন লোশন লাগাতে হবে যেটা পিতা-মাতার দায়িত্ব। একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের লোশনই ব্যবহার করা ভালো যেটি আপনার বাচ্চার জন্য উপযুক্ত।

কিছু ডাক্তার আছেন যারা আন্টি-হিস্টামিন (এলার্জি প্রতিরোধী বড়ি বা তরল) ব্যবহারের উপদেশ দেবেন ঘুম আনার জন্য, কারণ চুলকানির কারণে আপনার বাচ্চার অস্বস্তি হতে পারে। যাইহোক, এগুলি কেবলমাত্র লক্ষণগুলি কমাতে পারে এবং সমস্যার গোড়ায় পৌঁছতে পারে না।

অন্যান্য চিকিৎসার উপায় হল বাচ্চাকে হালকা গরম বা ঠান্ডা জলে স্নান করানো। এর কারণ হলো গরম জল ত্বককে প্রভাবিত করতে পারে ও তাড়াতাড়ি শুকিয়ে ফেলতে পারে। বাচ্চার স্নান হয়ে গেলে, ভেজা ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগানো যেতে পারে কারণ তাহলে সেটি তাড়াতাড়ি শোষিত হবে। তারপর আপনি বাচ্চাটিকে সুতির জামাকাপড় পরিয়ে দিতে পারেন। উল ও মোটা কাপড়ের জামা পরাবেন না, কারণ সেগুলি শরীরের উষ্ণতা বাড়িয়ে দিতে পারে এবং খুব অস্বস্তি হতে পারে।

শিশুর চলাফেরার সময় যখনই তারা কিছু আঁচড়াচ্ছে, তখনই সেটির দিকে মনোযোগ দিন। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ যে তারা যেন  তাদের ত্বক আঁচড়িয়ে আঁচড়িয়ে ব্যাথা না বাড়িয়ে তোলে।

যদি ত্বক ফেটে বেরিয়ে আসে, তাহলে ঠান্ডা কম্প্রেস ব্যবহার করে সেটির বেড়ে যাওয়া দ্রুত কমাতে পারেন।

আবার, বাচ্চাকে 5 থেকে 10 বার পাতলা জীবাণুনাশক রাসায়নিক মিশ্রিত জলে স্নান করানো তীব্র একজিমার উপশমে কার্যকর। দুই চামচ জীবাণুনাশক রাসায়নিক এক গ্যালন জলে মেশান ও তাতে বাচ্চাকে সিক্ত করুন। লক্ষ্য রাখুন যাতে ও সেই জল পান না করে এবং স্নান শেষ হলে সেই জল সঙ্গে সঙ্গে ফেলে দিন। পরিস্কার জলে ধুয়ে ফেলুন যাতে জীবাণুনাশকের গন্ধ না থাকে।

এটোপিক ডার্মাটাইটিস (একজিমা) ও এলার্জি সৃষ্টিকারী খাবার

খাবারে এলার্জি এটোপিক ডার্মাটিটিস-এর কারণ হতে পারে কিনা সে বিষয়ে কিছু পরস্পর বিরোধী মতামত আছে। মতামত গুলি তর্কযোগ্য কিন্তু গবেষকেরা বারবার করে বলছেন, ভালো ফলাফলের জন্য ছয় মাস বয়স পর্যন্ত স্তনপান করাতে। অধিকাংশের মতে, খাবারে এলার্জি ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে উপসর্গগুলি তৈরি করে ও পরিবেশগত বিপদ একটু বড়দের ক্ষেত্রে উপসর্গের কারণ হতে পারে।

এই ব্যাপারে সকলে একমত যে খাবারে এলার্জি ও এটোপিক ডার্মাটাইটিস পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। অনেক গবেষণা দেখিয়েছে যে কিছু খাবার যেমন প্রক্রিয়াজাত ও বাইরের তেল-মশলা জাতীয় খাবার বাচ্চাদের প্রদাহের কারণ হয়। কিছু কিছু খাবার অল্প বয়স্ক শিশুদের সংক্রমণ বাড়িয়ে তোলার জন্য দায়ী হলেও, সময়ের সাথে সাথে এগুলি কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। নিয়মিত সতর্কতার অঙ্গ হিসাবে এলার্জি মূল্যায়ন পরীক্ষা করিয়ে নিতে সব সময় পরামর্শ দেওয়া হয়।

ক্লিনিকাল ভাবে রোগ নির্ণয়ের সঙ্গে রোগ সংক্রান্ত দলিল লক্ষণ এবং একটি খাদ্য আইটেমের মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করবে। আরো ভালো করে বলতে গেলে, কোন খাবার খাওয়ার পর উপসর্গ তৈরি হতে পারে যা পর্যবেক্ষণ যোগ্য। অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী খাবার চিহ্নিত করার জন্য পরীক্ষা এবং ত্রুটির একটি প্রক্রিয়া পরিচালনা করা উচিত।

শিশুদের একজিমা কিভাবে আটকানো যাবে ?

শিশুদের একজিমা কিভাবে আটকানো যাবে ?

শিশুদের একজিমাতে দরকার শুষ্ক ত্বক ও জ্বালাভাবের চিকিৎসা। যেটা আগেই বলা হয়েছে যে, যদি এটা বংশানুক্রমিক কারণে হয়ে থাকে তাহলে একে আটকানো সম্ভব নয়। লক্ষণগুলি বাচ্চার জন্মের এক বছর পরই দেখা দিতে শুরু হয়ে যেতে পারে। এটার বেড়ে যাওয়া রোধ করতে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা প্রস্তাবিত থেরাপি প্রয়োগ করা দরকার। কী কারণে আপনার বাচ্চার এলার্জি হয় তার একটি দলিল (ডাক্তারের সুবিধার জন্য) রাখা গেলে খুব সুবিধা হবে।।

এখানে একজিমা আটকানোর কয়েকটি পদ্ধতি বলা হলো:

  • আপনার বাচ্চার খাদ্যাভ্যাস, একজিমার  আর একটি কারণ হতে পারে, কিন্তু এটি বলা বাহুল্য যে খাদ্যাভ্যাসে যে কোনো রকম পরিবর্তন ডাক্তারের সাথে পরামর্শের পরই করা যাবে। বাড়িতে পরিস্কার ও ধুলোমুক্তো আবহাওয়া রাখা এটি রোধ করতে সব থেকে উপযোগী, কিন্তু এটা একটু কঠিন হতে পারে।
  • যাহোক, চেষ্টা সব সময় করা যেতেই পারে। সিন্থেটিক কাপড় এড়িয়ে চলা উচিত কারণ সুতির কাপড় বাচ্চাদের জন্য সব থেকে ভালো। এটার কারণ হলো উলের কাপড় ত্বকের সাথে ঘষা খেলে আঁচড় লাগতে পারে ও শুষ্কভাব বেড়ে যেতে পারে।
  • ফুসকুড়ি দেখার সাথে সাথে চিকিৎসা করলে সেটি সহজে নিয়ন্ত্রিত হয়। ত্বকের উপরে লাগাবার ক্রিম, তারসাথে বাইরে থেকে লাগানোর স্টেরয়েড, সংক্রামিত স্থানের জ্বালাভাব কমানোর জন্য উপযোগী। এগুলি প্রদাহ বিরোধী পদার্থ এবং এগুলি শিশু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েই ব্যবহার করা উচিত। এটি ত্বকের  কোনোরকম ক্ষতি ছাড়াই একজিমা কমিয়ে দেয় ।
  • কখনো কখনো, একজিমা এলার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থের কারণেও হয়ে থাকে, তাই এই সব পারিপার্শ্বিক এলার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থকে চেনা ও এলার্জি বিশেষজ্ঞ দ্বারা সেগুলিকে প্রতিহত করলে উপকার হতে পারে।

প্রায়শ জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

একজিমা সম্পর্কে বহু প্রশ্নের মধ্যে কয়েকটা হল

1. লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে কি একজিমার ঝুঁকি  বাড়ে বা কমে?

কারোলিন্সকা ইনস্টিটিউট ইন স্টকহোম গবেষণার দ্বারা প্রমাণ করেছে প্রাক-কিশোর বয়সী মেয়েরা সমবয়সী ছেলেদের চেয়ে বেশি সংক্রামিত হওয়ার প্রবণতাযুক্ত।

2. একজিমা ফেটে যাওয়ার কারণ কী?

সঠিক কারণ কী তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। অনেকে বলেন এটি বংশানুক্রমিক, আবার অনেকে বিশ্বাস করেন যে এলার্জি ও পরিবেশগত কারণের ভূমিকা আছে এর পিছনে।

3. এটা কি ছোঁয়াচে ?

না, যেহেতু এটি প্রদাহ সম্পর্কিত, তাই স্পর্শের মাধ্যমে বা অন্যভাবে এটি অন্য ব্যাক্তির দেহে  ছড়িয়ে পারে না।

4. একজিমা যদি সংক্রামক রোগে পরিণত হয়, তাহলে?

ফুসকুড়ি ও সংক্রমিত একজিমার পার্থক্যটা জানা খুব প্রয়োজনীয়। একজিমা সংক্রমিত হয় যখন ছত্রাক সংক্রমিত ও ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের মধ্যে প্রবেশ করে। ক্রমাগত আঁচড়ানোর ফলে সংক্রমণের প্রবলতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি  ফুসকুড়ির অবস্থা আরো খারাপ করে দিতে পারে ও সংক্রমণকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

একজিমার দরকার দ্রুত পরিচর্যা ও  সংক্রমণের প্রবলতার উপর এই পদ্ধতির মূল্যায়ন নির্ভর করে। একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ সংক্রমণের প্রবলতা কমাতে সাহায্য করতে পারেন এবং এর স্থায়িত্বকালকে কমিয়ে দিতে পারেন। তিনি ওষুধ প্রয়োগ করে ও থেরাপির মাধ্যমে, সংক্রমণ যাতে শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে না পড়ে তা দেখবেন। লক্ষ্য করা হয়েছে যে স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস নামের ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু ত্বক ফেটে যাবার মুখ্য কারণ।

ক্ষতর চারপাশে এর উপস্থিতির জন্য, রোগীর আক্রান্ত স্থান আঁচড়ানোর ফলে এটি ফুসকুড়ির মধ্যে প্রবেশ করে। এরকম কিছু হলে, ত্বকের উপর লাগানোর স্টেরয়েড ও আন্টি-ব্যাকটেরিয়াল মলম ব্যবহার করতে বলা হয়। প্রবলতার উপর নির্ভর করে, আরাম দেওয়ার জন্য, মুখ দিয়ে খাওয়ার স্টেরয়েডও দেওয়া হতে পারে।

5. স্টেরয়েড ব্যবহার করা কী আমার শিশুর পক্ষে ক্ষতিকারক?

ওষুধ প্রয়োগ নির্ধারিত পরিমাণের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। যেটা প্যারাসিটামল ব্যবহার করে কমানো সম্ভব তার জন্য এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত নয়, আবার যেখানে এন্টিবায়োটিক কাজ করে, সেখানে স্টেরয়েড কখনো ব্যবহার উচিত নয়। বলা বাহুল্য, শুধুমাত্র শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শেই মুখের মাধ্যমে খাওয়া যায় এমন স্টেরয়েডের প্রয়োগ করা উচিত।

ত্বকের উপর লাগানোর স্টেরয়েডকে সঠিক পরিমাণে দেওয়া হলে সেটি ক্ষতিকর নয়। এটি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে নিজে থেকেই শক্তিশালী ডোজের ওষুধ গ্রহণ না করা উচিত এবং এর ফলে শিশুর নরম ত্বকে অপ্রত্যাশিত ক্ষতি হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটি ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ ভবিষ্যতে যখন দরকার হবে তখন স্টেরয়েড কাঙ্খিত পরিণাম দেবে না।

যদিও একজিমা হবার যথাযথ কারণ এখনো অজানা, কিছু সুনিশ্চিত পদ্ধতির মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যেহেতু এটি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পরে, তাই যত দ্রুতভাবে প্রতিকার শুরু করা যায় শিশুর অস্বস্তি ততো কমানো সম্ভব।