শিশুদের জন্য নীতি শিক্ষা সহ 10 টি অনুপ্রেরণামূলক ভারতীয় পৌরাণিক গল্প

শিশুদের জন্য নীতি শিক্ষা সহ 10 টি অনুপ্রেরণামূলক ভারতীয় পৌরাণিক গল্প

প্রতিটি সংস্কৃতির নিজস্ব কিছু পৌরাণিক কাহিনী থাকে-একগুচ্ছ গল্প যেগুলির মধ্যে বেশ কিছু বীরত্বপূর্ণ চরিত্র,পৌরাণিক জীব-জন্তু,দেবতা,উন্নত প্রযুক্তি এবং অসাধারণ সুন্দর স্থানগুলির বর্ণনা স্থান পায়।যদিও সেগুলির যথাযথতা নিয়ে প্রশ্ন আছে,কিন্তু সেগুলির অস্তিত্ব এবং উপস্থাপনাগুলি মানবজাতি হিসেবে আমাদের অবিশ্বাস্যভাবেই মুগ্ধ করে তোলে।ভারতীয় পৌরাণিকে প্রাচীন গল্পবিন্যাসের এক বিপুল সম্ভার রয়েছে যা উদ্দীপক, চিত্তবিনোদনকারী এবং সর্বোপরি তাদের প্রতিটির পিছনে একটি করে নীতি শিক্ষা রয়েছে।

পৌরাণিক কাহিনীগুলি থেকে শিশুরা কি ধরণের শিক্ষালাভ করে?

পৌরাণিক কাহিনীগুলি এমন একটি উপায়ে শিশুদের নীতি মূল্যবোধের শিক্ষা দেয় যার মধ্যে তাদের আশাতীত আগ্রহ দেখতে পাওয়া যায়।এখানে এমন কিছু বিষয় দেওয়া হল যেগুলি শিশুরা পৌরাণিক কাহিনীগুলি থেকে শিক্ষা লাভ করে আত্মস্থ করতে পারে।

1. খারাপ বনাম ভালর পুনরাবৃত্তি

পৌরাণিক কাহিনীগুলি প্রতিটি সময়ে ভাল কাজের গুরত্বের পুনরাবৃত্তি করে শিশুদের ভাল এবং মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে শেখায়।এটি আবার প্রমাণ করে যে ভাল সর্বদা মন্দকে জয় করে।

2. কল্পনা শক্তির প্রতি আগ্রহ বাড়ায়

উন্নত প্রযুক্তি,রহস্যময় জীবকুল এবং শ্বাসরোধকারী কল্পলোকের সাথে পৌরাণিক কাহিনীর একটি নিজস্ব জগৎ আছে।আর এগুলি সেভাবেই শিশুদের মনকে গড়ে তোলে কারণ তারা প্রতিটি জিনিস সেভাবেই চিন্তা করে,কল্পনা করে যেভাবে তাকে কোনও কিছুর সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে।আবার এই সকল পৌরাণিক কাহিনীগুলির দ্বারা তাদের এটিও দেখানো হয় যে, যদি তোমার একটি সৃজনশীল মন থাকে সেক্ষেত্রে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়।

3. শিশুদের সামনে সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে

ভারতীয় সংস্কৃতিতে প্রায়শই দেখতে পাওয়া রীতি নীতি এবং উৎসবগুলির গুরুত্ব এবং সেগুলির অর্থ শিশুরা জানতে ও শিখতে পারে।পৌরাণিক কাহিনীগুলি তাদের কৌতুহলকে সন্তুষ্ট করে এবং গল্পগুলির প্রতি তাদের মনকে আকৃষ্ট করে তাদের বুঝতে শেখায় যে কেন এই বিষয়গুলি সেভাবেই হয়ে থাকে।

4. সম্মান করতে শেখায়

একই সাথে শৃঙ্খলাবোধ এবং সম্মান হাত ধরাধরি করে আসে।পৌরাণিক কাহিনীগুলি শিশুদের শিক্ষা দেয় কীভাবে বড়দের,শিক্ষকদের এবং সমকক্ষদের শ্রদ্ধা ও সম্মান করতে হয়,ভালবাসতে হয়।এটি শিশুদের আরও ভাল নিয়মানুবর্তিতার মধ্য দিয়ে পরিচালিত করে।

5. ভালবাসার শক্তি প্রদর্শন করে

যদিও ভালবাসা বলতে ছোটদের ক্ষেত্রে বোঝায় তার পরিবার,শিক্ষক এবং ভগবানের প্রতি ভালবাসা,কিন্তু পৌরাণিক কাহিনীগুলি শিশুদের এমন এক ভালবাসার শিক্ষা দেয় যা সকলকে জয় করে আর সকল প্রতিকূলতার বিপরীতে থেকেও তারা যদি সকল মানুষকেই ভালোববাসে তবে সেই সত্যতার চেয়ে বড় আর কিছুই হতে পারে না।

আপনার শিশুদের পড়ার জন্য শ্রেষ্ঠ পৌরাণিক কাহিনী সমগ্র

পৌরাণিক কাহিনীগুলির সাথে আপনার শিশুর পরিচয় করালে তা তাদের সংস্কৃতি,ধর্ম,ভাষা এবং নৈতিক বিশ্বাসগুলি সম্পর্কে জানতে সাহয্য করবে।আপনি আবার আপনার বাচ্চাদের সামনে গল্পগুলিকে সুন্দরভাবে বর্ণনা করে বেশ স্মরণীয় স্মৃতি গড়ে তুলতে পারেন,যা কেবল তাদের কল্পনা শক্তির দক্ষতাকেই বাড়িয়ে তুলবে না,এর পাশাপাশি সেটি আবার তাদের ভাষাগত দক্ষতা এবং নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশেও ভালভাবে সাহায্য করবে।এখানে শিশুদের জন্য ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনীর দশটি গল্পের একটি তালিকা দেওয়া হল যেখানে দশটি ভিন্ন পৌরাণিক চরিত্রের কঠোর পরীক্ষা এবং যন্ত্রণা-দুর্দশার বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে এবং সেগুলিতে এমন কিছু নীতিশিক্ষা রয়েছে যেগুলি থেকে বাস্তব জীবনে শিক্ষালাভ করা যেতে পারে।

1. একলব্যের আত্মোৎসর্গ

একলব্য ছিলেন একজন অল্পবয়সী বালক যিনি তার উপজাতির সাথে গভীর অরণ্যে বসবাস করতেন।তাঁর জীবনের লক্ষ্য ছিল বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ একজন তীরন্দাজ হয়ে ওঠা।যাইহোক,যখন তিনি দ্রোণাচার্যের কাছে গিয়ে তাঁর একজন শিষ্য হতে চাওয়ার অনুরোধ জানান,নিচু জাতে জন্ম হওয়ার কারণ হেতু তিনি দ্রোণাচার্যের কাছে প্রত্যাখ্যিত হন।এতদসত্ত্বেও একলব্য গুরু দ্রোণাচার্যের একটি মূর্তি স্থাপন করেন এবং তাঁর ঐ মূর্তির সামনেই তিনি নিয়মিত তীরন্দাজী অনুশীলন করে চলেন যতদিন না তিনি এ ব্যাপারে অবিশ্বাস্যভাবে পারদর্শী ও দক্ষ হয়ে ওঠেন।যাইহোক,এরপর দ্রোণাচার্য যখন একলব্যের সম্মুখীন হন এবং তাঁর শিক্ষা ও সাফল্য সম্পর্কে অবগত হন, তখন তিনি এই ভেবে ভীত হয়েছিলেন যে এভাবে যদি সে তার অনুশীলন অব্যহত রাখে তবে একটি উপজাতি সম্প্রদায়ের ছেলে হয়েও সে তাঁর প্রিয় ছাত্র অর্জুনকে অচিরেই অতিক্রম করে যাবে।তাই তাঁর নামে শিক্ষা গ্রহণ করার গুরুদক্ষিণা হিসেবে দ্রোণাচার্য একলব্যকে তাঁর নিজের ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলটিকে দান করতে বলেন।দ্রোণাচার্যকে কোনওরকম প্রশ্ন করা ব্যতিতই একলব্য একবাক্যে গুরুর কথায় সম্মতি প্রকাশ করে তৎক্ষণাৎ তাঁর নিজের ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলটিকে কেটে গুরুর চরণের সামনে উৎসর্গ করেন,আর সেই কারণেই তিনি বিশ্ব শ্রেষ্ঠ একজন ধনুর্বিদ হয়ে উঠতে পারেন নি।

নীতি শিক্ষাঃ

এই নীতিগল্পের দ্বরা আপনার শিশুটি কঠোর পরিশ্রম করতে এবং শ্রদ্ধা উৎসর্গ করতে শিখবে বিশেষ করে শিক্ষক এবং নির্দেশকদের।

2. সুরদাসেরভক্তি

সুরদাস ছিলেন ভগবান কৃষ্ণের একজন পরম ভক্ত।তিনি শ্রীকৃষ্ণকে এতটাই ভক্তি করতেন,ভালবাসতেন যে তাঁর প্রতি সম্মানার্থে সুরদাস তাঁকে নিয়ে প্রায় এক লাখেরও বেশি ভক্তিমূলক সঙ্গীত রচনা করেছিলেন।গল্পানুযায়ী,সুরদাস ছিলেন একজন অন্ধ ব্যক্তি,যিনি একদা রাধার পায়ের নূপুরটিকে কুড়িয়ে নিয়েছিলেন,যখন রাধা তাঁকে অনুসরণ করে যাচ্ছিলেন।কিন্তু এরপর যখন রাধা সেটিকে তাঁর কাছে ফেরত চায়,তিনি তা ফেরত দিতে অসম্মত হন এই বলে যে,তিনি অন্ধ হওয়ার কারণে তাঁর কাছে কোনও নিশ্চিত প্রমাণ নেই যে তিনিই রাধা আর সেই নূপুরটি তারই।সেই মুহূর্তে ভগবান কৃষ্ণের আশীর্বাদে তিনি তাঁর দৃষ্টি ফিরে পান,এরপর সুরদাস তাঁর সামনে ভগবান কৃষ্ণকে প্রত্যক্ষ করামাত্র করজোড়ে প্রভুর কাছে তার চোখের দৃষ্টি পুনরায় ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানান।যখন কৃষ্ণ এর কারণ জানতে চান,উত্তরে সুরদাস তাঁকে জানান যে তিনি স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দর্শন পেয়েছেন এবং তিনি এ জগতের আর কিছুই পুনরায় দেখতে চান না।

নীতি শিক্ষাঃ

এই গল্পটি আপনার শিশুকে শিক্ষা দেবে, যেকোনও কিছুকেই শর্ত নিরপেক্ষভাবে ভালবাসতে হয় এবং তাদের বা সেগুলির যত্ন নেওয়ার বিষয়গুলির প্রতি ভক্তি রাখতে হয়।

3. অভিমন্যুর সাহসিকতা

অভিমন্যু ছিলেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে একজন অন্যতম দুর্দান্ত সাহসী যোদ্ধা।যখন তাঁর মা সুভদ্রা তাঁকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন,তাঁর পিতা অর্জুন সেই সময় সুভদ্রার কাছে যুদ্ধে চক্রব্যূহ গঠণের কৌশলটি বর্ণনা করেছিলেন।এবং গর্ভের মধ্য থেকে অভিমুন্য যুদ্ধের সমগ্র কৌশলটিই শুনে শিখেছিলেন কিন্তু সেই চক্রব্যূহ থেকে অর্জুন কীভাবে নিজেকে বাঁচিয়েছিলেন তার ব্যাখ্যা শোনার আগেই গর্ভস্থ অভিমন্যু ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।যুদ্ধের সময়,অভিমন্যু কৌরব বাহিনীর দ্বারা নির্মিত চক্রব্যূহের ভিতরে আটকা পড়েছিলেন। যদিও তিনি সেখান থেকে বেরোতে পারেননি,তবুও তিনি তাঁর বাবা-মা এবং পরিবারের জন্য লড়াই করে জীবনত্যাগ করেছিলেন।

নীতি শিক্ষাঃ

অভিমন্যুর এই ত্যাগ আপনার সন্তানকে শেখাবে পরিবারের প্রতি আনুগত্যবোধ, সাহসিকতা,সম্মান এবং শ্রদ্ধা-ভালোবাসা।

4. শ্রীরামচন্দ্রের সত্যনিষ্ঠা

‘রামায়ণ’ মহাকাব্যের কথা সকলেই জানেন,এই উপাখ্যানে ভগবান বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার শ্রীরামচন্দ্রের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।রামায়ণে রাম তাঁর নিজ রাজ্য অযোধ্যা ছেড়ে তার ভাই লক্ষ্মণ এবং স্ত্রী সীতার সাথে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।তাঁর নির্বাসন পর্বের শেষের দিকে লঙ্কা অধিপতি রাবণ রামচন্দ্রের স্ত্রী সীতাদেবীকে হরণ করে নিয়ে গিয়ে বন্দি করে রেখেছিলেন।সকল ভয়াবহ প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়ে রাম, রাবণ এবং তাঁর বিশাল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের পরাজিত করে স্ত্রীকে উদ্ধার করেছিলেন।

শ্রীরামচন্দ্রের সত্যনিষ্ঠা

নীতি শিক্ষাঃ

এই গল্পের নীতি শিক্ষাটি হল দুই ভাইয়ের এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সততার দৃঢ় বন্ধন থাকা এবং পরস্পরের বিপদে পরস্পরের সঙ্গ না ছাড়া ও একে অপরের সাহায্যের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া।যা আপনার শিশুকে বন্ধুত্ব,সততা এবং ভালবাসার ক্ষেত্রে শিক্ষা দেবে।

5. দেবী দুর্গার পরাক্রমশালীতা

অসুররাজ মহিষাসুর যখন দেবরাজ ইন্দ্রকে পরাস্ত করে স্বর্গে তাঁর রাজ্য দখল করে নিয়েছিলেন,সেই সময়েই সকল দেবাদিদেবের সম্মিলিত ঐশ্বরিক শক্তিতে মহিয়সী দেবী দুর্গার সৃষ্টি হয়েছিল।এরপর তিনি মহিষরূপী দানব মহিষাসুরকে এবং তার সকল সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে বিশ্বকে রক্ষা করেছিলেন।

নীতি শিক্ষাঃ

মা দুর্গার এই রূপের দ্বারা ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের এটি দেখানো হয় যে মহিলারাও প্রচুর সাহস,শক্তি এবং ধার্মিকতার অধিকারী হয়ে থাকেন।

6. প্রহ্লাদের ভক্তি

হিরণ্যকশিপু রাক্ষসের পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন এক বিরাট বিষ্ণু ভক্ত। তবে, তাঁর অহংকারী দাম্ভিক পিতা বিষ্ণুকে তীব্র ঘৃণা করতেন কারণ তিনি ব্রহ্মার কাছ থেকে অমর হওয়ার বর লাভ করায় নিজেকে একজন প্রকৃত ভগবান বলেই মনে করতেন। তিনি প্রহ্লাদকে বহু পদ্ধতিতে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু প্রহ্লাদ সর্বদা বিষ্ণুর আশীর্বাদে জীবন রক্ষা পেতেন।এরপর পুত্র প্রহ্লাদকে হত্যা করার শেষ প্রয়াসের পর বিষ্ণুর অর্ধ মানুষ-অর্ধ সিংহ অবতার নৃসিংহ দ্বারা হিরণ্যকশিপু নিহত হন।

নীতি শিক্ষাঃ

এই গল্পটি শিশুদের বিশ্বাস ও সততা,ভক্তি এবং ধৈর্য্যের মূল্যবোধ সম্পর্কে শিক্ষা দেয়।

7. অর্জুনের একাগ্রতা ও স্থির লক্ষ্য

পাণ্ডবরা যখন অল্প বয়সী ছিলেন,তারা যুদ্ধ গুরু দ্রোণাচার্যের কাছে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতেন।একদিন দ্রোণাচার্য তাঁর শিষ্যদের একাগ্রতা পরীক্ষা করে দেখতে চাইলেন আর সেই কারণে তিনি দূরে একটি গাছ থেকে একটি খেলনা পাখিকে ঝুলিয়ে তার চোখের দিকে সকলকে লক্ষ্য করতে বলেন।এরপর যখন তিনি পান্ডবদের জিজ্ঞাসা করেন যে তারা কি দেখতে পেল?তারা প্রত্যেকে বিভিন্ন ধরণের উত্তর দিয়েছিলেন যেমন পাখি,পাতা,গাছ ইত্যাদি আরও অনেককিছু।একমাত্র অর্জুনই কোনও রূপ স্বরকম্প ব্যতীতই উত্তর দিয়েছিলেন যে তিনি কেবলই পাখির চোখ দেখতে পাচ্ছেন এছাড়া আর কিছুই নয়।উত্তরে দ্রোণাচার্য খুশী হয়ে তাঁকে তীর দিয়ে পাখির চোখ বিদ্ধ করতে বলেছিলেন।

নীতি শিক্ষাঃ

এটি হল দৃঢ় লক্ষ্য এবং একাগ্রতা সম্পর্কিত একটি গল্প যা ছোটদের শিক্ষা দেবে যে তারা কি চায় সেটিকে আগে ঠিক করে জানা,এবং সেই দিকেই স্থির মনযোগ রেখে কাজ করলে সেটি তাদের লক্ষ্য অর্জনে ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।

8. সীতার শক্তিমত্তা

রাম এবং সীতা অযোধ্যা ফিরে আসার পরে, তারা রাজা এবং রানীর মুকুট পরে সিংহাসনে বসেছিলেন এবং একটি সমৃদ্ধ শাসন শুরু করেছিলেন। তবে এরপর ক্রমশই সীতাকে নিয়ে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, যিনি এক অন্য পুরুষ রাবণের সাথে বাস করেছিলেন এ নিয়ে (যদিও এটি ছিল তার ইচ্ছা বিরুদ্ধ)। এই গুজবগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং তাঁর প্রজাদের তাঁর উপর থাকা অবিচল বিশ্বাসের প্রতি আস্থা জানাতে,রাম সীতা দেবীকে বনে নির্বাসন দিয়েছিলেন,আর বনমধ্যে তখন সীতাদেবী বাল্মীকি মুণির আশ্রয়ে ছিলেন।এবং সেখানে যমজ পুত্রের জন্ম দিয়ে সম্পূর্ণরূপে একাকী মা হিসাবে সন্তানদের নিজ হাতে করে বড় করে তুলেছিলেন।

নীতি শিক্ষাঃ

যতই শত্রুতা,বিদ্বেষ এবং অসুবিধার সম্মুখীন হতে হোক না কেন,প্রয়োজনে মহিলারা যে সর্বদাই সে সকল প্রতিকূলতাগুলিই জয় করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত শক্তিশালী,দৃঢ়চেতা সাহসী এবং স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারেন,সেই ব্যাখ্যাই এই গল্পটি থেকে পাওয়া যায়।

9. শ্রবণের আনুগত্য

এক গরীব কিশোর বালক শ্রবণ, তাঁর বাবা-মা অত্যন্ত বৃদ্ধ এবং অন্ধ থাকার কারণে তাদেরকে ভারতের সমস্ত ধর্মীয় স্থানে তীর্থযাত্রায় সহায়তা করত।তিনি একটি বাঁকে দুটি ঝোড়া ঝুলিয়ে তার মধ্যে বৃদ্ধ মা-বাবাকে বসিয়ে নিয়ে কাঁধে করে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বহন করে নিয়ে যেতেন।এরপর একদিন যখন তিনি অযোধ্যা বনের ভিতর দিয়ে অতিক্রম করছিলেন,তখন রাজপুত্র দশরথের নিক্ষেপ করা একটি তীর দ্বারা বিদ্ধ হয়ে তিনি পথিমধ্যেই মারা যান।এমনকি মৃত্যুকালীন শেষ নিশ্বাসের সময়েও তিনি দশরথের কাছে তাঁর তৃষ্ণার্ত মা-বাবার জন্য জল এনে দেওয়ার আর্তি জানান।

নীতি শিক্ষাঃ

এখানে শ্রবণ হলেন দয়া ও আনুগত্যের একজন মূর্ত প্রতীক। এই গল্পটি আপনার সন্তানদের মমত্ববোধের গুণাবলীকে বুঝতে এবং পিতা-মাতার প্রতি অনুগত থেকে তাদের যত্ন নিতে শিখাতে সাহায্য করবে।

10. মন্দোদরীর ধৈর্য্য ক্ষমতা

মন্দোদরী ছিলেন রাবণের স্ত্রী।রাবণ যখন নানা দুষ্কর্ম এবং নিষ্ঠুরতা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনও স্বামীর প্রতি তিনি যথার্থ সম্মান বজায় রাখার সাথে সাথে তাঁর এই সকল নৃসংশতা এবং বর্বরতাগুলিকে উপলব্ধি করানোর জন্য সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন। এমনকি তিনি তাকে সীতা দেবীকে মুক্ত করে দেওয়ার জন্যও অনুরোধ জানিয়েছিলেন, যদিও তাঁর সকল পরামর্শ ও অনুরোধগুলি যেন নিতান্তই এক বধিরের কানে গিয়েছিল এবং এতদসত্ত্বেও শেষ অবধি তিনি স্বামীর প্রতি অনুগত ছিলেন।

নীতি শিক্ষাঃ

এই বিষয়টি আপনার শিশুকে শিক্ষা দেবে কীভাবে প্রিয়জনের প্রতি সদয় থেকে ভালবাসা বজায় রেখে ধৈর্য্য ধরে রাখতে হয়,এমনকি তারা যদি ক্রমাগত একের পর এক ভুল করে থাকেন সেক্ষেত্রেও তাদের প্রতি আস্থা না হারানোর এবং ত্যাগ করে চলে না যাওয়ার প্রতি তাদের মনযোগ আকর্ষণ করবে।কাউকে ভালবাসার অর্থ হল তাকে সমর্থন করাও এমনকি তাদের ক্রিয়াকলাপগুলিকে সমর্থন না করা সত্ত্বেও।

ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনীগুলি রাজনীতি,নৈতিকতা, দর্শন, অভিভাবকত্ব, প্রেম-ভালবাসা, যুদ্ধ এবং ধর্মের অন্তর্নিমিত একই সূত্রের বাঁধনে আবদ্ধ এক জটিল গোলকধাঁধা বিশেষ।

এই অনুপ্রেরণামূলক গল্পগুলি বহু বছর ধরে বহু মানুষকে অনুপ্রাণিত করে আসছে এবং আপনার সন্তানকেও তার আগামী জীবনে একজন সহানুভূতিশীল ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় অনেক গুণাবলী এবং নীতিশিক্ষা দেবে।শিল্প একটি অত্যন্ত সহায়ক মাধ্যম যার মাধ্যমে কোনও শিশু তার নিজস্ব গুণাবলীকে আরও বেশি সুতীক্ষ্ণ করে তোলার দ্বারা বিশ্বকে বুঝতে সমর্থ হতে পারে।নানা ধরণের কলা এবং শিল্পের উপকরণগুলি দিয়ে তার মধ্যে তাদের ব্যস্ত রাখার দ্বারা আপনার সন্তানের বিকাশগুলিকে আরও বেশি উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করে তুলতে পারেন-আর এই উপায়ে,আপনার শিশুটিও তার শারীরিক এবং বৌদ্ধিক দক্ষতাগুলিকে এমনভাবে তীক্ষ্ণ ও ধারালো করে তুলতে পারবে যা বিরক্তিজনক বা ক্লান্তিকর ও একঘেয়ে নয়।