তেনালি রামকৃষ্ণ ছিলেন মহারাজা কৃষ্ণদেব রায়ের দরবারে একজন বিখ্যাত কবি এবং পরামর্শদাতা।তাঁকে আমরা চিনি তার অসাধারণ রসিকতা, কৌতুক–রস বোধ এবং অসামাণ্য বুদ্ধিমত্তার জন্য।তেনালি রামনের সব গল্পতেই আমরা দেখতে পাই তার সঙ্গে রাজা কৃষ্ণদেব রায়ের সম্পর্ক, তার বুদ্ধি এবং তার অসাধারণ সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা।আপনার শিশুকেও আপনি এই গল্পগুলি পড়ে তাকে তেনালি রামনের সঙ্গে পরিচয় করান।
শিশুদের জন্য তেনালি রামকৃষ্ণের ছোটগল্প সমূহ
তেনালি রামনের হাতির গল্পটি হল একটি বুদ্ধির গল্প যেটি হল তার অন্যান্য সকল ভাল গল্পগুলির মধ্যে অন্যতম।এখানে তেনালি রমনের 10 টি মজাদার এবং আকর্ষণীয় গল্প দেওয়া হল যা আপনাকে তেনালি রামনের বুদ্ধির, প্রতিভার এবং সূক্ষ্মবিচারশক্তির পরিচয় দেবে।
1.চোর এবং কুয়ো
একদিন মহারাজ কৃষ্ণদেব রায় যখন জেলখানায় গিয়েছিলেন বন্দীদের দেখতে তখন দুইজন সিঁধেল চোর,যারা মহারাজের বন্দী ছিল, তাঁর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে এবং জানায় যে তারা সিঁধকাটার পারদর্শী এবং বিশেষজ্ঞ,তাই তারা অন্য চোরদের ধরে দিতে মহারাজকে সাহায্য করবে।
মহারাজ একজন দয়ালু ব্যক্তি হওয়ায়, তখনি তার সিপাহীদের আদেশ করলেন তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য, কিন্তু তার জন্য ছিল এক শর্ত।তিনি বললেন যে তিনি তাদের ছেড়ে দেবেন এবং তার গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ করবেন শুধুমাত্র তখনই যদি তারা তাঁর পরামর্শদাতা তেনালি রামনের বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে তার সব মূল্যবান ধনসম্পদ চুরি করে নিয়ে আসতে পারে।চোরগুলি এই শর্তে রাজি হয়ে গেল।
সেই রাত্রিতেই চোর দুটি তেনালি রামনের বাড়ির কাছে গেল এবং কিছু ঝোঁপ–ঝাড়ের পিছনে লুকিয়ে পড়ল।রাত্রে আহারের পর যখন তেনালি একটু পায়চারি করার জন্য তার বাগানে বেরিয়ে এসেছিলেন তখন তিনি ঝোঁপের পিছনে একটু খচমচ আওয়াজ শুনতে পেলেন আর তখনি বুঝে গেলেন যে তার বাগানে চোর ঢুকেছে।
কিছুক্ষণ পরে তিনি তাঁর ঘরে ঢুকে তার স্ত্রীকে চেঁচিয়ে বললেন যে তাদেরকে এখন তাদের মূল্যবান ধন সম্পদগুলি ভালো ভাবে আগলে রাখতে হবে কারণ দু্টি চোর তাদের বাগানে ঢুকে সেগুলি হাতড়াবার ধান্দায় আছে।তিনি তখনই তার স্ত্রীকে বললেন যে তাদের সঙ্কল সোনা এবং রুপোর মুদ্রাগুলি একটি বড় ট্রাঙ্কের মধ্যে ভোরে ফেলতে।চোর গুলি তেনালি এবং তার স্ত্রীর সমগ্র কথোপকথনটি শুনতে পেল।
তার কিছুক্ষণ পর তেনালি সেই বড় ট্রাঙ্কটিকে বাড়ির পিছনের দিকের আঙিনার কুয়োটির কাছে নিয়ে গেলেন আর সেটিকে কুঁয়োর মধ্যে ফেলে দিলেন।চোরগুলি সেটি সবই দেখলো।তারপর তেনালি যখনই তাঁর ঘরের ভিতর ঢুকে গেলেন,তখনই সেই সিঁধেল চোর গুলি বেরিয়ে এসে কুয়োটির কাছে গিয়ে সেখান থেকে জল তুলতে লাগলো।তারপর তারা সারা রাত্রি ধরেই সেই জল তুলে গেল।অবশেষে অনেক কষ্টে উষালগ্নে তারা সেই বাক্সটি উপরে তুলে আনতে সক্ষম হয়েছিল কিন্তু সেটি খুলে তারা যা দেখল তাতে কেবল বিস্মিতই হয়ে উঠল, ট্রাঙ্কটিতে আর কিছুই নয় কেবল নাকি পাথরেই পূর্ণ ছিল।ঠিক সেই সময় তেনালি তার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে চোর গুলিকে ধন্যবাদ জানালেন তাকে শান্তিতে ঘুমোতে দেওয়ার জন্য এবং তার গাছগুলিকে রাত–ভোর ধরে জল দেওয়ার জন্য।চোর দুটি বুঝতে পারল যে তেনালি তাদের বোকা বানিয়েছেন।তারপর চোরগুলি তেনালির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তেনালিও তাদের ছেড়ে দেযন।
নীতিকথা
এই গল্পের নীতিকথাটি হল কারুরই কখনও মিথ্যা দাবি গ্রহণ করা উচিত নয়।
2.লোভী ব্রাহ্মণ
মহারাজা কৃষ্ণদেব রায়ের মা ছিলেন একজন অত্যন্ত ধার্মিক মহিলা।একদিন সকালে তিনি রাজ দরবারে এসে রাজাকে বললেন যে তিনি ব্রাহ্মণদের তারপরের দিন পাকা আম দিতে চান। রাজামশাই উপস্থিত সকল পরিচারকবৃন্দকে তাঁর মায়ের জন্য পাকা আম নিয়ে আসার আদেশ দিলেন।কিন্তু সেই রাত্রেই রাজামশাই–এর মা মারা গেলেন। রাজামশাই দুঃখে ভেঙে পড়েন কিন্তু তাঁর মায়ের শেষ ইচ্ছার কথা তাঁর স্মরণে থাকে।
রাজামশাই প্রয়োজনীয় সকল ধার্মিক রীতি রেওয়াজ এবং শেষকৃত্য পালন করলেন। এবং একদম শেষদিনে রাজামশাই কয়েকজন ব্রাহ্মণদের ডাকলেন ও তাঁর মায়ের শেষ ইচ্ছা পালন করার একটি উপায়ের জন্য তাদের থেকে একটি পরামর্শ চাইলেন।তবে ব্রাহ্মণগুলি ছিল অত্যন্ত লোভী।এরপর একটি আলোচনার পর তারা রাজামশাইকে জানালেন যে তাঁর মায়ের আত্মা শান্তি পাবে শুধুমাত্র তখনই যদি রাজামশাই তাদের প্রত্যেককে একটি করে সোনার তৈরী আম দেন।
তার পরের দিন সকালে রাজামশাই সেই সকল ব্রাহ্মণদের ডেকে পাঠালেন তাদের সোনার তৈরী আম দান করতে।তেনালি রামন তা শুনতে পেলেন এবং তখনই বুঝতে পারলেন যে ব্রাহ্মণগুলি হল অত্যন্ত লোভী।তাই তাদের একটি শিক্ষা দেওয়ার জন্য তেনালি ব্রাহ্মণদেরকে তাঁর বাড়িতে আমন্ত্রণ জানালেন।
রাজা মশাইয়ের কাছ থেকে সোনার আমগুলি পেয়ে তারা ভীষণ খুশি হন এবং তারপর তারা তেনালির বাড়িতে যান এটি ভেবে যে তেনালিও হয়ত তাদের দান করার জন্য ভালো কিছুর আয়োজন করে রেখেছেন।কিন্তু যখন তারা তেনালির ঘরে প্রবেশ করলেন তখন তারা তেনালিকে একটি গরম লোহার ডান্ডা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন।
এই দেখে ব্রাহ্মণেরা বিস্মিত হয়ে ওঠেন।তেনালি তখন তাঁদের জানান যে তাঁর মা বাত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন।তিনি সবসময় চাইতেন গরম লোহার ডান্ডা দিয়ে তার পা দুটি পুড়িয়ে ফেলতে যাতে তার যন্ত্রণা কিছুটা লাঘব হয়।তাই তেনালিও চান এই সকল ব্রাহ্মণদের পা গুলিকে পুড়িয়ে দিতে, যাতে তাঁর মার আত্মা শান্তিতে বিশ্রাম নিতে পারে।
ব্রাহ্মণেরা বুঝতে পারলেন তেনালির চালাকিটা।লজ্জিত হয়ে তারা তেনালিকে রাজার দেওয়া সব সোনার আমগুলি ফেরৎ দিয়েতসেখান থেকে পালিয়ে গেলেন।তেনালি তখন সেই সকল সোনার আমগুলি নিয়ে রাজাকে ফেরত দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে কেমন করে ব্রাহ্মণরা রাজামশাইকে বোকা বানিয়েছিলেন।
নীতিকথা
লোভী হওয়া কখনই উচিত নয় এবং তাদের নিজস্ব যা সংস্থান আছে তাতেই খুশি হওয়া উচিত।
3.তেনালি রামন এবং অভিশপ্ত মানুষটি
বিজয়নগর রাজ্যে এক সময় একজন মানুষ বাস করতেন যার নাম ছিল রাময়া।
তাকে শহরের সব লোকজনেরা অশুভ বা অপয়া বলে মনে করত।তারা মনে করতো যে সকালে উঠে প্রথমেই যদি কেউ তার মুখ দেখে তবে তার সারাটা দিন অশুভ হয়ে যাবে এবং তারা সারাদিন ধরে আর কিছুই খেতে পারবে না।
আর এই গল্পটি রাজামশাই–এর কানে গিয়েও পৌঁছেছিল।সত্যটি জানার জন্য রাজামশাই রামায়াকে তাঁর প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেন।তখন রাজামশাই তার সকল পরিচারক বৃন্দকে আজ্ঞা দিলেন যে রাময়ার জন্য থাকার সকল ব্যবস্থা যেন মহারাজের ঘরের ঠিক পাশেই হয়।তার পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রাজামশাই অন্য কারুর মুখ দর্শন না করে প্রথমেই রাময়ার ঘরে ঢুকেছিলেন তার মুখ দেখার জন্য।
তারপর সেদিন দুপুর বেলায় যখন রাজামশাই খেতে বসেছিলেন তখন তিনি কিছুই খেতে পারছিলেন না কারণ তার খালার উপর একটি মাছি ঘুরঘুর করছিল।তিনি তাঁর রাঁধুনিকে হেঁকে পুনরায় তাঁর জন্য মধ্যাহ্নভোজ প্রস্তুত করার আদেশ দিলেন।সময়ের মধ্যেই পুনরায় মধ্যাহ্নের আহার রাজামশাইয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল, কিন্তু মহারাজ কৃষ্ণদেব রায়ের কোনও কিছুই মুখে রুচি লাগল না।আর সেই কারণে তিনি সেই দুপুরে কিছুই খেতে না পারার দরুণ কোনও কাজেও তিনি মন লাগাতে পারলেন না।তখনই তিনি উপলব্ধি করলেন যে সাধারণ মানুষজন সেই লোকটি সম্পর্কে যা ধারণা করে সেটি বাস্তবিকই সঠিক।তখন রাজামশাই ঠিক করলেন যে তার মতন একজন অশুভ এবং অপদার্থ লোক তার রাজ্যে বাস করতে পারে না আর সেই জন্যই তিনি তার সৈন্যদের আদেশ দিলেন রাময়াকে ফাঁসিতে ঝোলাতে।রাজামশাই-এর সৈন্যরা তাকে ফাঁসিতে ঝোলাতে চাইছিল না কিন্তু রাজামশাই–এর আদেশ অমান্য করার সাহসও তাদের ছিল না।
স্বামীর শাস্তির কথা শুনে রাময়ার স্ত্রী তেনালির কাছে সাহায্যের জন্য ছুটে যান।চোখে অশ্রুধারা বইয়ে গভীর দুঃখের সহিত তার সকল দুর্দশার কথাই তিনি তেনালির কাছে বলেন।
তার পরের দিন সকালে যখন রাজামশাই–এর সৈন্যরা রাময়াকে ফাঁসিতে ঝোলাতে নিয়ে যাচ্ছিল তখন তাদের সঙ্গে পথে তেনালির দেখা হয়।তেনালি তখন রাময়ার কানে ফিসফিস করে কিছু কথা বলে চলে যান।ফাঁসিতে ঝোলানোর পূর্বে সৈন্যরা যখন তার কাছে তার শেষ ইচ্ছার কথা জানতে চাইলো তখন সে জানায় যে সে রাজার কাছে একটি চিঠি পাঠাতে চায়।
তারপর রাজামশাই–এর একজন প্রহরী এসে রাজা মশাইকে একটা চিঠি হস্তান্তর করেন যাতে লেখা ছিল যে, যদি আমার মুখ দেখে কোনও একজন মানুষের সারাদিনের ক্ষিধা চলে যায় আর সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই রাজামশাই–এর মুখ দেখলে একজনকে ফাঁসিতে ঝুলতে হয় সেক্ষেত্রে তাহলে কে বেশি অশুভ- সে নাকি রাজামশাই? রাজামশাই বুঝতে পারলেন যে রাময়া কি বলতে চাইছে এবং তাকে তিনি তখনই মুক্তি দিলেন।
নীতিকথা
কুসংস্কারে কখনো বিশ্বাস করবে না।
4.একমুঠো ধান অথবা এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা
বিজয়নগরের রাজ্যে বিদ্যুলতা নামে একজন মহিলা বাস করতেন।চারুকলায় তার নিজের কৃতিত্বের জন্য তিনি অত্যন্ত গর্বিত এবং অহংকারীও ছিলেন।একদিন তিনি তার বাড়ির সামনে একটি কাষ্ঠ ফলক লাগালেন, যার উপর লেখা ছিল যে এই গৃহে বাসকারী মহিলাটিকে বুদ্ধিতে, চাতুরীতে, জ্ঞানে এবং প্রাচীন বইগুলি সম্পর্কে জ্ঞান ভাণ্ডারে যে হারাতে পারবে তাকে তিনি এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা প্রদান করবেন।।অনেক পণ্ডিতেরা অংশ গ্রহণ করেছিলেন সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কিন্তু কেউই তাকে হারাতে পারেননি।
এভাবে অনেকদিন কেটে যায় কিন্তু কেউওই তাকে হারাতে পারে না।একদিন এক ব্যক্তি আগুন জ্বালানোর কাঠ বিক্রি করার জন্য ঠিক তার বাড়ির বাইরে উচ্চস্বরে হাঁক দিচ্ছিল।খানিকক্ষণ এরকম হওয়ার পর বিদ্যুলতা বিরক্ত হয়ে উঠে বাইরে বেরিয়ে আসেন এবং সেই বিক্রেতাকে বলেন যে তা্র কাছে আগুন জ্বালাবার কাঠগুলি বিক্রি করে দিতে।জ্বালানির কাঠ বিক্রেতাটি তখন তার কথা শুনে জানায় যে সে সেই কাঠগুলিকে টাকার বদলে বেচতে চায় না কেবল ধানের বদলেই বেচবে। বিদ্যুলতা রাজী হন এবং তাকে সেইসব কাঠ গুলিকে তার বারান্দায় রেখে দিতে বলেন।তখন সেই ব্যক্তিটি জোর দিয়ে বলতে থাকে যে সে তাকে আসলে যা বলেছিল তিনি তা বুঝতেই পারেন নি।সে তারপর এটাও বলেছিল যে যদি বিদ্যুৎলতা এক মুঠো ধানের যথার্থ মূল্য না দিতে পারে তাহলে তাকে অবশ্যই 1000 সোনার মুদ্রাও দিয়ে দিতে হবে এবং সেই কাষ্ঠফলকটিকেও খুলে ফেলতে হবে যেটিতে বলা হয়েছিল যে নানা লোকেরা একটি বুদ্ধিদীপ্ত ঝগড়ার জন্য তার কাছে আসে।বিদ্যুৎলতা রেগে গিয়ে বললেন যে “একই বোকার মতন কথা বলছো?”
তখন সেই কাঠ বিক্রেতাটি বললেন যে তিনি বোকার মতন কথা বলছেন না এবং সে যা বলতে চেয়েছিল বিদ্যুৎলতা সেটি বুঝতে অসমর্থ হয়েছে, এবং বাক–যুদ্ধে তিনি হেরে গিয়েছেন।
যখন বিদ্যুৎলতা এই কথাটি শুনলেন তখন তিনি অত্যন্ত রেগে গেলেন।তারপর একটি ঝগড়ার পর বিদ্যুৎলতা রেগে গিয়ে সেখানকার স্থানীয় আদালতে গিয়ে নালিশ জানালেন।তারপর বিচারক বিদ্যুৎলতার কথা শুনলেন।এবং তিনি কাঠ বিক্রেতাটিকে তার বক্তব্য জিজ্ঞাসা করলেন।তিনি তখন বিচারককে বলেন যে তিনি বিদ্যুলতার কাছ থেকে জ্বালানির কাঠের পরিবর্তে একমুঠো ধান চেয়েছিলেন অর্থাৎ ততখানি ধান যাতে তার হাত ভরে যাবে।যেহেতু তিনি এই সামান্য জিনিসটিকেই বুঝতে পারেননি তাই তিনি ততখানি বুদ্ধিমতী নন যতখানি তিনি নিজেকে মনে করেন এবং তাই তিনি তার বাড়ির সামনে থেকে সেই নোটিশ বোর্ডটিকে যেন সরিয়ে দেন।
বিচারক সেই কাঠ বিক্রেতার উপর খুশি হলেন তার বুদ্ধির জন্য এবং বিদ্যুৎলতাকে 1000 স্বর্ণমুদ্র দিতে এবং তার বাড়ির বাইরে নোটিশ বোর্ডটিকে সরিয়ে দেওয়ার আদেশ দিলেন।
আসলে তেনালি রামন একজন কাঠ বিক্রেতার ছদ্মবেশে এসেছিলেন বিদ্যুৎলতাকে একটি শিক্ষা দিতে।
নীতিকথা
আপনার কৃতিত্ব এবং বুদ্ধির ব্যাপারে আপনার বিনীত হওয়া উচিত।
5.উপহার এবং শাস্তি
যখন তেনালি রামন প্রথম হাম্পিতে এসেছিলেন তিনি মহারাজা কৃষ্ণদেব রায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন।তার স্ত্রীকে একটি মন্দিরে বসিয়ে রেখে তিনি দৌড়ে গেলেন রাজামশাই–এর দরবারে তার সঙ্গে দেখা করতে।যখন তিনি রাজার দরবারের ঠিক বাইরে এসেছিলেন তখন রাজা সিপাহীরা তাকে প্রবেশ করতে বাধা দেয়।
তখন তেনালি রামন তাকে বললেন যে তিনি মহারাজা কৃষ্ণদেব রায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন কারণ তিনি শুনেছিলেন যে রাজা কৃষ্ণদেব রায় একজন দয়ালু এবং মহৎ ব্যক্তি।তখন তিনি এও বললেন যে যেহেতু তিনি অনেক দূর থেকে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তখন মহারাজা তাকে কিছু না কিছু উপহার নিশ্চিত দেবেন।সে কথা শুনে সিপাহীটি তেনালি কে জিজ্ঞাসা করলো যে তাকে যদি মহারাজ কিছু উপহার দেন তাহলে সিপাহী কি পাবে? তেনালি তখন সিপাহীটিকে বললেন যে তিনি যাই পান না কেন তিনি সিপাহীটিকে তার অর্ধেক ভাগ দেবেন।তারপর সিপাহীটি তেনালি কে প্রবেশ করার ছাড়পত্র দিয়ে দেয়।
যখন তেনালি রাজামশাই–এর দরবারে ঢুকতে যাচ্ছিলেন তখন অন্য আরেকজন প্রহরী তাঁকে বাধা দেয়।তেনালি তাকেও প্রতিশ্রুতি দিয়ে বললেন যে তিনি যা পাবেন তার অর্ধেক তাকে দিয়ে দেবেন।এই কথা শুনে সেই প্রহরীটিও তাকে দরবারে প্রবেশ করতে দিল।
যখন তেনালি রাজার দরবারে প্রবেশ করে ফেলেছিলেন তখন তিনি তাঁর দিকে দৌড়ে যান।এটি দেখে রাজামশাই অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন এবং তার সিপাহীদের বলেন যে তাকে পঞ্চাশ ঘা চাবুক মাতে।তারপর তেনালি হাত জোড় করে রাজামশাইকে বললেন যে সেই উপহারটি তার দুজন সিপাহীদের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে যারা তাকে রাজামশাই–এর দরবারে ঢুকতে সাহায্য করেছিলেন।এই কথা শুনে রাজা মশাই তার সিপাহীদের আদেশ দেন যে সেই দুজন প্রহরীর প্রত্যেককেই পঞ্চাশ ঘা করে বেত দিতে।
রাজামশাই তেনালির উপস্থিত বুদ্ধির এবং জ্ঞানের প্রশংসা করলেন এবং তাকে মূল্যবান বস্ত্রাদি যৌতুক দান করেন ও তার দরবারে বিদূষক হিসেবে বেছে নেন।
নীতিকথা
লোভে পাপ,পাপে মৃত্যু
6.গাধার প্রতি রামনের অভিবাদন
কৃষ্ণদেব রায়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তত্তচার্য যিনি বৈষ্ণব ছিলেন এবং বিষ্ণুকে পূজা করতেন।তিনি স্মার্তদের অপছন্দ করতেন কারণ তারা ছিল শ্রী আদি শঙ্করাচার্যের ভক্ত।
যেহেতু তিনি স্মার্তদের নিচু চোখে দেখতেন তাই তিনি সবসময় বাইরে বেরোলে তার মুখটিকে একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতেন যাতে তাকে কোন স্মার্তের মুখ দেখতে না হয়।সকলে এমনকি রাজামশাইও এই কাজটিকে অপছন্দ করতেন।সেই জন্যে সাধারণ মানুষজন এবং রাজাও তেনালিকে বললেন এই সমস্যার সমাধান করতে।
সেই জন্যে তেনালি সকলের বার্তা শুনে তত্তচার্যের বাড়িতে গেলেন তাকে দেখা দিতে।তারপর তেনালি কে দেখামাত্র তিনি আবার নিজের মুখ ঢাকা দিলেন।তা দেখে তেনালি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে কেন তিনি তার মুখ ঢাকছেন তার নিজের শিষ্যের সামনে।উত্তরে তত্তচার্য তাকে বললেন যে স্মার্তরা হল পাপিষ্ট এবং তিনি যদি তাদের মুখ দেখে নেন তাহলে তিনি পরের জন্মে গাধা হয়ে জন্মাবেন।এই কথা শুনে তেনালি তাকে একটি শিক্ষা দেওয়ার জন্য ফন্দি আঁটলেন।
তার কিছুদিন পর তেনালি রাজামশাই,তত্তচার্য এবং অন্যান্য সভাসদদের সঙ্গে নিয়ে একটি বনোভজনে গিয়েছিলেন।যখন তারা ফিরছিলেন তখন তেনালি কয়েকটি গাধা রাস্তার উপর দেখতে পেলেন।তাদের দেখে তেনালি ছুটে গিয়েছিলেন এবং হাঁটু মুড়ে বসে তাদের নমস্কার করলেন।
সকলে, এমনকি রাজামশাইও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।তখন রাজামশাই তেনালিকে জিজ্ঞাসা করলেন যে তিনি কেন সেই কাজটি করছেন?তেনালি তখন রাজামশাইকে বললেন যে তিনি তত্তচার্য এর পূর্বপুরুষদের প্রণাম এবং শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন যারা স্মার্তদের দিকে তাকিয়ে পরের জন্মে গাধা হয়ে গেছেন।
তখন রাজামশাই তেনালি বুদ্ধির প্রশংসা করলেন আর তত্তচার্য লজ্জিত হলেন।তারপর থেকে তিনি আর কখনো তাঁর মুখে চাপা দিতেন না।
নীতিকথা
ধর্ম এবং জাতির উপর নির্ভর করে কখনও মানুষকে বিচার করবে না।
7.তেনালি রামনের ইচ্ছা একটি কুকুরকে গরুতে পরিণত করার
একদিন সকালে রাজা কৃষ্ণদেবা রায় ঘুম থেকে উঠলেন এবং ঝিমুনি অবস্থায় তার সেবককে ডেকে বললেন তার নাপিত কে ডেকে দিতে।যখন নাপিত এল তখন রাজামশাই তার নিজের চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।
নাপিত তাকে বিরক্ত করতে চায়নি।তাই সে চুপচাপ এবং দক্ষতার সঙ্গে রাজামশাই–এর চুল কেটে দিলেন এবং দাড়িও কামিয়ে দিলেন এমন ভাবে যাতে রাজামশাই–এর ঘুম না ভাঙ্গে।যখন রাজামশাই ঘুম থেকে উঠলেন তখন তিনি নাপিত কে না দেখতে পেয়ে রেগে যান এবং তার সেবককে বললেন তখনই নাপিতকে ডেকে দিতে।
যখন রাজার সেবক বেরিয়ে গেলেন তখনই রাজামশাই তার থুতনি এবং গালগুলি বুঝতে পারলেন এবং দেখলেন যে সেটি পুরো পরিষ্কার।তখন রাজামশাই আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন এবং বুঝতে পারলেন যে নাপিতটি তার কাজ করে দিয়েছে রাজামশাইকে ঘুম থেকে না ডেকেই।
যখন নাপিত এল তখন রাজামশাই তার অনেক প্রশংসা করলেন তার কাজের জন্য এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে সে তার উপহার হিসেবে কি চায়।নাপিতটি রাজামশাইকে বললেন যে সে ব্রাহ্মণ হতে চায়।রাজামশাই সেই অদ্ভুত ইচ্ছা শুনে আঁতকে উঠলেন।কিন্তু যেহেতু রাজামশাই তার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি তার যে কোনো ইচ্ছা পূরণ করবেন তাই রাজামশাই কয়েকজন ব্রাহ্মণদের ডেকে পাঠালেন এবং তার অদ্ভুত ইচ্ছার কথা তাদের জানালেন।ব্রাহ্মণেরা তাতে রাজি হয়ে গেলেন কারণ রাজামশাই তাদের পুরস্কার হিসাবে মুদ্রা প্রদানে সম্মত হয়েছিলেন।
সেই নাপিতের ইচ্ছা বিজয়নগরের অন্য ব্রাহ্মণরা ভালভাবে মেনে নিতে পারলেন না কিন্তু তারা রাজার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারলেন না শাস্তির ভয়ে।তাই এই ব্যাপারে সাহায্যের জন্য তারা তেনালি রামান এর কাছে গেলেন।
তার পরের দিন সকালে যখন নাপিতকে নদীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল মন্ত্র পরিয়ে তার জাত পাল্টানোর জন্য তখন রাজামশাই যিনি বসেছিলেন সেই অনুষ্ঠানটিকে দেখবেন বলে দেখলেন যে খানিক দূরে তেনালি একটি কুকুর নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তা দেখে রাজামশাই তেনালির কাছে গিয়ে তাকে প্রশ্ন করলেন যে তিনি কি করতে চাইছেন? এর উত্তরে তেনালি বলেন যে তিনি সেই কুকুরটিকে একটি গরুতে পরিণত করতে চাইছেন।
এই শুনে রাজামশাই খুব হাঁসতে শুরু করলেন।আর তিনি তেনালিকে বললেন যে সে কী প্রচণ্ড বোকারমত চিন্তা শুরু করেছে।তখন তার উত্তরে তেনালি রাজামশাইকে জানান যে যদি একজন নাপিতকে একজন ব্রাহ্মণে রূপান্তরিত করা যেতে পারে তবে একটি কুকুরকে কেন গরু করা যেতে পারে না?
তখন রাজামশাই বুঝে গেলেন তেনালি তাকে কি বোঝাতে চাইছিলেন।তখন রাজামশাই মুচিটিকে বললেন যে তাঁর পক্ষে তাকে একটি ব্রাহ্মণে পরিণত করা কিছুতেই সম্ভব নয় এবং সেীর পরিবর্তে রাজামশাইয়ের কাছে অন্য কিছুর ইচ্ছা প্রকাশ করুক।
নীতিকথা
তুমি একটি মানুষের বাইরের রূপটিকে পাল্টাতে পারবে কিন্তু তার ভিতরে চরিত্র একই রয়ে যায়।
8.সব থেকে বড় বোকা
মহারাজা কৃষ্ণদেব রায়ের বড় ঘোড়ার শখ ছিল এবং তার আস্তাবলে কয়েকটি সেরা জাতের ঘোড়া ছিল।
একদিন আরব থেকে আসা এক ঘোড়া ব্যবসায়ী কৃষ্ণদেব রায়ের দরবারে এসে হাজির হলেন এবং তাঁকে জানালেন যে তার কাছে আরো অনেকগুলি ভালো ভালো জাতের আরবের ঘোড়া আছে বিক্রির জন্য।তখন তিনি মহারাজাকে আমন্ত্রণ জানালেন তার নিজের ঘোড়াটিকে দেখাবার জন্য যেটি সে তার সাথে নিয়ে এসেছিল।এবং যদি তিনি সেটিকে পছন্দ করেন তাহলে তিনি আরো অনেকগুলি ঘোড়া তার জন্য নিয়ে আসবেন।
মহারাজের সেই সবকটা ঘোড়াই পছন্দ হয়ে গেল এবং তাকে বললেন যে তার সবকটা ঘোড়াই চাই।মহারাজ তাকে 5000 সোনার মুদ্রা দিলেন অগ্রিম হিসেবে এবং ঘোড়া বিক্রেতাটি বললেন যে তিনি বাকি ঘোড়াগুলিকে নিয়ে আর দু দিনের মধ্যে ফিরে আসবেন।
দু দিন কেটে গেল তারপর দুই সপ্তাহও কিন্তু ঘোড়া বিক্রেতাটি ফিরে এলেন না।তখন রাজামশাই আরো চিন্তিত হয়ে পড়লেন।তাই একদিন সন্ধায় তার মস্তিষ্ককে একটু শান্তি দেওয়ার জন্য ঠিক করলেন যে তিনি তার বাগানে খানিকক্ষণ হাঁটবেন।সেখানে তিনি তেনালি কে একটি কাগজে কিছু লিখতে দেখলেন।তখন রাজামশাই তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন যে তিনি কি লিখছিলেন।তিনি কোন উত্তর দিলেন না।তখন রাজামশাই তাকে আরো অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে শুরু করেন।তারপর তেনালি রাজার দিকে চোখ তুলে বললেন যে সেই রাজ্যে যত বড় বড় বোকার বাস কতিনি তাদের তালিকা বানাচ্ছেন।
তখন রাজামশাই তার কাছ থেকে কাগজটি নিয়ে দেখেন যে তার নাম সবার উপরে লেখা ছিল।তখন তিনি তেনালির উপর রেগে গিয়ে বললেন যে তাকে তা বুঝিয়ে দিতে।তখন তেনালী উত্তর দিলেন যে একজন মানুষ যিনি 5000 স্বর্ণ মুদ্রা দিয়ে দেন একটি অচেনা লোককে তিনি হলেন একজন বড় বোকা।তারপর রাজামশাই তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে যদি তিনি ফিরে আসেন সেই ঘোড়াগুলিকে নিয়ে।তার উত্তরে তিনি বললেন যে যদি তিনি ফিরে আসেন তাহলে সেই ঘোড়া বিক্রেতাটি হবে আরও বড় বোকা।তাহলে তেনালি রাজামশাই-এর নামের বদলে তার নামটি সেখানে লিখে দেবেন।
নীতিকথা
কখনো অচেনা লোকের উপর ভরসা করবে না।
9.রাজামশাই–এর স্বপ্ন
একদিন সকালবেলা কৃষ্ণদেব রায় কে অনেক চিন্তিত দেখা গেল।তেনালি তখন রাজা মশাই কে জিজ্ঞেস করলেন যে কেন তাকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে। তার উত্তরে রাজামশাই বললেন যে তিনি একটি স্বপ্ন দেখেছেন যেটি তাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। তেনালি তার স্বপ্নের ব্যাপারে রাজামশাইকে আরো অনেক প্রশ্ন করতে লাগলেন।
তখন রাজামশাই উত্তর দিলেন যে তিনি মেঘের মধ্যে ভেসে থাকা একটি অপূর্ব রাজপ্রাসাদের স্বপ্ন দেখছিলেন।সেটি তৈরি হয়েছিল দামী দামী পাথর এবং অসাধারণ বাগান দিয়ে।আর ঠিক তখনই রাজামশাই–এর ঘুমটি শেষ হলো এবং তিনি কিছুতেই সেটি ভুলে যেতে পারছিলেন না।
তেনালি যখন সেই স্বপ্নের নিরর্থকতা রাজা মশাইকে বলতে যাচ্ছিলেন তখন চতুর পন্ডিত নামে আরেকজন মহারাজা কৃষ্ণদেব রায়ের মন্ত্রী বললেন যে তিনি তাঁর স্বপ্নকে সত্যি করে তুলবেন।চতুর পণ্ডিত ছিলেন একজন বুদ্ধিমান মানুষ এবং তার কাছে অনেক উপায় ছিল যা দিয়ে তিনি মহারাজকে দিয়ে তেমন একটি রাজ প্রাসাদ বানিয়ে ছাড়বেন এবং তার পকেট ভরার সুযোগও নিয়ে নেবেন।
তেনালি চতুর পন্ডিতের ধূর্ত বুদ্ধিটি বুঝতে পারলেন কিন্তু সেই মুহূর্তে এর বিরুদ্ধে কিছু বললেন না।তখন রাজামশাই চতুর কে সেই কাজটি তারপরের দিন থেকেই শুরু করতে বললেন।
অনেক দিন চলে গেল এবং যখনই রাজামশাই সেই কাজটি সম্পর্কে চতুরকে কিছু জিজ্ঞাসা করেন তখনই চতুর নানা রকম ছুতো বের করেন এবং তার স্বপ্ন সম্পর্কে আরও কয়েকটি প্রশ্ন করেন এবং রাজা মশাইয়ের কাছে আরও সময় ও অর্থ চাইতে থাকেন।
একদিন একটি বৃদ্ধ মানুষ কৃষ্ণদেব রায়ের দরবারে এসে হাজির হলেন এবং তার কাছে বিচারের অনুমতি চাইলেন।যেহেতু রাজামশাই প্রচন্ড ন্যায়পরায়ণ এবং সত্যবাদী ছিলেন তাই তিনি সেই মানুষটিকে তার যথার্থ বিচার দেওয়া্র প্রতিশ্রুতি দেন।
বৃদ্ধ মানুষটি বললেন যে তিনি একজন ধনবান বণিক ছিলেন আগের সপ্তাহ অবধি। যতদিন না তিনি লুণ্ঠিত হয়েছিলেন এবং তার পরিবারকে মেরে ফেলা হয়েছিল। রাজামশাই তখন তার কাছে জানতে চাইলেন যে ব্যাক্তি তার এই ক্ষতি সাধন করেছে তিনি তার নাম জানেনে কিনা, তার উত্তরে সে বলেছিল যে তিনি সেই ব্যাক্তিটির নাম জানেন। তখন রাজামশাই তার নাম জানতে চান। তখন তিনি বলেন যে তিনি গত রাতে স্বপ্ন দেখেছেন যে মহারাজ এবং চতুর পন্ডিত মিলে তার সর্বস্ব লুঠ করছে এবং তার পরিবারের সকলকে হত্যা করছেন।সেই কথা শুনে রাজামশাই রেগে গেলেন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে কি করে তার স্বপ্ন সত্যি হলো।তখন বৃদ্ধ মানুষটি জবাব দিলেন যে তিনি এক রাজ্যের একজন সামান্য নাগরিক মাত্র ছিলেন যার রাজামশাই একটি অসম্ভব স্বপ্নকে তাড়া করে চলেছেন।
এই কথা শুনে এবং আরেকটু কাছে গিয়ে দেখে রাজামশাই বুঝতে পারলেন এই বৃদ্ধ মানুষটি আর কেউ নন কেবল মাত্র তার পরমপ্রিয় উপদেষ্টা তেনালি রামন।
নীতিকথা
বুনো হাঁস তাড়া করার থেকে না করা ভালো।
10.তেনালি এবং বিখ্যাত পন্ডিত
এক সময় একজন পন্ডিত বিজয়নগরের রাজ্যে এলেন।তিনি রাজামশাইয়ের কাছে দাবী করলেন যে তিনি এতটাই জ্ঞানী ব্যক্তি যে তাকে রাজামশাইয়ের সভাসদদের কেউই হারাতে পারবেন না।
মহারাজ সেই চ্যালেঞ্জটিকে গ্রহণ করলেন এবং তার মন্ত্রীদের আদেশ দিলেন সেই পন্ডি্তের সাথে তর্কযুদ্ধে অংশ নিতে।কিন্তু তার সকল মন্ত্রীরাই ক্রমশ হেরে যাচ্ছিল সেই পণ্ডিত মশাইয়ের কাছে যা দেখে মনে হচ্ছিল যে সত্যই তাঁর সকল বিষয়েই প্রচুর জ্ঞান রয়েছে।
অবশেষে এল তেনালি রামন এর পালা। তেনালি তখন সেই পন্ডিত মশাইকে একটি বইয়ের আকারে ভাঁজ করে রাখা কাপড় মোড়াকে দেখিয়ে বললেন যে “আমি আপনার সঙ্গে এই বিখ্যাত ‘তিলাকাষ্ঠ মহিশ বন্ধনম‘ নামক বইটির উপর তর্কাতর্কি করব।” তারপর পণ্ডিতমশাই হতবুদ্ধি হয়ে গিয়েছিলেন কারণ তিনি সেরকম বইয়ের নাম তার আগে কখনও শোনেন নি।
তখন পণ্ডিত মশাই রাজা মশাইয়ের কাছে এক রাত্রের সময় চেয়েছিলেন প্রস্তুত হওয়ার জন্য।কিন্তু পন্ডিতমশাই এর মনে মনে ভয় হয়েছিল যে তিনি সেই তর্কাতর্কিতে হেরে যেতে পারেন যেহেতু তিনি কখনও তার আগে সেই বইটির নামই শোনেননি তাই তিনি তার জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে রাত্রির অন্ধকারে লুকিয়ে লুকিয়ে সেই রাজ্য থেকে চম্পট দিলেন।
তার পরদিন সকালে রাজামশাই এবং তার সভাসদরা শুনলেন যে পণ্ডিতটি পালিয়ে গেছেন রাত্রের অন্ধকারে।তখন রাজামশাই তেনালির উপর অত্যন্ত খুশি হলেন এবং তাকে বললেন যে তিনি সে বইটি পড়তে চান যেটির নাম শুনে পণ্ডিতমশাই ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন।তেনালি তখন হেসে বললেন যে সেরকম নামের কোন বই ছিলই না।তখন সে সেই কাপড়ের তৈরী মলাট খুলে ফেললেন এবং রাজামশাইকে বললেন যে তিনি তিল কাঠি এবং কিছু ভেড়ার গোবর একসাথে মিশিয়ে মোষ বাঁধার দড়ি দিয়ে বেঁধে সেটিকেই একটি বই এর মতন দেখতে জিনিস বানিয়ে ছিলেন।তেনালি যে যে জিনিস গুলি দিয়ে সেটি বানানো হয়েছিল সেগুলোর সংস্কৃত শব্দগুলিকে মিশিয়ে বইটির নামটি তৈরি করেছিলেন “তিলাকাষ্ঠ মহিশা বন্ধনম“।
মহারাজ তেনালির চালাকিতে ও উপস্থিত বুদ্ধিতে খুশি হয়েছিলেন এবং তাকে পুরস্কৃতও করেছিলেন।
নীতিকথা
কখনো নিজের জ্ঞান এবং বুদ্ধির সম্বন্ধে অহংকারী হওয়া উচিত নয়।
তেনালি রামনের এই অসাধারণ গল্পগুলি শুধু গল্পই নয়।তার গল্পগুলি পড়ে বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান,রসিকতা এবং চাতুরির পরিচয় পাওয়া যায়।তাহলে আপনার শিশুদেরও গল্পগুলিকে পড়ে শোনান এবং তাদেরকে একজন দক্ষ,বুদ্ধিশীল চতুর মানুষের সাথে পরিচয় করান ও উপস্থিত বুদ্ধিগুলিকে কীভাবে কাজে লাগাতে হয় তার শিক্ষা দিতে সাহায্য করুন।