In this Article
আপনার শিশু যদি নিয়মিতভাবে তার পায়ের পাতার ব্যথায় ভুগে থাকে তবে সেক্ষেত্রে তার গ্রোয়িং পেইনে ভুগে থাকার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।তবে মাঝেমধ্যে এটি শুধুমাত্র গ্রোয়িং পেইনের জন্যই আপনার বাচ্চার পায়ের পাতায় অস্বস্তির সৃষ্টি হয় না, কখনও কখনও আবার কিছু অন্তর্নিহিত চিকিৎসাজনিত পরিস্থিতির কারণ হেতুও যন্ত্রণার উদয় হতে পারে।আপনি যদি বাচ্চাদের এই পায়ে ব্যথার কারণ এবং সেটি মোকাবিলা করার বিভিন্ন ঘরোয়া প্রতিকারগুলির জন্য আরও তথ্যের সন্ধান করেন, আমরা আপনাকে নিম্নোলিখিত নিবন্ধটি পড়ার পরামর্শ দিই।
শিশুদের পায়ের পাতায় ব্যথা হওয়ার কারণগুলি কি
অল্প বয়সী বাচ্চারা ভীষণ মাত্রায় সক্রিয় হয় এবং তারা অধিকাংশ সময়ই কাটায় বাড়ির মধ্যে বা বাইরে চারপাশে ছোটাছুটি করে, আর তার ফলে তাদের পায়ের পাতায় যন্ত্রণা হয়।তবে এটি ছাড়াও শিশুদের পায়ের পাতায় যন্ত্রণা হওয়ার আরও অন্যান্য অনেক কারণ আছেঃ
1.আঘাত
যেকোনও আঘাত যেমন মচকে যাওয়া, মোচড় লাগা, ভেঙ্গে যাওয়া অথবা অন্য যেকোনও ধরণের আঘাত আপনার বাচ্চার পায়ের পাতায় ব্যথা হওয়ার কারণ হতে পারে।আপনার বাচ্চা যদি এই ধরণের কোনও আঘাতের কারণে তার পায়ের পাতায় যন্ত্রণা অনুভব করে, সেক্ষেত্রে তার জন্য অবিলম্বে চিকিৎসাগত সহায়তা অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
2. অ্যাথলেটিক’স ফুট
এই অবস্থাটিকে পায়ের আঙ্গুলগুলির মাঝে তীবে চুলকানির দ্বারা চিহ্নিত করা যেতে পারে এবং পায়ের পাতার ত্বকটি শুষ্ক, রুক্ষ, আঁশ যুক্ত এবং খসখসে দেখাতে পারে। এটি এক ধরণের ছত্রাক জনিত সংক্রমণ যা আপনার বাচ্চার মধ্যে সুইমিং পুল থেকে, অপরিষ্কার ময়লা মোজা পরিধানের মাধ্যমে এবং ইত্যাদি থেকে হতে পারে।
3.সিভার’স ডিজিজ
এই অবস্থাটি বৃদ্ধির দৌড়ের কারণে শিশুর মধ্যে দেখা দিতে পারে।শিশুর ক্রম বৃদ্ধির দৌড়ে তার পায়ের পাতায় গুরুতর ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে।সে তার পায়ের গোড়ালিতে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করতে পারে।এটি সেই সকল শিশুদের মধ্যে দেখা দেওয়াটা অত্যন্ত সাধারণ যারা খেলাধূলা অথবা বাইরের অন্যান্য ক্রিয়াকলাপে বেশি সক্রিয়।
4.ফ্ল্যাট ফুট বা চ্যাটালো পাতা
যদি আপনার বাচ্চা তার পায়ের গোড়ালি এবং কাফ মাসলস পর্যন্ত যন্ত্রণা করার অভিযোগ জানায়, সেক্ষেত্রে আপনার বাচ্চার ফ্ল্যাট ফুট বা চ্যাটালো বা সমতল পায়ের পাতায় ভোগার সম্ভাবনা থাকে।
5.অনুপযুক্ত জুতো
মাঝেমধ্যে শিশুরা পায়ের পাতার ব্যথায় ভুগতে পারে যদি তারা ঠিকঠাক চলনসই জুতো না পরে থাকে অথবা খুব টাইট হয়ে যাওয়া ছোট জুতো পরে থাকে।টাইট অথবা ঠিকঠাক মানানসই জুতো না পরলে তা আপনার সন্তানের পায়ের পাতায় ফোসকা পরার এবং কচি নরম ত্বকের ছাল উঠে যাওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে, যা মারাত্মক যন্ত্রণা সৃষ্টি করতে পারে।
6.বুনিয়ন
আপনার শিশু যদি তার পায়ের পাতার খিলান অংশটি বেশি ব্যবহার করে তবে তার পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের গোড়ায় জয়েন্টের উপর একটি গোঁজ দেখা দিতে পারে যা পায়ের একদিক থেকে প্রসারিত হতে পারে।এই অবস্থাটিও জন্মগত বা বংশগত কারণে কোনও ধরণের পায়ের বিকৃতি বা বিকলাঙ্গতার কারণেও দেখা দিতে পারে এবং যা ব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
7.অন্তর্বধিত নখ
কখনও কখনও ঠিকমত ভাবে পায়ের নখ না কাটার ফলে নখের একদম কিনারা বা প্রান্তদেশটি কুঁচকে পাকিয়ে যেতে পারে এবং সেটি নখের পাশের চামড়ার ভিতর ঢুকে যেতে পারে, আর এর ফলে চামড়ার সেই অংশের চারপাশটা লাল হয়ে উঠতে পারে এবং তা যন্ত্রণার কারণ হয়ে ওঠে।
8.পায়ের তলায় আঁচিল
কড়া হিসেবে প্রায়শই ভুল করে বসা পায়ের তলায় হওয়া আঁচিলগুলি এক ধরণের ভাইরাস জনিত সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে এবং মারাত্মক সংক্রামক হয়ে থাকে।এই আঁচিলের মূলগুলি পায়ের পাতার তলার ত্বকের নীচে অনুবিদ্ধ থাকে এবং তা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক এবং হাঁটার সময় বেশ অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে।
9.প্ল্যান্টার ফ্যাসিটিস
এই অবস্থাটি সাধারণত প্ল্যান্টার ফ্যাসিটিসের জ্বালা-জ্বলনের কারণে হয়ে থাকতে পারে, যা সংযোজক কলাগুলির একটি পুরু ব্যান্ড বিশেষ।এর উপসর্গগুলি হিসেবে দেখা দিতে পারে হাঁটা-চলায় সমস্যা, পায়ের পাতার নমনীয়তা এবং গোড়ালিতে তীব্র ব্যথা যা সাধারণত সকালের দিকে বেশি প্রকট হয়ে ওঠে।
10. অ্যাকিলিসটেন্ডোনাইটিস
যে সকল শিশুরা বর্ধিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপে প্রবৃত্ত হতে পারে তাদের মধ্যে এই অবস্থাটি প্রভাব ফেলতে পারে।এই বর্ধিত অতিরিক্ত ক্রিয়াকলাপ গোড়ালির উপর এবং পায়ের পাতার তলায় চাপ ফেলে এবং তার ফলে সেখানে ব্যথা ও অস্বস্তি সৃষ্টি হয়।
শিশুদের পায়ে যন্ত্রণা বা পায়ের পাতায় ক্র্যাম্প লাগার কয়েকটি কারণের উল্লেখ উপরে করা হল।আপনি যদি এর কোনও একটি অবস্থাও আপনার শিশুর মধ্যে লক্ষ্য করে থাকেন, তবে তার যন্ত্রণা লাঘব করার জন্য আপনি বিভিন্ন প্রতিকারগুলি প্রয়োগ করতে পারেন।
বাড়িতেই শিশুদের পায়ের যন্ত্রণা চিকিৎসা করার উপায়গুলি
আপনি যদি আপনার সন্তানের পায়ের যন্ত্রণা নিরাময়ের জন্য কিছু ঘরোয়া প্রতিকারের খোঁজ করে থাকেন, নিম্নোলিখিত উপায়গুলি কার্যকর প্রমাণিত হতে পারেঃ
আপনার সন্তান যদি তার পায়ে যন্ত্রণার অভিযোগ জানায় এবং আপনি যদি এটি প্রতিষ্ঠা করতে পারেন যে সেটি তার জুতোর ভুল সোলের কারণে হয়েছে, তবে আপনার বাচ্চার জুতোর ভিতর থেকে সেই সোলটিকে বের করে দেওয়া একটি ভাল ধারণা হবে।অতিরিক্ত নিরাপত্তা ও সতর্কতা কেবল আরামই সরবরাহ করে না এটি আবার যন্ত্রণাকে দূরে রাখতেও সহায়তা করে।তবে যন্ত্রণা যদি ঠিক মত ফিট না হওয়া বা অনুপোযুক্ত জুতোর কারণে হয়ে থাকে তবে সেই জুতো জোড়াটিকে পরিত্যাগ করে আপনার বাচ্চার জন্য আরেক জোড়া ভাল মানের জুতো ক্রয়ের জন্য বিনিয়োগ করুন।
কর্ম চঞ্চল একটা সারা দিনের পর আপনার বাচ্চাকে তার পায়ের পাতাগুলিকে উষ্ণ গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে উৎসাহিত করুন।গরম জলে স্নানও এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।একটি উষ্ণ স্নান ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত পেশীগুলিকে শিথিল করে তুলতে এবং যন্ত্রণা লাঘব করতে সহায়তা করে এবং তাছাড়াও আবার তা ভাল ঘুমে প্ররোচিত করে।
আপনার শিশুর ডায়েটের দিকে মনযোগ দিন কারণ কখনও কখনও আপনার বাচ্চার পুষ্টির ঘাটতির কারণে কিছু নির্দিষ্ট অসুস্থতা দেখা দেয়। আপনার বাচ্চার আয়রন গ্রহণের পরিমাণ বাড়ান কারণ দেহস্থ অধিক আয়রন বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি দূরে রাখতে এবং সেগুলির উপশম করতে সহায়তা করতে পারে।
যন্ত্রণার চিকিৎসার জন্য যদি আপনার ডাক্তারবাবু আপনার বাচ্চাকে কিছু ওষুধ দেন, তবে সেগুলি সময় মত আপনার শিশুর গ্রহণ করা নিশ্চিত করুন। আপনার বাচ্চাটিকে কোনওরকম ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধগুলি দেবেন না।আপনি যদি কোনওরকম ওষুধ আপনার বাচ্চাকে দিতে চান তবে সে ব্যাপারে আগে আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ গ্রহণ করুন।
আপনার সন্তান যদি তার পায়ের পাতা যন্ত্রণার অভিযোগ জানায় তবে তাকে ঢ়িলেঢালা ও আরামদায়ক জুতো পরতে দিন।
অবিরত চাপের কারণে যদি পায়ের পাতায় ব্যথা হয়, তবে R.I.C.E প্রয়োগ করা একটি ভাল ধারণা হবে, যার অর্থ হল বিশ্রাম(রেস্ট), বরফ(আইস), সঙ্কোচন(কমপ্রেশন) এবং উত্তোলন(এলিভেশন)।এটি আপনাকে আপনার বাচ্চার পায়ে যন্ত্রণার যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত সহায়তা করতে পারে।
আপনার বাচ্চা যখন ভাল বোধ করবে এবং তার ব্যথা কমে যাবে, তখন তাকে হালকা থেকে মাঝারি শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সাথে যুক্ত রাখুন।এক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারবাবু হয়ত আপনার সন্তানের জন্য কয়েকটি যোগ-ব্যায়াম অনুশীলনের পরামর্শ দেবেন।
যদি সেরকম কিছু জটিল অবস্থার মধ্যে থাকে এবং আপনার ডাক্তারবাবু ক্র্যাচ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তবে আপনি সেটিও ব্যবহার করতে পারেন।
পায়ে ব্যথাটা যদি না কমে এমনকি কয়েক দিন বা তারও বেশি সময়ের পরেও না কমে, তবে এর জন্য আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন।পরিস্থিতিটি যদি ক্রমশ আরও জটিল হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়ে থাকে, তবে আপনার ডাক্তারবাবু আবার এমনকি একটি শিশুরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখানোর পরামর্শও দিয়ে থাকতে পারেন।
কখন একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন
কখনও কখনও ঘরোয়া প্রতিকার বা চিকিৎসাগুলি আপনার শিশুর জন্য কাজ নাও করতে পারে এবং আপনার সন্তানের তখন ডাক্তারি সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।নিম্নোলিখিত বিশেষ ক্ষেত্রগুলিতে আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ গ্রহণ করা উচিতঃ
- আপনার বাচ্চার পায়ে কোনওরকম সংক্রমণের লক্ষণ, যার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকতে পারে জ্বর, পায়ের পাতার যেকোনও জায়গা থেকে পুঁজ নিঃসরণ, লালচে ভাব, তীব্র যন্ত্রণা ইত্যাদি।
- আপনার বাচ্চার পায়ের পাতায় যদি তীবে যন্ত্রণা হয় বা অসাড় হয়ে যায়।
- আপনি যদি আপনার বাচ্চার পায়ের পাতাগুলিকে প্রকৃত অবস্থানে না থাকতে দেখেন অথবা সেগুলিকে মচকানো বা বাঁকানো মত দেখায়।
- মাটিতে রাখার পর আপনার সন্তানের পায়ের পাতাগুলি স্থিতিশীল না হলে
- পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে দাঁড়াবার সময় আপনার বাচ্চার অসুবিধা হলে
আপনি যদি উপরিল্লিখিত অবস্থাগুলি আপনার বাচ্চার মধ্যে লক্ষ্য করে থাকেন সেক্ষেত্রে আমরা আপনাকে চিকিৎসাগত ডাক্তারি সহায়তা গ্রহণেরই প্রস্তাব দিই।
পায়ের পাতায় ব্যথা শিশুদের মধ্যে খুব সাধারণ একটা ব্যাপার এবং এটি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকতে পারে যন্ত্রণার আসল কারণটিকে বের করতে আপনার সন্তানকে একজন ডাক্তার দেখানো একটা ভাল ধারণা হয়ে উঠবে।