শিশুদের মাথা ব্যথার সাথে কীভাবে মোকাবিলা করবেন

শিশুদের মাথা ব্যথার সাথে কীভাবে মোকাবিলা করবেন

বহু কারণ থেকে আপনার শিশু মাথা ব্যথায় ভুগতে পারে।মানসিক চাপ থেকে ক্ষীণ দৃষ্টীশক্তি, আবার তা থেকে ঘুমের অভাব-এরকম নানা ভাবেই তার মধ্যে মাথা ব্যথা বা মাথা ধরা আসতে পারে।এই মাথা ব্যথার কারণ এবং ধরণগুলি সম্পর্কে জেনে নিলে তা আপনার শিশুর মাথা ব্যথা মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে এবং সেটি হওয়া থেকে তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করার ক্ষেত্রে আপনাকে সহায়তা করবে।

ভিডিওঃ শিশুদের মাথা ব্যথার মোকাবিলা কীভাবে করবেন

শিশুদের মাথা ব্যথার কারণগুলি

যদিও আমরা বাচ্চাদের সাথে মাথা ব্যথার বিষয়টি সাধারণত সংযুক্ত করি না কিন্তু অবাক করে দেওয়ার মত সংখ্যক শিশুরাই এই মাথা ধরায় বা ব্যথায় ভুগে থাকে।কোনও শিশুর মাথা ব্যথা হওয়ার পিছনে অনেক কারণই থাকতে পারে।

1. অসুস্থতা

মাথা ব্যথার সর্বাধিক সাধারণ একটি অন্যতম কারণ হল অসুস্থতা যেমন সর্দি,কাশি,ঠাণ্ডা লাগা, জ্বর অথবা এমনকি সাইনাসের সংক্রমণ।এই ধরণের মাথা ধরার সমাধান নিজে থেকেই হয়ে যাবে যখন এর অন্তর্নিহিত অসুস্থতা বা সংক্রমণের চিকিৎসা করা হবে।এই দৃশ্যপটে,মাথা ধরা বা ব্যথাটি হল অসুস্থতার কারণে হয়ে থাকা ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ।

2. মাথায় আঘাত

খেলার সময় কিম্বা অন্য কোনও সময়ে মাথায় আঘাত পেয়ে ফুলে গিয়ে থাকলেও তা মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে।যদিও সকল আঘাত জনিত ফোলাগুলিই উদ্বেগের কারণ হয় না,তবে আপনি যদি মনে করেন যে আপনার ছোট্টটি তার মাথায় বেশ কড়া ধরনের বড়সড় আঘাতই পেয়েছে সেক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল হল আপনি বিষয়টিকে ডাক্তারের মনোযোগে নিয়ে আসুন।মাথা ব্যথাটি যদি অবিরত চলতে থাকে এবং সময়ের সাথে তা আরও খারাপ হতে থাকে সেক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই চিকিৎসাগত সহায়তা নেওয়া প্রয়োজন।

3. মানসিক চাপ

মানসিক চাপ এবং উদ্বেগও শিশুদের মধ্যে মাথা ব্যথা হওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে।বিদ্যালয়ের চাপ,বিদ্যালয়ের পরবর্তী বাইরের অন্যান্য অতিরিক্ত ক্রিয়াকলাপের চাপের সাথে কীভাবে নিজেকে মানিয়ে মোকাবিলা করে চলতে হবে তা এখনও পর্যন্ত অনেক শিশুই হয়ত জানে না আর তার ফলে এটিই হয়ত তাদের মধ্যে মাথা ব্যথা রূপে প্রকট হয়ে ওঠে।অবসাদ, বিষণ্ণতার লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হল মাথা ব্যথা।

4. কিছু বিশেষ খাদ্য এবং পানীয়

খাদ্যের কিছু অতিরিক্ত বিশেষ সংযোজনও মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে।শুকনো মাংস যেমন টার্কী,ব্যাকন(লবণ মাখানো শুকনো শূকরের মাংস)কিম্বা হ্যামের মধ্যে থাকে নাইট্রেট,আর এগুলিকে যখন অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়ে থাকে,তখন তা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে।অপর যে অ্যাডিটিভটি খাবারের মধ্যে সাধারণত দেখতে পাওয়া যায়,তা হল MSG-এটিও মাথা ব্যথার কারণ হিসেবে পরিচিত।পানীয় সোডা,কফি এবং চায়ের মত ক্যাফিনযুক্ত পানীয়গুলিও আবার মাথা ধরার কারণ হয়ে উঠতে পারে।

5. বংশগত

কিছু ধরনের মাথা ব্যথা যেমন মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত বংশগত হয়ে থাকে এবং যদি আপনি অথবা আপনার পরিবারের কোনও সদস্য এটিতে ভুগে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে বংশানুক্রমিক ভাবে আপনার শিশুটির উপরেও এটি প্রভাব ফেলবে।

6. মস্তিষ্কের সমস্যা

কখনও কখনও মাথা ধরা আবার মস্তিষ্কের সাথে জড়িত কোনও অন্তর্নিহিত সমস্যার একটি লক্ষণও হয়ে থাকতে পারে।এটি টিউমার,ফোঁড়া কিম্বা রক্তপাতের নির্দেশকও হতে পারে।তবে এই শর্তগুলির সাথে আবার অন্যান্য লক্ষণগুলির পাশাপাশি ঝাপসা দৃষ্টিও অনুষঙ্গী হয়ে থাকে।

মস্তিষ্কের সমস্যা

আপনার শিশুর মাথা ব্যথা করলে আপনার কি উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই,মাথা ধরা সাধারণত মানসিক চাপ অথবা ডিহাইড্রেশনের জন্য হয়ে থাকা একটা সাধারণ কারণ বিশেষ, আর আরোগ্য লাভের জন্য একবার শিশুটি বিশ্রাম নিলেই,এই মাথা ব্যথাটিও উধাও হয়ে যাবে।তবে কিছু দৃশ্যকল্পে,ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে ভাল।

  • এক মাসের বেশি সময় ধরে বারে বারে মাথা ধরা বা ব্যথা
  • যথেষ্ট পরিমাণে ভালভাবে ঘুম হওয়ার পরেও মাথা ব্যথার সাথে ঘুম থেকে ওঠা
  • একটানা যন্ত্রণা অব্যহত থাকা
  • সময়ের সাথে সাথে মাথা ধরা বা ব্যথাটি ক্রমশ খারাপের দিকে গেলে
  • সংজ্ঞা হারানো
  • মাথা ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব,মাথা ঘোরা এবং ঘাড়ে ব্যথার মত অন্যান্য উপসর্গগুলি যুক্ত থাকলে।

শিশুদের মাথা ব্যথার ধরণগুলি

মাথা ব্যথাকে বিস্তৃতভাবে চারটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যেতে পারে।সেগুলির প্রতিটি বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন কারণের জন্য হতে পারে,সুতরাং সেগুলির চিকিৎসা ব্যবস্থাগুলিও বিভিন্ন হয়ে থাকে।একটি শিশুর মধ্যে একাধিক ধরণের মাথা ব্যথা থাকতে পারে এবং সেই মাথা ব্যথার ধরণটিকে খুঁজে বের করাটা হল একটি যুদ্ধের অর্ধেক জয় করে ফেলার সমান।

1. মাইগ্রেনেরমাথাব্যথা

মানসিক চাপ,ঘুমের অভাব অথবা এমনকি কিছু বিশেষ ধরণের খাদ্য পদও মাইগ্রেনের ব্যথাকে বাড়িয়ে তোলার কারণ হয়ে থাকে।শিশুদের মধ্যে হয়ে থাকা সবচেয়ে সাধারণ ধরণের মাইগ্রেনগুলি হল প্যারোক্সিমাল ভার্টিগো এবং সাইক্লিক ভোমিটিং বা বমির পুনরাবৃত্তি।পূর্ববর্তীটি ভার্টিগোর সাথে সম্পর্কিত যেখানে হঠাৎ ঘূর্ণনের সংবেদনটি হয়ে থাকে যা আবার কয়েক মিনিটের মধ্যে কেটেও যায়।আর পরের ধরণের মাইগ্রেনটির সাথে বমি হওয়ার একটি পর্ব যুক্ত থাকে।কিছু ক্ষেত্রে আবার এই বমি হওয়ার ব্যাপারটা মাথা ব্যথার সাথে জড়িত নাও হয়ে থাকতে পারে।

লক্ষণগুলি

  • মাথার এক বা উভয় পাশেই দপদপ করে বা স্পন্দন অনুভূত হয়ে মাথা ব্যথা করা।
  • কোনও রকম পরিশ্রম করার সাথে সাথে মাথা ব্যথাটির আরও খারাপ অবস্থা হওয়া।
  • বমি বমি ভাব
  • বমি হওয়া
  • আলো এবং শব্দে সংবেদনশীলতা
  • মাথা ঘোরা
  • পেট ব্যথা করা

2. টেনশন বা চাপা উত্তেজনায় মাথা ব্যথা

এটি শিশুদের মধ্যে হয়ে থাকা সবচেয়ে সাধারণ ধরণের একটি মাথা ব্যথা।এটি সাধারণত একপ্রকার ছোট খাটো মানসিক বিপর্যয়ের অভ্যুত্থান অথবা কোনও শারীরিক চাপের কারণে হয়ে থাকে।পড়াশুনা কিম্বা অন্য যেকোনও কারণেই এই চাপ সৃষ্টি হয়ে থাকুক না কেন তার প্রকৃত কারণটিকে চিহ্নিত করতে পারলে তা আপনার শিশুকে সেই সমস্যাটিকে কাটিয়ে তার সমাধান করতে সাহায্য করবে।কেন আপনার শিশুটির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে এবং তার সেই চাপ কমাবার জন্য সে এবং আপনার পরিবার কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন সে ব্যাপারে আপনার শিশুর সাথে একটা খোলাখুলি আলোচনা আপনি করতে পারেন।

লক্ষণগুলি

  • মাথা এবং ঘাড়ের পেশীগুলি শক্ত হয়ে যাওয়া
  • হালকা থেকে মাঝারি মানের মাথা ব্যথা যাতে মাথার এক বা উভয় পাশের কোথাওই স্পন্দন হয় না।
  • শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সাথে যন্ত্রণাটি আরও বেড়ে যায় না ও খারাপ হয় না।
  • এই ধরণের মাথা ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব এবং বমি করা সংযুক্ত নয়।

3. ক্লাস্টার বা এক জায়গায় পুঞ্জীভূত মাথা ব্যথা

এই ধরণের মাথা ব্যথা সাধারণত 10 বছরের বেশি বয়সী শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।এই ধরণের মাথা ব্যথা সাধারণত চোখের পিছনে মাথা ব্যথার একটি সারি হিসেবে শুরু হয় এবং সেটি মোটামুটি প্রায় এক সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত চলতে থাকে।

লক্ষণগুলি

  • এই ধরণের মাথা ব্যথা সাধারণত কমপক্ষে পাঁচটি পর্বের সাথে ঘটে।
  • এই প্রকার মাথা ব্যথাটি প্রতিটি বিকল্প দিনে একবার থেকে একদিনে প্রায় আট বার পর্যন্ত হতে পারে।
  • একটা চোখের পিছনে বা পাশে প্রায় তিন ঘন্টার কম সময় ধরে তীব্র ছুরিকাঘাতের ন্যায় যন্ত্রণা হয়ে থাকে
  • এই ধরণের মাথা ব্যথার সাথে নাক দিয়ে জল পড়া,নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং চোখের পাতা ফুলে যাওয়ার মত বিষয়গুলি জড়িত।

4. দীর্ঘস্থায়ী প্রতিদিনের মাথা ব্যথা

আপনার শিশুর মাথা ব্যথাটি যদি মাইগ্রেন বা টেনশন প্রকৃতির হয়ে থাকে এবং সেটি এক মাসের 15 দিনের বেশি সময় ধরে হতে থাকে তবে সেক্ষেত্রে আপনার শিশুর ডাক্তারবাবু হয়ত এই ধরনের মাথা ব্যথাটিকে দীর্ঘস্থায়ী দৈনিক মাথা ব্যথা বা CDH বলে অভিহিত করে থাকবেন। একাধিক কারণে এই CDH ধরণের মাথা ব্যথাটি হয়ে থাকতে পারে,যার মধ্যে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে কোনও ওষুধের ব্যবহার,সংক্রমণ অথবা সামাণ্য ছোটখাট মাথার আঘাত।

রোগ নির্ণয়

আপনার শিশুর যদি মাঝে মধ্যে প্রায়শই মাথা ব্যথা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করে এ ব্যাপারে তাঁর পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে ভাল।আপনার ডাক্তারবাবু আপনার শিশুর চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় নথি বিস্তৃতভাবে খুঁটিয়ে জানতে চাইবেন।কোন কোন সময়ে আপনার বাচ্চা তার মাথা ব্যথা অনুভব করে তার একটি নোট রেখে সেই তথ্যটি আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে শেয়ার করুন।প্রতি বার মাথা ব্যথা করার সময় আপনার শিশুটি কি কি খাবার খায় এবং কতটা সময় সে ঘুমাতে পারে তার সব কিছুই লক্ষ্য করে তার একটি নথি রাখুন।আপনার বাচ্চার মাথা ব্যথাটি ঠিক কোন ধরণের মাথা ব্যথা তা নির্ধারণের জন্য আপনার ডাক্তারবাবু আবার আপনাকে হয়ত আরও নানা ধরণের প্রশ্ন করবেন।সেগুলির মধ্যে রয়েছেঃ

  • কখন মাথা ব্যথাটি হয়?
  • কতক্ষণ ধরে সেই মাথা ব্যথাটি থাকে?
  • মাথার কোন অংশটায় ব্যথা হয়?
  • এর জন্য খাওয়া কিম্বা ঘুমের ধরণে কোনও পরিবর্তন হয়েছে কিনা?
  • বাচ্চার ঘুমের কোনও সমস্যা আছে কিনা?
  • অস্থানের পরিবর্তনে মাথা ব্যথার প্রকৃতির কোনও পরিবর্তন হয় কিনা?
  • পূর্বে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে কিনা যার জন্য তার মানসিক চাপ পড়তে পারে?
  • তার ঘাড় অথবা মাথায় কোনও রকম আঘাত আছে কিনা?

এই প্রশ্নগুলির উত্তরের ভিত্তিতে,ডাক্তারবাবু হয়ত আপনার শিশুটির মাথা ব্যথার কারণ এবং সেটি কি ধরণের মাথা ব্যথা তা নির্ধারণের জন্য তার চুলচেড়া সূক্ষাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হবেন।এর পরেও আবার এমনকি ডাক্তারবাবু অন্তর্নিহিত চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়গুলি নির্ধারণের জন্য বেশ কয়েকটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর কথাও বলতে পারেন।সেই সকল পরীক্ষা নিরীক্ষাগুলির মধ্যে রয়েছে MRI এবং CT স্ক্যান।

শিশুদের মাথা ব্যথার জন্য চিকিৎসা

মাথা ব্যথার চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক বিস্তৃত পরিসর আছে যেগুলির পরামর্শ হয়ত আপনার ডাক্তারবাবু আপনাকে দিতে পারেন।এর চিকিৎসা পদ্ধতিটি নির্ভর করবে আপনার সন্তানের বয়স,চিকিৎসা সংক্রান্ত ইতিহাস,ওষুধের চলা কোর্স ও ওষুধের প্রতি অ্যালার্জি এবং মাথা ব্যথার প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে।

1. বিশ্রাম

যে জিনিসটির পরামর্শ ডাক্তারবাবু সবার প্রথমে দেবেন তা হল আপনার শিশুকে যথেষ্ট বিশ্রাম দেওয়া।মানসিক চাপ বা ধকলের কারণে মাথা ব্যথা হলে এই ধরণের চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়।

2. যন্ত্রণার ওষুধ

যন্ত্রণা প্রশমনের জন্য ডাক্তারবাবু হয়ত আপনার শিশুকে একটা সীমিত ডোজের বেদনা নাশক ওষুধ সংযমের সাথে ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন।এই ওষুধগুলি কেবলমাত্র ব্যবহার করা উচিত ডাক্তারবাবুর নির্দেশ অনুসারে তাঁর তত্ত্বাবধানের অধীনে।

3. শিথিলকরণ থেরাপি

আপনার শিশু যদি মানসিক এবং আবেগীয় চাপের কারণে উদ্বেগ এবং হতাশায় ভুগে থাকে, যেগুলির কারণে মাথা ব্যথাটি হল একটি সাধারণ উপসর্গ,তবে তখন আপনার ডাক্তারবাবু আপনার শিশুটির এই সকল চাপগুলি হ্রাস করার জন্য এই শিথিলকরণ কৌশলটি প্রয়োগ করার পরামর্শ দেবেন।এই সকল কৌশলগুলির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে,যোগা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন।সবচেয়ে ভাল হল পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার জন্য আপনার এমন একজন চাইল্ড থেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া যিনি এই সমস্যাগুলির সমাধানে সাহায্য করবেন।

4. জ্ঞানীয় আচরণের থেরাপি

চাইল্ড থেরাপিস্ট আপনার সন্তানের প্রাত্যহিক জীবনের চাপগুলির মোকাবিলার জন্য তাকে টুল বা সরঞ্জামগুলি দেওয়ার জন্য CBT ব্যবহার করতে পারেন।CBT অবশ্যই প্রশিক্ষিত পেশাদার দ্বারা করা উচিত এবং বাড়িতে কৌশলগুলি অনুশীলন করতে আপনার অবশ্যই আপনার শিশুকে সহায়তা করতে হবে।

5. বায়োফীডব্যাক বা জৈবপ্রতিক্রিয়া প্রশিক্ষণ

মানসিক চাপ,হতাশা এবং উদ্বেগের লক্ষণগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ব্যবহৃত কৌশলগুলির মধ্যে একটি হল এই একই বিষয়গুলির জন্য শারীরিক দিকগুলি নিয়ন্ত্রণ করা।এখানে এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে শ্বাস-প্রশ্বাস,হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ।শারীরিক চাপগুলিকে দূরে রাখার ক্ষেত্রে শরীরকে একবার প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারলে মানসিক চাপটিও সহজেই সামাল দেওয়া যাবে।

6. বিকল্প থেরাপিগুলি

আপনি আবার মাথা ব্যথার বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষেত্রে ম্যাসাজ বা মালিশ এবং আকুপ্রেশারের মত কিছু অপ্রচলিত থেরাপি বা চিকিৎসা পদ্ধতিগুলিরও অন্বেষণ করতে পারেন।

7. খাদ্য বরাদ্দ পরিপূরকগুলি

কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বেশ কিছু নির্দিষ্ট ভিটামিন এবং এমনকি ম্যাগনেসিয়ামের মত খনিজের খাদ্য বরাদ্দ পরিপূরকগুলিও শিশুদের মধ্যে হয়ে থাকা মাথা ব্যথার সংখ্যা হ্রাস করতে পারে।

শিশুদের মধ্যে হয়ে থাকা মাথা ব্যথার প্রতিরোধ কীভাবে করা যায়

ভাগ্যবশত,শিশুদের মাথা ব্যথা প্রতিরোধের বহু উপায় আছে এবং নিম্নলিখিত এই সকল সহজ কৌশলগুলি অনুসরণ করলে তাদের মাথা ব্যথার পুনরাবৃত্তির হারটি হ্রাস পাবে।একবার মাথা ব্যথার কারণটিকে শনাক্ত করতে পারলেই,আপনার শিশুকে সেই সকল কারণগুলি থেকে দূরে রাখাটা একটা সামাণ্য বিষয়মাত্র।

  • টেনশনের থেকে মাথা ব্যথা হলে তা সাধারণত একটা শীতল কম্প্রেসের দ্বারাই হ্রাস করা যাবে।
  • শিশুদের মধ্যে মাথা ব্যথা হওয়ার একটা সাধারণ কারণ হল ঘুমের অভাব।ভাল ঘুমের অভ্যাস অনুশীলন যেমন সময় মত শুতে যাওয়া এই ধরণের মাথা ব্যথা হ্রাস করতে পারে।
  • উচ্চ শব্দগুলি মাইগ্রেনের ব্যথার জন্য সুপরিচিত এবং সম্ভব হলে এগুলি অবশ্যই এড়ানো উচিত।
  • আপনার শিশু যখন এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে সে একটা মানসিক চাপযুক্ত পরিবেশের মুখোমুখি হতে চলেছে যেমন পরীক্ষার হলে প্রবেশ,সেই সব ক্ষেত্রে দীর্ঘ শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলনটি তাকে সেই সময়কার মাথা ব্যথা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে।
  • অধিকাংশ মানুষই এটি মানতে চান না যে কখনও কখনও পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান না করার মত সাধারণ কারণও মাথা ব্যথার কারণ হয়ে ওঠে।আপনার শিশুর ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলে জেনে নিন যে প্রত্যহ তার কতটা জল পান করা যথেষ্ট।নিয়মিত আপনার বাচ্চার তাজা ফল খাওয়ার ব্যাপারটিও নিশ্চিত করুন।
  • কেবল বিশুদ্ধ তাজা খাদ্যই আপনার শিশুর খাদ্য তালিকার প্রধান অঙ্গ হওয়া উচিত এবং তার মধ্যে তাজা ফল এবং শাক-সবজি অন্তর্ভূক্ত করা উচিত।তার খাবারগুলি প্রস্তুত করতে খুব বেশি তেল ব্যবহার করবেন না এবং তার একটি সুষম ডায়েট বজায় রাখুন।

শিশুদের মধ্যে হয়ে থাকা মাথা ব্যথার প্রতিরোধ কীভাবে করা যায়

শিশুদের মাথা ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকারগুলি

এখানে বেশ কিছু ঘরোয়া প্রতিকারের উল্লেখ করা হল যেগুলি আপনি আপনার শিশুর কোনওরকম মাথা ব্যথার প্রতিরোধ এবং হ্রাস করার ক্ষেত্রে প্রয়োগের চেষ্টা করতে পারেন।

  • আপনি আপনার বাচ্চাকে ফিভারফিউ এর কিছু পরিপূরক দিতে পারেন যার ব্যবহারে মাইগ্রেনের মাথাব্যথা প্রায় 25% মত কমতে দেখা গিয়েছে।
  • টেনশনে হয়ে থাকা মাথা ব্যথার উপশমে স্নায়ুগুলিকে প্রশমিত করতে আপনি আবার পিপারমিন্ট তেলও ব্যবহার করতে পারেন।এই অপরিহার্য তেলটির কয়েক ফোঁটা নিয়ে আমণ্ড তেলের সাথে মিশিয়ে নিয়ে সেটি দিয়ে আপনার শিশুর মাথাটি মালিশ করে দিতে পারেন।
  • আপনার শিশু আবার বাষ্পের সাথে অ্যারোমাথেরাপিও ব্যবহার করতে পারে।সাইনাসজনিত মাথাব্যথা উপশম করতে এর সাথে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল বা ইউক্যালিপটাস তেল মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
  • মাথা ব্যথা হ্রাস করার ক্ষেত্রে দারুচিনিও আবার বেশ সুপ্রসিদ্ধ।তাজা গুঁড়ো করা এই মশলাটির এক চিমটে নিয়ে গরম দুধে মিশিয়ে নিন এবং প্রতি রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনার বাচ্চাকে সেটি পান করতে দিন।
  • লবঙ্গতেও ব্যথা হ্রাস পাওয়ার বৈশিষ্ট্য দেখা যায় এবং এটিকে দিনের যেকোনও সময়েই চিবানো যেতে পারে।

শিশুদের জন্য স্ব-সহায়তার পরামর্শগুলি

মাথা ব্যথার মোকাবিলায় আপনার শিশুকে সাহায্য করার বিষয়গুলির মধ্যে একটি হল এই মাথা ব্যথা মোকাবিলা করা বা সেটিকে এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের সাহায্য করার বিভিন্ন কৌশলগুলিকে আপনার শিশুকে শিখিয়ে তোলা।

  • অন্ধকার ঘরে শুয়ে থাকলে তা মাথা ব্যথার উপশমে সাহায্য করবে এবং মাথা ব্যথার সময়কালকেও হ্রাস করবে।
  • একটা ঠাণ্ডা কম্প্রেস বা এমনকি একটি ভিজে বা ঠাণ্ডা কাপড়ের টুকরো কপালের উপরে রাখলেও তা যন্ত্রণা হ্রাস করতে পারে।
  • শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামগুলি শিখে সেগুলি সারাদিন ধরে অনুশীলন
  • মাথা ব্যথা থেকে রেহাই পাওয়ার সেরা সমাধান হতে পারে ঘুমানো
  • প্রাকৃতিক কিছু খেলে বা পান করলে তা মাথা ব্যথার উপশমে সহায়তা করতে পারে।

কখন একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?

যদি মাথা ব্যথার সাথে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা দেয়,আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করা উচিতঃ

  • বমি হওয়া
  • সতর্কতা হ্রাস পাওয়া
  • মাথা ব্যথার কারণে বিক্ষিপ্ত ঘুম
  • দৃষ্টির পরিবর্তন
  • র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া
  • রণন অনুভূতি
  • ঘাড়ে ব্যথা অথবা শক্ত হয়ে যাওয়া
  • খিঁচুনি
  • সমন্বয়ের অভাব
  • মাথায় আঘাত লাগার কারণে যদি মাথা ব্যথা হয়ে থাকে
  • দাঁড়িয়ে থাকতে অসুবিধা
  • হাঁটার ক্ষেত্রে অসুবিধা
  • জ্বর
  • আচরণে ও ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

1. যদি আমার বাচ্চার প্রায় ঘন ঘন মাথা ব্যথা হয়,তবে কি করতে হবে?

যদি আপনার বাচ্চার প্রায়ই ঘন ঘন মাথা ব্যথা হয়ে থাকে,তবে আপনি অবশ্যই মাথা ব্যথার রেকর্ড রাখার একটা ডায়রি রাখবেন,যার মধ্যে আপনি মাথা ব্যথার ঘটনাগুলির নথি রাখবেন।ঐ মাথা ব্যথার দিনগুলিতে আপনার শিশু কতটা পরিমাণ ঘুমাতে পারছে এবং তার পাশাপাশি সেই দিনগুলিতে তার ডায়েট এবং ক্রিয়াকলাপগুলিরও নোট রাখুন।মাথা ব্যথার দিনগুলিতে যদি তার পরীক্ষা বা প্রতিযোগীতার মত কোনও চাপযুক্ত ক্রিয়াকলাপ থেকে থাকে তবে তাও খেয়াল করে নোট করুন।মাথা ব্যথা হওয়ার দিনগুলিতে এটি আপনাকে মাথা ব্যথা হওয়ার একটা ধরণ নির্ধারণ করতে সাহয্য করবে এবং এর দ্বারা আবার আপনি সেই মাথা ব্যথার কারণগুলিকেও কিছুটা নির্ধারণ করতে পারবেন।

2. শিশুরা মাথা ব্যথার প্রকোপটি কি কাটিয়ে উঠতে পারে?

এক্ষেত্রে শিশুদের মাথা ব্যথার প্রকোপটি কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে একটা বিরাট সম্ভাবনা থাকতে পারে।তবে এটি নির্ভর করে মাথা ব্যথার ধরণের উপর।গবেষণায় দেখা গেছে যে,ছেলেদের ক্ষেত্রে তাদের কৈশোরে(13 বছরের আগে)প্রবেশ করার পূর্ব সময়ের মধ্যে মাইগ্রেনের ব্যথাগুলি কাটিয়ে ওঠে ।তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে তাদের দেহস্থ হরমোনগুলির পরিবর্তনের কারণে তাদের জীবনের পরবর্তিতেও অনেক সময় এই মাথা ব্যথা হয়ত সমানে রয়ে যেতে পারে।

এক্ষেত্রে এমন অনেক উপায় আছে যেগুলির দ্বারা আপনি আপনার সন্তানকে মাথা ব্যথার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোহিতা করতে পারেন।সাধারণ ঘরোয়া প্রতিকারগুলি এবং স্ব-সহায়তা ব্যবস্থাগুলি এই সমস্যাটি সমাধানে বৃহৎ পরিসরে সহায়তা করতে পারে।তবে আপনি যদি এর পুনরাবৃত্তির ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন,তবে সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারি সহায়তা নেওয়াটাই সবচেয়ে ভাল,যেহেতু একটা মাথা ব্যথা আবার কোনও অন্তর্নিহিত চিকিৎসাজনিত একটি বৃহৎ সমস্যারও লক্ষণ হয়ে থাকতে পারে।