আপনি হয়ত আপনার 13 মাস বয়সী শিশুর মধ্যে সম্পূর্ণরূপে বহু পরিবর্তন হতে লক্ষ্য করতে পারেন।তাকে দেখে আরও বেশি স্বাধীন মনে হতে পারে যা হয়ত তাকে একটি ছোট্ট অণ্বেষণকারীতে রূপান্তরিত করে তুলতে পারে।সে হয়ত তার প্রথম কয়েকটি পায়ের ধাপও ফেলতে পারে এবং টলমল করে মিষ্টিভাবে হাঁটাও শুরু করতে পারে।এখানে নিম্নলিখিত নিবন্ধটিতে,আমরা আলোচনা করতে চলেছি আপনার 13 মাস বয়সী শিশুটির বৃদ্ধি এবং বিকাশের পর্বে যা কিছু হতে পারে তার সবকিছুর ব্যাপারে।
আপনার ছোট্ট যাত্রীটি হয়ত এই সময়ে আপনার বাড়ির সকল কিছু ঘুরে ঘুরে অণ্বেষণ করে বেড়াবে,অতএব বেশ কিছু মজার মুহূর্তগুলি আপনার ছোট্টটির সাথে ক্যামেরাবন্দি করে রাখার জন্য প্রস্তুত থাকুন।যদিও এই বয়সটা আপনাকে হয়ত কিছুটা শ্রান্ত করে তুলতে পারে এবং আপনার উপর কিছুটা অতিরিক্ত শুলকের বোঝা চাপাতে পারে,কিন্তু তবুও আপনি কিছুতেই হয়ত উপভোগ করা বাদ দিতে চাইবেন না সেই সকল চমৎকার বিষয়গুলি,যেগুলি এই বয়সে আপনার ছোট্ট ব্যক্তিটি করে থাকে।এ ব্যাপারে আপনাকে আপনার ছোট্ট সোনাটির ক্রিয়াকলাপের ব্যাপারে কিছুটা সচেতন এবং সজাগ থাকার পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ আপনার শিশুটি হয়ত এটিও দেখতে এবং বুঝতে পারে যে তার কোন ব্যাপারটির প্রতি আপনি আপনার মনোযোগ দেননি বা লক্ষ্য করেননি।নিচের অনুচ্ছেদগুলিতে আমরা আলোচনা করব আপনার সন্তানের শারীরিক,সামাজিক এবং জ্ঞানীয় বিকাশ এবং 13 মাস বয়সে তার অন্যান্য যে সকল মাইলস্টোনগুলি অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে সে সম্পর্কে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতানুযায়ী,13 মাস বয়সী মেয়ে এবং ছেলে শিশুদের গড় ওজন মোটামুটি প্রায় 20.2 পাউন্ড এবং 21.8 পাউন্ড মত হয়, আর গড় উচ্চতা হতে পারে মেয়েদের ক্ষেত্রে মোটামুটি প্রায় 29.6 ইঞ্চি এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে তা হতে পারে 30.3 ইঞ্চি মত।এগুলি হল ওজন এবং উচ্চতার গড় পরিমাপক,কিন্তু সবসময় মনে রাখবেন প্রতিটি শিশুই পৃথক,তাই আপনার ছোট্টটি যদি এই সকল পরিমাপকগুলির মধ্যে না থেকে থাকে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।নিম্নলিখিতগুলি হল শারীরিক বিকাশের কিছু সাধারণ মাইলস্টোন যেগুলি 13 মাস বয়সী শিশুরা অর্জন করে থাকে।
এই বয়সে শিশুরা পূর্বের তুলনায় আরও ভালভাবে আবেগ অনুভূতিগুলি বুঝতে পারে।বিভিন্ন আবেগ প্রদর্শনের মধ্য দিয়েও সে আরও বেশি সামাজিক হয়ে ওঠে।এখানে বেশ কিছু সামাজিক এবং আবেগীয় দক্ষতার উল্লেখ করা হল যেগুলি আপনার সন্তান হয়ত তার এই বয়েসের মধ্যেই অর্জন করতে পারেঃ
এই পর্যায়ে আপনার সদ্য হাঁটতে শেখা টলটলায়নকারীটি অনেক বেশি তথ্য আহরণ এবং প্রক্রিয়াকরণ করে।অনেক ব্যাপারেই সে যেমন বিস্মিত হয়ে উঠতে পারে আবার সেরকমই অনেক ক্ষেত্রেই হতাশ হয়েও পড়তে পারে,আর এই অনুভবগুলি খুবই স্বাভাবিক।এই সময়ের মধ্যে আপনার টলমল করে হেঁটে চলা ছোট্ট ব্যক্তিটি ভাষা এবং আবেগীয় বিকাশের পরিমণ্ডলে নিম্নলিখিত মাইলস্টোনগুলি অর্জনে সক্ষম হয়ঃ
আপনার ছোট্ট ব্যক্তিটির বিশ্ব যেভাবে প্রসারিত এবং উন্মুক্ত হয়,ঠিক সেভাবেই তার আবেগের বাক্সটিও উন্মোচত হয়।এই সময় আপনি হয়ত আপনার শিশুর মধ্যে তার আচরণগুলির পরিবর্তন হতে লক্ষ্য করতে পারেন,এবং সে এখন কি চায় সে ব্যাপারের সাথে আপনি তাকে আরও বেশি পরিষ্কার হয়ে উঠতেও দেখতে পারেন।আপনার সন্তান কি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে?না,সে একটুও নষ্ট হচ্ছে না,আপনার শিশুটি যা কিছু দেখছে এবং উপলব্ধি করছে সেগুলিকেই সে কেবল নিজের মধ্যে গ্রহণ করার এবং অঙ্গীভূত করার চেষ্টা করছে।এই সময় আপনার হয়ত আপনার ছোট্টটির সাথে বিপুল পরিমাণে ধৈর্য্য ধরে রাখার অনুশীলন গড়ে তোলার প্রয়োজন হতে পারে কারণ এখন থেকে হয়ত আপনার মত করে কোনও কিছুই করা আর সহজ হয়ে উঠবে না।এই পর্যায়ে আপনার বাচ্চার মধ্যে দেখা দেওয়া দুর্বার ক্রোধ,বিচ্ছেদের আশঙ্কা এবং আরও অন্যান্য পরিবর্তনগুলির সাথে মোকাবিলার জন্য নিজেকে এগুলির সাথে বেষ্টন করে রাখুন।
একটা গড় হিসেব অনুযায়ী,আপনার 13 মাস বয়সী শিশুর প্রতিদিন মোটামুটি প্রায় 1000 ক্যালোরি মত প্রয়োজন হয়,যদিও এটি অপরিহার্য নয় যে আপনাকেও এই মাপকাঠির মধ্য দিয়েই যেতে হবে।সহজ ভাষায় বলা ভাল যে,এই বয়সে আপনার বাচ্চা আপনি যা খান তার পরিমাণের এক চতুর্থাংশ খেতে পারে।এই বয়সে আপনার সন্তান হয়ত খাবারের ব্যাপারে সবকিছুতেই খুঁতখুঁতে এবং বাছাইকারী হয়ে উঠতে পারে,তার খাদ্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনি তাকে সাহায্য করতে পারেন।এই সময় বিভিন্ন স্বাদের এবং গন্ধের খাবারের সাথে আপনার বাচ্চাকে পরিচয় করানোর সুপারিশ করা হয়, কিন্তু আপনার সন্তান যদি কিছু বিশেষ খাদ্যের প্রতি বাধা দিতে থাকে,তবে সেক্ষেত্রে সেগুলি তাকে জোর করে খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।আপনার 13 মাস বয়সী শিশুর খাদ্যের সময়সূচীর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকা উচিত তিনবার প্রধান খাদ্য এবং দুবার হালকা খাবার কিম্বা জলখাবার জাতীয় কিছু।যাইহোক,এক্ষেত্রে আপনার সন্তানকে নানা ধরণের খাদ্য উপকরণগুলি খেতে দেওয়ারই পরামর্শ আপনাকে দেওয়া হয়,যার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকা উচিত সঠিক পরিমাণে ফল,সবজি,দানা শস্য, দুগ্ধজাত পণ্য ইত্যাদি।
আপনি যদি এখনও আপনার টলমলকারী ছোট্টটিকে শক্ত খাবারে স্থানান্তরিত না করে থাকেন,সেক্ষেত্রে আপনি তাকে ফুল ফ্যাট দুধ খাওয়ানো শুরু করতে পারেন।এই বয়সটি হল সেই সময় যখন আপনার ছোট্ট মাণিকটির ব্রেনের বিকাশ হতে থাকে আর তার জন্য এই সময় প্রয়োজন ভাল পরিমাণে ফ্যাট,যা আপনার সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশের সহায়ক।আপনি যদি আপনার সন্তানকে স্তন দুধ ছাড়াতে চান,সেক্ষেত্রে এটিই হল তার মোক্ষম সময়,তবে আপনি যদি আবার তা এখনও চালিয়ে যেতে যান,তবে আপনি তা করতে পারেন আপনার সন্তানের দুই বছর বয়স পর্যন্ত।
বয়সের এই পর্যায়ে আপনার সন্তানের ডায়েট এবং পুষ্টির ব্যাপারে আপনার গুরুত্ব দেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আপনার সন্তান যদি একজন খুঁতখুঁতে ভক্ষণকারী হয়ে থাকে, তার ওজন এবং বৃদ্ধির দিকে নজর রাখুন এবং যদি সে পর্যাপ্ত ওজন লাভ না করে থাকে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে যোগাযোগ করুন।আর তাঁর সাথে আলোচনা করে জেনে নিন সঠিক বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য আপনি আপনার 13 মাস বয়সী ছোট্ট ব্যক্তিটির খাদ্যে কি কি যোগ করতে পারেন।
আপনি হয়ত লক্ষ্য করতে পারেন যে,13 মাস বয়সের মধ্যে আপনার শিশুটি আরও স্থির হয় এবং একটি ঘুমের রুটিনের মধ্যে নিজেকে প্রায় খাপ খাইয়ে মানিয়ে নেয়। তবে মাঝেমধ্যে আবার এই ধারাটিতে বিঘ্ন ঘটতে পারে তার দাঁত ওঠা,বিকাশজনিত সমস্যার কারণে এবং কখনও কখনও আবার অসুস্থতার কারণেও।তবে একটা গড় হিসাব মত,আপনার শিশু 24 ঘন্টার মধ্যে 11-14 ঘন্টা ঘুমাবে।এটিকে আরও বিভক্ত করা যেতে পারে এক কিম্বা দুবার দিবা নিদ্রায় এবং অবিচ্ছিন্ন ভাবে একবার রাত্রিকালীন ঘুমের মধ্যে।
বয়সের এই পর্যায়ে সহজেই বিভ্রমবোধ করা আপনার ছোট্ট টলটলায়নকারীর ক্ষেত্রে খুবই সাধারণ এবং সে হয়ত আবার এমনকি ঘুমাতে যেতেও প্রত্যাখ্যান করতে পারে।এর কারণ সে তার চারপাশের জিনিসগুলির প্রতি এতটাই প্রলুন্ধ হয়ে ওঠে যে সেগুলিকে সে তখনি অণ্বেষণ করতে চায় এবং সেক্ষেত্রে ঘুমটা তার কাছে একটি নিরর্থক কাজ বলে মনে হয়।আপনার সন্তান যদি ঘুমাতে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমানে বাধা দিতে থাকে,তবে সেই মুহূর্তে তাকে সেটি করার জন্য জোর করবেন না।এক্ষেত্রে ঘুমের একটা পরিবেশ ও একটা নির্দিষ্ট সময়সূচী তৈরী করা এবং তার সাথে যুক্ত থাকা আপনার একান্ত প্রয়োজন।এছাড়াও আবার ভাল ঘুম হওয়াকে প্ররোচিত করার আরেকটি ভাল উপায় হল ঘুম পাড়ানোর আগে আপনার শিশুকে উষ্ণ জলে স্নান করানো।
আগের তুলনায় আপনার ছোট্টটি এখন আরও বেশি সক্রিয় এবং খেলুড়ে হয়ে ওঠে এবং সে এই সময় সবকিছুতেই খেলতে চায় এবং তার মজা পেতে চায়,কিন্তু আপনি হয়ত তাকে এগুলিতেও খুব সহজেই বিরক্ত হয়ে উঠতে লক্ষ্য করতে পারেন।এখন এখানে প্রশ্ন হল আপনার সন্তানকে ফলপ্রসূভাবে সক্রিয় রাখতে এবং সেই সাথেই তাকে খুশি করে তুলতে আপনি কি করতে পারেন।বিশেষ ভাবনা চিন্তার কিছু নেই,এখানে আমরা কিছু মজাদার ক্রিয়াকলাপ এবং খেলাধূলার উল্লেখ করলাম যেগুলির মধ্যে আপনি আপনার টলটলায়মান আখ্যানধারীকে ব্যস্ত রাখতে পারেনঃ
আপনার সন্তানের টিকাদানের একটা সময়সূচী গড়ে তুলে সেটি মেনে চলা এবং তার সাথে নিয়ম করে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।তবে আপনি যদি আপনার সন্তানের 12 মাস বয়সের কোনও টিকা দেওয়ানো বাদ দিয়ে থাকেন তবে সেটি আপনি এই সময় দিয়ে নিতে পারেন,তবে অবশ্যই সেটি আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনার পরেই।এখানে এক–বছর বয়সের কিছু টিকাদানের উল্লেখ করা হল যেগুলি হয়ত আপনার ডাক্তারবাবু আপনার ছোট্টটির জন্য সুপারিশ করে থাকতে পারেনঃ
এখানে মা–বাবাদের উদ্দেশ্যে কিছু পরামর্শ দেওয়া হল যেগুলি তাদের 13 মাস বয়সী শিশুদের আরও ভালভাবে যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারেঃ
একই বয়সের অন্যান্য শিশুদের সাথে নিজেদের সন্তানের বৃদ্ধি এবং বিকাশের মাইলফলকগুলির তুলনা করাটা বাবা–মায়েদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক।প্রতিটি শিশুই অনন্য এবং তাদের প্রত্যেকের যাত্রাপথে তারা পৃথক,আর সেই কারণেই এই তুলনা করার পরামর্শ আপনাকে দেওয়া হয় না।তবে আপনি যদি লক্ষ্য করেন যে আপনার সন্তান তার বয়সানুযায়ী যে সকল সাধারণ মাইলফলকগুলি অর্জন করা উচিত সেগুলিও না অর্জন করে থাকে,আপনি আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিতে পারেন।আপনি যদি আপনার সন্তানের মধ্যে নিম্নলিখিত উন্নয়নমূলক বিলম্বগুলি লক্ষ্য করে থাকেন,আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে সে ব্যাপারে কথা বলুনঃ
আপনি যদি উপরে বর্ণিত কোনও লক্ষণ অথবা এই বয়সের বাচ্চার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক বলে মনে হওয়া অন্য যেকোনও লক্ষণ আপনার শিশুর মধ্যে লক্ষ্য করে থাকেন,সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেওয়া উচিত।