আপনার সন্তানটি যখন ছোট থাকে তখন সময় কীভাবে যে ফুরিয়ে যায়!সে ক্রমশ বেড়ে ওঠে এবং সমানে চলতে চাওয়ার দরুণ সে ক্রমশই একের পর এক তার অনুপাতে কঠিন কাজগুলি করার চেষ্টা করে চলে তা সে হামাগুড়ি দিয়েই হোক, নৌযানের ন্যায় কোনও আসবাব বা অন্য কিছু ধরে ঘষে ঘষে চলাই হোক কিম্বা টলমল করে হেঁটেচলার মাধ্যমে।এটি তার কাছে বৃহৎ এক নতুন বিশ্ব যা তার শেখার জন্য উত্তেজনাময় নতুন নতুন জিনিসে পূর্ণ,সে তার নতুন অর্জিত সঞ্চালন দক্ষতাগুলি পরীক্ষা করার জন্য সেগুলি অণ্বেষণ করতে যায়।
এই বয়সে যদিও সে ঢেউয়ের ন্যায় তার হাতগুলিকে দুলিয়ে দুলিয়ে “টাটা” বলার একজন দক্ষ পারদর্শী হয়ে উঠতে পারে,সে আবার এমনকি “মামা” এবং “দাদা“র মধ্যে সঠিক পার্থক্যটাও বুঝতে পারে এবং তা বলতেও সক্ষম হয়।সে যত না তার মুখে বলতে পারে তার থেকেও অনেক বেশি সে বুঝতে সক্ষম হয়।
প্রতিদিন একটু একটু করে হাঁটার সাথে সাথে আপনার সন্তানের আত্মপ্রত্যয়টিও বাড়তে থাকে।সে তার হাঁটাচলার প্রক্রিয়াটি শুরু করতে এবং প্রয়োজনে থামতে এখন আরও বেশি সহজে এবং ভালভাবে সক্ষম হতে চলেছে,আবার এমনকি সে এখন আরও বেশি প্রশংসনীয়ভাবে নিজেকে দাঁড়ানো অবস্থায় উন্নীত করতেও সক্ষম হবে।সদ্য হাঁটতে শেখা শিশুদের আবার বিভিন্ন জিনিসগুলিকে নিপূণভাবে ব্যবহারের প্রতি দুর্দান্ত অনুরাগও থাকে,আপনি হয়ত তার চলাফেরার কাজে ব্যবহার করা অনেক জিনিসই তার চারপাশে ছড়িয়ে থাকতে দেখতে পারেন,সে অক্লান্তভাবে সারাদিন ধরে যা করতে পারে তা হল সেই সকল জিনিসগুলিকে সমানে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যেতে।
এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলি এই বয়সে আপনার সন্তানের মধ্যে বিকাশ পেতে থাকে।সে অসংখ্য শারীরিক বিকাশ এবং সঞ্চালন দক্ষতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে যেতে থাকে,যা তাকে নতুন নতুন জিনিসগুলি চেষ্টা করার জন্য প্ররোচিত করে।আবার এর সাথেই শৈশবকালের এই বয়সেই,তার মধ্যে অসংখ্য সামাজিক,আবেগীয়,মানসিক এবং যোগাযোগমূলক বিকাশগুলিও হতে শুরু করে।
এখানে 14 মাস বয়সী শিশুর বেশ কিছু বিকাশমূলক মাইলফলকগুলির উল্লেখ করা হল যেগুলি আপনার সন্তানের মোটামুটি তার এই বয়সেই ছুঁয়ে ফেলা উচিতঃ
এই বয়সে আপনার টডলার পদাধিকারীটির মুখ দিয়ে অসংখ্য বার “না” শব্দটি বলতে শোনার জন্য প্রস্তুত হন।কেবল খুব সীমিত কিছু শব্দ এবং অঙ্গভঙ্গীর দ্বারা তার প্রয়োজনগুলি বোঝাতে সক্ষম হওয়ার কারণে সে হয়ত মাঝেমধ্যে মুষড়ে পরতে পারে।আর সদ্য হাঁটতে শেখা ছোট্ট শিশুরা তাদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে প্রায়শই নেতিবাচক আচরণ প্রয়োগ করা শুরু করে।তারা তাদের সদ্যলব্ধ স্বাধীনতাকে পরীক্ষা করে দেখতে পছন্দ করে এবং আপনি হয়ত আপনার সন্তানের জন্য কিছু সীমা নির্ধারণের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করতে পারেন।তবে এ ব্যাপারে আপনার এবং আপনার সঙ্গীর একমত হওয়া প্রয়োজন।
আপনার সন্তান হয়ত এই সময় ভীষণ একগুঁয়ে স্বভাবের হয়ে উঠতে পারে এবং সে যা করতে চায় তার জন্য জিদ করতেও পারে।সে হয়ত তার নিজের জুতো নিজেই পরতে কিম্বা নিজের গ্লাসে নিজেই তার খাওয়ার জন্য জ্যুসটিকে ঢালতে চাইতে পারে,যদিও সে সেই কাজগুলি নিজে করার মত সমর্থ এখনই হয়ে ওঠে না।আর এগুলির জন্য মাঝেমধ্যে আপনার ছোট্টটিকে বেশ বেপরোয়া বলে আপনার মনে হতে পারে কিন্তু সবসময় মনে রাখবেন যে,সে বিশ্ব সম্পর্কে জানতে,বুঝতে এবং কীভাবে সেটির সাথে যোগাযোগ করতে পারা যায় তা শেখার জন্যই কেবল খুব সাধারণভাবেই যতটা সে পারে তার সবটাই করতে চায়।
অন্যদেরও কিছু অনুভূতি রয়েছে সে ব্যপারে এই বয়সের শিশুদের পক্ষে বুঝতে সক্ষম হওয়াটা বাস্তবিকই কঠিণ।যদি আপনার শিশু তার খেলার সঙ্গীকে আঘাত করে বসে এবং তার খেলার সঙ্গীটিও তৎক্ষণাৎ আর্তনাদ করে ওঠে,আপনার সন্তান হয়ত তখনই থেমে যাবে এবং তার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করবে,কিন্তু আপনার ছোট্টটি তখন এটি বুঝতে সমর্থ হবে না যে তার খেলার বন্ধুটি ব্যথা পাওয়ার কারণে সেই আর্তনাদটি করছে।এই পরিস্থিতিতে, আপনার সন্তানের কাছে গিয়ে তাকে দৃঢ় ভাবে আপনার বলা প্রয়োজন যে আঘাত করলে তা ব্যথা দেয় এবং এর পরেও যদি সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হয়ে থাকে তবে সেই পরিস্থিতি থেকে তাকে সরিয়ে নিয়ে যান।ছোট শিশুরা আবার প্রায়শই নিরাশা থেকেও এই ধরণের কাজ করে থাকে।
এই বয়সে এসে আপনার সন্তান তার বয়স অনুপাতে আগের তুলনায় কম খাবে।এই সময় শিশুদের বৃদ্ধির গতি কিছুটা শ্লথ হতে থাকে,আর সেই কারণেই তাদের মধ্যে অন্য বয়সী বাচ্চাদের মত খাদ্যের চাহিদা দেখা যায় না।এই জন্য মাঝেমধ্যে এটা বোঝা সত্যিই কঠিন হয়ে ওঠে যে তারা প্রকৃত পুষ্টি পাচ্ছে কিনা।এখানে 14 মাস বয়সী শিশুর একটি খাদ্য চার্ট দেওয়া হল যা আপনি ব্যবহার করতে পারেন এটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে আপনার সোনাটি সঠিক ভাবে বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য তার প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টিই পাচ্ছে।
এটি হল এই বয়সে আপনার সন্তানের ডায়েটে অন্তর্ভূক্ত করার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য,কারণ দুধ হল ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন D এর সমৃদ্ধ উৎস,আর এই দুটিই আপনার সন্তানের হাড় এবং দাঁতকে শক্তিশালী করতে এবং উন্নত করে তোলার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে।
খেলাধূলা করার জন্য এবং সব ব্যাপারে অনুসন্ধিৎসু হয়ে, উঠে–পড়ে অণ্বেষণ চালানোর জন্য আপনার 14 মাস বয়সী ছোট্টটির প্রয়োজন প্রচুর এনার্জি,আর সেটি পাওয়ার একটি দুর্দান্ত উপায় হল তার ডায়েটের সাথে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যগুলির সংযোজন।মাংস এবং শিম্ব গোত্রীয় ডালগুলি হল প্রোটিনের দুটি স্বাস্থ্যকর উৎস।এক্ষেত্রে ডিমকেও গণনা করা হয়ে থাকে,আর ডিমের ভরতার মত একটা সাধারণ খাদ্যপদও এক্ষেত্রে আপনার বাচ্চার জন্য একটি মজাদার খাদ্য হয়ে উঠতে পারে।
পরিশোধিত শস্য দানা বা তার গুঁড়োর পরিবর্তে সম্পূর্ণ দানা শস্যগুলি আপনার সন্তানকে খাওয়ানোর জন্য ভাল,কারণ এগুলি ফাইবার বা তন্তু সমৃদ্ধ হয়ে থাকে এবং কম শর্করাযুক্ত হয়।
প্রতিদিন এক কাপ ফল এবং এক কাপ সবজি আপনার বাচ্চাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া থেকে দূরে রাখতে পারে,কারণ এগুলি হল আপনার সন্তানকে পরিবেশন করার জন্য সবচেয়ে বেশি পুষ্টিকর খাদ্য।এগুলি আপনার সন্তানের সঠিকভাবে বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ খনিজ এবং ভিটামিনগুলিকে সরবরাহ করে থাকে।
আপনার টলমল করে হেঁটে চলা ছোট্টটি প্রতিদিন কমপক্ষে 13-14 ঘন্টা ঘুমিয়ে কাটাবে।এই বয়সের শিশুরা সাধারণত রাত্রি বেলায় 11 ঘন্টা মত ঘুমায় আর তাদের বরাদ্দ ঘুমের বাকিটা দিবানিদ্রার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করে।তবে সব শিশুদের ক্ষেত্রে সেটি কখনই অনুরূপ হয় না,যখন নাকি এই একই বয়সের কিছু বচ্চা আবার অন্যদের তুলনায় বেশি সময় ধরেই ঘুমাতে ভালোবাসে।আপনার সন্তান যদি একটু বেশি রাত করে ঘুমোতে পছন্দ করে বলে মনে হয়,সেক্ষেত্রে তাকে ঘুমে আচ্ছন্ন করে তুলতে সহায়তার জন্য একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় রাত্রিকালীন ঘুমের রুটিন তৈরী করে তা প্রয়োগের চেষ্টা করুন।একটি উষ্ণ স্নান এবং তারপর তার প্রিয় বইটিকে নিয়ে তার সামনে গুনগুন করে পড়লে তা তাকে আরও আরামদায়কভাবে ঘুমে য়াচ্ছন্ন হতে সাহায্য করবে।
কখনও কখনও আপনার শিশুকে দিনের বেলায় বেশি সময় ধরে ঘুমোতে সমর্থন করার কারণটিও তার রাত্রি বেলায় সঠিকভাবে ঘুমের ক্ষেত্রে প্রতিবব্ধক হয়ে দাঁড়ায়,সুতরাং বিছানায় শুতে যাওয়ার সময় তার পুরোপুরি ঘুমে ঢুলে পড়ার বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে তাকে দিনের বেলায় সক্রিয় এবং ব্যস্ত রাখার বিষয়টি সর্বদা নিশ্চিত করুন।
বেশ কিছু মজাদার উপায়ের মধ্য দিয়ে আপনার টলমল করে হেঁটে চলা ছোট্ট ব্যক্তিটি তার খেলনা ব্লকগুলির সাথে,খেলনা গাড়িগুলির সাথে ও এ ধরনের আরও অনেক কিছু খেলনার সাথেই খেলা করা শিখতে সক্ষম হবে,কাগজ এবং মোম রঙগুলিকে নিয়ে মনের আনন্দে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানোর জন্য তার সামনে রাখার অনুমতি দিন এবং এ ধরণের আরও অন্যান্য ক্রিয়াকলাপগুলিও তাকে করতে উৎসাহ দিন।
যখন আপনার ছোট্টটির সাথে একসাথে সময় কাটান,তখন তার সামনে বাচ্চাদের কোনও বই নিয়ে তার সাথেই একসঙ্গে সেটি পড়াও হল শিখনে উৎসাহ দেওয়ার একটি মজাদার উপায়।এমন বই চয়ন করুন যা উজ্জ্বল রঙ বেরঙের ছবিতে পূর্ণ,যাতে আপনার সন্তান সেই বইওটিকেও অত্যন্ত উৎসাহের সাথে উপভোগ করতে পারে।আপনার সন্তানের সামনে আপনার বই পড়ার অভ্যাসটি তাকেও খুব ছোট বয়স থেকেই বই পড়ার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করে তোলে এবং পরিশেষে তা তার একটি সুঅভ্যাসে পরিণত হয় যা তার জীবনের পরবর্তিতে ভীষণভাবে কার্যকর হয়ে ওঠে।এটি আবার তার ভাষা এবং যোগাযোগ দক্ষতার এক বিস্তীর্ণ ক্ষেত্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও সহায়ক হয়ে উঠবে।
আপনার সন্তানকে একজন সুখী শিশু হিসেবে সুস্থ–সবলভাবে বড় করে তুলতে সহায়তার জন্য এখানে কয়েকটি পরামর্শ এখানে দেওয়া হলঃ
যদি আপনার সন্তান তার চারপাশের পরিবেশে ঘটা বিষয়গুলি বুঝতে পারার কোনও লক্ষণ প্রকাশ না করতে পারে,সেক্ষেত্রে তার কোনও সমস্যা থাকতে পারে।যদিও সব বাচ্চাই একই সময়ে তাদের মাইলফলকগুলি ছুঁতে পারে না,কিন্তু একটি 14 মাস বয়সী শিশুর মধ্যে যদি তার চারপাশের প্রতি কোনও রকম উৎসাহ প্রকাশ করতে না দেখা যায় এবং তার মধ্যে কথা বলার এবং যোগাযোগ গড়ে তোলার কোনও প্রয়াস পরিলক্ষিত না হয়,সেক্ষেত্রে তার মধ্যে হয়ত কিছু সমস্যা থাকতে পারে।এ ব্যাপারে আপনি অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারবাবুকে দেখিয়ে নেবেন।
আপনার ছোট্টটি যেহেতু এখন নিজে নিজেই তার চারপাশে ঘুরে বড়া্তে পারে,তাই সে অনুভব করে যে সে তার পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে সমানভাবে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে,যেখানে এর আগে অবধি সে ছিল কেবল একজন পরিদর্শকের ভূমিকায়।আপনার সন্তানের পিছু পিছু ছুটে চলা এবং কিভাবে পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করতে হয় তা তাকে শিখিয়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া যদিও আপনার ক্ষেত্রে খুব একটা সহজ হয়ে উঠবে না,কিন্তু সেটি ভালভাবেই সম্পন্ন করতে হবে।সর্বদা মাথায় রাখবেন আপনার সন্তানের সামনে বা ধারেকাছে যেকোনও শব্দ বলার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে এবং এমন কোনও কাজ তার সামনে করবেন না যা তার করা বা শেখা উচিত নয়।