আপনার টডলার পদাধিকারীটির বিকাশ এক বিস্ময়কর হারে হয়ে চলেছে এবং আপনি তা জানতে পারার আগেই সে তার বয়স এক বছরের বেশি অতিক্রম করে ফেলেছে।
একটি 15 মাসের শিশুর অনেকগুলি মাইলফলক থাকে এবং আপনার সন্তান একজন সুস্থ ও সুখী শিশু হয়ে ওঠার জন্য সেগুলির সবকটিই অর্জন করবে।আপনার ছোট্টটি বেড়ে ওঠার সাথে সাথে তার মৃদু হাসিগুলি থেকে শুরু করে প্রাণ খোলা অট্টহাসির মত জীবনের ছোটখাটো থেকে বৃহৎ মুহূর্তগুলির সবকিছুরিই সাক্ষী আপনি থাকবেন একজন অভিভাবক হিসেবে।
আপনার 15 মাস বয়সী টলটলকারীটি তার জ্ঞানীয় দক্ষতা,সঞ্চালন দক্ষতা এবং ভাষার দক্ষতার রূপায়ণে দ্রুততার সাথে উন্নতি করতে থাকে।এই সময় সে বিভিন্ন মাইলফলকগুলি অর্জন করবে এবং সে তার চারপাশের কথাগুলিকে বুঝতে এবং চট করে ধরে ফেলতেও শুরু করবে।
আপনার ছোট্ট ব্যক্তিটির পিছু পিছু ছোটা আপনাদের দুজনের ক্ষেত্রেই যেমন স্বাস্থ্যকর হতে পারে তেমনি আবার একই সাথে তা বেশ মুশকিলও হয়ে উঠতে পারে,তবে আপনাকে দ্রুত শিখে ফেলতে হবে কীভাবে আপনার ছোট্টটির সাথে সারা ঘর জুড়ে চলতে হবে।এখন প্রতিদিনই আপনি আপনার সন্তানকে পূর্ব দিনের তুলনায় আরও বেশি করে শারীরিক লক্ষ্যগুলি পূরণ করতে দেখবেন।এখন আপনার 15 মাস বয়সী শিশুর ওজন হবে মোটামুটি প্রায় 21-24 পাউন্ড মত,যা সে অর্জন করবে স্তন দুধ সহ অন্যান্য পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য বিকল্পগুলি থেকে।
আপনার ছোট্ট মিষ্টিটি এই সময় করতে সক্ষম হবে এমন কিছু বিষয় হলঃ
পরিবেশের সাথে যোগাযোগ করার জন্য আপনার সন্তানের মধ্যে তার বিভিন্ন দক্ষতার বিকাশ হতে থাকে,যার মধ্যে তার সামাজিক দক্ষতা এবং আবেগীয় বিকাশও অন্তর্ভূক্ত।
আপনার সন্তানের আবেগীয় বিকাশের বেশ কিছু নিশ্চিত লক্ষণ এখানে উল্লেখ করা হলঃ
সময়ের সাথে আপনার ছোট্ট টলমলকারীটি তার 15 মাস বয়সে পৌঁছে যায়, “মা“, “বাবা“,”দাদা” ইত্যাদির মত সহজ উচ্চারণের কিছু শব্দ সে বলতে সক্ষম হয়।তার ভাষা এবং জ্ঞানীয় দক্ষতা দ্রুততার সাথে বৃদ্ধি পেতে থাকে,এই সময় আবার আপনার শিশুটি আরও বেশি স্বাধীন হয়ে উঠবে আর সে তার নিজের মত করে কথপোকথনে স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করতে শুরু করবে।
অধিকাংশ 15 মাস বয়সী শিশুরা যেগুলিতে সক্ষম হয়ে থাকে সেগুলি হলঃ
যেহেতু আপনার ছোট্ট ব্যক্তিটি এখন জনপ্রিয়ভাবে পরিচিত “ভয়ানক দুই“-এর পথে অভিগমন করতে থাকে অর্থাৎ 24 মাস বা দুই বছরে,তার মধ্যে তার নিজস্ব একটি ব্যক্তিত্ত্বের বিকাশ হতে শুরু করবে এবং আপনাকে হয়ত তার কিছু বদমেজাজের ধকল সইতে হতে পারে।আপনার শিশুটি আবার তার চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে ভীষণ কৌতুহলী হয়ে উঠবে এবং সবকিছুতেই বেশ অংশগ্রহণমূলক হয়ে উঠবে।যখন একসাথে অনেক জিনিস আসে আপনার 15 মাস বয়সী ছোট্টটি আবার কিছুটা তার একগুঁয়ে স্বভাবও প্রকাশ করতে শুরু করতে পারে,এক্ষেত্রে একজন অভিভাবক হিসেবে আপনার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনার আরও ধৈর্যশীল হয়ে ওঠা ও সে ব্যাপারে দৃঢ় হয়ে উঠে প্রথমে তাকে শান্ত করে তোলা এবং তার এই সংহারক আচরণকে প্ররোচিত না করা।যদিও এটি আপনার সন্তানের ক্ষেত্রে করা খুব সহজ নয়,তবে আবার খুব কঠিনও নয়।ধৈর্য ও সংযমই হল আপনার ছোট্টটির আচরণ নিয়ন্ত্রণের মোক্ষম চাবিকাঠি।
যেহেতু আপনার টলমল করে হেঁটে চলা ছোট্টটি ক্রমশ বেড়ে চলে,তাই তার খাদ্য এবং পুষ্টির দিকটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের ডায়েটের একটি মূল উপাদান হল স্তন দুধ।একটি 15 মাস বয়সী শিশুর খদ্যের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সকল পুষ্টিকর উপাদানই স্তন দুধের মধ্যে থাকে।শুধুই তাই নয় এটি আবার বাচ্চার অনাক্রম্যতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে,অতএব স্তন দুধ তাকে বেশিরভাগ অসুস্থতা থেকেই রক্ষা করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুপারিশ করে, বাচ্চাদের 2 বছর বয়স পর্যন্ত তাদের স্তন দুধ পান করানো অব্যহত রাখতে, তবে এর সাথে আবার বেশ কিছু পরিপূরক এবং শক্ত খাবার ও ফরমূলা দুধও খাওয়ানো প্রয়োজন।যদিও মনে রাখা প্রয়োজন যে,স্তন দুধের স্থানে ফরমূলা দুধ কখনই বিকল্প হয়ে উঠতে পারে না।একজন 15 মাস বয়সী শিশুর মায়ের উচিত তার সন্তানকে কমপক্ষে 3-4 বার করে স্তন পান করানো।এটা কিছুটা কঠিন হয়ে উঠতে পারে বিশেষ করে যদি আপনি একজন কর্মরতা মহিলা হয়ে থাকেন।সুতরাং সেক্ষেত্রে আপনি স্তন পাম্প করে রাখার একটি সময়সূচী নির্ধারণের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন যাতে আপনার ছোট্টটি তার প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত স্তন দুধ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।আবার এর সাথেই ভিন্ন গঠণের খাদ্যগুলিও আপনার সোনাকে তার এই বয়সে দেওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ যাতে সে তার পেষক বা কসের দাঁতগুলিকে ব্যবহার করতে শেখে এবং তার খাবারগুলি চিবিয়ে খাওয়া শুরু করে। আপনার সন্তানের জন্য একটি খাদ্য সময় সূচী প্রস্তুত করুন যার মধ্যে আবার সারাদিনের মধ্যে দুটি জলখাবারও অন্তর্ভূক্ত থাকবে যাতে সে শক্ত খাবারগুলিকেও খাওয়া শুরু করতে পারে।আর আপনি যদি আপনার সন্তানকে স্তন দুধ ছাড়ানোর পরিকল্পনা করে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে সেটি করার চেষ্টা করুন এবং কখন সে অভ্রান্তচিত্তে আত্মবিশ্বাসের সাথে বুকের দুধ পান করা ছেড়ে দিতে পারবে তা বুঝে সেরূপ স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
এই বয়সে আপনার সন্তানের ব্যক্তিত্ত্বের বিকাশ ঘটবে এবং তার ভাললাগা ও না ভাললাগার জিনিসগুলির মধ্যে সামাণ্য পার্থক্য দেখা দিতে শুরু করবে।আপনার ছোট্টটির আবার এই সময় থেকেই দাঁত ওঠা শুরু হবে যা তাকে তার ঘুমের সময় অনবরত অস্থির ও অস্বস্তিময় করে তুলবে।আপনার সোনা আবার এই সময় আপনাকে আলিঙ্গন করে একটানা 3-4 ঘন্টা ঘুমাতেও পছন্দ করে।বিকেলের দিকে ঘুমিয়ে পড়াটা আবার তার একটি সাধারণ পুনরাবৃত্তি হয়ে দাঁড়াবে কিন্তু আপনাকে তার ঘুমগুলিকে ছোট ছোট সংক্ষিপ্ত পরিসরের মধ্যে ভেঙ্গে দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে যাতে রাত্রিবেলায় সে গভীরভাবে একটানা ঘুমাতে পারে সে ব্যাপারটিকে নিশ্চিত করার জন্য।এক্ষেত্রে ঘুমের আগের একটা রুটিন তৈরি করে নেওয়া এবং তা নিয়ম করে মেনে চলা শুরু করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাতে আপনার ছোট্টটি অভ্যস্ত হয়ে প্রতিদিন একই সময় ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়তে পারে।আপনার সন্তানের ঘুমের পরিবেশটিকে যথা সম্ভব সুসংগত রাখুন তার ঘরের তাপমাত্রা,ঘুমানোর অবস্থান,খেলনা ইত্যাদিগুলি যথা স্থানে রাখার মাধ্যমে যাতে আপনার ছোট্টটি তার সমস্ত ভয় কাটিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ঘুমিয়ে বিশ্রাম নিতে পারে।
একটি স্বাস্থ্যকর ছন্দে বড় হওয়ার ক্ষেত্রে আপনার সাথে আপনার সন্তানের বন্ধনটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।আপনার ছোট্টটি আবার বাড়ির চারপাশের সকল বিষয়গুলির ক্ষেত্রে সাহায্য করতে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করবে এবং তার সাথেই নতুন নতুন দক্ষতাও সে শেখা শুরু করবে।নতুন ক্রিয়াকলাপের সাথে পরিচয় করানো এবং সেগুলি শেখানোর সর্বোত্তম একটি উপায় হল আপনার 15 মাস বয়সী ছোট্ট শিশুটির সাথে খেলার ছলে তাকে সেগুলি শিখানো।আপনার সোনাটি এখন টুকি–টুকি খেলার একজন দক্ষ পারদর্শী হয়ে উঠবে,তাই সমানে সেটি করার মাধ্যমে সেটিকে তার অভ্যাসে গড়ে তুলুন।আপনি আবার আপনার ছোট্টটিকে বিভিন্ন পশু–পাখির ডাকগুলি করে শোনানোর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পশু–পাখিগুলির নামগুলিও শেখানোর চেষ্টা করতে পারেন।
আপনার সোনার সাথে করা আরেকটি মজাদার ক্রিয়া হতে পারে তার সাথে লুকোচুরি খেলা।আপনার টলমল করে হেঁটে চলে বেড়ানো ছোট্টটি তার এই বয়সে টুকি–টুকি খেলাটিকে ভীষণ মাত্রায় ভালোবাসার কারণহেতু লুকোচুরি খেলের ক্ষেত্রেও এটি একটি সফল অভিঘাত হয়ে উঠবে।চেষ্টা করুন আপনার ছোট্টটির সাথে বিকেলের দিকে এই খেলাগুলি খেলতে যাতে সে ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারে যা তাকে রাত্রে শান্তিতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হতে সহায়তা করবে।
আপনার ছোট্টটির সাথে খেলার আরেকটি দারুণ সুযোগ হল তাকে স্নান করানোর সময়।স্নান করানোর সময় আপনার ছোট্টটির সাথে পরিচয় করান তার স্নানের জলের উপর ভাসমান কিছু খেলনা,বলের সাথে,স্নানের জলের মধ্যে কিছু বুদবুদ সৃষ্টি করে সেটি তাকে লক্ষ্য করান এবং তার সুগন্ধি তেলের সাথেও তাকে পরিচয় করান,এগুলি আপনার ছোট্টটিকে অনেকটা আনন্দ দিতে পারে এবং সে সেগুলিতে বেশ মজাও উপভোগ করবে।আপনি আবার আপনার সন্তানের জন্য খেলার এমন একটি সময় স্থির করতে পারেন যখন আপনার টডলার আখ্যানধারী ছোট্টটি তার সম বয়সী বা কিছুটা ছোট–বড় বন্ধুদের সাথে একসাথে মিশতে পারে এবং শিখতে পারে যে কীভাবে অন্যদের সাথে জিনিস ভাগ করে নিতে হয় এবং অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে মিলেমিশে খেলতে হয়,যা তার সামাজিক দক্ষতার বিকাশে প্রভূত সহায়তা করে।
আপনি হয়ত আপনার শিশুকে তার ডাক্তারের কাছে হাম,মাম্পস এবং হেপাটাইটিসের মত কিছু নিয়মিত টিকাদান করার জন্য নিয়ে যান ঠিকই কিন্তু আপনার টলটলায়নকারীটির জন্য নিয়মিত চেক–আপের একটি চার্ট প্রস্তুত করার কথা মাথায় রাখাটাও গুরুত্বপূর্ণ্।যদি আপনার ছোট্টসোনার মধ্যে স্বাভাবিকের বাইরে কিছু হতে দেখা যায় যেমন সারাদিনে প্রস্রাব না করা কিম্বা কয়েকদিনের জন্য তা বন্ধ হয়ে যাওয়া তবে সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেওয়ার সময় এসেছে।আপনার ছোট্টটির চোখে কোনও লালচে ভাব দেখা দিলে,কিম্বা কানে ব্যথা হলে যা তাকে ভীষণ মাত্রায় অস্বস্তিদায়ক করে তুলতে পারে,একজন অভিভাবক হিসেবে আপনার সেগুলিও লক্ষ্য করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আপনার শিশুর মধ্যে কোনও কষ্ট বা সমস্যা হয়ে থাকলে তা নিশ্চিত ভাবে বোঝার লক্ষণগুলি হল তার মধ্যে অস্বস্তি দেখা দেওয়া,সমানে কাঁদতে থাকা,ঘ্যানঘ্যান করতে থাকা এবং ঘুমানো কঠিন হয়ে ওঠা।কানে ব্যথার ক্ষেত্রে আপনার ছোট্টটি আবার বারংবার তার কানে হাত দেওয়ার দ্বারা এবং চোখে কোনও সংক্রমণ হওয়ার ক্ষেত্রে সমানে তার চোখগুলিকে ঘষার চেষ্টা করার মাধ্যমে সে সংকেত প্রকাশ করে।
আপনার সন্তানের যদি 48 ঘন্টার বেশি সময় ধরে জ্বর হয়ে থাকে অথবা ঠান্ডা লেগে সর্দি–কাশি হয়ে থাকে,সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারবাবুকে দেখিয়ে নেওয়াটা জরুরী।আপনি যদি তার মলে বা অন্য কোনও কিছুতে রক্ত লক্ষ্য করেন অনতিবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যান।আপনার শিশুটি যদি কোনও কিছুতে অ্যালার্জিপ্রবণ হয়ে থাকে তাকে ডাক্তারবাবুর কাছে নিয়ে গিয়ে তাঁর পরামর্শ নিন।তার চিকিৎসাজনিত সকল ইতিহাস ডাক্তারবাবুকে জানিয়ে আপনার যা কিছু জিঞ্জাস্য তার সবকিছুই তাঁর থেকে জেনে নেওয়া এবং আপনার সাত রাজার ধন আদরের ছোট্টোটিকে সুস্থভাবে বড় করে তুলতে তাকে একটি নিয়মিত চেক–আপের মধ্যে রাখার ব্যাপারটি সুনিশ্চিত করুন।
আপনার টলমল করে হেঁটে চলা ছোট্টটি ইতিমধ্যেই অনেকগুলি মাইলফলক অতিক্রম করে ফেলেছে,আর 15 মাস বয়সটিও হল সেগুলির মধ্যেই একটি।প্রতিটি মুহূর্তের অসংখ্য ছবি ক্যামেরাবন্দি করে এবং ভিডিও করে রাখার মধ্য দিয়ে এই যাত্রাটির একটি প্রামাণ্য নথি রাখার বিষয়টি সুনিশ্চিত করুন।