In this Article
আপনি যদি গর্ভাবস্থার নবম মাসে প্রবেশ করেছেন, আপনি অবশ্যই উত্তেজিত এবং নার্ভাস। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে, আপনি আপনার বাচ্চাকে আপনার কোলে পাবেন, তবে বর্তমানে এটি অল্প সময়কেও দীর্ঘ প্রতীক্ষার মতো মনে হতে পারে। নবম মাসে আপনার বাচ্চার অবস্থান (৩৭ সপ্তাহ থেকে ৪০ সপ্তাহ পর্যন্ত) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন পর্যন্ত, আপনার আপনার পেটের ভিতর ঘুরতে এবং হাত–পা নাড়ানোর জন্য আপনার শিশুর জন্য অবশ্যই পর্যাপ্ত জায়গা ছিল। যাইহোক, ৯ম মাসে, স্থান সীমাবদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে এই জিনিসগুলি পরিবর্তন হবে। আপনার শিশুর অবস্থান পরিবর্তন করা দরকার যাতে সে কোনো জটিলতা ছাড়াই বেরিয়ে আসতে পারে।
গর্ভাবস্থার ৯ম মাসে শিশুর অবস্থানগুলি কি কি হতে পারে?
আপনার গর্ভাবস্থার নবম মাসে আপনার শিশু বিভিন্ন অবস্থানে থাকতে পারে:
১. অ্যান্টেরিয়র বা সম্মুখবর্তী অবস্থান
যখন গর্ভবতী মহিলার দেহ প্রসবের জন্য প্রস্তুত হয় তখন এই অবস্থানটি শিশুর পক্ষে সবচেয়ে সেরা এবং নিরাপদ অবস্থান। বেশিরভাগ বাচ্চা গর্ভাবস্থার ৩৩–৩৬ সপ্তাহের মধ্যে অয়ান্টেরিয়র অবস্থানে চলে যায়, যা “মাথা নিচু” অবস্থান হিসাবেও পরিচিত। এই ভঙ্গিতে, একটি শিশুর মুখ মায়ের পেছনের দিকে ঘুরে থাকে এবং তার মাথা নীচের দিকে ইশারা করে থাকে। শিশুর চিবুক তার বুকে স্পর্শ করে এবং তার মাথাটি মায়ের শ্রোণীর দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। যখন কোনো শিশু এই অবস্থানে থাকে, তখন সে তার ঘাড় এবং মাথাটি চারদিকে ঘোরাতে পারে এবং চিবুকটি বুকের দিকে বাঁকতে পারে। শিশুর মাথার সরু অংশটি জরায়ুর দিকে ধাক্কা দেয় এবং এইভাবে প্রসবের সময় এটি বেরোনোর ক্ষেত্রে সহায়তা করে। অবস্থানটিকে মেডিক্যালি অকিপুট–অ্যান্টেরিয়র বা সেফালিক প্রেজেন্টেশন বলা হয়।
২. পোস্টেরিয়র বা পশ্চাৎবর্তী অবস্থান
যখন কোনো শিশুর মুখটি গর্ভবতী মহিলার পেটের দিকে ঘুরে থাকে এবং সে একটি ‘মাথা নিচু‘ অবস্থানে থাকে, তখন এই অবস্থানকে পোস্টেরিয়র অবস্থান বলা হয়। বেশিরভাগ শিশু প্রসব শ্রমের প্রথম পর্যায়ে এই অবস্থানে চলে আসে এবং নিজেকে এমনভাবে ঘোরায় যাতে সে পূর্বের অবস্থানে পৌঁছায়। তবে প্রায় ১/৩ ভাগ শিশু ঘোরে না এবং এই অবস্থানেই থেকে যায়। এই অবস্থানটির জন্য হবু মায়ের তীব্র পিঠে ব্যথা হতে পারে এবং প্রসবের প্রক্রিয়াও দীর্ঘায়িত হতে পারে। ব্যথা তীব্র হলে গর্ভবতী মহিলাকে এপিড্যুরাল অ্যানাস্থেসিয়া দেওয়া হতে পারে।
৩. ব্রিচ পজিশন
যখন কোনো মহিলার জরায়ুতে তাঁর শিশু ‘মাথা উঁচু’ অবস্থানে থাকে এবং তার পা প্রসব খালের দিকে ইশারা করে থাকে, তখন শিশুর এই অবস্থানকে ব্রিচ পজিশন বলা হয়। এই ধরনের অবস্থানের কারণে, শিশুর মাথাটি শেষে বের হয়ে আসে যা প্রসব খালের মধ্য দিয়ে তার বেরিয়ে আসাকে জটিল করে তোলে। এটিতে আম্বলিক্যাল কর্ড জড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। যোনিপথে প্রসব করলে শিশু আহতও হতে পারে। তিন ধরণের ব্রিচ পজিশন রয়েছে, তবে তিনটি অবস্থাতেই শিশুটি প্রসব খালের দিকে তার শরীরের নীচের অংশ দিয়ে থাকে।
নীচে তিন ধরণের ব্রিচ পজিশন দেওয়া রয়েছে।
- ফুটলিং ব্রিচ: যখন শিশুর পা দুটি নীচের দিকে প্রসব খালের দিকে ইশারা করে থাকে, তখন তাকে ফুটলিং ব্লিচ অবস্থান বলা হয়।
- ফ্রাঙ্ক ব্রিচ: যখন শিশুর পা সোজাভাবে তার শরীরের সামনের দিকে ইঙ্গিত করে, তার পাছা প্রসব খালের মুখোমুখি হয় এবং তার পায়ের পাতা প্রায় মাথার কাছে থাকে, তখন সে এই অবস্থানে থাকে।
- কমপ্লিট ব্লিচ: এই অবস্থানে, শিশুর পাছা নীচের দিকে প্রসব খালের দিকে নির্দেশ করে এবং পা দু‘টি পাছার কাছে ভাঁজ করে থাকে।
আপনি যখন আপনার গর্ভাবস্থার শেষ সপ্তাহে প্রবেশ করেন এবং আপনার শিশুটি ব্রিচ পজিশনে থাকে, তখন আপনার চিকিত্সক শিশুটিকে “মাথা নিচু” অবস্থানে নিয়ে আসার জন্য কিছু কৌশল সম্পর্কে পরামর্শ দিতে পারে। এক্সটার্নাল সিফালিক ভার্সন (ইসিভি) নামে একটি প্রযুক্তি বেশ সাধারণ এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়। ইসিভি চলাকালীন, পেটে চাপ প্রয়োগ করা হয়, যা গর্ভবতী মহিলার জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর হলেও একেবারেই নিরাপদ। পেটে চাপ প্রয়োগ করার সময়, শিশুর হার্টবিটটি নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য নিবিড়ভাবে এবং অবিরাম পর্যবেক্ষণ করা হয়। তবে মহিলার যোনিতে রক্তক্ষরণ হলে বা গর্ভে যমজ সন্তান থাকলে ইসিভি করা উচিত নয়। এই কৌশলটি এড়ানো হয় যখন প্লেসেন্টাল অস্বাভাবিকতা থাকে এবং ভ্রূণের হার্টেবিটের হার অস্বাভাবিক হয়।
৪. ট্রান্সভার্স লাই
যখন শিশু জরায়ুতে একটি অনুভূমিক অবস্থানে থাকে, তখন অবস্থানটি ট্রান্সভার্স লাই হিসাবে চিহ্নিত হয়। বেশিরভাগ শিশু প্রসবের আগেই প্রসব খালের দিকে মাথা ঘুরিয়ে নেয়। তবে এই অবস্থায় থাকা একটি বিরল ঘটনা এবং এটির জন্য আগে থেকে প্রস্তুত হওয়া উচিত। সাধারণত, যদি শিশুটি ট্রান্সভার্স লাই অবস্থানে থাকে তবে সিজারিয়ান প্রসবের পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ শিশুটি বের হওয়ার আগেই আম্বলিক্যাল কর্ড বেরিয়ে আসার কিছুটা সম্ভাবনা থাকে। যদি এটি ঘটে তবে চিকিত্সক জরুরী সি–সেকশন করতে পারেন।
কোনও শিশুকে ‘মাথা নিচু’ অবস্থানে নিয়ে আসতে সহায়তা করার টিপস
যদি শিশু প্রসবের জন্য সঠিক অবস্থানে না থাকে তবে প্রসবের সময় জটিলতা দেখা দিতে পারে। আপনি নয় মাসের গর্ভবতী হলে আপনার সন্তানের অবস্থান পরিবর্তন করতে আপনি নিম্নলিখিত টিপস ব্যবহার করতে পারেন:
- আপনি যখনই বসবেন তখন নিশ্চিত করুন যে আপনার পাছা আপনার হাঁটুর চেয়ে উচ্চ স্তরে থাকে।
- আপনি যখন বসে থাকবেন তখন আপনার শ্রোণীটি সামনের দিকে এগিয়ে রাখুন এবং এটিকে পেছনের দিকে ঠেলে রাখবেন না।
- দিনের কিছু সময় এক্সারসাইজ বল বা প্রেগন্যান্সি বলে ব্যয় করুন।
- আপনি যদি গাড়িতে ভ্রমণ করেন, তবে আপনার পাছা উঁচুতে রাখতে একটি আরামদায়ক কুশন ব্যবহার করুন।
- আপনি যদি আপনার গর্ভাবস্থার নবম মাসে কাজ করছেন, তবে খুব বেশি সময় ধরে চেয়ারে বসে থাকবেন না। প্রায়শই বিরতি নিন এবং কিছু সময়ের জন্য উঠে দাঁড়ান।
- আপনার বাচ্চাকে অয়ান্টেরিয়র অবস্থানে সরানোর জন্য দিনের বেলা কয়েকবার আপনার হাত এবং হাঁটুতে ভর দিয়ে মেঝেতে ঝুঁকুন।
কিভাবে শিশুকে সঠিক অবস্থানে রাখবেন
আপনার শিশুকে আদর্শ অবস্থানে আনতে আপনার দেহের অবস্থান ও গতিবিধি পরিবর্তন করার এবং সবচেয়ে আরামদায়ক অবস্থানে আনার চেষ্টা করুন:
- শিশুকে সঠিক অবস্থানে আনতে আপনার হাত এবং হাঁটুর উপর ভর দিয়ে ঝুঁকুন। তবে, আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শের পরেই এই অনুশীলনটি চেষ্টা করুন।
- আপনার সংকোচনের সময়, একটি বীন ব্যাগ, একটি প্রেগন্যান্সি বল, বিছানা বা আপনার সঙ্গীর সাহায্য নিয়ে সামনের অবস্থানে ঝুঁকতে ব্যবহার করুন। এটি শিশুকে প্রসবের জন্য সঠিক অবস্থানে আনতে সহায়তা করবে।
আদর্শভাবে, কোনো শিশু গর্ভাবস্থার সঠিক পর্যায়ে সঠিক অবস্থানে চলে আসে এবং যদি সে তা না করে তবে সে পরে প্রসবের জন্য তার অবস্থান ঠিক করে নেয় যা প্রসবের জন্য উপযুক্ত। তবে সে যদি তা না করে, তবে আপনার প্রসব অভিজ্ঞ চিকিত্সকদের দিয়ে পরিচালনা করা নিশ্চিত করুণ এবং আপনি শীঘ্রই হাসপাতাল থেকে হাসিমুখে বেরিয়ে আসবেন আপনার শিশুকে হাতে নিয়ে।