In this Article
চোখের পলক পড়া বা পিটপিট করা হল এমন এক পরিস্থিতি যেখানে আপনার নিজস্ব প্রবৃত্তি ছাড়াই অনিয়ন্ত্রিত ভাবে চোখে টান বা খিঁচুনি লাগতে শুরু করে।এটি উর্দ্ধ এবং নিম্ন উভয় চোখের পাতাতেই হয়ে থাকে যা সাধারণত নিয়ন্ত্রণ করা কঠিণ।তবে বেশির ভাগ সময়েই সেটি অক্ষতিকারক হয়ে থাকে এবং একটি সামাণ্য আন্দোলনের সহিত কেবল জড়িত থাকে যা উপেক্ষা করা যেতে পারে।যদিও এমন সময়ও আসে যখন সেটি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠতে পারে এবং এমনকি তা চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণও হয়ে উঠতে পারে।
চোখর পলক এবং গর্ভাবস্থা হল একটি সাধারণ ঘটনা যা বহু মহিলাই অনুভব করে থাকেন।এখানে তার কিছু লক্ষণ যেগুলির দ্বারা গর্ভাবস্থায় এগুলি নিজেদের প্রকাশ করে,তা উল্লেখ করা হল।
গর্ভাবস্থায় চোখের পলক পড়া বা পিটপিট করার লক্ষণগুলি
এক্ষেত্রে এমন কিছু লক্ষণ আছে যা চোখের পলক পড়ার বা পিটপিট করার ইঙ্গিত দেয়ঃ
- আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা
- খুব বেশি চোখ পিটপিট করা
- চোখগুলিকে খুব বাশি শুষ্ক অনুভব করা
- চোখগুলিতে ক্লান্তি দেখা যাওয়া
- চোখের চারপাশের অঞ্চলে অনৈচ্ছিক পেশীগুলি আন্দোলিত হওয়া
যখন আপনি গর্ভবতী,চোখের পলক পড়া বা পিটপিট করার কারণ এবং তার প্রতিকারগুলি
গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে চোখের পলক পড়া বা পিটপিট করাকে বাড়িয়ে তোলার জন্য বহু কারণ রয়েছে।এখানে তার কিছু কারণের পাশাপাশি সেগুলির প্রতিকারাওগুলিও আলোচনা করা হলঃ
1. শুষ্ক চোখ
গর্ভাবস্থায় চোখে টান বা খিঁচুনি লাগা এবং চোখের পলক পড়ার একটি সাধারণ কারণ হল শুষ্ক চোখ।এর পিছনে সবচেয়ে সাধারণ একটি কারণ হল কাজ অথবা বিনোদনের জন্য একটানা দীর্ঘক্ষণ ধরে অনবরত কম্পিউটারের স্ক্রীনের বা পর্দার উপর অথবা অন্য কোনও বৈদ্যুতিন যন্ত্রের উপর তাকিয়ে থাকা।
প্রতিকার
কাজ করার সময় আপনার চোখগুলি যাতে শুষ্ক হয়ে না ওঠে তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতি 10-15 মিনটে একটি করে ছোট্ট বিরতি নেওয়া খুব ভাল একটি উপায়।কম্পিউটারের স্ক্রীন বা পর্দার উপর তাকাবার সময়কে সীমাবদ্ধ করা অথবা অ্যান্টি গ্লেয়ার চশমা পরা এক্ষেত্রে ভাল একটি ধারণা হতে পারে।এই ধরনের চশমাগুলিতে এমন এক আবরণ আছে যা প্রতিফলকবিরোধী এবং নীল আলোগুলির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক।এই প্রকারে,এগুলি চোখের উপর চাপ পড়াকে হ্রাস করে। এমনকি কোনও ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত কৃত্রিম অশ্রু ব্যবহার করা আপনার চোখকে তৈলাক্ত করার ক্ষেত্রে একটি ভাল উপায়।এগুলি আপনার চোখের শুষ্কতা এবং জ্বালা ও অস্বস্তির উপশম করে।
2. চোখে চাপ বা টান এবং জ্বালা ও অস্বস্তি
চোখে টান লাগে বা চাপ পড়ে সাধারণত তখনই যখন আপনি এমন একটি স্ক্রীনের উপর তাকিয়ে কাজ করা শুরু করেন যেটিতে অ্যান্টি গ্লেয়ার সুরক্ষা নেই,রোদ-চশমাগুলি ছাড়াই রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে কাজ করেন অথবা কোনও বিরতি না নিয়েই দীর্ঘ সময়ের জন্য ফোন ব্যবহার করেন।আর বাহ্যিক বস্তুগুলি চোখে প্রবেশ করার কারণে চোখে জ্বালা করে ও অস্বস্তি হয় যার ফলে আপনার চোখ জলে ভরে উঠতে পারে এবং তা চোখের পলক পড়া বা পিটপিট করাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
প্রতিকার
একটি অ্যান্টি গ্লেয়ার স্ক্রীন ব্যবহার এবং গোলাপ জলের মধ্যে তুলোর বলকে ডুবিয়ে রেখে সেগুলি আপনার চোখের উপরে কিছুক্ষণের জন্য রাখাকে নিশ্চিত করুন।এমনকি শসার টুকরোও আপনার চোখের জন্য একটি শীতল প্রভাব সরবরাহ করায় সহায়তা করতে পারে।যদি আপনার চোখের ভিতরে কিছু ঢুকে যায় তবে কণাটিকে বের করতে সাধারণ হালকা গরম জল দিয়ে ভালভাবে চোখগুলি ধুয়ে নিন এবং আলতো করে মুছে নিয়ে তা শুকনো করে তুলুন।
3. চাপ
চোখের পলক পড়া বা চোখ পিটপিট করার পিছনে সর্বাধিক সাধারণ কারণটি হল স্ট্রেস বা চাপ।চাপ স্নায়ু তন্ত্রকে প্রভাবিত করে যার পরিণতিতে চখের চারপাশের অনৈচ্ছিক পেশীগুলিও প্রভাবিত হয়।এটি চোখের পলক পড়া বা পিটপিট করাকে প্রণোদিত করে।যে সকল গর্ভবতী মহিলারা প্রচুর চাপের মুখোমুখি হন,তারা চোখের পলক পড়া বা পিটপিট করার ক্ষেত্রে প্রভাবিত হতে পারেন এবং সেই কারণে তাদের চোখে ব্যথাও করে থাকে।
প্রতিকার
যদিও চাপ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুব একটা সহজ নয়,তবে চেহারায় সুস্থতা এবং আনন্দের দৃষ্টিভঙ্গী ধরে রাখার প্রয়াস চোখের চাপ কমানোর ক্ষেত্রে বিস্ময়কর ভাবে কাজ করতে পারে।চাপের মাত্রা হ্রাস করতে অনেক ভাল ভাল গান শোনার এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করুন।আপনার নিজেকে শান্ত করে তোলা নিশ্চিত করতে ধ্যান করা হল অন্য একটি সর্বোত্তম বিকল্প।
4. দাঁত কিড়মিড় এবং সিড়সিড়
দাঁত কিড়মিড় করা এবং মাড়ি সিড়সিড় করা,বিশেষ করে গভীর ঘুমের সময় এটি মুখমণ্ডলের পেশীগুলির উপরে প্রচুর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।এর ফলে চোখের চারপাশের অঞ্চলে অনৈচ্ছিক পেশীগুলিতে টান লাগে বা খিঁচুনির সৃষ্টি করে,তার ফলে চোখের পলক পড়ে বা চোখ পিটপিট করে।
প্রতিকার
যদিও ঘুমের সময় আপনার মাড়ির আন্দোলনকে সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর নয়,তবে একটি মাউথ গার্ড পরিধান করলে তা এ ব্যাপারে সহায়ক হতে পারে। এছাড়াও আবার আভ্যন্তরীণ এবং বাইরের চোয়ালগুলিকে মালিশ করলেও তা এক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।
5. ক্লান্তি এবং ঘুমের অভাব
গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পাওয়া অথবা ঠিকমত ঘুম না হওয়া বহু গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে একটি সাধারণ ঘটনা।ক্লান্তি এবং ঘুমের বঞ্চনার কারণে কেবল চোখ ব্যথা এবং পিটপিটই হয় না,এটি আবার মাইগ্রেন এবং একাগ্রতার মাত্রা হ্রাস করার মত সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার জন্যও দায়ী।
প্রতিকার
এটিকে অকার্যকর করতে,আপনি প্রতিদিন সন্তুষ্টির সহিত কমপক্ষে 8 ঘন্টা করে ঘুমানো এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া নিশ্চিত করুন।
6. ভিটামিন এবং খনিজের অভাব
ভিটামিন এবং খনিজগুলি হল আপনার দেহকে রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখার স্তম্ভ স্বরূপ এছাড়াও এগুলি আবার আপনার গর্ভস্থ ছোট্টটিকেও তার প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদানগুলি সরবরাহ করে থাকে।ম্যাগনেসিয়াম,পটাসিয়াম অথবা ক্যালসিয়ামের ভারসাম্যহীনতা আপনার চোখের পলক পড়ার বা পিটপিট করা শুরু হওয়ার কারণ হতে পারে।
প্রতিকার
আপনার শরীরের ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা নিয়মিত ভিত্তিতে পরীক্ষা করান এবং এর মাত্রা বৃদ্ধি করতে সময়ে সময়ে নিজেকে সম্পূরণ করে তুলুন কিছু ডার্ক চকোলেট খাওয়ার মাধ্যমে।
7. অ্যালার্জি
চোখে টান লাগা বেড়ে উঠতে পারে যখন পরিবেশের মধ্যে পরাগ রেণুর মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে যায়।পাখির পালক এবং পোষা প্রাণীর মত অন্যান্য অ্যালার্জেনগুলির প্রকোপের কারণেও চোখ পিটপিট বেড়ে যেতে পারে।কিছু গর্ভবতী মহিলাও আবার এই কারণে তাদের গর্ভাবস্থায় হয়ত চোখ পিটপিট করার মত অনুভূতি অনুভব করা শুরু করতে পারেন।
প্রতিকার
গোলাপ জলের মধ্যে তুলোর বলকে ডুবিয়ে রেখে সেটিকে অথবা প্রচণ্ড ঠাণ্ডা শসার টুকরোকে আপনার চোখের উপরে প্রয়োগ করার মাধ্যমে আপনার চোখগুলিকে হাইড্রেট রাখুন।এছাড়াও এই সময়ে আপনাকে কিছু শক্তিশালী ওষুধ দেওয়ার জন্য আপনি আবার একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
8. ক্যাফিন(কফিতে থাকে) এবং অ্যালকোহল
ক্যাফিন এবং অ্যালকোহলে রয়েছে এমন কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য শরীরকে শিথিল করতে সহায়তা করে।তবে অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণের সময় এই শিথিলতাগুলি মাঝে মাঝে চোখে টান লাগা বা খিঁচুনি হওয়ার কারণ হতে পারে।এছাড়াও ক্যাফিনের কারণে আবার আপনার চোখ ভারী লাগতে শুরু করে এবং চোখের পলককে বা পিটপিট করাকে বাড়িয়ে তোলে।
প্রতিকার
যখন আপনি গর্ভবতী চেষ্টা করুন ক্যাফিন বা অ্যালকোহলগুলি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে এবং নিজেকে হাইড্রেট রাখতে জল জাতীয় পাণীয় অথবা শুধুমাত্র সাধারণ জল পান করুন।
9. ওষুধ
বেশ কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ওষুধ গ্রহণের ক্ষেত্রে সেগুলির কিছু বিশেষ প্রভাব থাকতে পারে,যেমন গর্ভধারণের প্রথম দিকে চোখের পলক বার বার পড়া বা চোখ পিটপিট করা।এগুলি সাধারণত হয়ে থাকে আপনার স্নায়ু কোষের উপর ওষুধের প্রভাব পড়ার কারণে,যার ফলে চোখের পলক পড়ে বা পিটপিট করে।
প্রতিকার
এটি এড়াতে,আপনি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন এবং সেই ওষুধগুলির জন্য একটি লিখিত বিদায়-সংবর্ধনা নিন এবং এমন কিছু ওষুধের সুপারিশ করিয়ে নিন যা আপনার ব্যবহারের জন্য নিরাপদ।
10. অযথাযথ এবং ভুল চশমা
চোখ পিটপিট হওয়া সমস্যার অন্য আরেকটি কারণ হতে পারে চশমা।গর্ভাবস্থায় চোখের ভুল পাওয়ারের মত কিছু ঘটনা ঘটতে পারে বিশেষত যখন কারুর মধ্যে গর্ভাবস্থাকালীন ডায়বেটিস থেকে থাকে।কিছু বস্তু দেখার ক্ষেত্রে পরিষ্কার বলে মনে হতে না পারে এবং এটি আপনার চোখের উপর চাপ ফেলতে পারে যার ফলে চোখের পলক বার বার পড়তে পারে বা চোখ পিটপিট হতে পারে।
প্রতিকার
আপনার চশমা পরিবর্তন করতে বা সেগুলি প্রতিস্থাপন করতে একজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের দ্বারা আপনার চোখ পরীক্ষা করানো এই ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।
কখন একজন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
চোখ পিটপিট করা বা বার বার চোখের পলক পড়া সাধারণত অল্প কিছুদিনের মধ্যেই উধাও হয়ে যায়,কিন্তু যদি একটি নির্দিষ্ট সময় পার করার পরেও সেটি অনবরত বজায় থেকে যায়,সেক্ষেত্রে একজন ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে তাঁর পরামর্শ নেওয়া সবথেকে ভাল।দীর্ঘ সময় ধরে উপস্থিত থাকার কারণে এগুলি ভীষণ বিরক্তিজনক হয়ে উঠতে পারে,কিন্তু সুখবরটি হল এই যে এটি কোনও গুরুতর চিকিৎসাগত শর্তের ইঙ্গিত নয়।এগুলির প্রভাবকে অকার্যকর করতে সহজ প্রতিকারগুলি সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।
বার বার চোখের পলক পড়া বা পিটপিট করা যদি অন্তর্হিত না হয়ে থাকে,এখানে তার নিদর্শনগুলি দেওয়া হলঃ
- এক সপ্তাহের পরেও যদি এটি ক্রমাগত হতেই থাকে।
- আপনার চোখের পাতার কাছাকাছি টান বা খিঁচুনি লাগে
- মুখমন্ডলের অন্যান্য অংশ এর সাথে জড়িত থাকে
- চোখের পাতাগুলি বুজে যায় ও ঢুলে পড়ে
- যন্ত্রণাদায়ক চোখ পিটপিট যা ভীষণ অস্বস্তিকর হয়
- এই কারণে জ্বর হয়
সুতরাং,আপনি গর্ভবতী থাকাকালীন চোখের পলক বার বার পড়া বা পিটোপিট করা হল একটি সাধারণ ঘটনা,অতএব এই সময় খুব বেশি চাপ নেওয়া আপনার উচিত নয়।শুধুমাত্র আপনার চক্ষুযুগলকে হাইড্রেট রাখা নিশ্চিত করুন এবং বার বার চোখের পলক পড়া বা পিটপিট করাকে হ্রাস করতে বা দূর করা নিশ্চিত করতে অবিচ্ছিন্ন ভাবে চোখের পাতা পড়াকে উপেক্ষা করুন।
তবে,বার বার চোখের পলক পড়াটা যদি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে এবং এর ফলে যদি জ্বর হওয়ার মত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং ঠিকভাবে চোখের পাতাগুলি বন্ধ করা না যায়,তবে সেক্ষেত্রে এগুলি হতে পারে অন্য কোনও কারণের জন্য।এই সব ক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারবাবুর সহিত আলোচনা করুন এবং তার ফলে আপনি এই সমস্যার মূল কারণটিকে ধরতে সমর্থ হবেন।