In this Article
একটা সাধারণ অথচ তুলনামূলকভাবে অজানা সমস্যা, যার অভিজ্ঞতা অনেক মহিলারই, তাদের গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকে–তা হল রক্ত বমি করা।যদিও গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে রক্ত বমি হওয়া স্বাভাবিক, তবে এটি অন্তর্নিহিত কোনও অবস্থার সঙ্কেত হতে পারে। গর্ভাবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে প্রাতঃকালীন অসুস্থতা বোধ করলে অথবা বমি হতে থাকলে তা বমির সাথে রক্ত বেরিয়ে আসার কারণ হতে পারে।আপনি যদি গর্ভবতী হন আর বার বার বমি করতে থাকেন, তবে তা আপনার গ্রাসনালীর আস্তরণে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে এবং ওয়াক তোলার সাথে রক্ত বেরিয়ে আসতে পারে।তবে এ ব্যাপারে খুব বেশি প্যানিক হয়ে ওঠার কোনও কারণ নেই কারণ এটি চিকিৎসা করে সারিয়ে তোলা যেতে পারে।যাইহোক না কেন, এ ব্যাপারে তেমন আবার কিছু গুরুতর ক্ষেত্রও আছে যা গর্ভাবস্থায় রক্ত বমি হওয়ার দিকেও পরিচালিত করতে পারে।এই অবস্থাগুলি চিন্তা করার মতই সঙ্কেত হতে পারে, আর তা অবশ্যই নির্ধারণ করে যথাযথভাবে তার চিকিৎসা করাতে হবে।
হিমেটামেসিস (রক্ত বমন) কি?
গর্ভাবস্থায় রক্ত বমন হওয়াটাই হিমেটামেসিস হিসেবে পরিচিত আর এটি একটা সামাণ্য নাক থেকে রক্ত পড়া বা অন্ত্রের মারাত্মক রক্তক্ষরণ থেকে বিভিন্ন চিকিৎসা জনিত কারণের পরিসরের জন্য হয়ে থাকতে পারে।হিমেটামেসিস, পিত্তে রক্তের দাগের উপস্থিতির দ্বারা চিহ্নিত করা যায় না।এরকম অবস্থায়, রক্তের রঙটা কাল বা গাঢ় খয়েরী, অনেকটা কফি গুঁড়োর রঙের মত দেখায়।গর্ভদশার প্রথম ত্রৈমাসিকে বমি হওয়াটা স্বাভাবিক যেহেতু এই সময় মর্নিং সিকনেস বা প্রাতঃকালীন অসুস্থতাটা খুব খারাপভাবে দেখা দেয়।গ্রাসনালীটি চিঁড়ে যাওয়ার কারণে রক্তপাত হয় আর গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের (পৌষ্টিক নালীর অংশ) উপরের অংশে রক্তক্ষরণ হয় মূলত পূর্ববর্তী বমির প্রকোপগুলির বেগের কারণে।
হিমেটামেসিস সম্পর্কিত তথ্যাবলী
এখানে বলা হল গর্ভাবস্থায় আপনার রক্ত বমন হওয়ার সময় কি কি হতে পারেঃ
- গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের উপরের অংশে রক্তপাত হওয়া গর্ভাবস্থায় হিমাটামেসিসের অন্যতম প্রধান কারণ।
- অনবরত বমি হতে থাকলে তা মেলেনা‘র ঝুঁকির সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে–এটি হল এমন এক অবস্থা যা রক্তের উপস্থিতি সহ কালো এবং আলকাতরার ন্যায় মল হওয়ার দিকে পরিচালিত করে।
- বমির মধ্যে রক্তের উপস্থিতির প্রধান কারণ হেইম্যাটিন অ্যাসিড।
- যখন কিছু বৃহৎ রক্তবাহ থেকে মারাত্মক ভাবে রক্ত ক্ষরণ হয়, তখন বমির মধ্যে তাজা রক্ত দেখতে পাওয়া যায়।
- রক্ত বমন হওয়ার ফলে মাথা ঘোরা এবং সামাণ্য পেট ব্যথা হয়ে থাকে।
- রক্ত বমন হলে তা রক্তচাপের মাত্রা হ্রাস করতে পারে।
- তীব্র বমন উদ্রেক হলে তা গ্রাসনালীর শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীকে (যাকে ম্যালরি–ওয়েইস টিয়ার বলা হয়) হঠাৎ ছিন্ন করে দিতে পারে, যা আবার হিমেটামেসিস হওয়ার দিকে পরিচালিত করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় হিমেটামেসিসের কারণগুলি
গর্ভাবস্থায় রক্ত বমনের সাথে নানা কারণ জড়িত থাকতে পারে।গর্ভদশায় রক্ত বমন হওয়ার কিছু সাধারণ কারণগুলি নিম্নোরূপঃ
1.গ্যাসট্রাইটিসঃ হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নামক একটি ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার কারণে পেটের মধ্যে হওয়া একটি প্রদাহ, পাকস্থলীর আভ্যন্তরীণ আস্তরণকে সংক্রামিত করে যা গ্যাসট্রাইটিসের দিকে পরিচালিত করে।তীব্র গ্যাসট্রাইটিসের কারণে হালকা প্রদাহ হয় যেখানে দীর্ঘস্থায়ী গ্যাস্ট্রাইটিস দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করে।আর শেষ পর্যন্ত এই ব্যাধিটির কারণে মারাত্মক রক্ত বমন হতে পারে যা প্রায়শই লাল বর্ণের হয়ে থাকে।এর সাথে আবার পেট ব্যথা এবং দুর্বলতাও যুক্ত থাকতে পারে।
2.ডিহাইড্রেশনঃ গর্ভাবস্থায় আপনার রক্ত বমন হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটা হতে পারে ডিহাইড্রেশন।দেহ থেকে যখন তরল বেরিয়ে যায়, তা বমি করার সময় ওয়াক তোলায় প্রচণ্ড চাপ দেয় যার ফলে পিত্ত রঞ্জক এবং রক্ত উঠে আসে।তরলের অভাবে গা গুলায়, বমি বমি ভাব লাগে এবং তা বমি হওয়ার প্রবণতাকে বাড়িয়ে তোলে।
3.অনশনঃ এটা জানা ব্যাপার যে, একজন গর্ভবতী মহিলার তার ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য অল্প পরিমাণে কিন্তু বারে বারে আহার করা প্রয়োজন।গর্ভাবস্থায় যদি আপনি নিজেকে অনশনে রাখেন, আপনার খালি পেট আপনাকে দুর্বল বোধ করাবে এবং আপনার হয়ত রক্ত বমন হতে পারে।এটা হয়ত শুনতে অবাক লাগে, তবে গর্ভাবস্থায় আপনি যদি পর্যাপ্ত আহার না করেন, তবে বমি করার মাধ্যমে আপনার দেহ বিদ্রোহী হয়ে উঠতে পারে।
4.গ্রাসনালীর বিদারণঃ গর্ভাবস্থায় বার বার বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়াটা বেশ সাধারণ।তবে অবিরতভাবে বমি হয়ে চলা বিশেষ করে খুব জোরের সাথে উদ্রেক হলে তা গ্রাসনালী চিঁড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে।আর এই আঘাতের ফলে বমির মধ্যে রক্তের দাগ দেখা যেতে পারে।
5.অস্বাস্থ্যকর ডায়েটঃ গর্ভাবস্থায় সুষম আহারের অভাবের ফলেও রক্ত বমন হতে পারে। আপনি যদি ঠিকমত ডায়েট চার্ট অনুসরণ না করেন, তবে খাবার পর অথবা খুব ভোরের দিকে বমি উঠে আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়।দেহ যেগুলি গ্রহণ করতে পারে না সেগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নিজস্ব দৈহিক উপায় আছে।
6.উচ্চ রক্তচাপঃ গর্ভাবস্থা সাধারণত হাইপোটেনশনের দিকে পরিচালিত করে তবে যদি কোনও মহিলার উচ্চ রক্তচাপ থেকে থাকে তবে তা থেকে রক্ত বমন হতে পারে, কিন্তু এটা খুব কমই হয়।পোর্টাল হাইপোটেনশনের কারণেও হিমেটামেসিসে হতে পারে।চিকিৎসকরা সর্বদাই গর্ভবতী মহিলাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণের এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে আনন্দে থাকার পরামর্শ দেন।মানসিক চাপ থেকে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে, পরিশেষে যা থেকে রক্ত বমনও পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।
7.খাদ্যে বিষক্রিয়াঃ খাদ্য বিষক্রিয়া হল একটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনের সমস্যা।বাসি বা বিষাক্ত খাবার খাওয়া আপনাকে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।আপনি স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সতর্ক থাকা এবং ফল ও শাকসবজিগুলি খাওয়ার আগে ভালভাবে ধুয়ে নেওয়াকে নিশ্চিত করুন।অ্যালার্জি এবং জটিলতার কারণ হতে পারে এমন খাবারগুলি থেকে দূরে থাকুন।
8.ওষুধপত্রঃ অ্যাসপিরিন, ব্লুফেন–এর মত ব্যথা নাশক ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধগুলি গ্রহণ করলে তা থেকে জ্বলন এবং রক্তক্ষরণ হতে পারে।এই সকল ওষুধগুলি গ্রহণ করলে, তা শ্লেষ্মা উৎপাদন হ্রাস করে এবং পেটের আস্তরণে জ্বলন সৃষ্টি করে। অ্যাসপিরিন রক্তের প্লেটলেটগুলি বা অনুচক্রিকাগুলির কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করার জন্য পরিচিত।প্রসব পূর্ববর্তী ভিটামিনগুলিও আবার গা গুলানো বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়ার কারণ হিসেবে পরিচিত।
9. গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের বিদারণঃ বমি হলে তা বুক, গ্রাসনালী এবং তলপেটের উপর চাপ ফেলে।হঠাৎ চাপ বৃদ্ধির ফলে,ইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টটি বিদীর্ণ হয়ে যায়।বমি হওয়ার ফলে বুকে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।যদি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টটি বিদীর্ণ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আপনার বুকে ব্যথা, কুলকুলিয়ে ঘেমে যাওয়া এবং শ্বাসকষ্টের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকতে পারে।
10.সিরোসিস(অন্ত্রের কঠিনীভবন): অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালকোহল পান করা বা হিমোক্রোম্যাটোসিসের মতো অটোইমিউন রোগ (রক্তের মধ্যে লোহার অতিরিক্ত পরিমাণে শোষণ) সিরোসিসের দিকে পরিচালিত করে।সিরোসিস রক্তবাহগুলি হ্রাস করার দিকে পরিচালিত করে, যা বিদীর্ণ হতে শুরু করে এবং আবার তা গ্রাসনালীতেও প্রভাব ফেলে।সিরোসিস হল লিভারের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে এমন একটি গুরুতর অবস্থা, এবং এই রোগে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে উজ্জ্বল লাল বর্ণের বমি হওয়ার প্রবণতা থাকে।
বমির মধ্যে রক্তের রঙটা কীরকম হয়?
এখানে দেওয়া হল আপনি গর্ভাবস্থায় যদি বমি করেন তবে বমি মধ্যস্ত রক্ত কীরকম দেখতে হতে পারেঃ
- যদি রক্তক্ষরণ পাকস্থলীতে বা ডিওডেনিয়ামের (ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশ)আঘাতের কারণে ঘটে থাকে তবে বমিতে থেকে থাকা রক্ত মেরুন বা গাঢ় বাদামী রঙের দেখতে হতে পারে।
- আর যদি গ্রাসনালী ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে রক্ত ক্ষরণ হয়, তবে সেক্ষেত্রে বমিতে দেখা যাওয়া রক্ত লাল এবং তাজা দেখাবে।
গর্ভাবস্থায় হিমেটামেসিসের লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি
রক্ত বমনের রক্তের বর্ণ এবং ঘনত্ব রক্তপাতের কারণের উপর নির্ভর করে পৃথক হয় থাকে।রক্তপাৎ ছাড়াও গর্ভবতী মহিলারা আরও অন্যান্য উপসর্গগুলি অনুভব করে থাকেন যেগুলির দিকেও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।গর্ভাবস্থায় রক্ত বমনের সাথে যুক্ত সাধারণ কিছু উপসর্গগুলি হলঃ
- বমি বমি ভাব
- পেট ব্যথা এবং অস্বস্তি
- চোখের তারারন্ধ্র বড় হয়ে যাওয়া
- ঝাপসা দৃষ্টি
- মাথা ঘোরা এবং হালকা মাথা ব্যথা
কীভাবে এর রোগ নিদান প্রক্রিয়াটি করা হয়?
রোগ নির্ণয়ের জন্য আপনার ডাক্তারবাবু হয়ত আপনাকে প্রশ্ন করবেন আপনার বমনের সাথে উঠে আসা রক্তের বর্ণ অথবা আপনার পূর্বে বা বর্তমানে থেকে থাকা কোনও চোটের ব্যাপারে।আভ্যন্তরীণ কোনও কারণ থেকে থাকলে, তা আরও গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য আপনার ডাক্তারবাবু হয়ত চিত্র পরীক্ষাগুলি করানোর প্রয়োজন বোধ করবেন।যথাযথ চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়ার জন্য স্ক্যানগুলির দ্বারা কোনওরকম আঘাত এবং ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা সাধারণত প্রয়োগ করে থাকেন যে সকল চিত্র পরীক্ষাগুলি, সেগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
- আল্ট্রাসাউন্ড টেস্ট
- এক্স–রে
- MRI(ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স ইমেজিং)
- নিউক্লিয়ার মেডিসিন স্ক্যান
- এন্ডোস্কপি
- রক্ত পরীক্ষা
গর্ভাবস্থায় হিমেটামেসিসের সাথে জড়িত জটিলতাগুলি
গর্ভাবস্থায় রক্ত বমন করার কারণে উদ্ভূত বেশ কয়েকটি জটিলতার উল্লেখ নিম্নে করা হলঃ
1.দম আটকে আসা বা বিষম লাগাঃ বমি করার পর্বটি শেষ হওয়ার পর অথবা আপনি যদি সমানে বমি করতে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে হয়ত প্রায়শই খাবার গেলার ব্যাপারে যুদ্ধ করতে হতে পারে।
2.রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়াঃ রক্ত বেরিয়ে যাওয়ার কারণে, আপনার দেহে হয়ত লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ কমে যেতে পারে।আর আপনি হয়ত শক্তি হারাতে পারেন বা রক্তাল্পতায় ভুগতে পারেন।হ্রাসপ্রাপ্ত রক্তকে পুনরায় দেহে ফিরিয়ে আনার জন্য আপনাকে স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর আহার গ্রহণের পরামর্শই দেওয়া হয়।
3.মানসিকচাপ অথবা হতাশাবোধঃ গর্ভাবস্থায় রক্ত বমি হলে তা আপনাকে বিষণ্ণ করে তুলতে কিম্বা মানসিক চাপ বোধ করাতে পারে।আর মানসিক চাপ আবার ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, দ্রুত শ্বাস–প্রশ্বাস হওয়া, মাথা ঘোরা এবং কম প্রস্রাব হওয়ার মত আরও জটিলতাগুলি আপনার মধ্যে সৃষ্টি করতে পারে।
দীর্ঘকাল ধরে চলা দম বন্ধ হয়ে আসা বা বিষম লাগা, মানসিক চাপ প্রভৃতি উপসর্গগুলি কিম্বা কম মাত্রায় অ্যানিমিয়া অবশ্যই কোনওটা অবহেলা করা যাবে না।কোনওরকম জটিলতা এড়ানোর জন্য আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেওয়াই সর্বোত্তম।
চিকিৎসা
রক্তক্ষরণের প্রকৃত কারণটি নির্ণয় এবং সেইমত চিকিৎসার সঠিক পথ নির্ধারণ করে চিকিৎসা শুরু করা হয়।
- বমি করার পর দেহে তরলের পর্যাপ্ত তরলের মাত্রা কমে যায়, কিন্তু একজন গর্ভবতী মহিলার হাইড্রেট থাকা প্রয়োজন।
- যদি মারাত্মক জলশূণ্যতা বা ডিহাইড্রেশন হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন পড়বে যাতে শিরার মধ্য দিয়ে স্যালাইন পাঠিয়ে দেহে তরল এবং পরিপূরকের ঘাটতি পূরণ করা নিশ্চিত করা যায়।
- মা এবং গর্ভস্থ শিশুর দেহে যাতে সঠিক পরিমাণে পুষ্টি এবং খনিজ সরবরাহ হয় তা নিশ্চিত করার জন্য একটা স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর ডায়েট মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হবে।
বমি করার সাথে যদি প্রচুর পরিমাণে রক্ত বেরিয়ে যায়, একজন ডাক্তারবাবু সেক্ষেত্রে নিম্নোলিখিত চিকিৎসাগুলি নির্ধারণ করতে পারেনঃ
- রক্ত দেওয়া
- অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করা
- এটি আভ্যন্তরীণ কোনওকিছু ছিঁড়ে বা বিদীর্ণ হয়ে যাওয়া থেকে হচ্ছে কিনা তা নির্ধারণের জন্য এন্ডোস্কোপির দ্বারা চিকিৎসা
- শিরার মাধ্যমে তরল নিষ্কাশন
- বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ বা আলসারের ক্ষেত্রে একটি অস্ত্রোপচার পদ্ধতি
প্রতিরোধ
নিরাময়ের চেয়ে প্রতিরোধই ভাল এবং গর্ভাবস্থায় রক্ত বমি হওয়ার ক্ষেত্রে এটি অবশ্যই সত্য।এই রক্ত বমি হওয়া প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে এমন কয়েকটি পদক্ষেপ হলঃ
- অ্যালকোহল সেবন করা এড়িয়ে চলুন কারণ এটি পাকস্থলীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
- ধূমপান ত্যাগ করুন
- তেল–ঝাল–মশলা স্পাইসি খাবারগুলি এড়িয়ে চলুন কারণ এগুলি গর্ভাবস্থায় অ্যাসিড রিফ্লাক্স এবং পেটে জ্বলনের কারণ হয়ে ওঠে।
- আপনার ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা আনুন, বিশেষ করে, নানা ধরণের পেইনকিলার, অ্যাসপিরিন ইত্যাদিগুলি।
ঘরোয়া প্রতিকারগুলি
আপনি যদি রক্ত বমি করেন এবং বমির মধ্যে রক্তের ড্যালা লক্ষ্য করেন, আপনি অবশ্যই এ ব্যাপারে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করবেন।রক্ত বেরিয়ে যাওয়ার ফলে তা আপনাকে দুর্বল বোধ করাতে পারে।রক্ত বমি করার ফলে তা আপনার মুখের মধ্যে একটা বিশ্রী স্বাদ এনে দিতে পারে।এ ব্যাপারে চিকিৎসাগত পরামর্শগুলি ছাড়াও এমন কয়েকটি টিপস আছে যেগুলি আপনি গর্ভাবস্থাকালে বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়ার চিকিৎসার জন্য অনুসরণ করতে পারেন।
1.ফলের রস পানঃ নিয়মিতভাবে জল এবং ফলের রস গ্রহণ করলে তা আপনাকে হাইড্রেট রাখতে এবং ডিহাইড্রেশনের কবল থেকে পুনরুদ্ধার হতে সহায়তা করতে পারে।ডিহাইড্রেশনে বাধা দেওয়ার জন্য ইলেক্ট্রোলাইট দ্রবণগুলিও হল একটি ভাল বিকল্প।প্রতিদিন অন্ততপক্ষে 2-3 লিটার জল পান করার মাধ্যমে নিজেকে হাইড্রেট রাখুন।পর্যাপ্ত তরল পান করলে তা দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলিকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে এবং তাছাড়াও আপনার দেহে প্রস্রাব উৎপাদনে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
2.একটি সুষম আহার বজায় রাখুনঃ নিরপেক্ষভাবে, একটি ডায়েট যা সুপরিকল্পিত, ভারসাম্যপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান এবং খনিজের সমানুপাতে গঠিত–তা বমি বমি ভাব হ্রাস করে সর্বোত্তম শক্তির মাত্রা বজায় রাখার ক্ষেত্রে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারে।সুতরাং স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং প্রচুর জল পান করুন।
3.অল্প অল্প এবং হালকা খাবারগুলি বেছে নিনঃ ভোরের দিকে বমি বমি ভাব হওয়াটা বেশি সাধারণ বমি বমি ভাব হওয়াকে বাধা দিতে রাত্রে খুব বেশি ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন এবং এবং হালকা প্রাতঃরাশ করুন।অতিরিক্ত খেয়ে ফেলবেন না–খাওয়ার একটা ধরণ মেনে চলুন।উদাহরণ হিসেবে বলা যাক, 3-4 ঘন্টার ব্যবধান রেখে খান যাতে আপনার খাবারটা হজম হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পায়।একসাথে অনেকটা খাবার খেয়ে ফেললে তা আপনার পেট ফেটে যাওয়ার মত এক হাঁসফাঁস অবস্থা হতে পারে, যার ফলে বমি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
4.তেল জাতীয় খাবারগুলি এড়িয়ে চলুনঃ মশলাদার তেল জাতীয় খাবারগুলি খাওয়ার জন্য আপনার প্রবল ইচ্ছেকে বাধা দিন।অত্যন্ত তেল–ঝাল–মশলাদার খাবারগুলি খেলে পাকস্থলীর আস্তরণটি ফুলে যেতে পারে, যার ফলে অ্যাসিডিটি হয়।প্রায় সেদ্ধ সেদ্ধ খাবার যেগুলি কম তেল–মশলা যুক্ত হয়, সেগুলি খাওয়াতেই নিজেকে অভ্যস্থ করে তুলুন।
5.আদা রস পানঃ বমি বমি ভাব এবং প্রাতঃকালীন অসুস্থতা কাটিয়ে ওঠার এক বর্ষ প্রাচীন প্রতিকার হল আদা রস পান করা।আর প্রাতঃকালেই আদা রস পানের উচ্চ পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
6.প্রসব পূর্ববর্তী যোগ–ব্যায়ামঃ প্রসব পূর্ববর্তী কিছু যোগ–ব্যায়ামের অভ্যাস অথবা আবার এমনকি হালকা অনুশীলনগুলিও বমি বমি ভাব নিরাময়ের ক্ষেত্রে বেশ ভাল বলে প্রমাণিত।
7.ভাল ঘুমঃ রাত্রে ভালভাবে ঘুমান এবং আপনার ঘুমের স্থানটিতে যাতে কোনওরকম সাফোকেশন বা দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত অনুভূতি আপনার না হয় সে ব্যাপারে নিশ্চিত থাকুন।রাত্রে ভালভাবে ঘুমানোর জন্য যাতে আপনি সাবলীলভাবে শ্বাস–প্রশ্বাস নিতে পারেন সে দিকটা ঠিক রাখুন।
8.পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ করুনঃ নিজেকে অযথা চাপের মধ্যে ফেলা এড়িয়ে চলুন–পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন, আরাম করুন এবং একটা সুন্দর গর্ভাবস্থা বজায় রাখতে নিজেকে সুস্থ রাখুন।
আপনি যদি বমি বমিভাব অনুভব করেন, প্রাকৃতিক প্রতিকারগুলিকে বেছে নিন।আর আপনি যদি দেখেন যে ঘরোয়া প্রতিকারগুলির দ্বারাও আপনি কোনওভাবেই আপনার বমির প্রকোপকে কমাতে পারছেন না, সেক্ষেত্রে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।আর আপনার যদি রক্ত বমি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে সেটি হওয়ার পিছনে কোনও সমস্যা আছে কিনা তা সমাধানের জন্য শুরুতেই আপনার ডাক্তারবাবুর শরণাপন্ন হন।আপনার ডাক্তারবাবু সর্বোত্তমভাবেই গাইড করবেন, সুতরাং যদি প্রয়োজন বোঝেন তাঁর সাথে আলোচনা করুন।আর একটা সুস্থ এবং স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা বজায় রাখুন!