In this Article
যদি আপনি এবং আপনার সঙ্গী সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে নানা ধরনের পরিবর্তনের বিষয়গুলিকে আপনাকে লক্ষ্য করতে হবে যেহেতু সেগুলিই আপনাকে সেই সুপ্রতিক্ষিত শুভ সংবাদটির জানান দিতে পারে প্রেগনেন্সি কিটটিকে বাড়িতে নিয়ে আসার আগেই।এখানে আমরা সার্ভিকাল মিউকাস–এর পরিবর্তনের কথাই বলছি।কোনও মহিলার মাসিকচক্রের সময় তার সার্ভিকাল মিউকাসের ঘনত্বটি পরিবর্তিত হয়।আর যখন কোন মহিলার ওভ্যুলেশন ঘটে থাকে তখন সার্ভিকাল মিউকাসের ঘনত্ব স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় পুরোপুরি পরিবর্তিত হয়ে যায়।আপনি যদি সার্ভিকাল মিউকাসের পরিবর্তনগুলির একটি ট্র্যাক রাখেন তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনি গর্ভবতী হয়েছেন নাকি হননি।যদি না হয়ে থাকেন তাহলে আপনার হাতে খুব কম সময় আছে সঙ্গমের মাধ্যমে শীঘ্র গর্ভধারণ করার জন্য। সার্ভিকাল মিউকাসের সাহায্যে আপনি কীভাবে গর্ভধারণের সূচনার সঙ্কেতকে সনাক্ত করতে পারেন তার সন্ধান করুন।
সার্ভিকাল মিউকাস কী?
সার্ভিকাল মিউকাস হল ভ্যাজিনাল টানেল বা যোনি নালীর উপর অবস্থিত সার্ভিক্স বা জরায়ুর মধ্যে এবং তার চারপাশের গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হওয়া এক ধরণের তরল। হরমনগত পরিবর্তনের কারণে কোনও মহিলার প্রজনন চক্র জুড়ে এর ঘনত্বের পরিবর্তন হয়ে থাকে।এই পরিবর্তন চলে প্রাক গর্ভবস্থায় এবং এমনকি সমগ্র গর্ভাবস্থার সময়কাল জুড়েই।সার্ভিকাল মিউকাস অনেক সময় আবার লিউকোরিয়া নামেও অভিহিত হয়ে থাকে। যদিও লিউকোরিয়া হল একটি ব্যাপক অর্থের প্রচলিত শব্দ যেটি যেকোনো ধরণের যোনি স্রাবের ক্ষেত্রেই প্রযজ্য হয়, তবে এটি সাধারণত খুব বেশি ব্যবহৃত হয় গর্ভবস্থায় যেকোনো ধরনের যোনি স্রাবের ক্ষেত্রে।যোনি স্রাব নানা ধরণের কাজ করে থাকে যেমন পিচ্ছিলকারক হিসেবে,পরিষ্কারক হিসেবে এবং যোনির সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতে।ভ্যাজিনাল ডিসচার্জ বা যোনি স্রাব নিঃসরণের পরিমাণ, সান্দ্রতা এবং বাহ্যিক গঠণটির পরিবর্তনগুলি নির্ভর করে কোনও মহিলার মাসিক চক্রের পর্যায়ের উপর।সুতরাং এটি ওভ্যুলেশন এবং ফার্টিলিটি বা সন্তান ধারণ ক্ষমতার সত্যই একটি ভালো নির্দেশক।
গর্ভাবস্থায় সার্ভিকাল মিউকাস
বেশ কিছু মহিলার কাছ থেকে জানা যায় যে গর্ভাবস্থার প্রথম দিককার দিনগুলিতে তাদের যোনি স্রাব নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায়।গর্ভসঞ্চার করার পর থেকে তাদের এই স্রাব নিঃসরণটি হয় ক্রীমের ন্যায়, অথবা স্বচ্ছ এবং চটচটে আঠার মত।যাইহোক, যদিও এটিকে গর্ভধারণের ভ্রান্ত–প্রমাণের লক্ষণ বলে মনে নাও হতে পারে, আবার এর সাথে জড়িত অন্যান্য লক্ষণগুলি যেমন স্তনের কোমলতা এবং ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ যেগুলি আবার প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভধারণের লক্ষণ বলে বিবেচিত হয় সেগুলিও কিন্তু একদম নিশ্চিতভাবে গর্ভসঞ্চার করাকে প্রতিপন্ন করে না।
গর্ভদশায় সার্ভিকাল মিউকসের পরিমাণের পরিবর্তন ঘটে।গর্ভাবস্থায় ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণ এবং যোনিতে প্রচুর পরিমাণ রক্তসঞ্চালন বেড়ে যাওয়ার ফলে সার্ভিকাল মিউকস উৎপাদন বেড়ে যায়; যদিও এটা অষ্টম সপ্তাহের আগে পর্যন্ত বোঝা যায় না।যেমন যেমন গর্ভদশা এগোতে থাকে তেমন তেমন সার্ভিকাল মিউকসের পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং একটি মিউকাস প্লাগ সৃষ্টি করে জরায়ুর প্রতিবন্ধক হিসেবে।এটি যেকোনো ধরনের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে।গর্ভাবস্থায় প্লাগ তৈরী হয়ে যাওয়ার পর যোনি স্রাবের নিঃসরণ ক্রমশ কমতে থাকে।তবে এটি একদম বন্ধ হয়ে যায় না বরঞ্চ গর্ভদশার পরবর্তী পর্যায়ে এটি আবার বৃদ্ধি পায়।গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে জরায়ু যখন প্রসারিত হতে শুরু করে এবং লেবার বা শ্রম এবং প্রসবের জন্য আপনাকে প্রস্তুত করে, তখন মিউকাস প্লাগ ভেঙে যায়।তখন এটি যোনি দিয়ে বেরিয়ে আসে বড় বড় ড্যালার আকারে কিংবা খুব অল্প পরিমাণে।
আপনি কীভাবে সার্ভিকাল মিউকাস পরীক্ষা করবেন?
আপনার মাসিক চক্র ট্র্যাক করার এবং ঠিক কোন দিনে আপনার ওভ্যুলেশন ঘটেছিল তা নির্দেশ করার একটি যথার্থ উপায় হয়ে উঠতে পারে আপনার সার্ভিকাল মিউকাস পরীক্ষা করা।এক্ষেত্রে তিনটি পদ্ধতি রয়েছে যার সাহায্যে আপনার সার্ভিকাল মিউকাস পরীক্ষা করা যেতে পারে।যাইহোক, তবে আপনার হাত দুটি খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেবেন নিচের পদ্ধতিগুলি প্রয়োগ করার আগে এবং পরে।
- টয়লেট পেপারঃ মূত্রত্যাগ করার আগে আপনার যোনি একটা সাদা টয়লেট পেপার দিয়ে মুছুন।টিস্যুটির উপর সেটির রং, ঘনত্বটি লক্ষ্য করুন এবং অনুভব করুন।
- অন্তর্বাসঃ এই পদ্ধতিটিতে আপনি খুব সহজেই প্রতিদিন আপনার অন্তর্বাসের ওপর আপনার যোনি স্রাবটিকে লক্ষ্য করতে পারবেন।আপনি এটিও লক্ষ্য করতে পারবেন যে আপনার ওভ্যুলেশনের সময় নিকটস্থ হওয়ার সাথে সাথে আপনার যোনি স্রাবও বেড়ে যাবে।তবে, এই পদ্ধতিটা অন্যান্য দিন গুলির ক্ষেত্রে সেরকম বিশেষ কিছু তথ্য দিতে পারে না।
- আঙ্গুলঃ এই পদ্ধতিটিতেই আপনি সব থেকে বেশি সঠিক তথ্য পেতে পারেন।আপনার হাতগুলো পরিষ্কার করে নিন, দুইটি আঙ্গুলকে যোনির ভিতরে প্রবেশ করান এবং পরীক্ষা করুন স্রাবের ঘনত্ব, রং এবং আঠালো ভাবটি।
পুরো মাসিকচক্র ধরে পাওয়া যায় এমন কতগুলি আদর্শ ফলাফল নিচে আলোচনা করা হলঃ
- কোন রং নেই এবং বেশিরভাগটাই শুষ্কঃ যেই মুহূর্তে আপনার মাসিক শেষ হবে আপনি এই ধরনের ঘটনা লক্ষ্য করবেন।আগামী কয়েকটি দিন শুষ্ক দিন হিসেবে চলবে।এই সময় আপনি হয়ত যে কোনো ধরনের স্রাব লক্ষ্য করতে পারেন।
- ঘন এবং মেঘের ন্যায় ঘোলাটেঃ চক্রের প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে আপনি ঘন এবং ঘোলাটে স্রাব হতে লক্ষ্য করবেন।এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আপনি ওভ্যুলেশনের এর দিকে এগোচ্ছেন।
- ডিমের মত সাদা ও স্বচ্ছ, কম সান্দ্র এবং পরিমাণে যথেষ্টঃ এটি হল সেই সময় যে সময়ে আপনি সবচেয়ে বেশি ফার্টাইল অর্থাৎ সন্তান ধারণের উপযোগী হয়ে ওঠেন এবং ওভ্যুলেট বা ডিম্বোস্ফোটন হতে চলেছে।এই সময়টি হল গর্ভসঞ্চারের আদর্শ সময়।
- ঘন, চটচটে, এবং মেঘের মতো ঘোলাটেঃ এই ধরনের নিঃসরণ শুরু হয় আপনার ডিম্বোস্ফোটনটি হওয়ার ঠিক আগে।আপনার মাসিক শুরু হওয়া থেকে তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে সাধারণত এই ঘটনা ঘটে থাকে।সাধারণত এটা হল সেই সময় যখন কোনও মহিলা সনাক্ত করার চেষ্টা করেন যে প্রকৃতই তিনি গর্ভধারণ করেছেন নাকি করেন নি, কিন্তু এর একমাত্র উপায় যেটি তারা করতে পারেন তা হল, তাদের সার্ভিকাল মিউকাস বা জরায়ুর শ্লেষ্মার কোনওরূপ পরিবর্তন হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করার মাধ্যমে।
আপনি যদি গোলাপী বা বাদামী সার্ভিকাল ডিসচার্জ হতে লক্ষ্য করেন তবে সেটি কি হতে পারে?
গর্ভাবস্থার ষষ্ঠতম এবং দ্বাদশতম দিনে কোন কোন মহিলা বাদামী বা গোলাপী বর্ণের নিঃসরণ লক্ষ্য করে থাকেন।সাধারণভাবে এটিকে “ইমপ্লিমেন্টেশন ব্লিডিং” বলা হয়ে থাকে।মনে করা হয় এই ঘটনাটি ঘটে থাকে নিষিক্ত ডিম্বাণুটি ওই সময় জরায়ুর গাত্রে প্রেথিত হয়।যদিও এটি এর পিছনে থাকা কারণ কি না সে বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া যায়নি।বাদামী নিঃসরণ সাধারণত দেখা যায় যখন পিরিয়ড শেষ হয়ে যায় এবং এটি সাধারণত একটি পরিষ্কারকারক প্রক্রিয়া যেটি পুরাতন রক্তকে বাইরে বের করে দেয়।গোলাপী বাদামী বর্ণের নিঃসরণ অনেক কারণে হতে পারে এবং গর্ভধারণ তাদের মধ্যে অন্যতম।
আপনি যদি পিরিয়ডের আগে প্রচুর পরিমাণে নিঃসরণ লক্ষ্য করেন তাহলে কি হয়?
সাধারণত ওভুলেশনের পর যোনির স্রাব কমে যায়।বেশ কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে যারা সন্তান ধারণ করতে চান, তাদের ওভ্যুলেশনের পর যোনি নিঃসরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায় আর অনেকে মনে করেন এটি গর্ভসঞ্চারের লক্ষণ।যাইহোক এটা অন্যান্য আরও অনেকগুলো কারণেই হতে পারে। সেটি যদি জলীয় এবং পরিষ্কার হয় তাহলে সেটি আপনার দেহে ঋতুস্রাবের একটি প্রস্তুতি মাত্র হতে পারে।যাইহোক, তবে আপনার সার্ভিকাল মিউকাস ওভ্যুলেশনের পর পরিষ্কার এবং জলের ন্যায় তরল বা ধাবমান হবে না যদি আপনি গর্ভবতী হয়ে থাকেন।গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে কোনওরকম নিঃসণের অনুপস্থিতি বা শুষ্ক সার্ভিকাল মিউকাস খুবই কম দেখা যায়।যদি গর্ভসঞ্চার প্রক্রিয়াটি বাস্তবেই সফল হয়ে থাকে, তাহলে আপনি লক্ষ্য করবেন যে ওভ্যুলেশনের আগে ও পরে সার্ভিকাল মিউকাস হবে ঘন পরিষ্কার অথবা ক্রীমের মত।
কখন ডাক্তারবাবুর শরণাপন্ন হবেন
আপনি যদি মাসাধিক কাল ধরে আপনার সার্ভিকাল চক্রটি অনুধাবন করতে থাকেন আপনার গর্ভবতী হয়ে ওঠার জন্য এবং সেক্ষেত্রে কোনরকম অস্বাভাবিক নিঃসরণ হতে যদি লক্ষ্য করেন তাহলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিতে হবে।একটি অস্বাভাবিক যোনি স্রাব সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে এবং আপনি জেনে রাখুন যে, এটি আপনার গর্ভসঞ্চারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তাই আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন যদি আপনি নিম্নলিখিত পরিস্থিতিগুলির সম্মুখীন হন।
1.যদি আপনি হলুদ বা সবুজ মিউকাস নিঃসরণ লক্ষ্য করেন।
2.যদি আপনার গন্ধযুক্ত স্রাব নিঃসৃত হয়।
3.আপনার যোনিতে যদি একটি জ্বলন অনুভূত হয়।
যদি আপনি কয়েক মাস ধরে আপনার চক্র চলাকালীন যোনি স্রাব নিঃসরণের পরিবর্তনের দিকে নজর রাখেন এবং যদি দেখেন যে এটি কম বেশি সংগতিপূর্ণ তাহলে হয়ত আপনি গর্ভধারণের গোড়ার দিকেই সফলভাবে আপনার সার্ভিকাল তরলটির পরিবর্তন লক্ষ্য করতে সক্ষম হতে পারেন।যাইহোক, তবে সার্ভিকাল মিউকাসের পরিবর্তন কখনই গর্ভধারণের একটা পরিষ্কার সংকেত নয় এবং কোন ভাবেই এটি সম্পূর্ণ ভরসাযোগ্যও নয়।আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনার পিরিয়ড বা মাসিক বন্ধ হচ্ছে এবং আপনি প্রেগনেন্সি টেস্ট দ্বারা নিশ্চিত হচ্ছেন গর্ভধারণের ব্যাপারটি সম্পর্কে আর সেটিই হবে আপনার বিচক্ষণতার পরিচয়।