আপনার 40 বছর বয়সী শিশু-বিকাশ,মাইলস্টোন এবং যত্ন

your 40 week old baby - development, milestones and care

বেড়ে ওঠা বাচ্চাদের কাছে একটা কঠিণ কাজ।প্রতি সপ্তাহে সে নতুন ধরনের কৌশল রপ্ত করতে চায়, এক নতুন বিকাশের দশার মধ্য দিয়ে সে যাত্রা করে,এবং নতুন নতুন বিষয়ের ওপর সে কাজ করতে চায়।40 সপ্তাহ বয়সেই আপনার শিশুটির আগের থেকে থাকা দাঁতের সাথে সাথে নতুন দাঁত উদগত হয়, এদিকে ওদিকে তার চলাচল দিন দিন বাড়তে থাকে।এই সময়ে তার মেজাজের ঘন ঘন পরিবর্তনের ঝোঁক দেখা যায় এবং ঘুমের সমস্যা দেখা দেয় তাই এই বিষয়ে আপনাকে সঠিক ভাবে প্রতিপালন করতে হবে এবং যথেষ্ট যত্নশীল হতে হবে।

আপনার 40 বছর বয়সী শিশুর বিকাশ

আপনার 40 সপ্তাহ বয়সের সন্তানটির ব্যাক্তিত্বের বিকাশ এই সময় থেকেই শুরু হয়।সে এই সময় খুব সামাজিক হয়ে ওঠে, প্রত্যেকের দিকে তাকিয়ে সে হেসে ওঠে, অথবা সে খুব লাজুক ধরণের হতে পারে ,যদি নতুন কেউ তার সাথে আলাপ জমাতে চায় তাহলে সে তার মুখ লুকিয়ে ফেলতে পারে।শিশুরা 10 মাস বয়সে নতুন কাউকে মেনে নেবার আগে পরিস্থিতি বুঝে নিতে চায়।সে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির দ্বারা আপনার মনঃসংযোগ আকর্ষণ করতে চায় এমনকি হাত নেড়ে আপনাকে বিদায় সম্বর্ধণা জানায় যখন আপনি ঘর থেকে বাইরে যান।এই বয়সেই আপনার বাচ্চাটি একা একা নিজে নিজেই দাঁড়াতে সক্ষম হয়ে ওঠে।

আপনার 40 বছর বয়সী শিশুর উন্নয়নমূলক মাইলস্টোনগুলি

নিম্নে কিছু মাইলস্টোন উল্লেখ করা হল যেগুলো আপনি আপনার 40 সপ্তাহ বয়সী বাচ্চার মধ্যে দেখতে পাবেন।

  • আপনার বাচ্চাটি কোন বলকে গড়িয়ে দিতে পারে যা আপনি তার দিকে গড়িয়ে দিয়ে ছিলেন।
  • খুব সামান্য সময়ের জন্য আপনার বাচ্চাটি একা একাই দাঁড়াতে পারে।
  • আপনার বাচ্চাতি খুব সাবলীল ভাবেই মামা বা পাপাবলতে পারে
  • আপনার শিশুটি মামাবা পাপাছাড়াও আরো দুই একটি কথা বলতে পারে।
  • আপনার বাচ্চাটি মধ্যমা এবং বুড়ো আঙ্গুলের সাহায্যে ছোটো কোনো বস্তু তুলতে পারে।
  • সে নিজেই নিজের পেয়ালা থেকে পান করতে পারে।
  • আপনার বাচ্চাটি আপনার বলা কোনো এক মাত্রিক নির্দেশের প্রত্যুত্তর দিতে পারে সাথে সে তার হাতের ভঙ্গীর মাধ্যমে যেমন ওটা আমাকে দাওজাতীয় আবেদন পেশ করে তার ছোট্ট হাত টাকে প্রসারিত করে।
  • সে একা একাই খুব সুন্দর ভাবে দাঁড়াতে পারে।
  • সে শিখে গেছে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে কীভাবে বসতে হয়।তার মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে কাজ করে কেমন ভাবে দাঁড়াতে এবং বসতে হয় সেই ব্যাপারটির বিষয়ে।

খাওয়ানো

জলের বোতল (ওয়াটার বটল ) খুব আকর্ষণীয় 40 সপ্তাহ বয়সের শিশুদের কাছে তার কারণ হল এর ভেতরের জল যা বোতলটাকে গড়িয়ে দিলে ঘুরপাক খায়।আপনার শিশুটি আপনাকে লক্ষ্য করে জল খেতে এবং সে আপনাকে অনুকরণ করতে চায়।যদি সে অনেকক্ষণ অন্য বাচ্চাদের সাথে কাটায় তাহলে আপনাকে প্রায়ঃশই তার হাত থেকে সিপ্পি কাপ নিয়ে নিতে হবে যেটা ওর নয়।40 সপ্তাহ বয়সটা তার জীবনের ভাল সময় আপনার বাচ্চাকে কাপ থেকে জল খাওয়ানো শেখানোর জন্য।যদিও তার জলের চাহিদা আপনার বুকের দুধের মাধ্যমে মিটিয়ে নেয়,তবুও জলের বোতলের প্রতি তার আকর্ষণ, কাপ থেকে জল খাওয়া আপনার শিশুকে তার মাতৃদুগ্ধ পানের অভ্যাস ছাড়াতে সাহায্য করবে।দুধ বা জল কাপ বা পেয়ালা থেকে পান করা সর্বদাই ভাল।জুসে প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকে যা দাঁতের ক্ষতি করে কিম্বা স্থূলতা বৃদ্ধি করে তাই আপনার সন্তান কে অভ্যাস করান কাপ বা পেয়ালা থেকে শুধুমাত্র জল বা দুধ খেতে মাতৃদুগ্ধ পান এর অভ্যাস ছেড়ে দেবার পরও।প্রতিটা মিল খাবার পর পরই কাপ থেকে জল খেতে তাকে উৎসাহ দিন,তাকে এটাও শেখান যে জল পিপাসা মেটায়।একটা সিপ্পি কাপ তার আশেপাশে রাখুন যাতে সে সারা দিনে যখন তার ইচ্ছা হবে তখনই জল খেতে পারবে।

ঘুমানো

আপমার 40 সপ্তাহ বয়সী শিশুটি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে কারণ এই পর্যায়ে তার মধ্যে নানা ধরনের উত্তেজক পরিবর্তন ঘটবে।তার চারটে ওপরের দাঁত মাড়ি ভেদ করে বেরোতে চাইবে যার জন্য সে কিছুটা অস্বস্তিবোধ করবে।আর সাথে সাথে তার মানসিক এবং সচলতার বিকাশ ঘটতে থাকবে, এর যন্ত্রণাই তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে এবং রাত্রে তার ঘুম ভাঙিয়ে দেবে।যেহেতু সে রাত্রে ভাল করে ঘুমাতে পারেনা তাই সে সারাদিন ক্রুদ্ধ ও আপনার সাথে আঠার মত লেগে থাকতে চাইবে। শক্ত খাবার খাওয়া বা বুকের দুধ চুষে খাওয়া বাধাপ্রাপ্ত হবে তার স্ফীত মাড়ির জন্য এবং সে আরো বেশি হতাশ হয়ে পড়বে।যখন তার দাঁত গুলো উঠে যাবে তখন সে একটু স্বস্তি পাবে।ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে আপনাকে খাইয়ে দিতে হবে এবং তাকে কোলে করে ঘুরতে হবে যতক্ষণ না সে অস্বস্তি ভুলে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে।বাচ্চারা এইসময়ে অন্যদের তুলনায় তাদের মায়ের কাছে বেশি থাকতে চায় বলা যেতে পারে আঠার মত আটকে থাকতে চায়।তাই ধৈর্য্য ধরুন এবং যতটা পারেন আপনার সোনাকে সাহায্য করুন যন্ত্রণাদায়ক দাঁত ওঠার দিন গুলোতে।

আপনার 40 বছর বয়সী শিশুর যত্নের জন্য পরামর্শ

এখানে আপনার 40 সপ্তাহ বয়সের বাচ্চার যত্নের জন্য কতগুলো পরামর্শ রইল।

  • শিশুরা বিচ্ছেদের আশঙ্কায় এই সময় ভোগে।তাই লুকিয়ে যাবার চেষ্টা না করাই ভাল যখন আপনার বাচ্চাটি মনযোগ দিচ্ছে না।তাকে দেখতে দিন আপনি চলে যাচ্ছেন,হাত নেড়ে বিদায় সম্ভাষণ জানান এবং বলুন যে আপনি আবার ফিরে আসবেন।এটা তাকে আপনার ফিরে আসার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেয়।
  • যখন আপনি তাকে অন্য একজন সীটারের কাছে রেখে যাবেন তখন অবশ্যই খেয়াল রাখবেন সে যেন প্রচুর খেলেধূলা এবং ক্রিয়াকলাপ করে যাতে আপনার বাচ্চাটি আপনার অনুপস্থিতির জন্য দুঃখ না পায়।
  • যদি আপনার সন্তান কোনো কিছুর দিকে তাকায় তাহলে আপনি সেই জিনিসটির প্রতি নজর দিন এবং সেটির সম্বন্ধে ব্যাখ্যা দিন। তাকে প্রশ্ন করুন ওটাকে কী বলে?” এই ধরণের কিছু এটা জেনেও যে উত্তরটা আপনাকেই দিতে হবে।
  • 40 সপ্তাহ বয়সী শিশুদের এটা খুব স্বভাবিক যে তারা হঠাৎ জেগে ওঠে এবং দোলনার ধার বরাবর তারা নিজেদের টানতে থাকে।আপনি শান্ত ভাবে তাকে শুইয়ে দিন,পিঠ চাপড়ে দিয়ে তাকে ঘুমিয়ে পড়তে উৎসাহ দিন।
  • যদি আপনার বাচ্চার রাতে ভাল ঘুম না হয়ে থাকে তার দাঁত ওঠার ব্যাথার জন্য বা অতিরিক্ত শক্তির প্রকাশের জন্য তাহলে তাকে পরের দিন একটানা দিবা নিদ্রার ব্যবস্থা করে দিন।
  • তার শারীরিক সক্ষমতা বাড়াবার ব্যাপারে উৎসাহ দিন তাকে যথেষ্ট সময় মাটিতে থাকতে দিন অথবা বিভিন্ন আসবাবপত্র ধরে ধরে তাকে ঘুরে বেড়াতে দিন।এগুলো তার মাংসপেশী গঠনে সাহায্য করবে।
  • যখন হাঁটতে শিখবে তখন শিশুরা হোঁচট খাবে,পড়বে তাই হাতের নাগালে সব সময় ফার্স্ট এইড কিট মজুত রাখুন যাতে ব্যন্ডেজ, গজ, টিংচার, অয়েনমেন্ট প্রভৃতি থাকবে।
  • আপনার বাচ্চাটি যদি বাইরের কাজ করতে শুরু করে তাহলে তাকে সুরক্ষিত স্থান যেমন প্লেপেন অর্থাৎ ঘেরা সুরক্ষিত স্থান বা শিশুশয্যায় রাখুন যাতে সে নিজেকে আহত না করতে পারে।তার এই গোছগাছের সময় অবলম্বণ হওয়া থেকে এড়িয়ে চলুন।

পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং টিকাকরণ

40 সপ্তাহ বয়সে তার বেশ কিছু শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা ডাক্তারবাবু করেবেন প্রতিটিবাচ্চার নিজ নিজ চাহিদা অনুযায়ী।

1.পরীক্ষা নিরীক্ষা

আপনার ডাক্তারবাবু তার রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে পারেন তার রক্তে লোহা, হিমোগ্লোবিন এবং সীসার পরিমাণ সঠিক মাত্রায় আছে কিনা এবং বুঝতে পারবেন আপনার সন্তানের অ্যানিমিয়া হয়েছে কিনা।

2.ভ্যাক্সিন

ডাক্তারবাবু তাকে মিজিলস (হাম) ভ্যাক্সিনের একটা শট দেবেন এবং ওরাল পোলিও ডোজের পঞ্চম ডোজটি দেবেন যদি আপনার শিশুটি বাকি ডোজ গুলো নিয়মিত নিয়ে থাকে।

খেলাধূলা এবং অন্যান্য ক্রিয়াকলাপ

এখানে কতগুলি খেলার উল্লেখ করা হল যা আপনি আপনার 40 সপ্তাহ বয়সী সন্তানের সাথে খেলতে পারবেন।

1. পিকাবু

এই খেলাটি আপনার বাচ্চার বিচ্ছেদ জনিত ভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।আপনি মুখটি লুকান আবার তাকে দেখা দিন এটা তাকে নিশ্চিন্ত করবে আপনার উপস্থিতি সম্বন্ধে আপনাকে দেখতে না পাওয়া সত্বেও।

2. হাততালি

আপনি হাততালি দেওয়া খেলা খেলুন। প্রথমে আপনি হাততালি দিন আর তাকে এটা করার জন্য উৎসাহিত করুন, এতে তার হাতের সঞ্চালন ঘটবে।

3. চোখ,নাক এবং মুখ

এমন একটা খেলা খেলুন যেখানে আপনি আপনার সোনাকে তার চোখ নাক এবং মুখ ছুঁতে বলবেন।এটা তাকে দেহের বিভিন্ন অংশ গুলোর নাম জানতে সাহায্য করবে।

4. নাচ এবং গান

এখন আপনার বাচ্চাটি হাঁটতে শিখে গেছে আপনি তার অঙ্গ সঞ্চালনে আরো সাবলীল করার জন্য তার সাথে নাচ এবং গান করুন।

কখন একজন ডাক্তারের সাথে আলোচনা করা প্রয়োজন

এখানে রইল আপনি কখন আপনার 40 সপ্তাহ বয়সী শিশুর জন্য ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেবেন।

  • বাচ্চাটির খাওয়া,ঘুম,সুরক্ষা এবং তার বিকাশের সূচী আগামী মাসে কি হতে চলেছে বা 40 সপ্তাহ বয়সে কি কি মাইলস্টোন আপনি আশা করতে পারেন এই বিষয়ে আপনি আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করতে পারেন।
  • নানান প্রশ্ন যেমন কখন আপনি আপনার সোনার খাওয়ার তালিকায় মাছ, মাংস, ডিমের সাদা অংশ এবং সাইট্রাস(অবশ্য আগেই যদি না দিয়ে থাকেন) যুক্ত করবেন কিম্বা কখন আপনার বাচ্চার মাতৃদুগ্ধ পানের অভ্যাস বা বোতলের দুধ পান বন্ধ করবেনএই বিষয় গুলো নিয়ে আপনি ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করতে পারেন।

40 সপ্তাহ বয়স হল আপনার বাচ্চার জন্য একটা চ্যালেঞ্জিংএর বয়স, তাই একজন দায়িত্ববান অভিভাবক হিসাবে আপনি কখনই অন্য বাচ্চার সঙ্গে তার তুলনা করা থেকে বিরত থাকবেন যদিও অন্য বাচ্চার বিকাশ হয়ত ভিন্নরকম হয়েছে।কখনই আত্ম বিশ্বাস হারাবেন না কারণ প্রতিটি শিশুই আলাদা প্রকৃতির হয়।