In this Article
- কোষ্ঠকাঠিণ্য কি?
- গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিণ্যের কারণগুলি
- প্রাথমিক গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিণ্যের কারণগুলি
- গর্ভাবস্থার শেষের দিকে কোষ্ঠকাঠিণ্যের কারণগুলি
- গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিণ্যের লক্ষণগুলি
- গর্ভাবস্থায় কেউ কীভাবে কোষ্ঠকাঠিণ্যকে প্রতিরোধ করতে এবং তার চিকিৎসা করতে পারেন
- প্রাকৃতিক কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি যা কোষ্টকাঠিণ্য কমাতে সাহায্য করে
- যে সকল খাদ্য কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়
গর্ভাবস্থা নিঃসন্দেহে একটি ভীষণ সুন্দর অভিজ্ঞতা।কিন্তু এই অবিস্মরণীয় পর্যায়টি আবার এর নিজস্ব কিছু সমস্যা নিয়ে আসে।যদিও মর্নিং সিকনেস এবং বমি বমি ভাব –এগুলি গর্ভাবস্থার সর্বাধিক চর্চিত সমস্যা,এক্ষেত্রে আরও অন্যান্য সমস্যাগুলিও আছে যা অনেকের কাছে বিব্রতকর এবং এমনকি আরও যন্ত্রনাদায়কও হয়ে উঠতে পারে।অনিয়মিত মল অপসারণ,পেটে গ্যাস অথবা কঠিণ মল–এগুলি হল এই ধরনের সমস্যার লক্ষণ যা কোষ্ঠকাঠিণ্য নামে পরিচিত।আসুন আমরা এই কৌশলপূর্ণ অথচ খুব সাধারণ সমস্যাটি পরিচালনা করার উপায়গুলিকে বোঝার চেষ্টা করি।
কোষ্ঠকাঠিণ্য কি?
বলা হয় যখন অন্ত্র আন্দোলন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় এবং মল অপসারণের ব্যবধানগুলির মধ্যে একটি লক্ষণীয় ব্যবধান থাকে তখন আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।যদিও মহিলাদের মধ্যে অন্ত্রের স্বাভাবিক অভ্যাসগুলি পৃথক হয়ে থাকে, তবে অন্ত্রের অনিয়মিত গতি যদি প্রতি সপ্তাহে তিন বারেরও কম দ্বারা চিহ্নিত হয় তবে এটি উদ্বেগের বিষয় হওয়া উচিত।
সাধারণত, বৃহদন্ত্র, বা অন্ত্র, যার মধ্যে কোলন এবং মলদ্বার অন্তর্ভুক্ত থাকে, আপনার পাচিত খাদ্য থেকে জল শোষণ করে, তরল থেকে কঠিনে রূপান্তরিত করে,অর্থাৎ সেটিই হল মল।কোষ্ঠকাঠিন্য ঘটে যখন হজম করা খাবার দীর্ঘসময় আপনার কোলনে অবস্থান করে এবং প্রচুর পরিমাণে জল শোষণ করে শেষ পর্যন্ত আপনার মলকে কঠিণ এবং শুষ্ক করে তোলে, যা রেকটাল পেশীগুলির জন্য আরও সমস্যার সৃষ্টি করে।
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিণ্যের কারণগুলি
আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিণ্য প্রবণ হয়ে থাকেন,তবে সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় এটি আরও কিছু খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।আসুন আমরা কোষ্ঠকাঠিন্যের কয়েকটি সাধারণ কারণ আপনাদের সামনে উদ্ঘাটন করি।
1. হরমোন
এটি কোষ্ঠকাঠিণ্যের অন্যতম একটি কারণ যা আবার গর্ভাবস্থার আরও অন্যান্য সমস্যাগুলিরও কারণ–তা হল হরমোনের উত্থান–পতন।প্রোজেস্টেরণ হরমোন বৃদ্ধির কারণে কোষ্ঠকাঠিণ্য হয়ে থাকে,যা সমগ্র দেহের পেশীগুলিকে শিথিল করে,যার মধ্যে আবার পরিপাক নালীও অন্তর্ভূক্ত।এই কারণে খাদ্য অথবা অবশেষ বা অপদ্রব্যগুলি অন্ত্রের মধ্যে খুব ধীরে ধীরে গমন করে।
2. খাদ্য
এমন কিছু বিশেষ খাবার আছে যেগুলি খাওয়ার কারণেও কোষ্ঠকাঠিণ্য হয়ে থাকে।উচ্চ ফ্যাটযুক্ত এবং কম ফাইবারযুক্ত সামগ্রীর কারণে আপনি দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যগুলি যেমন আইসক্রিম বা পনির আপনার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিয়ে হজম প্রক্রিয়াটিকে সহজ করার চেষ্টা করতে পারেন।এমনকি ব্রকোলি,বাঁধাকপি,ফুলকপি এবং এই ধরণের সবুজ শাক–সবজিগুলি যাতে র্যাফিনোজ নামক শর্করা থাকে সেগুলিকেও গলাধঃকরণ করা এড়িয়ে চলা উচিত।র্যাফিনোজ পেটে গ্যাস সৃষ্টি করে পেটকে ফাঁপিয়ে তোলাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।এছাড়াও অতিরিক্ত রেড মিট খাওয়া এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন কারণ ফাইবার ভিত্তিক উদ্ভিদযুক্ত খাবার এবং দানাশস্যগুলির তুলনায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলিকে হজম করা আরও বেশি কঠিন হতে পারে।
3. অ্যানিমিয়া
আপনার যদি আয়রনের অভাবজনিত রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া থাকে তবে আপনার শরীরে হিমোগ্লোবিন উৎপাদন করার মতো পর্যাপ্ত আয়রণ নেই এবং এর ফলস্বরূপ, আপনার দেহে স্বাস্থ্যকর লোহিত রক্তকণিকার অভাব রয়েছে।এই আয়রণের ঘাটতি দূর করতে আপনি যে আয়রণ ট্যাবলেটগুলি খেয়ে থাকেন তা কোষ্ঠকাঠিন্যকে আরও খারাপ করে তোলে।এর কারণ হল খাদ্য উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়রণের মতো আয়রণের পরিপূরকগুলির মধ্যস্থ আয়রণ দেহ দ্বারা তত সহজে শোষিত হয় না।
4. শারীরিক ক্রিয়াকলাপের ঘাটতি
আপনি যদি শারীরিকভাবে সক্রিয় না হন অথবা যোগ–ব্যায়াম করতে অক্ষম হয়ে থাকেন তবে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে থাকতে পারেন।কারণ নিয়মিতভাবে প্রতিদিনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ নিয়মিত অন্ত্রের গতিবিধির জন্য অপরিহার্য। আপনি যখন ব্যায়াম করেন, তখন আপনার উদরস্থ খাদ্যগুলি বৃহদন্ত্রের মধ্য দিয়ে আরও দ্রুত চলে। এটি আপনার শরীরে খাদ্য থেকে জল শোষিত হওয়ার পরিমাণ হ্রাস করে এবং মলকে কঠিন হয়ে যাওয়া রোধ করে এবং সেটি অপসারণ করার সমস্যাকে সহজ করে তোলে।
5. মানসিক চাপ
শারীরিক ক্রিয়াকলাপের পাশাপাশি মানসিক চাপও আবার এমনকি আপনার হজমের উপর প্রভাব ফেলে।মানসিক চাপ এমন একটি জিনিস যা আপনার পাচন স্বাস্থ্যের সহিত সার্বিক স্বাস্থ্যেরও ভীষণ ভাবে ক্ষতিসাধন করতে পারে।যখন আপনি অতিরিক্ত চাপের মধ্যে পড়েন তখন সম্ভবত আপনার অন্ত্রের গতি হ্রাস করার মাধ্যমে আপনার শরীর তার প্রতিক্রিয়া দেখাবে,যা পরিণতিতে সময়ের সাথে সাথে কোষ্ঠকাঠিন্যকে বাড়িয়ে তোলে।
প্রাথমিক গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিণ্যের কারণগুলি
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক মাসগুলিতে আপনার প্রসবপূর্ব ভিটামিন পরিপূরক থেকে প্রাপ্ত অতিরিক্ত আয়রণ আপনার কোষ্ঠকাঠিণ্যের কারণ হতে পারে এবং তার ফলে সম্পূর্ণ গর্ভাবস্থার জুড়ে আপনি ফুলে থাকতে পারেন।আপনি যদি গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে প্রজেস্টেরণের মাত্রা বাড়ানোর জন্য ইঞ্জেকশন গ্রহণ করে থাকেন তবে পেশীগুলি শিথিল হয়ে পড়ে এবং হজম প্রক্রিয়াটিকে ধীর করে তোলে।
গর্ভাবস্থার শেষের দিকে কোষ্ঠকাঠিণ্যের কারণগুলি
গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ের দিকে,আপনার দেহের জল শোষণের মাত্রা ক্রমশ বেড়ে যাওয়ার ফলে তা প্রায়শই মলকে শক্ত করার দিকে পরিচালিত করে।এই সময়ে, প্রোজেস্টেরন নিঃসরণ ডিম্বাশয় থেকে প্লাসেন্টা বা অমরায় স্থানান্তরিত হয়।এটি স্রাবের মাত্রা বৃদ্ধি করে,যা শক্ত মলের সাথে মিলিত হয়ে গুরুতর কোষ্ঠকাঠিন্যের দিকে পরিচালিত করে।মলদ্বারে জরায়ুর ক্রমবর্ধমান চাপের ফলে সমস্যাটি আরও উদ্বেগজনক হয় যা গ্যাস গঠনের দিকে পরিচালিত করে এবং বর্জ্যটির নির্গমন হতে বাধা সৃষ্টি করতে থাকে।এই কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণগুলি হল পেটে ব্যথা,খিঁচুনি, বাতকর্ম এবং গ্যাস পাস করা।
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিণ্যের লক্ষণগুলি
কোষ্ঠকাঠিণ্যের বেশ কিছু লক্ষণ আপনাকে বেশ অস্বস্তির মধ্যে ফেলতে পারে,সুতরাং সেই লক্ষণগুলিকে চিহ্ণিত করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণঃ
1. অনিয়মিত অন্ত্র আন্দোলন
কোষ্ঠকাঠিণ্যের প্রথম লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হল মল অপসারণের অনিয়মতা।যদি আপনার দৈনিক অন্ত্রের গতিবিধি থাকে কিন্তু হঠাৎ করেই প্রতি অন্য দিনের তুলনায় তা হ্রাস পায় তবে হয়ত আপনি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে পারেন।
2. কঠিন মল
আপনি লক্ষ্য করে থাকতে পারেন যে অনিয়মিত অন্ত্রের গতিগুলির সাথে কঠিণ মল যুক্ত হয়ে থাকে,বিশেষ করে এটি তাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে।এমনকি আপনি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করতে পারেন মল নির্গমনের ক্ষেত্রে,এমনকি সজোরে বেগ দেওয়ার সময় অর্শ এবং মলদ্বার থেকে রক্তপাতও হতে পারে।হেমোরোয়েড বা অর্শ হল মলদ্বা্রের কলাগুলির ফুলে যাওয়া এবং প্রদাহজনিত শিরা যা বেদনাদায়ক এবং চুলকানিযুক্ত হতে পারে। তবে এটি বেশ কয়েক দিনের মধ্যেই উধাও হয়ে যেতে পারে এবং প্রতিটি অন্ত্রের গতিবিধিতে আবার পুনরায় উপস্থিতও হতে পারে।যদি মলদ্বার থেকে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে,আপনি কোনও একজন ডাক্তারকে দেখানো নিশ্চিত করুন।
3. মলদ্বার পূর্ণতা
কোনো কোনো মহিলা আবার মলদ্বার পূর্ণতা রোগে ভোগেন, এটিতে মলদ্বার বন্ধ হয়ে গেছে,এমন ধরনের অনুভূতি হয়।এটা তখনই হয় যখন মল শক্ত হয়ে যায়।এমনকি মলত্যাগ করার পরেও আপনার মলদ্বারে পূর্ণতার অনুভূতি হবে এবং আপনার মলত্যাগের ইচ্ছা অনুভূত হবে।
4. তলপেটে ব্যাথা
যদি কোষ্ঠ্যবধ্যতা চলতে থাকে তাহলে মলত্যাগের সময় আপনার তলপেটে খিঁচুনি অনুভব করতে পারেন।আপনার তলপেটে স্ফীত হয়ে উঠতে পারে এমনকি যখন আপনি মলত্যাগ করছেন না সেই সময়েও।এটা আপনার অন্ত্রের মধ্যে খাদ্যের অপাচ্য অংশের বিপরীত পথে যাওয়ার সংকেত হতে পারে।
5. বায়ুপূর্ণ পেট
কোষ্ঠকাঠিণ্য হল গ্যাস এবং স্ফীতির একটি অতি সাধারণ কারণ।কখনও কখনও পেটে খুব যন্ত্রণা হতে পারে গ্যাসের জন্য,যা কমে যেতে পারে বাতকর্মের মধ্য দিয়ে।আবার এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর জন্য বুকে যন্ত্রণা পর্যন্ত হতে পারে।
6. ক্ষুধামান্দ্য
পেটে গ্যাস হয়ে ফুলে যাওয়ার কারণে আপনি ক্ষুধামান্দ্যবোধ করতে পারেন,সেই কারণে আপনি মল পাস করতে সমর্থ হয়ে ওঠেন না,এমনকি আপনি আবার খাবার খাওয়ার প্রতি আপনার উৎসাহ হারিয়েও ফেলতে পারেন।এর ফলে দেহ অন্ত্র আন্দোলনকে সহজ করে তুলতে সহায়তা করার উপযোগী তন্তু সমৃদ্ধ খাবার থেকে বঞ্চিত হবে।
গর্ভাবস্থায় কেউ কীভাবে কোষ্ঠকাঠিণ্যকে প্রতিরোধ করতে এবং তার চিকিৎসা করতে পারেন
উচ্চ ফাইবারযুক্ত বা আঁশবহুল খাদ্য গ্রহণ করুনঃ আপনি আঁশবহুল খাদ্যদ্রব্য অথবা রাফেজ গ্রহণের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্যকে সর্বোত্তমভাবে এড়াতে পারবেন কারণ এটি অন্ত্রের প্রণালীটিকে সুষ্ঠুভাবে সঞ্চালিত হতে সহায়তা করে। দ্রবণীয় ফাইবার বেশি পরিমাণে জল আপনার মলের মধ্যে বজায় থাকতে দেয়,যা বর্জ্যটিকে নরম করে তোলে এবং সেটিকে অন্ত্রের মধ্য দিয়ে যেতে সহজ করে তোলে। অদ্রবণীয় ফাইবারগুলি আপনার মলের সাথে প্রচুর পরিমাণে যুক্ত হয় এবং আপনার অন্ত্রের মধ্যে এর গতিবেগকে বাড়িয়ে দেয়।এটি আবার কোষ্ঠকাঠিণ্যের অনুভূতিতেও বাধা দেয়।সুতরাং আপনার ডায়েটে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারগুলি অন্তর্ভূক্ত করলে তা কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে পারে এবং কোষ্ঠকাঠিণ্যের চিকিৎসা কীভাবে করা যেতে পারে সে বিষয়ে চিন্তান্বিত এমন একজন মহিলার জন্য এটি হল তার প্রথম পরামর্শ।
1. প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন
জল পরিপাকের জন্য অত্যাবশকীয় উপাদান কারণ জল খাদ্যকে অন্ত্রের বিভিন্ন অংশে সঞ্চালনের জন্য সহায়তা করে।গর্ভাবস্থায় আপনার জল গ্রহণের পরিমান দ্বিগুন করুন। এবং হাইড্রেট থাকুন।
2. আপনার খাবার খাওয়ার সংখ্যা বাড়ান
আপনার খাবার খাওয়ার সংখ্যা ভেঙে নিয়ে পাঁচ বা ছয় বার করুন এবং অল্প অল্প করে খান।এটা আপনার পাকস্থলীকে খাদ্য হজম করতে সময় দেবে এবং খাবারকে অন্ত্রে ও কোলোনে পাঠাতে সাহায্য করবে।
3. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
খাদ্যকে অন্ত্রের মধ্যে দিয়ে যাবার সময় কমাতে ব্যায়াম সাহায্য করে এছাড়াও মলে শরীর থেকে গৃহীত জলের পরিমান হ্রাস করে এবং এটি হল কোষ্ঠকাঠিণ্য কমাবার অন্যতম থেরাপি।শক্ত এবং শুষ্ক মল হল মলত্যাগের অন্তরায়।যখন আপনার অন্ত্রের পেশীগুলি সঠিকভাবে সংকুচিত হয় তখন তা মলকে দ্রুত নিষ্ক্রান্ত হতে সহায়তা করে।যাইহোক সেই ধরনের ব্যায়াম অভ্যাস করুন যা আপনার এবং আপনার সন্তানের জন্য উপযোগী।
4. শ্রোণী দেশের প্রসারণ
বেশিরভাগ অঙ্গ যেগুলি কোমরের নিচে বর্তমান সেগুলি সাধারণত শ্রোণীর মেঝেতে অবস্থান করে।যদি আপনি শ্রোণীর মেঝেতে অবস্থিত পেশীগুলির সংকোচন বা প্রসারণ না করতে পারেন তা হলে আপনার কোষ্ঠ্যকাঠিণ্য হবার সম্ভবনা বেড়ে যাবে। যখন আপনি কোমডে বসবেন তখন গভীর ভাবে প্রশ্বাস নিন এবং আরামদায়ক ভাবে ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস ছাড়ুন যাতে শ্রোণী অঞ্চলের পেশীগুলি শিথিল হয়ে পরে।উবু হয়ে বসা হল আদর্শ অবস্থান, কিন্তু মনে রাখবেন অবশ্যই বেশী চাপ দেবেন না।
5. ল্যাক্সেটিভ বা রেচক
আপনি আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে পরামর্শ করে তাকে একটি ল্যাক্সেটিভ দেবার জন্য অনুরোধ করুন যেটি আপনার ও আপনার বাচ্চার জন্য সুরক্ষিত।
প্রাকৃতিক কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি যা কোষ্টকাঠিণ্য কমাতে সাহায্য করে
এখানে কিছু খাবারের উল্লেখ করা হল যা আপনার ডায়েটে যোগ করুন এবং কোষ্ঠকাঠিনণ্য থেকে মুক্তি পান।
1. লেবু
আপনি এক গ্লাস গরম জলে লেবু মেশান এবং তা পান করুন এটা যাবতীয় টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ এবং অপাচ্য খাদ্যকে কোলন থেকে বের করতে সাহায্য করে।আপনার স্বাদ বাড়ানোর সাথে সাথে এটি খাদ্যমন্ডের সঞ্চালচনের মাধ্যমে মলত্যাগে সহযোগীতা করে।
2. ইসবগুলের ভুষি
ইসবগুলের ভুষি হল মল উৎপাদনকারী ল্যাক্সেটিভ যা প্রায় সকল ভারতীয়দের বাড়িতে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে আসছে বহুকাল ধরে।এর মধ্যে রয়েছে মিউসিলেজ যা তরল শোষণ করে এবং মলের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। 8 -10 গ্লাস জলের সাথে এটি খাওয়া উচিত, এটি ব্যবহারের আগে অবশ্য ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিয়ে নিন।
3. শণবীজ
এটি প্রাকৃতিক তন্তুতে ভরপুর তাই আপনার ডায়েটে র্যাফেজের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।মনে রাখতে হবে প্রতি এক চামচ শণবীজের সাথে 8-10 গ্লাস জল পান করতে হবে।
4. ম্যাসাজ বা মালিশ
আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে আপনার পাকস্থলিকে ম্যাসাজ বা মালিশ করতে পারেন,এটি পেশীগুলোকে প্রসারিত করবে।আপনার আঙ্গুলের সাহায্য আলতো ভাবে ঘড়ির কাঁটার দিকে পেটে মালিশ করুন।যদি আপনার অকাল প্রসবের সম্ভবনা থাকে বা অমরার অবস্থান নিচের দিকে হয় তাহলে কোনোরকম মালিশ করবেন না।
5. ড্রায়েট ফ্রুট এবং ভাপে সেদ্ধ আলুবোখরা
আধ কাপ ভাপে সেদ্ধ ড্রায়েট ফ্রুট যেমন আপ্রিকোট বা আলুবোখরা এক কাপ জলের মধ্যে নিন।যতক্ষন না নরম হচ্ছে ততক্ষণ এগুলোকে জলে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালবেলা্য এগুলো জল সমেত খান।ড্রায়েট ফ্রুট হল তন্তু বা ফাইবারের বিরাট এক উৎস।
6. তেল মালিশ
আপনার মল ত্যাগকে মসৃণ করতে আপনি ভেষজ তেল যেমন নারকেল তেল দিয়ে মালিশ করুন আপনার পশ্চাদদেশে।
7. অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল
প্রতিদিন সকালে বড় এক চামচ অলিভ অয়েল এর সাথে এক চা–চামচ লেবুর রস যোগ করে খান। তবে মনে রাখতে হবে বেশী পরিমাণে এটি খেলে ডায়েরিয়া এবং খিঁচুনি হবার সম্ভাবনা থাকে তাই সেটা করার পরামর্শ দেওয়া হয় না।অলিভ অয়েল মলকে নরম করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।
8. প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক গ্রহণ করুন
আমাদের শরীরে খাবারগুলি ভালোভাবে পাচিত হবার জন্য প্রয়োজন ভাল ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি।প্রতিদিন এক কাপ করে দই খান যাতে প্রচুর প্রোবায়োটিক আছে।
9. যোগা
গ্যাস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাবার জন্য অনেকগুলি যোগ আসন আছে যা অপাচিত খাদ্যকে অন্ত্রের মধ্য দিয়ে পরিচালিত করতে সাহায্য করে এবং আরাম দেয়।কয়েকটি যোগ আসন আপনি অভ্যাস করতে পারেন খাবার ভালভাবে হজম করার যেমন মৎসাসন,যাতে কুকুরের মত নিচের দিকে মুখ রেখে ত্রিভূজাকারে বসতে হয়।অবশ্যই এই আসনগুলি অভ্যাস করার আগে একজন যোগা–গুরুর পরামর্শ নেবেন।
10. অলোভেরা জুস
আপনি আলোভেরা জুস ব্যবহার করতে পারেন এটি আপনার পাচনতন্ত্রকে শীতল করে।বড় দুই চামচ আলোভেরার রস বা জ্যুস আপনি খেতে পারেন আরাম পাবার জন্য।সব থেকে ভাল হবে আপনি যদি জেলটি আলোভেরা পাতা থেকে সরাসরি বের করে নেন এবং অন্য কোনো ফলের রসের সাথে মিশিয়ে খান।
যে সকল খাদ্য কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়
এখানে কিছু খাদ্যের উল্লেখ করা হল যা আপনি আপনার খাদ্যতালিকায় অর্ন্তভুক্ত করলে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য কমতে পারে।
- ফলঃ পেয়ারা,আপেল,নাশপাতি,বেরী,কমলা এবং ট্যাঞ্জারিন(কমলা লেবুর ন্যায় ছোট এক ধরনের ফল বিশেষ)গ্রহণ করুন।
- সবজিঃ গাজর, ব্রাসেলস স্প্রাউট,মিষ্টি আলু, কুমড়ো, স্কোয়াশ প্রভৃতি খান।এর সাথে বিভিন্ন শাক–পাতা যেমন পালং শাক,লেটুশ গ্রহণ করুন।
- শিম্বী জাতীয়ঃ মটর,বীনস,মুসূর খান।
- দানাশস্যঃ আপনি হোল হুইট ব্রেড,ব্রাউন রাইস, প্রসেস করা হয়নি এমন ওট এবং ব্রান খান।
- বাদাম এবং বীজঃ আপনি চেষ্টা করুন আমন্ড বাদাম,চিনা–বাদাম,সূর্যমুখীর বীজ এবং আখরোট প্রতিদিনের খাবারের মধ্যে রাখতে।
মনে রাখবেন অন্যন্য গর্ভাবস্থার সমস্যাগুলোর মত কোষ্ঠ্যকাঠিন্যও হল একটি সাময়িক সমস্যা,যা সাধারণত প্রসবের পরপরই কমে যায়।আপনি খুব সহজেই এটির মোকাবিলা করতে পারবেন যদি আপনি আগ্রিম সুরক্ষার পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করেন এবং সঠিক জীবন শৈলী মেনে চলেন।