আপনার 14 সপ্তাহ বয়সী শিশু-বিকাশ,মাইলস্টোন এবং যত্নের পরামর্শ

আপনার 14 সপ্তাহ বয়সী শিশু-বিকাশ,মাইলস্টোন এবং যত্নের পরামর্শ

সাড়ে 3 মাস ইতিমধ্যেই অতিক্রান্ত?আপনার সোনাটি তার অতীতের সমস্ত দশাগুলো অতিক্রম করে এসে দ্রুত বিকাশ আর অগ্রগতির সম্মুখীন হয়েছে। বিকাশের সাথে সাথে সে তার নিজস্ব পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে।তার প্রিয় খেলনা, নির্দিষ্ট ভাললাগার গান থেকে শুরু করে খেলার প্রতি আকর্ষন সব কিছুই হল তার আত্মপরিচয় প্রকাশ করবার ধীর পদক্ষেপ।

14 সপ্তাহ বয়সী শিশুর বিকাশ

সাড়ে তিন মাস অতিক্রম করার পর আপনার বাচ্চাটি বড়দের মত হতে চেয়ে অন্যান্য লোকেদের সাথে প্রচুর পরিমাণে মনের ভাব আদান প্রদান করতে চাইবে, অথবা একা একা নিজেকে নিয়েই সময় কাটাতে থাকবে।এই ব্যাক্তিক্তের বিকাশ কখনই ভবিষ্যতে সে অর্ন্তমূখী না বর্হিমূখী ব্যাক্তি হবে তার দিক নির্দেশ করে না।কিন্তু এটা তার চাহিদা গুলোকে সামলাতে সাহায্য করে।কোনো কোনো বাচ্চা শান্ত পরিবেশে তাদের নিজের মুষ্টিমেয় কিছু লোকজনের সান্নিধ্য পছন্দ করে। আবার অনেকে পুরো পরিবারের অনেক লোকের অবস্থান পছন্দ করে।সে তার চারপাশের পরিবেশ থেকে নানা জিনিস আহরণ করে এবং সেখান থেকে শিখতে থাকে ও তার মস্তিষ্কে এগুলোর মর্মোদ্ধার করে তার চেতনা জাগ্রত করে।ঘরের অন্যান্য জিনিস গুলোও তার কৌতুহল উদ্রেক করে এবং সে ঘরের সমস্ত স্থানের রহস্য উন্মোচন করতে চাইবে।

চোদ্দ সপ্তাহ বয়সী শিশুর মাইলস্টোনগুলি

  • প্রত্যঙ্গগুলোর প্রতি তার বর্ধিত সচেনতা তাকে একটা নির্দিষ্ট হাত বা আঙ্গুলের প্রতি বেশি মনযোগী করে তুলবে।
  • বেশির ভাগ সময়েই আপনার শিশু তার পা দুটোকে দেখবার চেষ্টা করেও সুবিধা করতে পারবে না। যখন সে পা দুটোকে উপরের দিকে তুলবে সে তখন এ দুটোকে নিয়ে খেলবে এবং মুখের মধ্যে ঢোকাবার চেষ্টা করবে।
  • সাধারণত 14 সপ্তাহের একটি শিশুর ওজন তার আগেকার বৃদ্ধি এবং লিঙ্গের ওপর নির্ভর করে 6 কেজি থেকে 7.5 কেজি হয়।
  • তার শক্তির মাত্রা অনেক বেড়ে যায় এবং আপনার বাচ্চা প্রায় স্থির থাকে যখন সে শুয়ে থাকে। একটানা ঘুঁসি মারে বা তার হাত দুটোকে নিয়ে খেলা করে এবং লালা দিয়ে বাবল বা বুদবুদ ছড়াতে থাকে।
  • তাদের পিঠ আরো শক্ত হয়ে ওঠে অনেক শিশু আবার দাঁড়াতে চেষ্টা করে যদি তাদের শক্ত কিছুতে ঠেস দিয়ে সোজা করে বসিয়ে দেওয়া হয়।
  • তারা আরো ভালোভাবে বুঝতে পারে যে তাদের কর্মের জন্যই কোনো বস্তুর চলন বা পরিবর্তন হচ্ছে।ঝুমঝুমির সাথে বা ঝোলানো বাঁশীর সাথে বা মোবাইলের স্ক্রিন এর ওপর যদি তাদের হাত থাকে তাহলে এই বিষয়টা তারা ভাল বোঝে
  • আপনার মুখটি আরো কাছে আনুন সে ধরতে চাইবে এবং স্পর্শ করবে ও অনুভব করবে আগের থেকে অনেক বেশি করে।
  • তাদের যোগাযোগ করার ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পাবে। মুখ দিয়ে শব্দ করা অন্যদের সাথে কথা বলার প্রচেষ্টা শুরু হবে।
  • এই সময় থেকে আপনার সোনাটি এটা বুঝতে শিখে গেছে যে কে তাদের কোন চাহিদা পূরণ করবে।তার যখন খিদে পাবে সে তখন আপনার সাধারণ গতিপথের দিকে তাকিয়ে জোরে শব্দ করবে।
  • যদি কোনো নতুন লোকের সাথে আলাপ হয় বা তাকে যদি নতুন খেলনা দেওয়া হয় তাহলে সে অনেকক্ষণ ধরে তার দিকে তাকিয়ে থেকে সেটা বোঝবার চেষ্টা করেবে।হয়ত তৎক্ষনাৎ সেই ব্যক্তিটির সান্নিধ্য তার কাছে সুখকর হবে না তবুও সে তাকে স্পর্শ করে অনুভব করবে।

খাওয়ানো

আপনার শিশুটি বেশ বড় হয়ে উঠেছে যে শেষ পর্যন্ত এবার তাকে একটা নির্দিষ্ট রুটিনের মধ্যে আনতে হবে।বুকের দুধ হোক বা বোতলের দুধ যাই হোক না কেন তাকে এবার থেকে একটি নিয়মানুবর্তি খাবার সময় তালিকার মধ্যে আনতে হবে তবে একশো শতাংশ কঠোর হতে হবে না।এই 14 সপ্তাহের আশেপাশে বয়সের বাচ্চাটি অন্যান্য খাবার সময়ের সাথে সন্ধ্যা বেলার খাবার সময় যুক্ত করতে হবে যে সময় আমরা সাধারণত স্ন্যাক্স জাতীয় খাবার খাই।আপনাকে আপনার নিজের চাহিদার সাথে সাথে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের চাহিদার কথা মাথায় রাখতে হবে,অবশ্যই তার সাথে মনে রাখবেন আপনার ছোট্ট সোনাটি্র কথা যে আপনার বুকে ঝাঁপিয়ে পরে দ্রুত আপনার স্তন্যপান করতে চাইবে। এই ক্ষেত্রে আপনি আপনার বুকের দুধ আগে থেকে জমা করে রেখে দেবেন এবং আপনার আগের সন্তান বা পরিবারের অন্য কাউকে তাকে খাওয়াতে বলে অন্য কোনো প্রয়োজনীয় কাজ করবেন বা রাতের খাবার তৈরী করবেন। এছাড়াও আপনার বাচ্চা এখন খেলতে চাইবে অথবা কোনো বিশেষ কাজে ব্যাস্ত থাকবে।সব থেকে ভাল হয় যদি আপনার স্বামী আশেপাশে থাকেন তাহলে বাচ্চাটাকে সুন্দর ভাবে স্নান করিয়ে তার সাথে পার্কে বা বাগানে ঘুরতে পাঠিয়ে দিন এটা আপনার সোনাটিকে শান্ত রাখবে আর এই ফাঁকে আপনি অন্যান্য কাজ সেরে নিন।

খাওয়ানো

ঘুমানো

এই বয়সে আপনার শিশুটি এতটাই বেড়ে উঠতে পারে যে তার দোলনায় অসুবিধা হবে,সবথেকে ভাল তার জন্য বিছানার ব্যবস্থা করা।এই পরিবর্তন করা দরকার এবং এই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে আপনি এবং আপনার সন্তান একই ঘরে ঘুমান। আপনার 14 সপ্তাহ বয়সীর ঘুমের প্যাটর্ন থেকে নির্দিষ্ট সময় তালিকার ভবিষ্যৎবাণী করা এখনও বহু দূরের কথা।এখনও রাত্রে মাঝে মধ্যে সে জেগে উঠতে পারে তার খিদে পাবার জন্যে অথবা তাকে পিঠ চাপড়ে দিলে সে আবার ঘুমিয়ে পড়বে।এগুলো সব কিছুই আপনার শিশুর বৃদ্ধির উন্নতির ফল যার মধ্য দিয়ে আপনার বাচ্চা চলেছে এবং সে ভাল পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করছে।অন্যান্য বাচ্চারা সারা রাত ঘুমাচ্ছে বা তারা একটা সন্তোষজনক সময় ধরে ঘুমাচ্ছে একথা শুনে আপনি বিচলিত হতে পারেন এই ভেবে যে আপনার কিছু ভুল হয়ে যাচ্ছে কিনা।এটা মনে রাখতে হবে প্রতিটা শিশুর শারীরিক গঠন আলাদা ধরণের এবং তাদের চাহিদাও এক হয় না।কেউ হয়তো সারা দিন ধরে ঘুমাতে চায় আবার অনেকে যখন তখন জেগে ওঠে। তবে প্রতি ক্ষেত্রেই একটি দীর্ঘ সময় ধরে বাচ্চার ঘুমিয়ে থাকার ব্যাপার থাকবে সেটা কোন ভাবেই ক্ষুন্ন করা যাবে না যেহেতু এই সময়েই তাদের সবথেকে বেশী বৃদ্ধি হয়।

14 সপ্তাহ বয়সী শিশুর যত্নের পরামর্শ

  • অন্য বাচ্চারা যে কাজটি করছে সেটি করতে হয়তো আপনার বাচ্চাটি তাদের থেকে বেশি সময় নিচ্ছে তাতে হতাশ হবার কিছু নেই আপনার বাচ্চাকে তার নিজস্ব গতিতে এগোতে দিন।
  • অনেক বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তাদের আইরিশের রঙ বদলে যায়।যতক্ষণ না চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে বা চোখ জ্বালা জ্বালা করছে ততক্ষণ এটা কোনো সংক্রমণ নয়, এটা স্বভাবিক ব্যাপার।
  • যদি আপনি অন্য কাজে ব্যাস্ত থাকেন ফর্মূলা দুধ এবং বুকের দুধ হাতের কাছে রাখুন যাতে খুব তাড়াতাড়ি মিশিয়ে বাচ্চাটিকে দেওয়া যায়।

পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং টিকাকরণ

আগের সপ্তাহের ভ্যাক্সিনগুলো অনুসরণ করার পর 14 তম সপ্তাহে আরো নতুন কিছু ভ্যাক্সিনের প্রয়োজন হয় আপনার বাচ্চাকে সুস্থ, অন্যান্য রোগ থেকে রক্ষা করতে এবং দেহের অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করতে।

সবার আগে ট্রিপিল ভ্যাক্সিন যা ডিপ্থেরিয়া এবং পোলিইয়ো প্রতিরোধ করে।এটা হল DPT/IPV/HIB ভ্যাক্সিন।আগে আলাদা করে IPV এর ডোজ দুই মাস বা তার আগে দেওয়া হয়েছে।

অন্য আর একটি প্রয়োজনীয় ভ্যাক্সিন হল PCV ভ্যাক্সিন যেটা তৃতীয়বার আপনার বাচ্চাকে দেওয়া হয়। আর একটির তৃতীয় মাত্রা দেওয়া হয় সেটা হল রোটা ভাইরাস ভ্যাক্সিন,অনেক সময় এটা মুখে খাওয়ানো হয়ে থাকে।

এই সমস্ত ভ্যাক্সিনের দেবার জন্য আপনার বাচ্চার সামান্য জ্বর হতে পারে তা খুবই স্বভাবিক ব্যাপার এতে ভয় পাবার কিছু নেই।

খেলাধূলা এবং অন্যান্য ক্রিয়াকলাপ

এখন আপনার শিশুর দেহের উর্দ্ধাংশের বিকাশ খুব ভাল হয়েছে তার ঘাড়ের ও গলার পেশীগুলো মজবুত হয়েছে সে তার ঘাড় সোজা করে উঁচু করে রাখতে পারে অনেকক্ষণ ধরে।এই বিষয়টাকে কাজে লাগিয়ে আপনি তাকে সুপারম্যান বা রোলারকোস্টার এর মত খেলা খেলতে পারেন।আপনার সোনার কাঁধ দুটো শক্ত করে ধরে তাকে শূণ্যে তুলে সারা ঘর ঘোরাতে পারেন আর সেই সঙ্গে মুখ দিয়ে হুশ হুশ বা বাতাসের শব্দ করতে পারেন।তাকে বিপরীত দিকে মুখ করে ঘোরানোর ফলে হৈ চৈ পরে যাবে সে তার জোরে জোরে হাসি সামলাতে পারবে না। যদি আপনি জিমে স্বচ্ছন্দ হন এবং আপনার কাছে যদি জিমের বল থাকে বা একটা অন্য বড় বল থাকে তাহলে ওটার ওপর তাকে বসিয়ে দিনতারপর ধীরে ধীরে বলটিকে ঘোরান বিভিন্ন দিকে এবং দেখতে থাকুন আপনার ছোট্টটি কিভাবে অল্প অল্প করে এক দিক থেকে অন্য দিকে সরে যাচ্ছে।

খেলাধূলা এবং অন্যান্য ক্রিয়াকলাপ

পিকবু সব বয়সের বাচাদের একটা প্রিয় খেলা। এখন আপনার বাচ্চাটি আর একটু বেশি করতে চাইছে, এই সময় খেলাটাকে ওপরের স্তরে নিয়ে যান।আপনার বাচ্চাটাকে সোজা করে বসান, তাকে কিছু বালিশ দিয়ে ঠেশ দিন এমন নিরাপদ ভাবে রাখুন যাতে সে গড়িয়ে না পড়ে যায়।তারপর তাকে ঘরের দিকে মুখ করিয়ে দিন।তারপর আপনি নানা পদ্ধতি অবলম্বন করে ঘরের নানা জায়গায় লুকোন এবং শব্দ করুন আর বিভিন্ন কোণ থেকে উঁকি মারুন আর তাকে চমকে দিন। খটের নিচে, সোফার পিছনে, লুকান তারপর সোফার অন্য প্রান্ত দিয়ে বা দরজার পাশ দিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন।এটা আপনার বাচ্চার কাছে একটা ইন্দ্রজালের আবহ সৃষ্টি করবে সারা দিনের জন্য।

প্রয়োজনে ডাক্তারের সাথে আলোচনা

নানা ধরনের ভ্যক্সিন প্রয়োগের ফলে আপনার বাচ্চার সামান্য জ্বর হতে পারে।যদি জ্বর দীর্ঘ সময় ধরে চলে এবং তার দেহের তাপমাত্রা 100.5 ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার বেশী হয় কিম্বা আপনার বাচ্চা যদি অবসন্ন হয়ে পরে বা বমি করে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

যদি আপনার বাচ্চাটি কোনো জিনিস মুঠো করে শক্ত ভাবে ধরতে না পারে অথবা যদি কোনো ছোটো খেলনা বা ওই ধরনের কিছু কীভাবে ধরতে হয় তা বুঝতে না পারে তাহলে অবশ্যই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করান তার বিকাশে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে কিনা।

শারীরিক বিকাশের সাথে সাথে আপনার বাচ্চার আবেগের এবং সামাজিক বিকাশ এই সময়ে হতে থাকে।এই বয়সেই ব্যাক্তিত্বের ছোট্ট বীজটির প্রকাশ দেখা যায় যা ধীরে ধীরে তার একান্ত নিজস্ব ব্যক্তিসত্ত্বায় পরিণত হয়।আপনি নিশ্চিত করুন যে উৎসাহব্যঞ্জক কাজগুলো যেন নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চলতে থাকে এবং আনন্দপূর্ণ ইতিবাচক ঘরের পরিবেশ আপনার আদরের সন্তানকে বিরাট আকারে লালিত পালিত করবে এই আশা রাখি