In this Article
আপনার সন্তানকে ভাল আচার–আচরণ এবং শিষ্টাচারের গুরুত্ব শেখানোর জন্য খুব বেশি তাড়াহুড়োর সাথে তা শুরু করবেন না।ছোট বয়সে বাচ্চাদের মাথায় চট করে যেকোনও ব্যাপারটাই বসে যায় অবিশ্বাস্যভাবে।তাদের যাকিছু শেখানো হয় তারা তা স্পষ্টতার সাথে মনে রাখে এবং পরবর্তিতে একটু বেশি বয়সে শিখতে তারা যা সময় নেয় তার থেকে অনেক দ্রুত তারা এই অল্প বয়সেই বিশোষণের দ্বারা মগজে রপ্ত করে নেয়।
শিশুদের আচার–আচরণ, আদব–কায়দা এবং শিষ্টাচারগুলি তাদের ভালোভাবে বেড়ে ওঠার একটা ইঙ্গিত।বাচ্চাদের শিষ্টাচার শেখানোটা একটা বড় কাজ হয়ে উঠতে পারে, তবে তা শেখানোর সময় আপনার বাচ্চার সাথে ধৈর্য্যহারা হয়ে পড়বেন না সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করুন।সর্বপোরি ধৈর্য্য ধরে রাখাটাও একটা ভাল শিষ্টাচার।আর বাচ্চারা বড়োদের থেকেই ভালো রোল মডেল হয়ে উঠতে শেখে।অতএব, একজন গুরুজন এবং অভিভাবক হিসেবে আমাদের সন্তানের সামনে সর্বোত্তম শিষ্টাচারগুলি প্রদর্শন করানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা তা লক্ষ্য করে এবং শেখে।
আপনার বাচ্চার মধ্যে ভাল শিষ্টাচারগুলি প্রবেশ করাতে পারলে তা তাকে সার্বিকভাবে একজন প্রফুল্ল ব্যক্তি, বিনয়ী, দয়ালু করে তুলবে এবং জীবনে সাফল্য অর্জনের সম্ভাবনাকে নিশ্চিত করবে।এই নিবন্ধে আমরা 20 টি সু–আচার–আচরণের একটি তালিকার দিকে নজর দেব যেগুলি আপনার বাচ্চাকে জানানো এবং শেখানো উচিত।
কেন বাচ্চাদের শিষ্টাচারগুলি শেখানো উচিত?
শিষ্টাচারের সাথে বাচ্চারা সর্বদাই বাকি সকলের উপরে প্রাধান্য পায়, তা সেটা একাডেমিক দিক থেকেই হোক কিম্বা সামাজিক।এখানে এমন কিছু বিষয় উল্লেখ করা হল যেখানে সু–আচার–আচরণগুলি বাচ্চাদের জন্য উপকারি হয়ে ওঠে।
1.আত্মসম্মান বাড়ায়
শিষ্টাচারের জন্য পুরস্কৃত হওয়া এবং বাস্তব বিশ্বে তাদের আচরণের একটা ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাওয়া শিশুদের মধ্যে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী মনোভাব জাগিয়ে তোলে।সম্মানের যোগ্য বোধ করাটা হল একটা দুর্দান্ত আত্মবিশ্বাসের সহায়ককারী।
2.সামাজিক জীবন
যেসকল বাচ্চারা সাধারণত রূঢ় বা রাগি প্রকৃতির কিম্বা আক্রমণাত্মক হয়ে থাকে তারা মানুষের মনে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া গড়ে তোলে, সেরকমই এর বিপরীতে, যে সকল শিশুরা তাদের সমবয়সী এবং বন্ধুবান্ধবদের সাথে সদয় এবং শ্রদ্ধার সাথে আচরণ করে তারা বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং আরও অনুগত লোকদের দ্বারা আকৃষ্ট হয় যারা তাদের আচরণকে প্রতিবিম্বিত করে।সু–আচার–আচরণের ফলে শক্তিশালী ও আরও ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
3.আরও ভাল সুযোগ
ভাল আচার–আচরণ করা শিশুরা হাজার ভিড়ের মাঝ থেকে আপনা হতেই উঠে দাঁড়ায় এবং তাদের শিক্ষা জীবনের পাশাপাশি কেরিয়ারের ক্ষেত্রেও আরও ভাল সুযোগের মুখোমুখি হতে পারে।ভদ্র, বিনয়ী লোকেদের কর্মক্ষেত্রে নিযুক্ত হওয়ার এবং কেরিয়ারের উন্নতি আরও দ্রুত হারে হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।
4.সুখানুভব ও প্রসন্নতা
একটা ভাল কাজ করা বা কারুর থেকে একটা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা মানুষকে সন্তোষ ও খুশি বোধ করায় এবং তারা তখন তাদের সেই আচরণের পুনরাবৃত্তি করে সেগুলিকে তাদের অভ্যাসে গড়ে তোলে।শিষ্টাচারের ফলে শিশুরা হয়ে ওঠে দৃঢ়চেতা, নির্ভীক ও আত্মবিশ্বাসী।
ভাল আচার–আচরণ, যেগুলি আপনার সন্তানদের আপনি অবশ্যই শেখাবেন
1.’দয়া করে‘ এবং ‘ধন্যবাদ‘ –শব্দগুলি বলানোর অভ্যাস করান
এটা হল আপনার সন্তানকে শেখানোর সর্বপ্রথম প্রাথমিক শিষ্টাচারগুলির মধ্যে একটি।কোনওকিছু চাওয়ার সময় ‘দয়া করে‘ বা ‘প্লিজ‘ বলার গুরুত্ব এবং কোনওকিছু প্রাপ্তির সময় ‘ধন্যবাদ‘ বলা শিশুদের মধ্যে প্রথম থেকেই অন্তর্ভূক্ত করা উচিত।সর্বদা সেটা বলানো প্র্যাকটিসের মধ্যে রাখুন, যাতে শেষ পর্যন্ত তা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয় ও আপনা থেকেই মুখ ফুটে বেরিয়ে আসে উদ্দিষ্ট পরিপ্রেক্ষিতে।
2.কোনওকিছুতে হাত দেওয়া বা নেওয়ার আগে অনুমতি নেওয়া
তাদের নিজেদের নয় এমন কোনও জিনিসে, এমনকি তার মা–বাবার জিনিসেও হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই তাদের অনুমতি নিতে শেখানো উচিত।যথাযথ ধন্যবাদের সাথে তাদের ধার নেওয়া জিনিসটি যথাযোগ্য স্থানে যথাযোগ্যভাবে ফেরত দেওয়াতে শেখানোটাও জরুরি।
3.’সরি‘ বা ‘দুঃখিত‘ বলতে শেখানো
দয়া করে’ এবং ‘ধন্যবাদ’ এর পাশাপাশি, কোনও ভুল করলে তখন ‘দুঃখিত‘ বলতে শেখানোটাও আপনার সন্তানের ভিতরে প্রবেশ করানো গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাসগুলির মধ্যে একটি।আপনার শিশুকে শেখান কখন এবং কোথায় দুঃখিত বলতে হয় এবং যখনতখন সেটা ব্যবহার না করতে।সহানুভূতি হল এমন একটি গুণ যা তাদের মধ্যে আত্মস্থ করা উচিত।
4.ঘরে প্রবেশের আগে দরজায় ঠক্ঠক্ করা
বাচ্চাদের শেখানো উচিত যে প্রাইভেসি হল সর্বজনীন, বিশেষত বাড়িতে।তাদের জেনে রাখা উচিত যে কারও ঘরে প্রবেশ করার আগে দরজায় কড়া নাড়ানো এবং অনুমতি চাওয়া হল সম্মানজনক। শুরু থেকেই আপনার বাচ্চাদের সামনে এটি করলে সেটি তাদেরকে একটি ভাল অভ্যাস হিসাবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
5.হাঁচি বা কাশির সময় মুখ চাপা দেওয়া
আপনার সন্তানদের শেখান যে হাঁচা বা কাশার সময় তাদের মুখ চাপা দিতে।তাছাড়াও তাদের এটিও শেখান যে প্রকাশ্যে বা কারো সামনে নাকে হাত দেওয়া বা খোঁটা অশোভনীয় এবং অপ্রীতিকর হিসেবে বিবেচিত।এটা মেনে চলা শুধুই একটা ভাল অভ্যাস নয় সুস্বাস্থ্যবিধিরও একটি অংশ।
6.’এক্সকিউজ মি‘ বলতে শেখান
শিশুদের শেখার এটি আরেকটি প্রাথমিক কৌশল।বাচ্চারা এমনিতেই একটু অধৈর্য হয়, সুতরাং কথা বলার আগে অনুমতি নেওয়ার জন্য তাদের ‘এক্সকিউজ মি‘ বলতে শেখাতে হবে।তাদের এটাও জানানো ও শেখানো উচিত যে কথার মাঝে কাউকে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে কখন এবং কীভাবে কোনও কথোপথনের মধ্যে প্রবেশ করতে হয়।
7.লোকেদের নিয়ে মজা না করা বা কাউকে উপহাসের পাত্র না করে তোলা
এটা খুব শীঘ্রই তাদের শেখানো উচিত, আর যদি তা না করা হয়, শিশুরা ভাবতে পারে যে মানুষকে নিয়ে মজা করাটা ঠিক আছে–সেটা এমন কিছু নয়।তাদের এটা শেখানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে পাবলিক বা প্রাইভেট জায়গায় কোনও মানুষের আবেগকে নিয়ে উপহাস করে তাকে আঘাত করা কখনই ঠিক কাজ নয়।
8.ফোনে কথা বলার শিষ্টাচার
আপনার বাচ্চার জানা প্রয়োজন যে ফোনের মধ্যে কীভাবে কথা বলতে হয় এবং এটাও বোঝা দরকার যে ফোনের অপর পাশ থেকে অপর ব্যক্তি যখন কথা বলেন তখন তা চুপ করে শোনা প্রয়োজন।মানুষের উপরে এটা তার একটা ভাল প্রভাব ফেলবে।
9.বয়স্কদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা
বয়স্করা এই পৃথিবীতে বহুকাল যাবৎ বসবাস করার দরুন তারা বেশ প্রাজ্ঞ হয়ে থাকেন, আর বাচ্চাদের উচিত তাদের থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চার করে জ্ঞান বৃদ্ধি করা, আর সেই অর্জিত জ্ঞান থেকে তাদের প্রতি সম্মান দেখানো।তাদের মা–বাবা, ঠাকুমা–ঠাকুরদা, শিক্ষক–শিক্ষিকা এবং যেকোনও বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান জানানো উচিত।সেটা করার একটা উপায় হতে পারে, খাবার পরিবেশনের সময় সবার আগে বাড়ির বয়স্কদের খাবার দেওয়া এমনকি ছোটদেরও আগে অথবা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে কোনও বৃদ্ধ ব্যক্তি চোখে পড়লে তাকে নিজের বসার স্থানটি ছেড়ে দেওয়া, যেগুলি আপনার সন্তান লক্ষ্য করবে এবং তারা জানবে যে বয়স্কদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ভাল আচরণের ইঙ্গিত দেয়।
10.মানুষের নাম জানা এবং মনে রাখা
কারও নাম বারবার ব্যবহার করা এবং স্মরণ করা থেকে বোঝা যায় যে আপনি তাদের চিনতে এবং মনে রাখার চেষ্টা করেন।আপনার বাচ্চার সাথে প্রায়ই আলাপচারিতা করে ও দেখাশুনা হয় এমন পারিবারিক সদস্য বা তার কোনও বন্ধুর নাম বারবার তার সামনে বলে তাকে তা মনে রাখতে শেখান।
11.মানুষের দিকে আঙ্গুল তুলে কথা না বলা
আপনার সন্তানকে শেখান কোনও ব্যক্তির দিকে আঙ্গুল তুলে বা ঈশারা করে কথা বলাটা হল অভদ্রতার পরিচয়।তাদের বলুন যে তারা যদি কারও দিকে আঙ্গুল তুলে ইঙ্গিত করে তবে তিনটি আঙ্গুল সর্বদা তাদের নিজের দিকেও ফিরে আসে।অন্যান্য মানুষের আবেগের স্থানগুলি সম্পর্কে সচেতন করে তোলার জন্য আপনি তাদের এটিকে প্রথম থেকেই শেখাতে শুরু করতে পারেন তাদের দিকেও আঙ্গুল তুলে বা ঈশারা করার মাধ্যমে। তারপর তাদের থেকে জানতে চান যে তাদের দিকে এভাবে আঙ্গুল তুলে বা তাদের দিকে ঈশারা করে কোনও কথা বললে তারা কীরকম বোধ করে, আর এটা তাদের সে ব্যাপারে ভাবিয়ে তোলার জন্য একটা সঠিক পদক্ষেপ হয়ে উঠতে পারে।
12.প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সদয় হয়ে ওঠা
বাচ্চারা স্বাভাবিকভাবেই সবকিছুর ব্যাপারে একটু বেশিই কৌতুহলী হয়ে থাকে, তাই তারা যদি শারীরিক বিকলাঙ্গতার সাথে কোনও ব্যক্তিকে দেখে থাকে, তবে তারা তাদের দিকে আঙ্গুল তোলে বা ঈশারা করে এবং তাদের ব্যাপারে জোরে জোরে প্রশ্ন করতে পারে অথবা এমনকি আবার তাদের দেখে ভয়ও পেতে পারে।তাদের এটা জানানো উচিত শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সাথে আমাদের পৃথিবীতে কিছু মানুষ রয়েছেন কিন্তু তারা বাকী আর পাঁচজনের মতোই, তাই কোনওরকম ভেদাভেদ গড়ে না তুলে তাদের সাথেও সেই একইরকম স্বাভাবিক আচরণ করা উচিত।
13.একজন ভাল অভ্যাগত হয়ে ওঠা
বাচ্চাদের শেখান যে যখন তারা তাদের বন্ধুদের বাড়িতে যাবে তখন যেন তারা সেখানে শান্ত, ভদ্র এবং নম্র হয়ে থাকে।তাদের জানা দরকার অন্য পরিবারের শিডিউলের সাথে কীভাবে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া যায়, পরিবেশিত খাবারের ওপর তারা যেন কোনও খুঁতখুঁতে, একগুঁয়ে ভাব না দেখায় এবং তাদের পছন্দের জিনিসগুলি জানানোর জন্য যেন কোনও কিন্তু কিন্তু ভাব না করে।বন্ধুদের বাড়িতে গিয়ে আপ্যায়ণকারীকে যথাযথ শুভেচ্ছা জানানোটাও তাদের শেখানো উচিত।
14.ঠিকভাবে কথোপকথন করা
বাচ্চাদের শেখা উচিত যে চেঁচিয়ে, চিৎকার করে এবং অট্টহাসির সাথে জোরে জোরে কথা বলাটা যোগাযোগের কোনও সঠিক প্রক্রিয়া নয়।কতটা উত্তেজিত বা ক্রুদ্ধ তারা সেটা কোনও বিষয় নয়, তাদের নমনীয়তার সাথে কোমলভাবে কথা বলা এবং সেই লক্ষ্যে স্থির থাকা উচিত।আপনি এটি আপনার বাচ্চাদের শেখাতে পারেন তাদের সামনে এই একই কাজ করে।এছাড়াও তাদের জানান যে অন্যজনের কথা বলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকতে ও অপেক্ষা করতে হয় যতক্ষন না তাদের বলার সময় আসে।এটা আপনার সন্তানদের আপনার কথাও শোনার ক্ষেত্রে ধৈর্যশীল করে তুলবে।
15.দয়াপরবশ এবং সহানুভূতিশীল হয়ে উঠতে শেখান
দয়াপরবশ এবং সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠাটা বাচ্চাদের একটা অভ্যাস হয়ে ওঠা উচিত।এটাতে তারা নিজেরাও একটা ভাল বোধ করবে এবং অন্যেরাও তাদের পছন্দ করবে।আপনি তাদের শেখাতে পারেন যে কেউ ঘরে প্রবেশ করার সময় যদি তার হাতগুলি আটকে থাকা তবে তার জন্য দরজা খুলে তার হাতলটা টেনে ধরে রাখতে অথবা মা–বাবা এবং শিক্ষক–শিক্ষিকাদের কাজে হাতে হাতে সাহায্য করতে।
16.সকলের সাথে ভাগ করে নিতে শেখান
বাচ্চারা যখন একে অপরের সাথে খেলে তখন এই অভ্যাসটা তাদের মধ্যে গড়ে তোলা খুবই জরুরি।তাদের শেখান যে তাদের খেলনা এবং খাবারগুলি অপরের সাথে ভাগ করে নেওয়ার অর্থ হল তার প্রতি যত্নশীলও হয়ে ওঠা।আপনি এই কৌশলটা তাদের শেখানো শুরু করতে পারেন খেলার ছলে, যেমন– যখন আপনি তাদের সাথে খেলায় মেতে থাকবেন তখন তাদের সাথে একইভাবে খেলার সামগ্রীগুলি ভাগ করে নিন এবং উল্লেখ করুন যে এটি খেলাটাকে আরও মজা এনে দেয়।
17.নিজেদের পরিষ্কার রাখা এবং জিনিসপত্র নিজেরাই গুছিয়ে রাখা
বাচ্চারা খাওয়ার সময় চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে খুব নোংরা করতে পারে অথবা তাদের খেলনা ও জামাকাপড়গুলি ব্যবহারের পর যথাযথ স্থানে গুছিয়ে নাও রাখতে পারে।নিজেদের পরিষ্কার রাখার অভ্যাসটা তাদের মধ্যে দৃঢ়ভাবে গেঁথে দিতে আপনি তাদের খাওয়ার পরে নিজের প্লেট সিঙ্কের মধ্যে ধোয়াতে শেখাতে পারেন অথবা ঘরের কাজকর্মে তাদের সাহায্য করার কথা বলতে পারেন।সময়ের সাথে তারা নিজে থেকেই পরিষ্কার থাকতে শিখে যাবে।
18.সৎ হতে শেখান
ছোট বয়স থেকেই বাচ্চাদের সৎ হয়ে উঠতে শেখান এবং বলুন কখনও যেন তারা মিথ্যে কথা না বলে।জীবনের এই মূল মন্ত্রগুলি আপনার বাচ্চার মধ্যে শুরু থেকেই গেঁথে দেওয়া উচিত।তারা যা বলে তা যেন তারা করে সে ব্যাপারে তাদের দৃঢ়চেতা হতে শেখান।মিছিমিছি ফাঁকা প্রতিশ্রুতির ফল কখনই তাকে মহান করে তুলতে পারে না–এ ব্যাপারটি তাদের বসিয়ে বোঝান এবং কেন সত্যি কথা সবসময় বলাটা জরুরি তা তাদের সামনে ব্যাখ্যা করুন।অটল হন এবং তাদের জানান যে সততাই হল চরম পথ।প্রথম থেকেই তাদের মধ্যে নৈতিক বিকাশ গড়ে তোলা তাৎপর্যপূর্ণ।
19.অন্যদের সাথে চোখ সরিয়ে নয়, বরং চোখের যোগাযোগ স্থাপন করতে শেখান
কথোপকথন করার সময় চোখের যোগাযোগ বজায় রাখা সামাজিক আত্মবিশ্বাস এবং মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নির্দেশ করে। আপনার বাচ্চাদের সাথে বেশ ভাল একটা সময় ব্যয় করে তাদের সাথে কথা বলার সময় চোখের যোগাযোগ রাখার অভ্যাসটি তাদের করতে শেখান এবং বোঝান এর গুরুত্ব। যদি তারা এই কৌশলটি শিখে নিতে পারে তবে তারা মানুষের সাথে ভাল সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলে বেড়ে উঠবে।
20.কখনও বাজে ভাষা যেন না ব্যবহার করে
জঘন্য ভাষা অত্যন্ত অসম্মানজনক এবং অপ্রীতিকর। বাচ্চাদের কখনই কারও সামনে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার না করা শেখানো উচিত, এমনকি তারা টিভিতে বা অন্য কোথাও সেটি শুনে থাকলেও।এটি থেকে নিজেকে সংযত রাখা হল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাসগুলির একটি।তাদের এক জায়গায় শান্ত হয়ে বসান এবং ব্যাখ্যা করুন যে কেন এই জাতীয় ভাষা ব্যবহার করা ঠিক নয়।
কীভাবে আপনার সন্তানকে শিষ্টাচারগুলি শেখানো যেতে পারে
একজন অভিভাবক হিসেবে আপনার একটা বড়ো দায়িত্ব হলো আপনার শিশুদেরকে সু–আচার আচরণের গুরুত্বগুলিকে বোঝানো এবং সেগুলির সাথে তাদেরকে বেড়ে তোলা নিশ্চিত করা।আপনার সন্তানকে সু–অভ্যাসগুলি শেখাতে সঠিক পথে চালনা করতে আপনি নিম্নলিখিত সংকেতগুলিকে কাজে লাগাতে পারেন।
- এর প্রথম পদক্ষেপটি হল সমস্ত ভাল অভ্যাসগুলিকে নিজের মধ্যে আয়ত্ত করা।বাচ্চারা তাদের মা–বাবাকে তাদের রোল মডেল হিসেবে দেখে, তাই তারা যাকিছু তাদের থেকে দেখে অনুকরণ করার চেষ্টা করে।আপনি যদি চান যে আপনার সন্তানের মধ্যে শিষ্টাচারগুলি গড়ে উঠুক, তবে আপনি তাকে যা শেখাতে চান তা তাদের সামনে নিজেও অনুশীলন করুন।এমনকি হতাশার মুহুর্তগুলিতেও বাচ্চাদের সামনে যেন আপনার শিষ্টাচার, ভাল আদব–কায়দা বজায় রাখা থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পড়বেন না।
- নম্র ও বিনয়ী হয়ে ওঠা, দরজায় খটখট করা, কাজ হয়ে যাওয়ার পর ঘরদোর গুছিয়ে নিজেকে ফিটফাট ও পরিষ্কার রাখা, খাবার টেবিলের আদবকায়দা ইত্যাদির মতো সুঅভ্যাসগুলি বাড়িতে আপনার বাচ্চার সাথে বারবার অনুশীলন করতে পারেন, যতক্ষণ না সেগুলি তাদের মনের মধ্যে এবং আচরণে পাকাপাকিভাবে স্থায়ী হয়ে যায়।
- আপনার সন্তান যখন কিছু ঠিক কাজগুলি করে অথবা তার মধ্যে থাকা সু–অভ্যাসগুলি কাজে লাগিয়ে দেখায়, তখন ইতিবাচক শব্দগুলি প্রয়োগের দ্বারা তার প্রসংশা করার বিষয়টি নিশ্চিত করুন এবং প্রতিবার ভাল কিছু করার সাথে তাদের উৎসাহ দান করলে তা তাদের আরও ভাল হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।আর আপনার সন্তানের সু–অভ্যাস এবং ভাল আচার আচরণগুলিকে উপেক্ষা করার বিপরীত প্রভাব থাকতে পারে, কারণ তারা আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য হয়ত খারাপ আচরণ করতে পারে।
- আপনার ছেলে বা মেয়ে যখন কিছু ভুল করে তখন তা তাকে সংশোধন করিয়ে দিন, এমনকি সেটা যদি অন্য কারও সাথে কথোপথনের মাঝে হয়ে থাকে তখনও আপনার বাচ্চাকে কয়েক মুহুর্তের জন্য থামান এবং দ্রুত তার ভুলটিকে শুধরে দিন।তবে আপনার শিশুটি যদি অত্যন্ত আত্মমর্যাদা মনোভাবী হয়ে থাকে তবে পরে ব্যক্তিগতভাবে তাকে সেটা বলতে পারেন।
- বাচ্চাদের কম মনোযোগ এবং কর্মচঞ্চলতার মন আপনাকে হয়ত একাধিক বার বিরক্ত ও হতাশ করে তুলবে, কিন্তু ধৈর্যশীল হন।কখনও ধৈর্যচ্যুত না হয়ে ওঠা এবং আপনার সন্তানের উপর রেগে না যাওয়া উচিত।আপনি যদি শান্ত ও অনড় থাকেন, তবে আপনার সন্তানও সেই একইভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে।
- আপনি যদি শিশুদের অন্যান্য ধর্ম, গোষ্ঠী, লিঙ্গ এবং জাতীর লোকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখান তবে সেই একই পক্ষপাতিত্ব নিজের বেলাতেও করাটা নিশ্চিত করুন। আপনার সন্তানদের শেখান যে কোনও মানুষেকে কেবল তার চরিত্র দিয়ে বিচার করতে হয় এছাড়া আর অন্য কোনওকিছুর দ্বারা নয়।
- আপনার শিশুর সাথে ও তার আশেপাশে সর্বদা বিনয়ী হয়ে কথা বলুন এবং কোনওরকম অশ্লীল শব্দ বা ভাষা ব্যবহার করবেন না।কোনও বাচ্চাকে শিষ্টাচার শেখানোর ক্ষেত্রে প্রথম কয়েকটি প্রাথমিক শব্দ হওয়া উচিত ‘দয়া করে‘, ‘ধন্যবাদ‘, ‘দুঃখিত‘, ‘আমি কি‘ এবং ‘অক্সকিউজমি‘।আপনার বাচ্চার সাথে কথা বলার সময় বারংবার এই শব্দগুলি ব্যবহার করুন এবং তাদেরকেও উৎসাহিত করুন সেই শব্দগুলি আপনার সাথে ব্যবহার করার জন্য।এটাকে আপনার বাড়ির একটা নিয়ম করে তুলুন আর তাতেই আপনার বাচ্চা এই সকল সু–অভ্যাস এবং শিষ্টাচারগুলিকে নিজের মধ্যে রপ্ত করে তা অভ্যাস করে ফেলবে।
ভাল আচার–আচরণগুলি হল মৌলিক উপাদান যা আপনার বাচ্চাদের মধ্যে শিষ্টাচারের অনুভূতি জাগিয়ে তুলবে এবং বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের আরও ভাল মানুষ হিসাবে গড়ে তুলবে।তারা লোকজনের সাথে সহজে মিশতে শিখবে, কর্মক্ষেত্রে বা স্কুলে সাফল্য অর্জন করবে এবং আশেপাশের অন্যদের সাথেও সুসম্পর্ক গড়ে তুলবে।একজন বিনয়ী, নম্র ও বিবেচক শিশু বিশ্বের উপর সেরা ছাপটিই ফেলবে।সুতরাং, আপনার শিশুদেরও একদম ছেলেবেলা থেকেই এই শিষ্টাচারগুলি শেখানো শুরু করুন!