জ্বর নেই, কিন্তু তবুও বাচ্চার কপাল গরম- সম্ভাব্য কারণ এবং সমাধান

জ্বর নেই, কিন্তু তবুও বাচ্চার কপাল গরম- সম্ভাব্য কারণ এবং সমাধান

একটি শিশুর দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা 36.5 ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে 37.5 ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।যখন আপনার বাচ্চার দেহ তার থেকেও অতিরিক্ত গরম হয়ে ওঠে, সে হঠাৎ শিশু মৃত্যু সিন্ড্রোম (এসআইডিএস)-এ আক্রান্ত হয়, যা মারাত্মক।এটা হয়ে থাকে এই কারণে যে কোনও শিশুর থার্মোরেগুলেশন সিস্টেম বা দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অথবা শরীরের যে অংশটি তার দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে বিকাশের অধীনে থাকে এবং এখনও কাজ করে।একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে যদিও এর জন্য সাথে সাথে আপনার বাচ্চাকে তার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই তবে যতটা দ্রুত সম্ভব তাপমাত্রা কমানোর জন্য আপনার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা প্রয়োজন।মনে রাখবেন যে এসবক্ষেত্রে শিশুর হাত এবং পায়ের তলা মাথার তুলনায় সাধারণত ঠাণ্ডা হয়ে থাকে।

জ্বর হওয়া ছাড়াও আপনার শিশুর মাথা বা কপাল কেন গরম হতে পারে?

আপনার বাচ্চা যদি মাথা ও কপাল গরম হয়ে যাওয়াতে ভোগে কিন্তু কোনও জ্বর না থাকে, তবে তা বিভিন্ন কারণের জন্য হতে পারে।এখানে তার সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলির কয়েকটি আলোচনা করা হলঃ

1.গরম জামা

আপনার বাচ্চার মাথা গরম হয়ে উঠতে পারে তাকে উলের বা সে জাতীয় কিছু গরম পোশাক পরানোর কারণে।

কেন এটা হয়

গরম পোশাক বাচ্চার দেহে তাপ আটকে রাখে এবং তার ফলে তার দেহ গরম হয়ে যায়।এটা তার সারা শরীরের তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে এবং জ্বরের লক্ষণ ছাড়াই মাথা ও কপাল গরম হয়ে যায়।

আপনি কি করতে পারেন

তার পোশাক পাল্টে দিয়ে হালকা সুতির পোশাক পরান।বেশ কয়েক লেয়ার আছে এধরণের কাপড় বা এ জাতীয় কোনওকিছুর দিকে যাবেন না যার লেয়ারগুলিতে প্লাস্টিকের মোড়ক দেওয়া থাকে।যদি ব্যাপারটা জটিল লাগে, কেবল নিরাপদ থাকার জন্য রাতারাতি আপনার ছোট্টটিকে পোশাক ছাড়িয়ে দিন এবং উলঙ্গ অবস্থায় তাকে সারা রাত ঘুমোতে দিন।

2.উত্তেজিত হলে

যেকোনও শিশুরাই একদম শৈশবে থাকে কোনওরকম ভাবনাহীন, নির্ঝঞ্ঝাট এবং আনন্দে ভরা হৃদয়ের অধিকারী তবে তার এই ভাবনাহীন চিত্তটি কোনও কোনও কারণে বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে পারে।হতে পারে সে বিরক্ত হয়ে ওঠে এবং চারপাশে অহেতুক ভীষণভাবেই ঘুরে বেড়ায় অথবা কোনও কারণ ছাড়া শুধুশুধুই উত্তেজিত হয়ে পড়ে।আর তার মাথা ও কপাল গরম হয়ে যাওয়ার সমস্যাটিকে ঘিরে থাকতে পারে এই সবকিছুই।

কেন এটা হয়

চারপাশে ভীষণভাবে ঘোরাঘুরি করলে তা মাথায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং সমগ্র দেহের তাপমাত্রাটিকেই বাড়িয়ে তোলে

আপনি কি করতে পারেন

প্রথমেই তাকে শান্ত করানোর চেষ্টা করুন এবং আপনার ছোট্টটিকে আরাম করতে দিন।তার কাছে থেকে তার প্রিয় সুরটি গুণগুণ করুন এবং চুমু দিয়ে ঘুম পাড়ান।এতে তার দেহ ঠাণ্ডা হবে এবং তাকে একটা ভাল তন্দ্রা এনে দেবে।

3.দাঁত ওঠা

আপনার বাচ্চার যদি দাঁত ওঠে তবে স্বাভাবিকের তুলনায় তার মাথা ও কপাল গরম হতে পারে।

কেন এটা হয়

দাঁত ওঠার কারণে বাচ্চাদের মাথা গরম হয়ে যেতে পারে।এটা শরীরের একটা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া এবং উদ্বেগের মতো বিশেষ কিছু নেই।

আপনি কি করতে পারেন

প্যারাসিটামল এবং টিথিং জেলগুলি এব্যাপারে বাচ্চাদের উপশম আনার জন্য পরিচিত। দাঁত ওঠার কারণে যদি আপনার বাচ্চার মাথা ও কপাল গরম হয়ে যেতে এবং তাকে ঘামতে লক্ষ্য করেন, সেক্ষেত্রে তাকে আরও স্বস্তি দেওয়ার জন্য আপনি তাকে বেবি টীথারও দিতে পারেন।

4.থার্মোমিটার

কখনও কখনও একটা থার্মোমিটারও জানান দিতে পারে যে আপনার শিশুর তাপমাত্রা গরম, আর তা কেন? নীচে আলোচনা করা হলঃ

কেন এটা হয়

এর পিছনে থাকা কারণটি প্রকৃতপক্ষে হয়ে থাকতে পারে থার্মোমিটারটি, এবং আপনার সন্তান নয়।হতে পারে এটা কোনও ত্রুটিযুক্ত থার্মোমিটার এবং ভুল পরিমাপ দিচ্ছে।

আপনি কি করতে পারেন

যদি এটি একটা ত্রুটিযুক্ত থার্মোমিটার হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে আপনার প্রস্তুতকারকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত এবং ওয়ারেন্টি থাকা অবস্থায় সেটি বদলে নেওয়া দরকার।এছাড়া এব্যাপারে আর কিছু চিন্তা করার মত নেই।

5. এটা স্বাভাবিকও হতে পারে

কখনও কখনও আপনার শিশুর শরীরের তাপমাত্রা আসলে স্বাভাবিকই থাকে আর তা স্বাভাবিকের বাইরে আর কিচ্ছুই নয়।

কেন এটা হয়

হতে পারে আপনার হাতগুলোই ঠাণ্ডা আর তাই যখন আপনি আপনার শিশুর কপালে হাত দেন তা গরম মনে হয়।আবার মাঝেমধ্যে এটি এমন হয় কারণ তার দেহের তাপমাত্রা দুপুর / সন্ধ্যার সময় ওঠানামা করে, যা তার দেহকে, কপালকে গরম করে তোলে কিন্তু বাস্তবে তা আসলে কিছু ভুলই নয়

আপনি কি করতে পারেন

যদি এটাই ঘটনা হয়ে থাকে, তবে শুধুমাত্র তার দেহের তাপমাত্রা রেকর্ড করুন আর তা ডায়রীতে তুলে নিন।যদি পাঠগুলি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং প্রতিদিন মোটামুটি একই সময়ে তা ঘটে, তবে সেক্ষেত্রে চিন্তার কিছু নেই।

আপনার বাচ্চার কপাল বা মাথা যদি গরম হয়ে থাকে তবে ঘুমের সময় তাকে কীভাবে পোশাক করাবেন?

আপনার শিশুর কপাল বা মাথা যদি বেশ গরম হয়ে থাকে তবে ঘুমের সময় তাকে কোনও পোশাক পরাবেন না।আর এটিই প্রথম এবং সর্বাগ্র পদক্ষেপ।দেহের তাপমাত্রা যদি বেশি হয় আপনার পুচকেকে সারা রাত উলঙ্গ অবস্থাতেই ঘুমাতে দিন।একটু তেলজল দিয়ে তার পেট ঘষে দেওয়া, জল পান করানো এবং শিথিল করে তোলার ব্যাপারটা নিশ্চিত করুন যাতে সে শান্ত হয়।তার গায়ের ওপর চাপা দেওয়া যেকোনও কাপড়ের ঢাকা সরিয়ে ফেলুন এবং ঘরের তাপমাত্রা 25 ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি না রাখা নিশ্চিত করুন।আপনার বাচ্চার দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তাকে ঠাণ্ডা করতে অতিরিক্তভাবে আপনি আবার একটা ভেজা নরম কাপড়ও ব্যবহার করতে পারেন।

রাত্রে ভাল ঘুম হওয়ার জন্য আপনার ছোট্টটিকে যদি ড্রেস করানোর পরিকল্পনা করেন, তার ঘাড়ের অঞ্চলটি দেখে নিন যে তা গরম কিনা।আপনি একটি বেবি সোডেল এবং একটি হাতাওয়ালা বডিস্যুট ব্যবহার করতে পারেন যেটির সাথে কম্বল থাকে না

যখনই সম্ভব আপনার বাচ্চাকে বিশুদ্ধ বায়ুর জন্য বাইরে খোলামেলায় নিয়ে যান। তাকে কোনও মোজা, জুতো পরতে দেবেন না বা কয়েক স্তরযুক্ত কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখবেন না এবং যখনই তাকে সাজ করাবেন বা পোশাক পরাবেন সর্বদা নরম সুতির কাপড়ে তৈরী জিনিস পরান।কারণ যেকোনও খসখসে বা প্রখর জিনিস অথবা গরম পোশাক থেকে হিট র‍্যাশ বা হিট স্ট্রোক দেখা দিতে পারে।

কখন আপনার তাকে একজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত?

নিম্নলিখিত কোনও একটি বিষয়ও যদি ঘটে থাকে তবে আপনার সন্তানকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।

  • উপরে আলোচিত পদ্ধতিগুলি প্রয়োগ করার মাধ্যমে তাকে শীতল ও শান্ত করা সত্ত্বেও আপনার শিশুটি যদি কোনওরকম অসুস্থ ও অস্বস্তি বোধ করে, উতলা হয়ে ওঠে।
  • আপনার বাচ্চাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল দেওয়ার পরেও যদি তাকে ডিহাইড্রেটেড বা জলশূণ্য বলে মনে হয় এবং তার ওপর আবার যদি তার বমি বমি ভাব দেখা যায়, বমি করতে থাকে এবং ডায়রিয়া হয়ে থাকে তবে তা নির্দ্বিধায় একটি লাল সংকেত।
  • আপনার বাচ্চাকে যদি জ্বরে ধরে এবং এটি হালকা থেকে মারাত্মক দিকে চলে যায় এবং কোনওভাবেই না কমে

এটা মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে প্রতিটি শিশুই আলাদা এবং জ্বরজাতীয় লক্ষণগুলি কিছু ক্ষেত্রে প্রদর্শিত হতে পারে যখন আসলে তাদের মধ্যে কোনও জ্বর থাকেই না। মাথা ও কপাল গরম হয়ে যাওয়া সাধারণত তাদের থার্মোরেগুলেশন সিস্টেম বিকাশের একটি অংশ হিসাবে ঘটে তবে আপনার তাপমাত্রা পরীক্ষা করে এবং লক্ষণগুলি সন্ধান করে এটিকে সর্বদা আপনার নিরাপদ দিকে রাখা উচিত।তবে এক্ষেত্রে আপনার যদি কিছু অন্যরকম বলে মনে হয়, এবং আপনি সেটা বাস্তবেই ধরে না উঠতে পারেন, সেক্ষেত্রে অবিলম্বে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।