আপনি নিশ্চিতভাবে খুব ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন আপনার টল্টলয়ামান শিশুটির পিছনে সারা ঘর জুড়ে ছোটাছুটি করে,যা আপনার পা দুটিকে সদা ব্যাস্ত রেখেছে।আসুন আমরা আপনাকে এই চমৎকার যাত্রাপথের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাই এবং আপনার 16 মাসের শিশুটির কাছ থেকে আপনি যা কিছু আশা করতে পারেন সে ব্যাপারে আপনাকে তৈরী করে তুলি।
আপনার শিশুটির একজন টলটলায়মানে পরিণত হয়ে ওঠার পর্বটি অবলোকন করা এক দারুন চিত্তাকর্ষক ব্যাপার।আসুন এবার দেখে নেওয়া যাক আপনার 16 মাস বয়সী শিশুটির কয়েকটি মাইলস্টোন যেগুলো সে অতিক্রম করতে চলেছে বা ইতিমধ্যে অতিক্রম করে ফেলেছে।
এখন আপনার বাচ্চাটি 16 মাসের বন্ধনীতে, তাই এখন থেকে ডাক্তারবাবু তাকে প্রতি দুই মাস অন্তর তার বৃদ্ধির চেক আপ করবেন।আপনি লক্ষ্য করবেন যে আপনার বাচ্চাটির বৃদ্ধি প্রথম বছরের মত দ্রুত হচ্ছে না।প্রতিটি শিশুর ওজন ভিন্ন হয়। আদর্শগত ভাবে আপনার 16 মাস বয়সী বাচ্চাটির ওজন হওয়া উচিত 8.5 কেজি-12.9 কেজি মত।
16 মাসে,আপনার টলটলায়মান ছোট্ট ব্যাক্তিটি নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার লক্ষণ প্রকাশ করতে পারে যেগুলির মধ্যে আবার তাকে প্রান্তিক ব্যবহারের দিকে ঠেলে দেওয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভূক্ত থাকতে পারে।সে তার বদ মেজাজ প্রকাশ করবে এবং বিছিন্ন হবার আতঙ্ক তার মধ্যে দেখা দিতে পারে।অনেকেই আবার রহস্যময় আচরণ প্রকাশ করতে পারে।আবার এমনকি এই সময়ে আপনি সবসময় ভাল ব্যবহারকারী একটি শিশুর মধ্যেও ক্রোধান্বিত বদ মেজাজ এর প্রকাশ দেখতে পেতে পারেন।এটা সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে যখন তার বয়স 2 বছর হয়। বাচ্চারা তাদের মত চলতে চায় এবং প্রতিবন্ধকতা তাদের খুব সহজেই হতাশ করে তোলে।আপনি যদি সঠিক কৌশলটি জানেন তাহলে খুব সহজেই তার বদ মেজাজকে আয়ত্ত করে ফেলতে পারবেন।
অনেক বাচ্চাই সুপারমার্কেটে গিয়ে খেলনার কাছে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।এর থেকে অব্যহতি পাওয়ার জন্য আপনার টলটলায়মানটির ক্রোধান্বিত বদ মেজাজ এড়াতে হবে। আপনার ছোট্টটির ক্ষুধা এবং ঘুমের দিকে নজর রাখুন।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি শক্তিহীনতার মত গোপন কারণের জন্য হয়ে থাকে।তাদের কিছুটা সময় দিন যাতে সে শান্ত হয়ে ওঠে যা দীর্ঘক্ষণ ধরে হয়ে থাকা তাদের রাগী বদমেজাজকে সামলানোর ক্ষেত্রে বেশি মাত্রায় কাজে আসে এবং একটি ভালো উপায়ে তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।
আপনি লক্ষ্য করবেন যে আপনার 16 মাসের সন্তানের ডায়েট প্রায় আপনার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।সাধারণত খাদ্যাভ্যাস তাদের জীবনের প্রথম পর্যায়েই তৈরী হয়ে যায় তাই স্বাদগ্রহণ এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাসটি গড়ে তুলতে আপনাকে তাকে গাইড করতে হবে।টলটলায়মানদের পেটের আয়তন কম হয়।তাই 3 বা 4 বার বেশি পরিমাণে খাবার খাওয়ানোর বদলে কম পরিমাণে বার বার খেতে দিলে ভাল হয়।আপনি সেই ধরনের খাবার দেওয়া নিশ্চিত করুন যাতে তার সঠিক বৃদ্ধির জন্য দৈনিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয় এবং মিষ্টি,মিষ্টিজাতীয় খাবার,শুধুমাত্র ক্যালরি যুক্ত খাবারগুলি তাকে দেওয়া এড়িয়ে চলুন।আপনি লক্ষ্য করবেন যে আপনার ছোট্টটি এখন নিজে নিজেই তার হাত দিয়ে বা অন্যান্য উপকরণের সাহায্যে খেতে চেষ্টা করে।তাকে এটা করতে সুযোগ করে দিন কিন্তু যখন সে একান্তই না পেরে হতাশ হয়ে উঠবে তখন তাকে সাহায্যে করুন।যেহেতু সে ধীরে ধীরে কৌশলটি আয়ত্ত করে নেইয়,তাই আপনি বরং একধাপ পিছিয়ে যান এবং তাকে তার নতুন স্বাধীনতাকে ভোগ করার আনন্দটিকে সযত্নে অবলোকন করুন। স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নেওয়ার জন্য ধৈর্য্যই হল এর চাবিকাঠি।
যখন আপনারা পরিবারের সকলের সাথে খাবার টেবিলে বসবেন তখন তাকে নিজের খাবার বাছাই করবার স্বাধীনতা দিন।তাকে সকল খাবারের বিকল্পগুলি দিন এবং সেখান থেকে তাকে তার নিজের পছন্দ বাছাই করতে দিন।সে নতুন খাবারটি পছন্দ করতে পারে আবার সম্পূর্ণরূপেই সেটা অপছন্দও করতে পারে।একটি নতুন খাবারের সাথে পরিচয় ঘটাবার জন্য মোটামুটি 20 থেকে 30 বার সেটি আপনার সন্তানকে দিন যাতে তার সেই খাদ্যটির প্রতি অনুরাগ জন্মায়।সবসময় প্রতি একবারে একটি মাত্র নতুন খাবারের সাথে তার পরিচয় করাবেন।ফলে আপনার সন্তানের যদি কোনো খাবারে এলার্জি থাকে সেটা বুঝতে পারবেন।যেসব খাবারে বিষম লাগতে পারে যেমন পপকর্ন,আঙ্গুর,শক্ত ক্যান্ডি,কিশমিশ ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।আপনার সন্তানের খাবার সময় সর্বদা তার উপর লক্ষ্য রাখুন।
আপনি খুব তাড়াতাড়িই লক্ষ্য করবেন যে আপনার টলমল পায়ে চলা শিশুটি তার দিনের বেলায় ঘুমের পরিমাণ কমিয়ে ফেলেছে।সে তার সকালের এবং বিকালের ঘুম বন্ধ করে দিয়েছে শুধুমাত্র দুপুরের ঘুমটি বজায় রেখেছে।প্রথমদিকে তার দুপুরের ঘুমের সময়টি একটু বর্ধিত হতেই পারে তার নতুন রুটিনটি রপ্ত করার জন্যে।তার বিকালের দিকে বেশিক্ষণ ঘুমানো এড়াতে চেষ্টা করুন কারণ এর ফলে তার রাত্রে ঘুম আসতে অসুবিধা হবে।শিশুরা একই রুটিন মানতে বেশি পছন্দ করে,তাই তার প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে বিছানায় যাওয়ার ব্যবস্থাটি ধারাবাহিক ভাবে বজায় রাখা উচিত।শোফাতে শোবার বদলে তার বিছানাতে শুতে যাওয়ার জন্য তাকে উৎসাহিত করুন।অনেক কিছু করার ফলে আপনার ছোট্টটি হয়তো ক্লান্ত হয়ে পরবে তা সত্বেও সে বিছানায় ঘুমাতে যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করবে তার অদম্য ইচ্ছা এবং শক্তির জন্য।তার পরবর্তী আডভেঞ্চারটি শুরু করার আগে যাতে তার সম্পূর্ণরূপে ঘুম হয় সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে কিছুটা কঠোরতা অবলম্বন করতে হতে পারে।খুব বুদ্ধিমানের কাজ হবে যদি কিছু খেলনা এবং বই তার ঘরে রেখে দেওয়া হয় এগুলোর সাহচর্যে সে আরাম করে ঘুমিয়ে পরবে।
কখনও কখনও আমাদের এক পদক্ষেপ পিছতে হয় আমাদের সন্তানের বৃদ্ধির কাঙ্ক্ষিত ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে তাদের অন্বেষণ করতে দেওয়ার জন্য।আপনার ছোট্টটি তার ছোট্ট দুটো হাত দিয়ে নতুন কল্পনাগুলিকে বাস্তবায়িত করার জন্য অনেক বেশি উৎসাহিত হয়ে উঠবে।আপনি স্বচ্ছন্দে তাকে এই জায়গাটি দিন যাতে সে নিজেই নিজেকে সহায়তা করতে পারে এবং তার আবিষ্কারী সত্বাকে সে প্রকাশ করতে পারে।যখন সে খেলে তখন সে সমস্যা সমাধান করতে শেখে এবং তার সঞ্চালন দক্ষতা বেড়ে ওঠে।এই 16 মাস বয়সের শিশুরা স্বাধীনভাবেই কাজ করতে পছন্দ করে।তার মত করে শিখতে তাকে সাহায্য করুন।আপনি খুব বেশি হলে তার মোজাগুলোকে যেখানে তার হাত পৌছায় এমন ড্রয়ারে রাখতে পারেন বা তার জুতোগুলোকে সদর দরজার কাছে তার নাগালের মধ্যে থাকা কোনো প্লাস্টিকের বাক্সের মধ্যে রাখতে পারেন যাতে সে সেটা বাইরে বেরোবার সময় নিজে নিজেই বের করে নিয়ে পরে নিতে পারে।
আপনি তাকে তার বয়স অনুযায়ী কাজগুলি দিতে পারেন, যেমন সে তার নিজস্ব প্লেটটিকে বয়ে আনবে এবং সিঙ্কের ভিতরে রাখবে।আপনি কখনই তার কাছ থেকে নিখুঁত কাজ আশা করবেন না,যদি সে ভুল করে তাহলেও তার প্রতি অনুরাগ প্রকাশ করুন।এই ভাবেই আপনি তাকে তার চারিপাশ আবিষ্কার করার জন্য জায়গা করে দিতে পারবেন এবং তার সাথে আবার আত্মনির্ভর করে তুলতেও পারবেন।আপনার টলমলে ছোট্টটিকে বই পড়ে শোনান।বই পড়ার ফলে তার শব্দ শুনে উচ্চারণ করার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে;এটি তার ভাষা বিকাশের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে এবং তার মনঃসংযোগ করার পরিধি এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করবে।যখন আপনি একটা বই আপনার টলটলায়মানটির সামনে পাঠ করবেন আপনার সাথে তার বন্ধনের দৃঢ়তা বাড়বে এবং এইটি তার মধ্যে পড়ার প্রতি ভালবাসা জাগাতে সাহায্য করবে।
আপনার টলমল করে হেঁটে চলা ছোট্ট শিশুটি সম্ভবত তার স্থানটিকে অনুসন্ধান করবে।আপনি তাকে একটানা এবং অবিচলিত ভাবে চলমান দেখতে পেতে পারেন।এখানে রইল কয়েকটি পরামর্শ যা আপনার 16 মাস বয়সী টলটলায়মানকে পরিচালনা করতে সাহায্য করবেঃ
প্রতিটি শিশুই হল অনন্য।আর প্রত্যেকেই তাদের মাইল ফলকগুলি একই সময়ে ছুঁয়ে ফেলবে এমন কোনো কথা নেই।আপনি আপনার ডাক্তার বাবুর সাথে কথা বলুন যদি আপনি অনুভব করেন যে আপনার ছোট্ট সন্তানটি তার মাইলফলকগুলিতে পৌঁছতে বেশ কিছু মাস দেরী করে ফেলছে।
এটা খুব সহজ কাজ নয়–একজন টলটলায়মান শিশুর অভিভাবক হিসাবে তার পিছন পিছন দৌড়ে বেড়ানো।কিন্তু অন্তিম পর্বে এর যথাযোগ্য মূল্য আপনি পাবেন।