In this Article
দেখতে দেখতে আপনার শিশুটি তার একবছর জন্মদিনের খুব কাছাকাছি এসে গেছে। সে অবশ্যই টডলার পদমর্যাদার অধিকারী হয়ে উঠবে যখন সে এক বছর বয়স অতিক্রম করবে।আপনার ছোট্ট সোনাটি কথা বলতে,হাত নাড়তে,খাবার সময়ে শক্ত খাবার খেতে শিখে গেছে এবং সে তার পছন্দের গান শুনতে এবং প্রিয় বইটি উপভোগ করছে।তার একটি ঝকঝকে ব্যাক্তিত্ব বিকশিত হয়েছে।12 মাস বয়সী শিশুদের গড়পড়তা ওজন 9 কেজি এবং উচ্চতা 76 সেমির মত হয়।আপনি আপনার 50 সপ্তাহ বয়সী শিশুর সাথে তার জন্মের সময়ের তুলনা করুন দেখবেন যে তার বৃদ্ধি সঠিক হচ্ছে।
আপনার 50 সপ্তাহ বয়সী শিশুর বিকাশ
দুই পা এগিয়ে এক পা পিছোনো এটাই হল এই সময়ের আপনার বাচ্চার বিকাশের পদ্ধতি।সে আপনাকে হাত নেড়ে বিদায় জানানোর প্রথাটি কয়েক সপ্তাহ আগে শিখে ফেললেও সে সেই কাজ করা থেকে কখনই বিরত হয় নি।এতে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই, এর অর্থ হল তার সমস্ত শক্তি ব্যয় করার অভিমুখ হল তার আবেগের প্রতি– উদাহরণ হল যখন আপনি কাজের জন্য বাইরে যাবেন বা তার রুটিনের পরিবর্তন হবে।সে তার শক্তিকে ব্যবহার করছে সাধারণ কৌশলে যেমন হাত নাড়া ইত্যাদিতে যেটার উদ্দেশ্য হল একটা নতুন ধরনের কৌশল রপ্ত করা।এই পশ্চাদপসারন ঘটে যখন আপনার সোনাটি একটি সম্পূর্ণ নতুন কৌশলের দক্ষতার ঝলকানি আপনাকে উপহার দেবে বলে।আপনার শিশুর শব্দ ভান্ডার এই সময়ে অনেক বেড়ে যাবে যদিও খুব একটা নতুন শব্দাবলী সে বলতে পারবে না।আপনার বাচ্চার মস্তিষ্ক নতুন জিনিসকে একটানা পর্যবেক্ষণ করবে এবং সংগ্রহ করবে নতুন নতুন তথ্য তাই আপনি এই সময় একদম সঠিক পূর্ণবাক্যে কথা বলুন ও তাকে উৎসাহ দিন।বিভিন্ন ধরণের সর্বনাম পদ যেমন “আমি তোমাকে নিয়ে বেরোব ” বা ” মামা তোমাকে নিয়ে বেরবেন” ব্যবহার করুন।
আপনার 50 সপ্তাহ বয়সী শিশুর উন্নয়ণমূলক মাইলস্টোনগুলি
আপনি আপনার 50 সপ্তাহ বয়সী সন্তানের কাছ থেকে কি কি মাইলস্টোন আশা করতে পারেন।
- আপনার বাচ্চা আপনাকে কাঁটা চামচের সাহায্যে খাওয়াবার জন্য জোড়াজুড়ি করবে।
- আপনার বাচ্চাটি ঠিক ভাবে কাপ বা পেয়ালা ব্যবহার করে সেটা থেকে জল বা দুধ ইত্যাদি পান করতে পারবে।
- আপনার বাচ্চার কৌতুহল বাড়তে থাকবে এবং যেসব জিনিস সে দেখবে তার প্রতি উৎসাহ তার বৃদ্ধি পাবে।
- সে আপনার অভিব্যাক্তি বুঝতে পারবে; যখন আপনি হাসবেন সে তখন কোনো কাজকর্ম করবে আবার যখন আপনি রেগে তার দিকে তাকাবেন সে তখন কাজ করা থামিয়ে দেবে।
- আপনার শিশুটি সেই সব খেলনার প্রতি বেশি আকর্ষিত হবে যেগুলো নড়াচড়া করে বা যেগুলোকে টানা বা ঠেলা যায় যেমন চলমান গাড়ি,বল, ঠেলাগাড়ি ইত্যাদি।
- আপনার সোনাটি কোনো জিনিসকে কিভাবে পদাঘাত হয় বা ছুঁড়তে হয় তা শিখে যাবে।
- কোনো পাত্র থেকে কোনো জিনিস নিয়ে সেটা পুণরায় দেখিয়ে দেওয়া স্থানে রেখে দেবার বিষয়টি সে আয়ত্ত করে ফেলবে।
- আপনার বাচ্চাটি কিছু কিছু শব্দ যেমন “পান“,”বল“, “কাপ” প্রভৃতি শব্দের মানে বুঝতে পারবে।
- আপনার সোনাটি রঙের সাহায্য হিজিবিজি কাটতে শুরু করবে।
খাওয়ানো
আপনার স্তনপানকারী শিশুটি বুকের দুধ খেতে পারে তার 1 বছর বয়স হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও।যদি আপনি শিশুটির পছন্দ অনুযায়ী তাকে বুকের দুধ খাওয়াতে চান তাহলে এই ব্যাপারে তার নেতৃত্বে চলুন,যেদিন তার সর্দি কাশি হবে দেখবেন সে ঘন ঘন বুকের দুধ খেতে চাইছে অন্য দিন গুলোর তুলনায় তবে রাত্রে বুকের দুধ খেতে তার অনীহা দেখা যায়।আপনার দুধের সরবরাহ সেই অনুযায়ী করুন।আপনি যতদিন ইচ্ছা ততদিন তাকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন।যখন আপনার শিশু 50 সপ্তাহে পড়েছে তখন আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি বুকের দুধ পাম্প করবেন কিনা যদিও সেটা আপনার স্তনের ওপর এবং আপনার বাচ্চার বুকের দুধের প্রয়োজনের উপর নির্ভর করবে।অনেক মায়েরা এই সময় গরুর দুধ দিতে শুরু করেন আবার অনেকে বুকের দুধ খাওয়ান।যদি আপনি একটা রুটিন করে পাম্প করেন এবং মজুত করে রাখেন তাহলে যখন আপনি বাইরে থাকবেন তখনও আপনার বাচ্চাটি কাপে করে ঐ দুধ খেতে পারবে এবং এটা আপনি বজায় রাখতে পারবেন।
ঘুমানো
যখন আপনার বাচ্চাটি এক বছরের হবে এবং বিছানায় আপনার পাশেই ঘুমাবে তখন তাকে অন্য কোনো শিশুশয্যায় বা অন্য ঘরে শোয়াবেন কিনা সেটা ভেবে আপনাকে অবাক হতে হবে।অনেক পরিবারে একটা নতুন শিশুশয্যার ব্যবস্থা করে এবং আপনি তাকে সেখানে ঘুমাতে দেখতে পারেন অথবা যখন সে রাত্রে খাওয়ার জন্য জেগে যায় তখন তাকে সহজে খাওয়াতে পারেন।এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার উপর যে আপনি এটি বজায় রাখবেন নাকি ধীরে ধীরে পরিবর্তন করবেন।উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে আপনি আপনার বাচ্চার শিশুশয্যাটিকে ধীরে ধীরে আপনার শোবার ঘর থেকে প্রথমে হলে তারপরে আপনার শিশুর জন্য নির্দিষ্ট ঘরে সরাতে থাকুন। শিশুশয্যাটি অন্য ঘরে সরিয়ে দেবার পর থেকে কিছু দিন পর্যন্ত আপনি তার পাশে আপনার বিছানা পেতে শুয়ে পড়ুন যতক্ষণ না সে নতুন জায়গায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।একই রকমের আলো শব্দ এবং পরিবেশ তৈরী করুন যাতে সে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে।
আপনার 50 সপ্তাহ বয়সী শিশুর যত্নের পরামর্শ
কয়েকটি উপায় আছে যার সাহায্যে আপনি আপনার 50 সপ্তাহ বয়সী শিশুর যত্ন নিতে পারেন।
- আপনার বাচাটিকে হাঁটতে উৎসাহিত করুন তাকে প্রচুর পরিমাণে হাঁটার সুযোগ করে দিন এবং তাকে একটু সময় পরে থামিয়ে দিয়ে কোলে তুলে নেবেন না।
- শুরুতে আপনি আপনার আঙ্গুল ধরে তাকে হাঁটান যাতে সে স্বস্তি বোধ করে।
- আপনি তাকে সম্পুর্ণ দুধ খাওয়ান যখন আপনি তাকে বুকের দুধ ছাড়াবেন। কিন্তু আপনার পরিবারের যদি স্থূলতা, কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যা অথবা উচ্চ কোলেস্টেরল জনিত সমস্যা থাকে তবে অবশ্যই ডাক্তার বাবুর পরামর্শ নিয়ে কম স্নেহপদার্থ(লো কোলেস্টেরল)যুক্ত দুধ খাওয়াবেন।
- আপনার বাচ্চাটি কিন্তু আপনি কি কি করছেন সেটা লক্ষ্য করছে এবং তা অনুকরণ করবে তাই আপনি তার সামনে কোনোরকম নেতিবাচক আচরণ করবেন না।
- আপনি ক্ষতিকারক জিনিস–গুলো তার থেকে দূরে রাখুন কারণ এই সময় সে সব জিনিস মুখে ঢোকাতে চায়।
- যদি আপনার বাচ্চা ঘ্যান ঘ্যান করে তাহলে আপনি আপনার কাজ ফেলে রেখে কখনই তাকে কোলে তুলে নেবেন না। বরং তাকে আপনার কাজে সামিল করে নিন যেমন কাচতে দেবার একখন্ড কাপড় আপনি তার হাতে ধরিয়ে দিন।
- যদি আপনার বাচ্চাটি কোনো খাবার খেতে প্রত্যাখ্যান করে তাহলে আপনি পরের বার অন্য পদ্ধতিতে সেটা বানিয়ে তাকে খাওয়ান।
- আপনার সোনাকে তার খাবার গুলো নিয়ে খেলতে, দেখতে এবং তার মত করে খেতে দিন।জানবেন খাবার নিয়ে খেলা করাও এক ধরনের শিক্ষণীয় বিষয়,সেটা জোর করে বন্ধ করবেন না এতে তার মনের ওপর চাপ পরতে পারে।
পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং টিকাকরণ
আপনার শিশুটি এক বছর বয়সের হতে চলেছে,এই সময় তাকে ডাক্তারি চেক–আপ করানো দরকার।
1.পরীক্ষা
আপনার ডাক্তারবাবু বাচ্চাটির বিভিন্ন পরিমাপ নেবেন এবং তাকে নানাবিধ শারিরীক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বুঝতে পারবেন সে এই বয়স অনুযায়ী তার মাইলস্টোনগুলি ছুঁতে পেরেছে কিনা; তিনি দেখবেন সে সঠিক ভাবে কথা বলতে সঠিক দিক নির্দেশ করতে পারছে কিনা,হাঁটতে পারছে কিনা ইত্যাদি।আপনার ডাক্তারবাবু এও জিজ্ঞাসা করতে পারেন যে আপনার বাচ্চাটি কতগুলো শব্দ উচ্চারণ করতে পারছে তাই আপনি একটা তার বলা শব্দের খসড়া হিসাব করে নিয়ে মনে করে রাখুন।
2.ভ্যাক্সিন
এই সময়কালে মূলত বেশিরভাগ ভ্যাক্সিনের বুষ্টার ডোজ দেওয়া হবে যেগুলো সে আগেই নিয়েছে।এর মধ্যে রয়েছে হেপাটাইটিস B,হেপাটাইটিস A, পোলিও,হিব, ডিট্যাপ এর সাথে সাথে MMR,এবং চিকেনপক্স এর প্রথম ডোজ।
খেলাধূলা এবং অন্যান্য ক্রিয়াকলাপ
নিচে কয়েকটি খেলাধূলা এবং ক্রিয়াকলাপের উল্লেখ করা হল আপনার সোনার সাথে এই সময়ে আপনি খেলতে পারেন।
- আপনার বাচ্চার মুখোমুখি পা ছড়িয়ে বসুন এবার একটা বল গড়িয়ে দিন তার দিকে আর তাকে বলুন সে যেন বলটাকে পুনরায় আপনার দিকে ফিরিয়ে দেয়।
- যদি আপনার সোনা নিজে নিজে দাঁড়াতে পারে তাহলে তাকে কিভাবে বলে লাথি(কিক্)মারতে হয় তা শেখান। প্রথমে আপনি নিজে বলে কিক্ করে দেখান। এরপর তার পা এর সামনে বলটাকে রেখে তাকে সাহায্য করুন সেটাতে পা ছুঁইয়ে কিক্ করতে।
- কিছু হালকা জিনিস যেমন খলি খাবারের বাক্স,ফাঁকা কন্টেনার,নরম পানীয়ের ক্যান আপনার বাচ্চার থেকে সামান্য দূরে রাখুন এবং তাকে দেখান কিভাবে একটা বল গড়িয়ে দিয়ে সেগুলোকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া যায়।এবার আপনি বলটা আপনার সোনাকে দিন এবং বলুন আপনার মত সেটাকে গড়িয়ে দিয়ে ওই জিনিস গুলোকে ফেলে দিতে। এটা তার ধী শক্তি বাড়াতে কাজে লাগবে।
- তার সাথে সারা ঘর জুড়ে ধরাধরি খেলুন আর তাকে বলুন আপনাকে ধরতে। আপনার ছেলে এই খেলাটা পছন্দ করবে এবং হামাগুড়ি দিয়ে বা হেঁটে হেঁটে আপনার পিছনে ঘুরে ঘুরে সে আপনাকে ধরার চেষ্টা করবে।
কখন একজন ডাক্তারের সাথে আলোচনা প্রয়োজন
নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলিতে আপনি অবশ্যই ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করবেন।
- যদি আপনার বাচ্চার অসুবিধা হয় কোনো কিছু দেখতে,তার দৃষ্টি তীর্যক হয়, দেখার সময় মাথা ঝাঁকাতে থাকে, চোখ দুটো বারবার ঘষে তাহলে তাকে ডাক্তারবাবুর কাছে নিয়ে যান তার দৃষ্টিজনিত সমস্যা থাকলেও থাকতে পারে।
- যদি আপনার শিশুর চোখ লাল হয়ে যায়, সব সময় অশ্রু গড়ায়,আলোর প্রতি অতি সংবেদনশীল কিম্বা সেখানে পূঁজ হয় তাহলে এটা শিশুদের কনজাইটিভাইটিস হতে পারে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- যদি আপনার বাচ্চাটি ঘন ঘন বমি করে তাহলে তাকে অবশ্যই ডাক্তার দেখান তার সীসা জনিত বিষক্রিয়া হয়ে থাকতে পারে।
যদি আপনার সোনার ওজন হঠাৎ করে কমে যায় তাতে আতঙ্কিত হবেন না কারণ এক বছরের কাছাকাছি বয়সের শিশুদের উচ্চতার বৃদ্ধি তাদের ওজন বৃদ্ধির তুলনায় অধিক হয়।