একটি অতি বুদ্ধিমান শিশুর জন্ম দিতে গর্ভাবস্থায় কি ধরণের খাবার খাবেন

একটি অতি বুদ্ধিমান শিশুর জন্ম দিতে গর্ভাবস্থায় কি ধরণের খাবার খাবেন

আপনি কি একজন জিনিয়াসের জন্ম দিতে চান?না আমরা বিদ্রুপ করছি না।

একজন বুদ্ধিদীপ্ত শিশু খুব কম বয়সে সাফল্য অর্জন করে, শুধু তাই নয় একদিন সেই ছোট্টটিই কিন্তু আপনাকে ধন্যবাদ দেবে এই জন্যে যে আপনি তার জন্য সমস্ত ধরনের সম্পদের সংস্থান করে দিয়েছেন যা তার সাফল্যকে সুনিশ্চিত করছে!তার বিদ্যালয়ে পড়াশুনার ক্ষেত্রে সে কম সমস্যায় পরেছে এবং ADHD এর মত শিখণ জনিত অসুখের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে, এটি তার জ্ঞান আহরণ ক্ষমতার এবং স্মৃতিশক্তির বিকাশ ঘটিয়েছে সেটা শ্রেণীকক্ষের মধ্যেই হোক বা তার বাইরে।

আপনার শিশুর জ্ঞানীয় বিকাশ আপনার গর্ভে থাকাকালীন সময় থেকেই শুরু হয়েছে,এবং আপনি যদি জন্ম থেকেই উচ্চ বুধ্যাঙ্ক(IQ) বিশিষ্ট সন্তানের মা হতে চান তাহলে নিচের নিবন্ধটি পড়ে ফেলুন।

10 টি সেরা খাবার যা আপনি আপনার গর্ভাবস্থায় খাবেন একজন সপ্রতিভ বুদ্ধিমান শিশুর জন্মদানের জন্য।

এতে কোনোরকম আশ্চর্য হবার ব্যাপার নেই যে আপনার ডাক্তারবাবু আপনাকে ভিটামিন D,ফোলিক অ্যাসিড এবং আয়রণের(লোহা)পরিপূরক দেবেন আপনার গর্ভাবস্থায় নিয়ম মেনে খাবার জন্য।আপনার বাচ্চার জ্ঞানীয় বিকাশ নির্ভর করবে আপনি কি ধরণের খাবার খাচ্ছেন তার ওপর।

আপনি কি অবাক হচ্ছেন গর্ভাবস্থায় কি খাবার খেলে আপনার সন্তান বুদ্ধিমান হবে?

তবে এখানে রইল সেরা 10 টি খাবার যা গর্ভাধারণকারিণী মহিলাদের খেতে দৃঢ়ভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়।

১. চর্বিবহুল মাছ

চর্বিবহুল মাছ

ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড আপনার সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্তঅন্তঃস্বত্বা মায়েরা অবশ্যই স্যালমন মাছ খাবেন বুদ্ধিমান শিশুর জন্মদানের জন্য।সাপ্তাহে কম পক্ষে দুই বা তার বেশিবার মাছ খাবার লক্ষ্য রাখতে হবে।আর একটি উৎস হল সামুদ্রিক খাবার যার মধ্যে আছে ঝিনুক সেগুলি আয়োডিন সমৃদ্ধ।যে সকল গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে স্বাভাবিক আয়োডিনের মাত্রা কম তারা মনে রাখবেন যে তাদের সন্তানের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ কম হতে পারে যদি তারা সঠিক মাত্রা নিয়ন্ত্রণ না করেন।

২. সবুজ শাকসবজি

সবুজ শাক-সবজি

শাক এবং মুসুর হল সবুজ পাতাযুক্ত খাদ্য যেটি ফোলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ,সবুজ শাকসবজি এবং কয়েক ধরনের ডাল শিশুদের মস্তিষ্কের কলা ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।

জানা গেছে শাকসবজিতে বর্তমান ফোলিক অ্যাসিড শিশুদের নিউর‍্যাল টিউব এর সমস্যার ঝুঁকি হ্রাস করে।নানা ধরণের ঠোঁট কাটা ও হৃদপিন্ডের গঠন জনিত সমস্যা দূর করে।গর্ভাবস্থায় প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার ঝুঁকি আপনি কমিয়ে ফেলতে পারবেন যখন আপনি খাদ্য বা পরিপূরকের মাধ্যমে সঠিক পরিমাণে ফোলিক অ্যাসিড গ্রহণ করবেন।

৩. ব্লুবেরী

ব্লুবেরী

ব্লুবেরী গুলি হল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা শিশুদের জ্ঞানীয় বিকাশে সহায়তা করে।ব্লুবেরীর বিকল্প হিসাবে স্ট্রবেরী,রাস্পবেরী, ব্ল্যাকবেরী বা কালোজাম,টমেটো, বীনস, এবং আর্টিচোক্স(এক ধরণের ডাঁটা গাছ বিশেষ)খাওয়া যেতে পারে।

৪. ডিম

ডিম

ডিম হল উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ কিন্তু কম ক্যালোরিযুক্ত খাদ্য, বিশেষত সেদ্ধ ডিম।এর মধ্যে কোলিন নামক অ্যাম্যাইনো অ্যাসিড থাকে যা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত উপযোগী যা প্রমাণিত।আপনি অবশ্যই পাস্তুরাইজড নয় এমন ডিম খাওয়া এড়িয়ে চলবেন কারণ এগুলোতে ব্যাক্টেরিয়া থাকতে পারে যা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

৫. আমন্ড

আমন্ড

স্বাস্থ্যকর স্নেহপদার্থ,(ফ্যাট)ম্যাগনেশিয়াম,ভিটামিন-E এবং প্রোটিনে পরিপূর্ণ হল আমন্ড।মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী ওমেগা– 3 ফ্যাটি অ্যাসিড আমন্ডে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।প্রতিদিন একমুঠো করে আমন্ড খেলে আপনি সক্ষম হবেন জন্মমুহূর্ত থেকে বুদ্ধিমান একটি সন্তান প্রসব করতে।গর্ভাবস্থায় মটরশুটি গ্রহণ সন্তানের বুদ্ধি বিকাশের সহায়ক।আখরোটও ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর।

৬. গ্রীক দই

গ্রীক দই

প্রোটিনযুক্ত খাবারের প্রয়োজন মায়ের গর্ভে শিশুর সবল স্নায়ুকোষ গঠনের জন্য।প্রোবায়োটিক খাদ্য যেমন গ্রীক দই যা ক্যালশিয়ামে পূর্ণ, সাহায্য করে শিশুটির অস্থির বিকাশ ঘটাতে।গ্রীক দই আবার আয়োডিন সমৃদ্ধ যা স্বল্প ওজনযুক্ত শিশুর জন্ম সম্ভবনা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

৭. চীজ

চীজ

শিশুর জন্মগত বিকাশে ভিটামিন-D অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।যে সব গর্ভবতী মায়েদের ভিটামিন-D এর মাত্রা শরীরে কম থাকে তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কম বুদ্ধ্যাঙ্ক (IQ) সম্পন্ন সন্তানের জন্ম দেন।আপনার খাবারে চীজের পরিমাণ নিশ্চিত করুন।

৮. কুমড়োর বীজ

কুমড়োর বীজ

কুমড়োর বীজে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে।জিঙ্ক হল এমন একটি মৌল যা মস্তিষ্কের সঠিক গঠণের সহায়ক এবং জন্মগতভাবে তথ্যের(সংবাদের)সঞ্চালন বা প্রক্রিয়াকরণে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলিতে ভূমিকা নেয়।এটি উচ্চমাত্রায় পৌষ্টিকপদার্থ পূর্ণ,এবং এটি একটি দারুন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

৯. বীন্স

বীন্স

লোহা বা আয়রণ হল একটা অতিপ্রয়োজনীয় উপাদান যা অক্সিজেনকে শিশুর মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষে বহন করে নিয়ে যায়।বীন্সের মধ্যে ভাল পরিমাণে আয়রণ আছে,সেই জন্যই গর্ভবতী মায়েদের এটি তাদের ডায়েটে সঠিক মাত্রায় অর্ন্তভূক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়।অন্যান্য আয়রণ সমৃদ্ধ খাবারগুলি হল শাক,ডুমুর, চিকেন এবং কিশমিশ।নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় কিশমিশ খেলে আপনার রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক থাকবে।

১০. দুধ

দুধ

গর্ভবতী মায়েদের শরীরে কম মাত্রায় আয়রণ থাকলে তা গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধির অন্তরায় হয়ে ওঠে এবং খুব বিশ্রীভাবে শিশুর সর্বাঙ্গীন বিকাশ ব্যাহত করে।দুধ স্বাস্থ্যকর জ্ঞানীয় কার্যকারিতায় সাহায্য করে এবং জন্মের পূর্বে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে।

পরামর্শ এবং সাবধানতা

আপনি কি খাচ্ছেন তা আপনার শিশুর বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে, তাই নিচের বিষয়গুলির প্রতি মনোযোগ দিন।

  • আপনি মুখে কি দিচ্ছেন সেটা সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে নিন সব সময়ে তাজা এবং জৈবখাদ্য(অরগ্যানিক ফুড)খান একটি বুদ্ধিমান সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য।
  • অধিক শর্করা,প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।দৃঢ়ভাবে এড়িয়ে চলুন মদ্যপান, ধূমপান,এবং অন্যান্য বিষয়গুলি যা অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অংশ
  • কাঁচা মাংস,পারদযুক্ত মাছ,খোলকযুক্ত শামুক এবং ক্যাফিন।এগুলি দেহে দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে এবং নানারকমের জটিলতা সৃষ্টি করে এমনকি গর্ভপাত পর্যন্ত ঘটতে পারে।
  • ফল এবং সবজিগুলো যেগুলো আপনি খাবেন সেগুলো কাটবার আগে খুব ভালভাবে ধুতে হবেযদি জীবাণু খুব ভালভাবে বেড়িয়ে না যায় তাহলে এগুলো কাটার সময় ফলের ভক্ষ্যনীয় অংশে প্রবেশ করে যায় যা পরবর্তীকালে আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি সাধন করে।
  • যদি আপনি মনে করেন আপনার ফল এবং সবজি খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে তাহলে আপনি সেগুলোকে অন্যান্য মিলের সাথে যোগ করুন।সবজিগুলোকে টুকরো করুন আর সেগুলি আপনার অমলেটের সাথে কিম্বা ফল গুলোকে ছোটো টুকরো করে কেটে ওটমিল বা পুডিং এর সাথে যোগ করুন;এইরকম নানা উপায় আছে সেগুলোকে আপনার দৈনন্দিন মিলের সাথে সংযুক্ত করবার।আপনি আবার ফলের জুসও খেতে পারেন কিন্তু খেয়াল রাখবেন সেটা যেন কখনই মূল ফল খাওয়ার বিকল্প না হয়ে ওঠে।

আপনি সাপ্লিমেন্ট বা পরিপূরক নেবার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করতে পারেন আপনার আয়রণ,ভিটামিন-D এবং ফোলিক অ্যাসিডের সঠিক মাত্রা বজায় রাখার জন্য আর সেইগুলো শুরু করার ব্যাপারে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে পরামর্শ করে নেওয়ার কথা একদম ভুলবেন না।

তাই,নিশ্চিতভাবে এই পরামর্শগুলো মেনে ঐ সকল খাদ্যগুলিকে আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করে আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যকর মস্তিষ্কের বিকাশ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে আর একজন জিনিয়াসের আগমন সূচিত করে তুলুন।