In this Article
বাচ্চাদের মধ্যে কাশি খুবই সাধারণ, এবং এটি ফুসফুস থেকে উত্তেজক পদার্থগুলি বের করে দেওয়ার কার্যকর উপায়গুলির মধ্যে একটি। শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে উত্তেজকগুলি প্রায়ই ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং এই কারণে কিছু ক্ষেত্রে শুষ্ক কাশি হতে পারে। শুষ্ক কাশির জন্য খসখস শব্দ হতে পারে এবং শিশুদের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। এই ধরনের কাশি ফুসফুস এবং শিশুদের গলায় জ্বালা ধরাতে পারে।
একটি শুকনো কাশি কী?
শুকনো কাশি একধরনের কাশি যাতে শ্লেষ্মা বা কফ থাকে না। যখন আপনার বাচ্চার কাশি হয়, ততক্ষণ আপনি একটি তীব্র ফাঁকা আওয়াজ শুনতে পাবেন। শুষ্ক কাশি সাধারণত উচ্চ শ্বাস পথের সংক্রমণ (নাক এবং গলা) এর সাথে যুক্ত যা ঠান্ডা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো মেডিকাল অবস্থার কারণ হতে পারে। বাচ্চা ঘুমাতে গেলে বা উষ্ণ ঘরে থাকাকালীন অবস্থাতে শুষ্ক কাশি খারাপ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, শুষ্ক কাশি শ্বাসনালীর নিম্ন অংশের সংক্রমণের সাথে যুক্ত হতে পারে যা ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।
শিশুর মধ্যে শুষ্ক কাশি কারণ কী?
আপনার শিশু যদি শুষ্ক কাশিতে ভুগছে, এটি খুব অস্বস্তিকর এবং বেদনাদায়ক হতে পারে। শিশুদের শুষ্ক কাশির অনেক কারণ আছে। শিশুদের শুষ্ক কাশি হওয়ার কিছু কারণ নীচে উল্লেখ করা হয়েছে:
1. সাধারণ ঠান্ডা লাগা
সাধারণ ঠান্ডা লাগা থেকে শিশুদের একটি শুষ্ক কাশি হতে পারে। যদিও শুষ্ক কাশি সাধারণ ঠান্ডা লাগার প্রথম লক্ষণ নয়, এটি ঠান্ডা লাগার শেষ পর্যায়ে প্রদর্শিত হয়। সাধারণ ঠান্ডা লাগার প্রাথমিক পর্যায়ে আপনার শিশুর হালকা এবং ভিজা কাশি থাকতে পারে। ঠান্ডা লাগা অবস্থায় যত সময় গড়ায়, কাশি শুষ্ক হয়ে যায়। সাধারণ ঠান্ডা লাগা একটি ভাইরাল সংক্রমণ এবং এর জন্য আপনার শিশুর গলা খুসখুস করতে পারে। আপনার সন্তানের ঠান্ডা লাগা এবং কাশি প্রতিরোধ করতে ঘরোয়া টোটকা সবথেকে বেশি কার্যকরী।
2. গ্যাস্ট্রোইসোফেগাল রিফ্লাক্স রোগ
গার্ড বা গ্যাস্ট্রোইসোফেগাল রিফ্লাক্স রোগ শিশুদের প্রভাবিত করতে পারে। গার্ড তখন হয় যখন আপনার সন্তানের পেটের সামগ্রীগুলি তাদের রাস্তা তৈরি করে ইসোফ্যাগাসের মাধমে। এর ফলে বমি, জ্বালাভাব বা থুতু ফেলতে হতে পারে। অ্যাসিড আপনার শিশুর গলায় অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে যার ফলে শুষ্ক কাশি হয়। এই অবস্থা নিরাময়ের জন্য অনেক ধরনেরপাল্টা ঔষধ আছে। তবে, আপনার শিশুকে কোনও ঔষধ দেবার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা দরকার।
3. পরিবেশগত উত্তেজক
কখনও কখনও আপনার শিশুর পরিবেশগত উত্তেজকের কারণে প্রতিক্রিয়া হয় যা থেকে শুষ্ক কাশি হতে পারে। এই অবস্থা সংবেদনশীল শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি পরিলক্ষিত হয় যাদের মধ্যে তীব্র রাসায়নিকের গন্ধ, সিগারেটের ধোঁয়া, অত্যধিক শুষ্ক এবং গরম বায়ুতে খুব সহজেই প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। আপনার সন্তানকে এইধরনের পরিবেশগত পরিস্থিতি থেকে দূরে রাখুন। গরম আবহাওয়ার কারণে হওয়া শুষ্ক কাশি নিরাময় করার জন্য, আপনি আপনার শিশুর রুমে একটি হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন।
4. ইনফ্লুয়েঞ্জা
ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ একই হতে পারে, কিন্তু অল্পবয়সী বাচ্চাদের এবং শিশুদের মধ্যে, এই লক্ষণগুলি গুরুতর হতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা সাধারণ ঠান্ডা লাগার মতো, শুষ্ক কাশি দিয়ে শুরু হয়। ইনফ্লুয়েঞ্জা গুরতর হওয়ার সাথে সাথে, আপনি কাশির সাথে শ্লেষ্মা লক্ষ্য করবেন।
5. হুপিং কাশি
হুপিং কাশি বা পার্টুসিস আপনার শিশুর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। হুপিং কাশি একটি ছোঁয়াচে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ যা শিশুদের শ্বাসনালিকে প্রভাবিত করে। আপনার শিশু যদি এই অবস্থায় ভোগে, তাহলে আপনি শক্তিশালি, জোরপূর্বক এবং ক্রমাগত কাশি লক্ষ্য করবেন। আপনার শিশু যখন কাশবে, তখন আপনি তার কাশি থেকে একটি অদ্ভূত শব্দ শুনতে পারেন। আসলে এটি অত্যন্ত শুষ্ক কাশির জন্য হয় এবং যার জন্য বাচ্চারা প্রবল বিষম খেতে পারে। প্রবল হুপিং কাশিতে, আপনি আপনার শিশুর চোখে জল বা নীলচে ভাব লক্ষ্য করতে পারেন এবং তার জিভ বাইরে বের হয়ে আসতে পারে।
শিশুদের শুষ্ক কাশির জন্য চিকিৎসা
শুষ্ক কাশি অনেক কারণে হতে পারে , এবং তাই তার চিকিৎসা লক্ষণ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। আপনার শিশুর শুষ্ক কাশির জন্য সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুপারিশ করা হয় যে আপনি শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করুন; তিনি আপনার বাচ্চাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করবেন এবং তারপরে সর্বোত্তম উপযুক্ত চিকিৎসা নির্ধারণ করবেন। নিম্নলিখিত কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি দেওয়া হল, যা আপনার শিশুর চিকিৎসার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে:
1. সাধারণ ঠান্ডা লাগার কারণে শুষ্ক কাশির চিকিৎসা
সাধারণ ঠান্ডা লাগার ফলে যে শুষ্ক কাশি হয় তা নিরাময় করার সর্বোত্তম উপায় হল ঘরোয়া দাওয়াই। ঘরোয়া চিকিৎসার উপাদানগুলি কেবলমাত্র সহজে পাওয়া যায় তা নয়, এটি শিশুদের এবং বাচ্চাদের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ। যাইহোক, আপনার শিশুকে কিছু দেওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা দরকার।
2. গার্ড–এর কারণে শুকনো কাশির জন্য চিকিৎসা
যদি আপনার শিশুর শুকনো কাশিটির কারণ জি.ই.আর.ডি. বা গার্ড হয়, তবে আপনার ডাক্তার এর সঠিক কারণ জানতে আপনার শিশুকে ভালভাবে পরীক্ষা করবেন। আপনার ডাক্তারের কারণ অনুধাবন হয়ে গেলে , তিনি গ্যাস্ট্রোইসোফেগাল রিফ্লাক্স রোগের চিকিৎসার জন্য কিছু ঔষধ নির্ধারণ করবেন। যদিও জি.ই.আর.ডি. চিকিৎসার জন্য অনেকগুলি পাল্টা ওষুধ পাওয়া যায় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
3. পরিবেশগত উত্তেজকের কারণে শুকনো কাশির চিকিৎসা
পরিবেশগত উত্তেজকগুলির কারণে শুষ্ক কাশি দূরীকরণের সবচেয়ে কার্যকারী উপায় হল আপনার বাচ্চাকে সেগুলির থেকে দূরে রাখা। যাইহোক, শীতকালে বায়ু আর্দ্র রাখতে কৃত্রিম হিউমিডিফায়ার ব্যবহার নিশ্চিত করুন। হিউমিডিফায়ার পরিষ্কার রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, নইলে এগুলি ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুর প্রজনন স্থল হতে পারে। এছাড়াও, স্প্রে, ডিওডোরেন্টস, অথবা রুম ফ্রেশনারগুলি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন যা বায়ুতে অবশিষ্টাংশ ছেড়ে যেতে পারে এবং আপনার শিশুর অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। আপনার শিশুকে আরামদায়ক জামাকাপড় (আবহাওয়া অনুসারে) পরান, কারণ, কাশির জন্য আপনার বাচ্চা ঘেমে যেতে পারে। আরামদায়ক জামাকাপড় বায়ু সঞ্চালনের ভাল রাখে এবং আপনার বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রাকেও সঠিক রাখে।
4. ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণে হওয়া শুকনো কাশির চিকিৎসা
ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণে আপনার শিশুর শুষ্ক কাশি হলে এন্টিবায়োটিক সেই সমস্যা সমাধান করবে না। আপনার ডাক্তার আপনার সন্তানের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং সুস্থ খাদ্যের পরামর্শ দিতে পারে। আপনার সন্তানের হাইড্রেটেড থাকাটা খুবই জরুরী এবং সংক্রমণের সাথে যুদ্ধ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল জাতীয় খাদ্য খেতে হবে। যদি আপনি বুকের দুধ খাওয়ান, তাহলে তা চালিয়ে যান। আপনি যদি আপনার শিশুকে বুকের দুধ ছাড়াও তরল এবং সাধারণ খাবার খাওয়াতে শুরু করে থাকেন,তবে আপনি তাকে বাড়ির তৈরি স্যুপ বা তাজা ফলের রসও দিতে পারেন।
5. যে শুকনো কাশি হুপিং কাশির জন্য হয় তার চিকিৎসা
আপনার ডাক্তার যদি বোঝেন যে শুষ্ক কাশি হওয়ার কারণ পার্টুসিস তাহলে তিনি আপনার শিশুর জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের একটি কোর্স নির্ধারণ করবেন। আপনার বাচ্চার বয়স এক বছরেরও কম হলে হাসপাতালে ভর্তি করে জটিলতা দূর করার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। হুপিং কাশির জন্য বাচ্চার শ্বাস আটকে যাওয়ার মত জটিলতা প্রায়ই দেখা যায়। অতএব, এক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসার তত্ত্বাবধান খুবই জরুরী। আপনার শিশুর হুপিং কাশি হলে তাকে পৃথক ওয়ার্ডে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হবে কারণ হুপিং কাশি অত্যন্ত সংক্রামক। গুরুতর অবস্থায় বা আপনার শিশু শ্বাস নিতে অক্ষম হলে, চিকিৎসক কর্টিকোস্টেরয়েড ওষুধ দিতে পারেন। এই ওষুধ শ্বাস আটকে যাবার ঝুঁকি কমাবে। আপনার শিশুকে শ্বাস নিতে সাহায্য করার জন্য ডাক্তার অক্সিজেন মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
এগুলি ছিল আপনার ডাক্তারের দ্বারা প্রস্তাবিত কিছু চিকিৎসা বিকল্প । আপনার শিশুর লক্ষণ, বয়স এবং অবস্থা আপনার ডাক্তারকে আপনার সন্তানের জন্য সর্বাধিক উপযুক্ত চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।
শিশুদের শুকনো কাশির জন্য ঘরোয়া প্রতিকার
আপনার সন্তান অসুখে ভুগলে প্রথমেই আপনার মাথায় আসে কিছু প্রাচীন ঘরোয়া প্রতিকারের কথা। এখানে, আমরা কিছু সহজ এবং কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব যা আপনার সন্তানের শুষ্ক কাশি নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে। কোনও ঘরোয়া প্রতিকার শুরু করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নেওয়া জরুরী। আপনার ডাক্তার কোন উপাদানগুলি আপনার শিশুর জন্য সর্বোত্তম কাজ করতে পারে তা বুঝতে সহায়তা করবেন। নিম্নলিখিত ঘরোয়া প্রতিকারগুলি আপনার শিশুর জন্য ব্যবহার করতে পারেন:
জন্ম থেকে 6 মাস
আপনার শিশুর বয়স ছয় মাসের নীচে হলে, আপনি শুষ্ক কাশি প্রতিরোধ করতে নিচের ঘরোয়া প্রতিকারগুলি ব্যবহার করতে পারেন:
1. মায়ের দুধ
ছয় মাসের কম বয়সী বাচ্চার শুষ্ক কাশির জন্য মায়ের দুধ সর্বোত্তম ঘরোয়া প্রতিকার। যখনই প্রয়োজন তখনই আপনার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান। মায়ের দুধ প্রচুর পুষ্টিগুণসম্পন্ন এবং যেকোনো সংক্রমণের সাথে যুদ্ধ করতে শিশুকে অ্যান্টিবডি সরবরাহ করে।
2. নাকের স্যালাইন ড্রপ
বাচ্চার নাক পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে সালাইন ড্রপ খুব কার্যকর। আপনি আপনার শিশুর মাথা পিছনের দিকে হেলিয়ে প্রতিটি নাসারন্ধ্রে কয়েক ড্রপ দিতে পারেন। আপনি বাড়িতেই স্যালাইন ড্রপ বানাতে পারেন। 8 থেকে 10 চামচ গরম পরিশ্রুত জল নিন এবং এতে 1/2 চামচ লবণ যোগ করুন।
3. রসুন এবং ক্যারম বীজ
কয়েকটি রসুনের কোয়া এবং 2-3 চামচ ক্যারোম বীজ নিন এবং একটি প্যানে তাদের সেঁকে নিন। এই ভাজা মশলা একটি মসলিন কাপড়ের মধ্যে রেখে একটি পুঁটলি বানান আপনার বাচ্চার বালিশ বা বিছানার উপর এই পুঁটলি রাখুন। রসুন এবং ক্যারোম বীজের অ্যান্টি – ব্যাক্টেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ঠান্ডা লাগা এবং বুকে সর্দি জমা রোধ করতে সাহায্য করবে।
4. ভেষজ মালিশ
আপনি সরষের তেল, ক্যারোম বীজ, এবং রসুন দিয়ে একটি ভেষজ মালিশ বানাতে পারেন। সরষের তেলের উষ্ণতা এবং রসুন এবং ক্যারোমের জীবাণু–প্রতিরোধক ক্ষমতা, বুকে সর্দি জমলে কাজে দেয়। একটি পাত্রের মধ্যে 1/4 কাপ সরষের তেল এবং দুই কোয়া রসুন যোগ করে গরম করুন এবং এর মধ্যে অর্ধেক চামচ ক্যারোম বীজ যোগ করুন। এর রঙ বাদামী হয়ে গেলে গরম করা বন্ধ করুন। আপনার শিশুর বুকে এবং পায়ের চেটোয় এই গরম তেল মালিশ করুন।
5. বেসিল (তুলসি) এবং নারকেল তেল
এটি শিশুদের শুষ্ক কাশি চিকিৎসার একটি কার্যকরী প্রতিকার। 1/4 কাপ নারকেলের তেল নিন এবং গরম করুন। তুলসীপাতা ছিঁড়ে তার মধ্যে দিন। আপনার শিশুর বুকে, পিঠে, গলায় এবং পায়ে এই গরম তেলটি প্রয়োগ করুন।
6-10 মাস পর্যন্ত
আপনার বাচ্চা ছয় মাস বা তার বেশি বয়সী হলে নিম্নলিখিত ঘরোয়া টোটকাগুলি তার জন্য কাজ করতে পারে:
1. জিরের জল
জিরের জল তৈরি করতে আপনার দরকার 1 থেকে 2 চা চামচ জিরে এবং এক গ্লাস জল। একটি পাত্রের মধ্যে দুটি উপাদানই রাখুন এবং ফোটান। জল ফুটতে শুরু করলে, ঢাকনা দিয়ে পাত্রটি ঢেকে রাখুন এবং আরো কয়েক মিনিটের জন্য ফোটান। ফোটানো হয়ে গেলে ঠান্ডা হবার জন্য অপেক্ষা করুন। তারপর আপনার বাচ্চাকে দিনে বেশ কয়েকবার এই পানীয়টি খাওয়ান। এই প্রতিকারটি অল্পবয়সী শিশুদের এবং বাচ্চাদের শুকনো কাশির চিকিৎসার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর।
2. হলুদের পেস্ট
হলুদে কয়েক ফোঁটা জল দিয়ে হলুদের পেস্ট বানান। কাশি এবং ঠান্ডা থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনার শিশুর শরীর, পায়ের পাতা এবং কপালের উপর এই পেস্টটি প্রয়োগ করুন।
3. গাজরের রস
গাজরের রস শিশুদের মধ্যে কাশি এবং সর্দির চিকিৎসার জন্য উপযোগী। তাজা গাজর রস নিন এবং তাতে গরম জল মেশান। কাশি এবং ঠান্ডা থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনার বাচ্চাকে গাজরের রস খেতে দিন।
4. সরষের তেল মালিশ
সরষের তেল একটি পাত্রের মধ্যে নিয়ে গরম করুন। এতে কিছু নিগেলা সাটিভা (কালো জিরে) যোগ করুন। কাশি এবং ঠান্ডা লাগার সময় আরাম দিতে আপনার শিশুর বুকে, পিঠে, পায়ের পাতায় এবং নাকের নীচে ম্যাসাজ করুন।
5. ভাপ ঘষা
আপনি কাশি থেকে বাচ্চাকে পরিত্রাণ দিতে তার পায়ের পাতায় ভাপ দিতে পারেন।
10-12 মাস
আপনার বাচ্চা 10 থেকে 12 মাস বয়সের হলে তার শুষ্ক কাশির প্রতিকার হিসাবে নিম্নের যে কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
1. নারকেল তেলের মিশ্রণ
1টি পানপাতা, 3-4 টি বেসিল(তুলসীপাতা) এবং 1টি ছোট পেঁয়াজ নিন; অর্দ্ধেক কাপ নারকোল তেলে এই সব উপাদানগুলি গরম করুন। তাপ বন্ধ করার পরে এক চিমটে কর্পূর যোগ করুন। আপনার শিশুর বুকে, পিটে এবং গলায় এই তেলের মিশ্রণ প্রয়োগ করুন।
2. নারকেল এবং কর্পূর তেল
নারকেল তেল গরম করুন এবং গরম হয়ে গেলে তাপ থেকে নামিয়ে তার মধ্যে এক চিমটে কর্পূর যোগ করুন। কাশি এবং ঠান্ডা নিরাময়ের জন্য আপনার শিশুকে এটি দিয়ে মালিশ করুন।
3. পানীয় গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি করুন
বাচ্চাকে বেশি করে তরলজাতীয় খাবার এবং পানীয় খাওয়ান কারণ শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে হাইড্রেটেড থাকলে তা মিউকাসকে পাতলা করে। স্যুপের মত গরম পানীয়গুলি খেলে গলায় আরাম হয় এবং জমে থাকা কফ বেরিয়ে আসতে সাহায্য হয়।
4. কালো মরিচ, জিরা, এবং গুড়
এক কাপ জল নিয়ে নিন এবং এতে যোগ করুন জিরা এক চিমটে, আধা চামচ কালো মরিচ এবং 1-2 চামচ গুড়। প্রায় 10 মিনিটের জন্য একসঙ্গে এই সব উপাদানগুলো ফোটাতে হবে। আপনি আপনার সন্তানকে দিনে একবার ১ বা ২ চামচ এই মিশ্রণ খাওয়াতে পারেন।
5. ঢেঁড়সের স্যুপ
ঠান্ডা লাগা এবং কাশির উপসর্গ নিরাময়ে এই স্যুপ সহায়ক। আপনি তাজা ঢেঁড়স নিয়ে কেটে ফেলুন। প্রায় 10 মিনিট ধরে তাকে জলে সেদ্ধ করুন ও ছেঁকে নিন। স্যুপ হিসাবে আপনার শিশুকে এই পানীয় দিন।
এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি অবশ্যই কাজ করবে। যাইহোক, যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে আপনার শিশুর লক্ষণগুলি এখনও অব্যাহত রয়েছে, তবে চিকিৎসার সহায়তা নিন।
আপনার সন্তানকে আরামে রাখতে পরামর্শ
নিম্নলিখিত পরামর্শগুলি শুষ্ক কাশির সময় আপনার সন্তানকে আরামবোধ করতে সাহায্য করতে পারে:
- আপনি যদি আপনার শিশুকে কোনো শক্ত খাবার দেওয়া শুরু না করেন, তবে সবচেয়ে ভাল জিনিস হল আপনার শিশুকে যতটা সম্ভব বুকের দুধ খাওয়ানো।
- শান্ত এবং নিরিবিলি পরিবেশ তৈরি করে আপনার শিশুকে আরও ভাল ঘুমাতে সাহায্য করুন।
- আপনি শিশুর কষ্ট এবং অস্বস্তি কম করার জন্য দোলাতে ও পিঠে চাপড় মারতে পারেন।
- আপনার শিশুকে বেশিক্ষণ একা রাখবেন না কারণ তীব্র শুকনো কাশিতে শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি থাকে।
সঠিক যত্ন এবং চিকিৎসার দ্বারা, আপনি আপনার বাচ্চার শুকনো কাশি সারিয়ে তুলতে পারেন। আপনি আপনার শিশুর ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন ও এই অবস্থার নিরাময়ের জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় সম্পর্কে জানতে পারেন।