গর্ভাবস্থাকালে ঘুমের সর্বোত্তম অবস্থানগুলি

গর্ভাবস্থাকালে ঘুমের সর্বোত্তম অবস্থানগুলি

একটি নিশ্ছিদ্র ঘুম সকল গর্ভবতী মহিলাই প্রত্যাশা করেন, কিন্তু সেটি পাওয়া প্রায়শই মুশকিল হয়ে ওঠে।গর্ভাবস্থায় ঘুমের ব্যাঘাত হওয়াটা খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু নয় এবং প্রায় মোটামুটি সকল গর্ভবতী মহিলাই বিশেষত পূর্ব অবস্থা থেকে গর্ভদশায় প্রথম ত্রৈমাসিক পেরিয়ে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে কম-বেশি ঘুমের সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন।

গর্ভদশায় হয়ে থাকা উদ্বেগ, হরমোনের উত্থান-পতন এবং শারীরিক পরিবর্তনের মত সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণের জন্য পূর্বের তুলনায় কঠিন হয়ে ওঠে একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় রাত্রিকালীন নিশ্চিন্ত ঘুম যাপন করা।আপনার বর্ধিষ্ণু পেটের আকার, পিঠে ব্যথা, পা ফুলে যাওয়া এবং আপনার ক্রমবর্ধিত সংবেদনশীল মুত্রাশয়টি খালি করার তাগিদটি প্রতিদিন আপনার পিঠের উপর ভর দিয়ে চিৎ হয়ে আরামের ঘুমের মত আপনার নিয়মিত ঘুমের স্বকাচ্ছন্দ্যে ব্যাঘাত আনে।স্বাভাবিক নিয়মের ধারায় আপনার গর্ভদশাটি দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের দিকে ক্রম অগ্রসর হওয়ার কারণে, আপনার আরামদায়ক ঘুমের অবস্থানটির সন্ধান পাওয়া হয়ত কঠিন থেকে আরও কঠিনতর হয়ে উঠতে পারে।এরকম অবস্থায়, চিন্তা হওয়া এবং একটি নিশ্ছিদ্র প্রশান্তির ঘুমের জন্য গর্ভাবস্থায় কীভাবে ঘুমানো উচিত ও গর্ভাবস্থায় চিৎ হয়ে ঘুমানোটা নিরাপদ কিনা এ ধরণের নানা প্রশ্ন মনে আসাটাই স্বাভাবিক।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য রাত্রে ভাল ঘুম হওয়াটা ভীষণই প্রয়োজন।বিশেষজ্ঞের মতানুযায়ী, গর্ভদশায় ঘুমানোর সর্বোত্তম অবস্থানটি হল বা পাশ ফিরে ঘুমানো, যেটি আবার আপনার এবং তার সাথে আপনার ভাবি সন্তানের জন্যও আদর্শ।এই অবস্থানটি আপনার দেহে সর্বাধিক রক্ত প্রবাহে সহায়তা করে এবং আপনার অমরা এবং শিশুর পুষ্টি শোষণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।পাশ ফিরে ঘুমালে তা আবার আপনার বৃক্কের কার্যকারিতাকেও বড়িয়ে তোলে যা দেহস্থ বর্জ্য অপসারণে সাহায্য করে এবং আপনার পায়ের পাতা, গোড়ালি এবং হাতের ফুলে যাওয়াকে হ্রাস করে।

ঘুমের সাধারণ অবস্থানগুলি গর্ভাবস্থায় অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে কেন?

ঘুমের সাধারণ অবস্থানগুলি যেমন আপনার পেটের উপর ভর দিয়ে উপুড় হয়ে কিম্বা পিঠে ভর দিয়ে চিৎ হয়ে ঘুমানোও কঠিন হয়ে উঠবে আপনার গর্ভদশা দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের দিকে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে।এর কারণ হল আপনার ক্রম বর্ধিত পেটের আকার, পিঠ ব্যথা, শ্বাস কষ্ট এবং হৃদয় জ্বলনের মত সমস্যাগুলির কারণে হয়ে থাকা অস্বস্তিগুলি এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠে।

সঠিক ঘুমের অবস্থানটি কি?

গর্ভাবস্থায়, ঘুমানোর সঠিক অবস্থানটি নিঃসন্দেহে হওয়া উচিত আপনার পাশ ফিরে ঘুমানো এবং তাও আবার বাম পাশ ফিরে।হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী বৃহৎ শিরাটি ডান দিকে অবস্থিত, আর সেই কারণেই আপনাকে বাম পাশ ফিরে ঘুমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।শোওয়ার আদর্শ অবস্থানটি হল আপনার বাম পাশ ফিরে হাঁটুগুলিকে কিছুটা ভাঁজ করে শোওয়া এবং আপনার পাগুলির মাঝে একটি পাশ বালিশ স্থাপন করা।

সঠিক ঘুমের অবস্থানটি কি?

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে, আপনার পিঠের পিছনের দিকে এবং পেটের নীচে একটি বালিশ স্থাপন করলে তা আপনাকে তুলনামূলক কম টান বা চাপের সাথে একটি অনুকূল ঘুম সরবরাহ করবে।ঘুমানোর সময় আপনাকে সুতির ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোশাক পরিধান করার পরামর্শই দেওয়া হয় যাতে সহজেই বায়ু চলাচল করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ঘুমের কোন অবস্থান এড়িয়ে চলা উচিত

চিৎ হয়ে কিম্বা উপুড় হয়ে ঘুমানো গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলতে হবে।কারণ এটি নীচের উল্লেখানুযায়ী নানা ধরণের স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার দিকে পরিচালিত করতে পারেঃ

  • গর্ভদশায় আপনি যখন পিঠের উপর ভর দিয়ে চিৎ হয়ে শোন তখন আপনার বর্ধিত জরায়ু আপনার পিঠের মেরুদণ্ডের উপর, আপনার পিঠের মাংস পেশীগুলির উপর, আপনার নাড়ির উপর এবং তাছাড়াও আপনার রক্তবাহগুলির উপর, বিশেষত অধরা মহাশিরার(এটি হল সেই শিরা যেটি আপনার দেহের নিম্নাঙ্গ থেকে হৃদপিণ্ড পর্যন্ত রক্ত প্রবাহ ফিরিয়ে আনে) উপর চাপ ফেলে।এটি আপনার হৃৎপিণ্ড এবং ভ্রূণের রক্ত ​​সঞ্চালন হ্রাস করতে পারে এবং আপনার গর্ভস্থ শিশুর কাছে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে। সংবহনে এই প্রতিবন্ধকতা আবার হাইপোটেনশন (নিম্ন রক্তচাপ) এবং ফুলে যাওয়ার দিকেও পরিচালিত করতে পারে।
  • সংবহনে সমস্যা হওয়ার পাশাপাশি, চিৎ হয়ে ঘুমালে তা আবার পিঠে ব্যথাকে বাড়িয়ে তোলে এবং তার সাথে হেমারয়েড বা অর্শ, ভেরিকোজ শিরা এবং শ্বাস কষ্ট দেখা দেওয়ার পিছনেও অবদান রাখে।এটি আবার হজম ক্রিয়াতেও ব্যাঘাত ঘটিয়ে সেটিকে কম কার্যকর করে তুলতে পারে।
  • গর্ভদশার ক্রম অগ্রগতি হওয়ার কারণে, ক্রম বর্ধিত পেটের আকার এবং স্তনের নমনীয়তা আপনার পেটের উপর ভর দিয়ে উপুড় হয়ে ঘুমানোকে প্রায় অসম্ভব করে তোলে।

ঘুমানোর সময় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হওয়ার পরামর্শগুলি

গর্ভাবস্থায় নিরাপদ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় ঘুমের জন্য নিম্নে আরও অন্যান্য কয়েকটি পরামর্শ তালিকাবদ্ধ করা হলঃ

  • আপনার দুই পায়ের মাঝে একটি বালিশ রেখে আপনার পা এবং হাঁটুগুলিকে কিছুটা মুড়ে ভাঁজ করুন এবং আরেকটি বালিশ নিয়ে সেটিকে আপনার পিঠের তলায় রাখুন, এটি আপনার পিঠ এবং পেটে আরও বেশি সমর্থন করবে।
  • যদি আপনার হৃদয় জ্বলন বা গলা বুক জ্বালা অম্বলের অভিজ্ঞতাটি হয়ে থাকে, তখন কিছু নরম ফুলো ফুলো তুলোর বালিশ আপনার পিছনে রেখে আপনার পিঠের উপর ভর দিয়ে প্রায় আধ বসা অবস্থায় শুয়ে থাকাটা এরূপ পরিস্থিতিতে খুব সহায়ক হয়।

ঘুমানোর সময় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হওয়ার পরামর্শগুলি

  • পিঠ ব্যথা থেকে স্বস্তি পেতে একটি বালিশকে আপনার পেটের তলায় রেখে পাশ ফিরে ঘুমালে তা আপনাকে সহায়তা করবে।
  • গর্ভাবস্থার পরবর্তী পর্যায়ে আপনি যদি শ্বাসকষ্টের সম্মুখীন হন তবে পাশ ফিরে শোয়ার চেষ্টা করুন এবং আপনার বক্ষদেশটিকে সমতল থেকে কিছুটা উঁচু করার জন্য আপনার সেই পাশের তলায় একটি বালিশ রাখুন।

সারা রাত ধরে এক ভাবে একই অবস্থায় শুয়ে থাকাটা আরামদায়ক হয় না, সুতরাং এক পাশ থেকে আরেক পাশে মাঝে মধ্যে ফিরুন তবে অবশ্যই বাম পাশে ফিরে শোয়ার পক্ষপাতিত্বটি ভাল ঘুমের একটি সেরা সমাধান।মাঝরাতে যদি আপনার চিৎ হয়ে কিম্বা উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় ঘুম ভেঙে যায়, অযথা আতঙ্কিত হবেন না।শুধু যেকোনও এক পাশে ফিরে শুয়ে পুনরায় ঘুমিয়ে পড়ুন।

একটি মসৃণ গর্ভাবস্থাকে বয়ে নিয়ে চলার জন্য গর্ভবতী মহিলাদের নানাবিধ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন এবং তার সাথেই আবার তাদের জীবনধারাতেও প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলি নিয়ে আসা দরকার।ঘুমের এই সকল নতুন অবস্থানগুলি প্রয়োগের চেষ্টা করা হল সেই সকল পরিবর্তনগুলিরই একটি দিক।এই পর্যায়ে ঘুমের অবস্থানগুলির সাথে নিজেকে মানিয়ে তোলার জন্য দেহের অবস্থানের অবিরত পরিবর্তনগুলি হওয়ার ফলে কয়েক রাত অথবা এমনকি আবার কয়েক সপ্তাহও ঘুমের সময় অস্বস্তিবোধ করাটা স্বাভাবিক।গর্ভাবস্থার ক্রম অগ্রগতির সাথে সাথে এই অবস্থাটি ক্রমশ আরও সহজ হয়ে উঠবে এই আশ্বাসই নিজেকে দিন।আপনার শরীর এবং মনকে কিছুটা সময় দিন, এবং আপনি খুব শীঘ্রই আপনার ঘুমের নতুন এই অবস্থানগুলির সাথে নিজেকে মানিয়ে তুলতে সমর্থ হয়ে উঠবেন।