গর্ভাবস্থাকালে পেঁয়াজ খাওয়া- এটি কি নিরাপদ?

গর্ভাবস্থাকালে পেঁয়াজ খাওয়া- এটি কি নিরাপদ?

একজন মহিলার মধ্যে তার গর্ভাবস্থাকালে কিছু অদ্ভুত ও অস্বাভাবিক খাদ্যের প্রতি আসক্তি জাগতে পারে।যেমন কিছু মহিলা যখন তাদের গর্ভাবস্থায় আইসক্রীম অথবা আচার খাওয়ার প্রতি ব্যাকুল হয়ে ওঠেন তখন অন্যরা হয়ত কাঁচা শাক-সবজিগুলির প্রতি প্রলুব্ধ হয়ে উঠতে পারেন।আজকে আমরা একটিই বিশেষ সবজি- পেঁয়াজ নিয়ে আলোচনা করব- যেটি খাওয়ার তীব্র বাসনা অনেক মহিলার মধ্যেই তাদের গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকে।গর্ভাবস্থায় পেঁয়াজ খাওয়া সাধারণত নিরাপদ হিসেবেই বিবেচিত।এমনকি গর্ভাবস্থাকালীন ডায়েটে পেঁয়াজ সংযোজন করার ফলে তা গর্ভবতী মহিলাকে বহুবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা সরবরাহ করতে পারে।তবে কিছু মহিলা আবার পেঁয়াজ খাওয়ার পর হৃদয় জ্বলন বা অম্বল অথবা শ্বাস কষ্ট অনুভব করতে পারে।আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন এবং আপনার গর্ভাবস্থাকালীন ডায়েটের মধ্যে পেঁয়াজকে অন্তর্ভূক্ত করতে চান তবে সবার আগে আপনাকে এটি অবশ্যই জানতে এবং বুঝতে হবে যে এটি সেবন করা নিরাপদ কিনা!

পেঁয়াজ সম্পর্কিত পুষ্টিতথ্য

পেঁয়াজ হল সবজির অ্যালিয়াম পরিবারের সদস্য, যেগুলি তাদের ঝাঁঝাল কড়া গন্ধ এবং স্বাদের জন্য সুপরিচিত।পেঁয়াজের অ্যান্টি- কোলেস্টেরল, প্রদাহ বিরোধী এবং ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য এগুলি দুর্দান্ত ওষধি গুণও সরবরাহ করে থাকে। পেঁয়াজের মধ্যে রয়েছে একটি উদ্ভিদ ফ্ল্যাভোনয়েড কোরেসেটিন যা সোরিয়াসিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং সাধারণ সর্দি কাশির থেকে সুরক্ষা দিতে পারে।

পেঁয়াজে কম ক্যালোরি থাকে এবং বিভিন্ন খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ ও ভিটামিন G, B-6 এর মত কার্যকর পুষ্টিকর উপাদানগুলিতে পরিপূর্ণ।এছাড়াও পেঁয়াজ আবার আয়রণ, ক্যালসিয়াম, ফোলেট, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামের একটি ভাল উৎস- আর এই সকল পুষ্টি উপাদানগুলি একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য অপরিহার্য। এগুলি ছাড়াও পেঁয়াজে আবার ফোলিক অ্যাসিড এবং ফাইবার থাকে যা স্বাস্থ্যকর নতুন কোষ গঠণ করতে সহায়তা করে।

গর্ভবতী থাকাকালীন আপনি কি পেঁয়াজ খেতে পারেন?

পেঁয়াজ, তা সে কাঁচাই হোক কিম্বা রান্না করা- যেভাবেই খাওয়া হোক না কেন তা একজন গর্ভবতী মহিলাকে বিবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা সরবরাহ করতে পারে।সুতরাং আপনি গর্ভাবস্থায় পেঁয়াজ খেতেই পারেন, তবে সেগুলি আপনাকে সংযমের সাথে পরিমিত পরিমাণে খাওয়ারই পরামর্শ দেওয়া হয়।

গর্ভাবস্থায় পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতাগুলি

সংযমের সাথে পেঁয়াজ খেলে তা গর্ভাবস্থায় আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী প্রমাণিত হতে পারে।এই সবজিটির কিছু উপকারিতাগুলি সম্পর্কে জানতে আরও পড়ুনঃ

1.প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে

পেঁয়াজ ভিটামিন C এর একটি ভাল উৎস যা প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করতে পারে শুধুমাত্র অন্তঃসত্ত্বা মায়েরই নয় তার গর্ভস্থ অনাগত শিশুটিরও।

2.ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে

পেঁয়াজ প্রচুর পরিমাণে জৈব সালফার যৌগতে পরিপূর্ণ যা বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে বিশেষ করে ক্যান্সার হওয়া কারণ হিসেবে দায়ী বর্ধনকারী মুক্ত মূলকগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে কোলোরেক্টাল এবং পেটের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।

3.ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে

ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে

পেঁয়াজ, ভিটামিন A, C এবং E এর একটি ভাল উৎস।এই সকল ভিটামিনগুলিই চুল এবং ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখতে অবদান রাখে।এই সকল ভিটামিনগুলি আবার অকাল বার্ধক্য রোধ করতেও সহায়তা করে।

4.হৃদ ব্যাধির ঝুঁকি হ্রাস করে

পেঁয়াজে পাওয়া কোরেসেটিন ফ্ল্যাভোনয়েড যা কোলেস্টেরলের মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।পেঁয়াজে উপস্থিত অর্গানোসালফার এবং ফ্ল্যাভোনয়েডগুলি আবার গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে হৃদ রোগের ঝুঁকি হ্রাস করার ক্ষেত্রেও উপকারী প্রমাণিত হতে পারে।

5.স্বাস্থ্যকর হজম ক্রিয়া বৃদ্ধি করে

গর্ভাবস্থায় আপনি কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া থেকেও উপকার পেতে পারেন কারণ পেঁয়াজে রয়েছে খাদ্যগত তন্তু যা হজম শক্তির উন্নতি সাধনের জন্য পরিচিত।গর্ভাবস্থায় পেঁয়াজ খেলে তা গ্যাস্ট্রিক আলসারের সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারে, এবং আপনার হজম শক্তির উন্নতি ঘটাতে পারে যা আপনাকে কোষ্ঠকাঠিণ্য থেকে সহজেই মুক্তি সরবরাহ করতে সহায়তা করে।

6.গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রতিহত করতে সহায়তা করে

পেঁয়াজে উপস্থিত সালফার যৌগ এবং কোরেসেটিন রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার দ্বারা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রতিহত করার ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।

7.ভাল ঘুমে প্ররোচিত করতে পারে

পেঁয়াজে রয়েছে প্রোবায়োটিকগুলি যা মানসিক চাপ কমাতে এবং ঘুমের উন্নতি ঘটাতে পারে।পেঁয়াজের মধ্যে আবার ফোলেট থাকে যা দেহে হোমোসিস্টিনের অতিরিক্ত গঠন প্রতিরোধ করে গর্ভাবস্থাকালীন হতাশার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।এই অতিরিক্ত হোমোসিস্টিন দেহে ভাল অনুভূতির হরমোন নিঃসরণকে বিপর্যস্ত করে তোলে যা মেজাজের দোলাচল, মানসিক চাপ এবং হতাশার দিকে পরিচালিত করে।

8.রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে

গর্ভাবস্থায় পেঁয়াজ খেলে তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করতে পারে কারণ পেঁয়াজে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট যা উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কিত সমস্যাগুলি প্রতিরোধ করতে পারে।

গর্ভাবস্থাকালে পেঁয়াজ খাওয়ার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি

যদিও পেঁয়াজ একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য বহুবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা সরবরাহ করে থাকে, তবে সেটি যদি অত্যধিক মাত্রায় খাওয়া হয় তা থেকে কয়েকটি নির্দিষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।অত্যধিক মাত্রায় পেঁয়াজ খাওয়ার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি নিম্নে আলোচিত হলঃ

1.ডায়রিয়া এবং হৃদয় জ্বলন বা অম্বল

গর্ভাবস্থায় খুব বেশি মাত্রায় পেঁয়াজ খাওয়ার ফলে অম্বল হতে পারে আবার মাঝেমধ্যে ডায়রিয়াও দেখা দিতে পারে।

2.অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া

কিছু গর্ভবতী মহিলা আবার পেঁয়াজের প্রতি অসহিষ্ণু হয়ে থাকতে পারেন এবং অত্যধিক মাত্রায় সেবন করার ফলে তাদের মধ্যে অযালার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।কিছু মহিলার আবার খুব বেশি পেঁয়াজ খাওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যাগুলিও হয়ে থাকতে পারে।

পেঁয়াজ একটি স্বাস্থ্যকর সবজি এবং এটিকে গর্ভাবস্থাকালীন ডায়েটে অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে।তবে সেগুলিকে সংযমের সাথে সেবন করার কথা মনে রাখবেন।এর অ্যালার্জি জনিত প্রতিক্রিয়াগুলির ব্যাপারে যদি কোনওরকম উদ্বেগ থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে সর্বদাই একজন ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।একটি সুরক্ষিত, নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা বজায় রাখতে তার চেয়ে বরং আরও ভাল পিঁয়াজকে আপনার ডায়েটে অন্তর্ভূক্ত করার পূর্বে একজন ডাক্তার কিম্বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে নেওয়া!নিরাময়ের চেয়ে সতর্ক পদক্ষেপ অবলম্বন সর্বদাই শ্রেষ্ঠ পন্থা হিসেবে বিবেচিত!