In this Article
- গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়গুলিতে আপনি যে অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকেন
- প্রথম মাসে গর্ভাবস্থার লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি
- গর্ভাবস্থার প্রাথমিক মাসে দৈহিক পরিবর্তনগুলি
- গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে আপনার গর্ভস্থ শিশুর বিকাশ
- গর্ভাবস্থার প্রথম মাসের সহিত জড়িত রোগ নিদান এবং পরীক্ষা নিরীক্ষাগুলি
- গর্ভাবস্থার প্রথম মাসের পরিচর্যার পরামর্শগুলি
- গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে অবলম্বন করা সতর্কতাগুলি–করণীয় এবং করণীয় নয়
- গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে অবলম্বিত অন্যান্য সাবধানতাগুলি
- হবু বাবাদের জন্য পরামর্শ
গর্ভবতী হয়ে ওঠা হল বিশ্বের বৃহত্তম আনন্দগুলির মধ্যে একটি অন্যতম আনন্দ বিশেষ।আমরা এখানে এর বিভিন্ন লক্ষণগুলি,সতর্কতাগুলি এবং পরিচর্যার পরামর্শগুলি সম্পর্কে আলোচনা করব যা আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম মাস জুড়ে আপনাকে বয়ে চলার জন্য কার্যকর ভাবে সহায়তা করবে।
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়গুলিতে আপনি যে অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকেন
আমাদের দৈহিক গঠণতন্ত্র নিখুঁত এবং এর মধ্যে যা কিছুই পরিবর্তনগুলি ঘটে থাকে সেগুলি তাৎক্ষণিকভাবে অনুভব করা যেতে পারে।এই একই জিনিস গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যার অর্থ হল,আপনি গর্ভবতী হওয়ার সাথে সাথেই আপনার দেহও এই একইরকম ইঙ্গিতগুলি আপনাকে দিয়ে থাকে।এই লক্ষণগুলি হালকা ধরনের হতে পারে, যেমন স্তন বেদনা,অবসাদ,ক্লান্তি এবং অসুস্থতাবোধ করা।তবে সকল মহিলার মধ্যেই হয়ত তাদের গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়গুলিতে অবিশ্যম্ভাবীরূপে এই সকল উপসর্গগুলি দেখা দিতে নাও পারে।অধিকাংশ মহিলাদের ক্ষেত্রেই,গর্ভাবস্থার প্রথম মাসের মধ্যে মাসিক বাদ যাওয়া তাদের গর্ভবতী হয়ে ওঠার প্রথম লক্ষণ হয়ে থাকতে পারে।
কিছু মহিলার মধ্যে আবার তাদের গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে হালকা রক্তপাত বা দাগায়িতকরণের মত অভিজ্ঞতা হয়ে থাকতে পারে,যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক বলে বিবেচিত।তবে আপনি যদি কোনওরকম দাগ বা সামাণ্যতম রক্তপাতও লক্ষ্য করে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে যেকোনও ধরনের জটিলতা এড়াতে এ ব্যাপারে আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করা উচিত।
প্রথম মাসে গর্ভাবস্থার লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি
যেহেতু আপনি আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে প্রবেশ করেছেন,আপনি হয়ত গর্ভাবস্থার বহু লক্ষণ এবং উপসর্গগুলিকে অনুভব করে থাকবেন।যদিও এগুলি প্রাক–মাসিকের লক্ষণগুলির মত আরও প্রদর্শিত হতে পারে এবং আপনাকে বিভ্রান্ত করে তুলতে পারে।
এখানে কিছু লক্ষণ দেওয়া হল যেগুলি আপনাকে বুঝতে সহায়তা করবে যে,গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে কি হয়ে থাকেঃ
1. মাসিক হয় নাঃ
মাসিক বাদ যাওয়া হল গর্ভাবস্থারে একটি বৃহৎ সংকেত।আপনি গর্ভধারণ করার সাথে সাথে,আপনার দেহ প্রোজেস্টেরণ হরমোন নিঃসরণ শুরু করে দেয়।আপনার মাসিক বন্ধ হওয়ার জন্য আবার এই হরমোনগুলিও দায়ী।
2. সামাণ্য রক্তপাত বা দাগায়িতকরণঃ
নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়াটির সময় যখন ডিম্বাণুটি নিজেকে জরায়ুতে সংলগ্ন করে,সেই সময় সামাণ্য পরিমাণে রক্তপাত বা হালকা দাগ বা সংকচোন বা টান অনুভূত হয়ে থাকতে পারে।বিশেষত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি হয়ত লক্ষ্য করা যেতে পারে যখন আপনি আপনার যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করে ধোন বা মোছেন।যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে সামাণ্য রক্তপাত বা দাগায়িতকরণ স্বাভাবিক বলেই বিবেচিত হয়ে থাকে,তবে আপনি যদি রক্ত ক্ষরণে বা দাগায়িতকরণে কোনওরকম অস্বাভাবিক পরিমাণ লক্ষ্য করে থাকেন,সেক্ষেত্রে আপনার তৎক্ষণাৎ চিকিৎসাগত সহায়তা নেওয়া প্রয়োজন।
3. স্তনের নমনীয়তাঃ
আপনার স্তনে স্পর্শ করলেই তাতে ব্যথা অথবা নমনীয়তা অনুভূত হতে পারে।এটিতে আপনার প্রাক মাসিক লক্ষণগুলির সহিত বেশ মিল ঝুল রয়েছে।আপনার অ্যারিওলাটি হয়ত আরও গাঢ় হয়ে উঠতে পারে এবং আপনি আবার এমনকি আপনার স্তনের উপর হয়ত শিরাগুলিকেও লক্ষ্য করে থাকতে পারেন।
4. মেজাজের পরিবর্তন হতে থাকেঃ
আপনার শরীরে হরমোনের মূখ্য পরিবর্তনগুলি হতে থাকার কারণে,আপনি হয়ত আপনার মেজাজের দ্রুত পরিবর্তনগুলিকে অনুভব করে থাকতে পারেন।এক মুহূর্তে আপনি হয়ত খুশ মেজাজে থেকে মনে প্রফুল্লতা অনুভব করে থাকতে পারেন,আবার ঠিক তার পরমুহূর্তেই হয়ত বা আবার আপনার মনে বিষাদ আর হতাশাবোধের ছায়া নেমে আসতে পারে।আপনি হয়ত অকারণেই নিজের মধ্যে একটা চাঞ্চল্য লক্ষ্য করতে পারেন।এই সকল কিছুই হল গর্ভাবস্থার খুব সাধারণ লক্ষণ।
5. বারংবার শৌচাগারে গমনঃ
পরিবর্তিত হরমোনগুলি শ্রোণী অঞ্চলের চারপাশে আরও রক্ত প্রবাহ পরিচালিত করে। এটি ভ্রূণের সর্বোত্তম বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য জরায়ু আস্তরণকে ঘন করতে সহায়তা করে।শরীরের বর্ধিত তরলগুলির সামাল দিতে কিডনির আরও বেশি কাজ করা প্রয়োজন।এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি আপনার জরায়ুটিকে হয়ত পূর্ণ বোধ করাতে পারে এবং যার ফলে ঘন ঘন শৌচালয়ে গমন করতে হতে পারে।
6. ক্লান্তিবোধঃ
গর্ভাবস্থায়া আপনার দেহের ভিতরে অনেক কিছুই হয়ে থাকে।অতএব, আপনি হয়ত আপনার নিজের মধ্যে শক্তির অভাব বোধ করতে পারেন এবং স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন।এই ক্লান্তিবোধ হওয়া এবং পরিশ্রান্ত হয়ে ওঠা আবার হয়ত বা আপনাকে নিদ্রাহীনতার দিকেও পরিচালিত করে থাকতে পারে।
7. খাদ্যাভ্যাসগুলিতে পরিবর্তনঃ
বিশেষ কিছু খাদ্যের প্রতি আপনার আসক্তি হয়ত বেড়ে উঠতে পারে,এবং এর বিপরীতে আবার,কিছু খাদ্যের উপর আপনার বিতৃষ্ণাও জেগে উঠতে পারে।আপনার সবচেয়ে পছন্দের খাদ্যটির প্রতি বিরাগভাজন হয়ে ওঠা এবং আপনার সবচেয়ে অপছন্দের খাদ্যটির প্রতি তীব্র আসক্তি দেখা দেওয়া এই সময় আপনার ক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
8. প্রাতঃকালীন অসুস্থতাঃ
অধিকাংশ গর্ভবতী মহিলারাই তাদের গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়গুলিতে হয়ত গা গুলানো বমি বমি ভাব অথবা বমি করার অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে।এটি সম্ভবত গর্ভধারণের তিন সপ্তাহের মধ্যে অনুভূত হয়ে থাকতে পারে।কিছু মহিলা যখন প্রায় সারাটা দিন জুড়েই গা গুলিয়ে একটা বমি বমি ভাব অনুভব করে থাকেন তখন আবার অন্য কিছু গর্ভবতী মহিলা হয়ত দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়েই সেটি অনুভব করে থাকেন।
9. হৃদয় জ্বলন বা গলা বুক জ্বালা অম্বলঃ
গর্ভাবস্থায় গলা বুক জ্বালা অম্বল হওয়া খুব সাধারণ।গর্ভাবস্থার সূচনায় শরীরের অভ্যন্তরে হওয়া বিভিন্ন পরিবর্তনগুলি অ্যাসিডের রিফ্লাক্স এবং গলা বুক জ্বালা অম্বলের জন্য দায়ী।আবার গর্ভাবস্থার পরবর্তী পর্যায়গুলিতেও যখন আপনার গর্ভস্থ ক্রম বর্ধিত শিশুটি অনবরত আপনার অন্ত্র এবং পাকস্থলীর উপর চাপ দেয়,সেই সময়েও আপনার গলা বুক জ্বালা অম্বল হওয়া বেশ সাধারণ ব্যাপার।
10. তীব্র ঘ্রাণেন্দ্রিয়ঃ
গর্ভাবস্থায় বহু মহিলার মধ্যে আবার তীব্র ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের অনুভূতি লক্ষ্য করা যায়।আপনি হয়ত কয়েকটি নির্দিষ্ট গন্ধকে পছন্দ করে থাকতে পারেন যেগুলি আপনি সহজেই শণাক্ত করতে সক্ষম এবং আবার হয়ত বা অন্য কয়েকটির ক্ষেত্রে সেগুলিকে শণাক্ত করতে নাও করতে পারেন অথবা মোটেও পছন্দ করতে না পারেন।
11. অনিয়মিত অন্ত্রের গতিবিধিঃ
শরীরে বর্ধিত প্রোজেস্টেরণের মাত্রা বিভিন্ন পেশীর কার্যকারিতার প্রক্রিয়াগুলিতে পরিবর্তন ঘটায়।এই পরিবর্তিত হরমোনের মাত্রা পেশীগুলির কার্যকারীতাগুলিকে ধীর করে দেয় এবং তার ফলে খাদ্যটি অন্ত্রের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে যায় যা অনিয়মিত অন্ত্রের গতিবিধি অথবা কোষ্ঠকাঠিণ্যের দিকে পরিচালিত করে।
12. মাথা ঘোরাঃ
প্রোজেস্টেরণের উপস্থিতির কারণে আপনার রক্তচাপ কমে যেতে পারে যার ফলে আপনি হয়ত মাথা ঝিম ঝিম অথবা মাথা ঘোরা অনুভব করে থাকতে পারেন।
13. পিঠে যন্ত্রণাঃ
আপনার শ্রোণী অঞ্চল আবৃত করে রাখা লিগামেন্টগুলি আলগা হয়ে যায়।এটি দেহের প্রোজেস্টেরণ হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে।আপনার পশ্চাৎভাগের এই আলগা হয়ে যাওয়া লিগামেন্টগুলির কারণে হয়ত আবার আপনার পিঠে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকতে পারে।
14. ক্ষুধা যন্ত্রণাঃ
গর্ভাবস্থায় ডায়েট একটা গুরুত্বপূরর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং আপনার শরীরও হয়ত আপনাকে এই একই দিকে পরিচালিত করে থাকতে পারে।স্বাভাবিকের তুলনায় আপনি হয়ত নিজেকে বেশি ক্ষুধার্থ হতে লক্ষ্য করতে পারেন এবং প্রায়শই আপনার খাওয়ার আকাঙ্খা দেখা দিতে পারে।
15. মাথা ধরাঃ
আপনার গর্ভাবস্থার যাত্রাপথের সূত্রপাতে,আপনার দেহের অভ্যন্তরে ব্যাপক পরিবর্তন হতে থাকে।বর্ধিত হরমোন,রক্তের পরিমাণ এবং চাপ,আপনার যথেচ্ছ মাথা ধরা বা মাথা যন্ত্রণার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
এগুলি সবই হল প্রাথমিক লক্ষণ সমূহ যেগুলি আপনি হয়ত আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকের সূচনাতে অনুভব করে থাকতে পারেন।এই সকল লক্ষণগুলির পাশাপাশি আপনি আবার হয়ত আপনার দেহে বহুবিধ পরিবর্তনগুলিও সংঘটিত হয়ে থাকতে লক্ষ্য করবেন।
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক মাসে দৈহিক পরিবর্তনগুলি
যদিও আপনার গর্ভবস্থার প্রথম মসে, আপনি হয়ত কোনও সুস্পষ্ট চাক্ষুষ শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করতে নাও পারেন,তবে নিম্নলিখিত শরীরিক পরিবর্তনগুলি হয়ত আপনি দেখতে পাবেনঃ
- বর্ধিত নিঃসরণের কারণে আপনার স্তনের আকার হয়ত বেড়ে উঠতে পারে।
- আপনি হয়ত কিছুটা ফোলাভাব অনুভব করতে পারেন এবং আপনার কোমরের কাছে আপনার পোশশাকগুলি সামাণ্য টাইট অনুভূত হতে পারে।
- আপনার স্তনবৃন্তগুলি এবং অ্যারিওলা অঞ্চলগুলি আরও বড় এবং গাঢ়তে রূপান্তরিত হতে পারে।
- আপনি হয়ত আপনার যোনি স্রাব বেড়ে যাওয়াটা অনুভব করতে পারেন।
- আপনার হয়ত আকস্মিকভাবে সামাণ্য রক্তপাত বা দাগায়িতকরণের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকতে পারে(তবে সকল গর্ভবতী মহিলার মধ্যে এই অভিজ্ঞতা হয় না)
- আপনি আবার হয়ত বা মাথা ঘোরা বা মাথা ঝিম ঝিম করা অনুভব করে থাকতে পারেন।
- আপনি ক্লান্তি এবং অবসন্নবোধ করতে পারেন।
এগুলি হল এমন কিছু পরিবর্তন যেগুলি আপনি আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে হয়ত অনুভব করে থাকতে পারেন।আপনার গর্ভাবস্থার বিশেষ পেটটি প্রদর্শিত হতে আরও বেশ কয়েক মাস সময় নেবে,আর এই কারণেই বেশির ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার প্রথম মাসটিতে আপনার পেটটি দেখে বোঝা যাবে না যে আপনি গর্ভবতী।
গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে আপনার গর্ভস্থ শিশুর বিকাশ
আপনি যখন গর্ভবতী হয়ে ওঠেন,আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে আপনার গর্ভস্থ শিশুটির বিকাশ যে ভাবে হয়ে থাকেঃ
1. নিষিক্তকরণের প্রক্রিয়াটিঃ
যৌন মিলনের 48-72 ঘন্টার যেকোনও সময়ের মধ্যে নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়াটি ঘটে থাকতে পারে।ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু একে অপরের সাথে একত্রিত হওয়ার সাথে সাথে আপনার সন্তানটি জীবনের অস্তিত্বের মধ্যে আসে।এই পর্যায়ে, আপনার শিশুটিকে যথাযোগ্যভাবে জাইগোট হিসাবে ডাকা যেতে পারে। জাইগোটটি খুব দ্রুত গুণে বিকাশ পেতে থাকে এবং তার ফলে আপনার অনাগত শিশুটির বৃদ্ধি এবং বিকাশ শুরু হয়।
2. রোপণ বা প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়াঃ
এইভাবে গঠিত জাইগোটটি ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্য দিয়ে জরায়ুর দিকে যাত্রা শুরু করে।এরপর জাইগোটটি মরুলায় বিভক্ত হয়–প্রায় চতুর্থ দিনের মধ্যে এক গুচ্ছ দৃঢ় কোষে।এর পরবর্তী কয়েক দিনের মধ্যে,মরুলা ব্ল্যাস্টোসিস্টে বিভক্ত হয়ে যায় এবং পুষ্টির জন্য নিজেকে জরায়ুর প্রাচীরে সংলগ্ন করার চেষ্টা করে।এটি নিজেকে প্রতিস্থাপিত করার কারণে,অমরা গঠিত না হওয়া পর্যন্ত ভ্রূণটি পুষ্টি লাভের জন্য কুসুম থলি এবং কয়েকটি রক্তবাহের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়।
3. বিকাশের প্রক্রিয়াঃ
তৃতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহের মধ্যে আপনার সন্তানের হৃদপিণ্ডের স্পন্দন শুরু হবে।যদিও আপনার সন্তানটি কেবলমাত্র একটি মটরশুঁটির আকারেরই হবে,তবে তার বাহু,পা এবং ফুসফুস গঠিত হতে শুরু হবে।শিশুর মুখমন্ডলটিও গঠিত হওয়া শুরু হয়,যার মধ্যে আবার তার কানগুলি,চোখ,মুখ এবং নাকও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
গর্ভাবস্থার প্রথম মাসের সহিত জড়িত রোগ নিদান এবং পরীক্ষা নিরীক্ষাগুলি
যখনই আপনি গর্ভবতী বলে অনুমান করেন,সেই মুহূর্তেই আপনি আপনার ডাক্তারের সাথে একটি সাক্ষাৎকারের পরিকল্পনা অবশ্যই করুন।আপনার গর্ভাবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আপনার ডাক্তারবাবু হয়ত আপনাকে নবিম্নলিখিত রোগ নিদান এবং পরীক্ষা নিরীক্ষাগুলি করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকবেন।
1. চিকিৎসাগত ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা
- আপনাকে হয়ত আপনার শেষ মাসিকের সময়কাল,প্রবাহ এবং ব্যবধান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়ে থাকতে পারে।
- আপনি যদি কোনওরকম জন্মনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন সে সম্পর্কে আপনার ডাক্তারবাবু হয়ত জানতে চাইতে পারেন।
- এক্টোপিক গর্ভাবস্থা,টিউব্যাল ব্যাধি,টিউব্যাল লাইগেশন,টিউব্যাল ম্যানিপুলেশন এবং প্রদাহজনিত ব্যাধির ন্যায় অতীতে গর্ভধারণ সম্পর্কিত যেকোনও জটিলতাগুলির শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে আপনার শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষাগুলি করানোর প্রয়োজন হতে পারে।
- যদি আপনি কোনও প্রজনন চিকিৎসার অধীনে থেকে থাকেন সেক্ষেত্রে,আপনার ধারণ পদ্ধতির বিস্তারিত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হতে পারে।
2. গবেষণাগারের পরীক্ষা নিরীক্ষাগুলি
- hCG হরমোনের উপস্থিতি প্রতিষ্ঠার জন্য আপনার মূত্রের নমুনা সংগ্রহ করা হবে।এর ফলাফলটি প্রত্যয়জনক না হলে একটি রক্ত পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
- hCG হরমোনগুলি ধীরে ধীরে অথবা কম হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য তা মনোযোগের সাথে নিরীক্ষণ করা হয়, যা কোনও এক্টোপিক গর্ভাবস্থাকে নির্দেশ করতে পারে।
- hCG এর উচ্চ মাত্রার অর্থ হতে পারে ক্রমোজমের অস্বাভাবিকতা,গুঢ় গর্ভাবস্থা অথবা একাধিক গর্ভধারণ।
- গর্ভাবস্থায় যে কোনও ধরণের অস্বাভাবিকতা বা ঝুঁকি নির্ধারণের জন্য, সিরাম প্রোজেস্টেরন পরিমাপ করা হবে।
- দৈহিক মাপকাঠিতে প্রোজেস্টেরণের মাত্রাগুলি প্রতিষ্ঠার জন্য ELISA ব্যবহার করা হবে।
3. আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান
একটি গর্ভাবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য একটি আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান পরিচালনা করা খুবই কার্যকর।গর্ভাবস্থাকালীন ডায়াবেটিস এবং ইন্ট্রাউটেরাইন গর্ভাবস্থা স্থাপনে ট্রান্সভ্যাজিনাল আলট্রাসনোগ্রাফিটি খুবই উপকারী।উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি এবং আরও ভাল প্রতিচ্ছবিগুলি নির্ণয় করার কারণে যোনি স্ক্যানগুলি পেটের সাধারণ স্ক্যানগুলির তুলনায় অনেকটা ভাল হয়ে থাকে।
গর্ভাবস্থার প্রথম মাসের পরিচর্যার পরামর্শগুলি
একবার আপনার ডাক্তারবাবু আপনার গর্ভাবস্থার বিষয়টি নিশ্চিতকরণ করার পর, গর্ভাবস্থায় পরিচর্যার নিম্নলিখিত পরামর্শগুলি হয়ত আপনার হাতের মুঠোয় সহায়ক হয়ে উঠতে পারেঃ
1. জন্মপূর্ববর্তী পরিচর্যাঃ
আপনি আপনার সন্তানের জন্মদানের পূর্ববর্তীকালে নেওয়া যত্নের রুটিন দিয়ে শুরু করতে পারেন,যার মধ্যে আপনার ভিটামিন পরিপূরক গ্রহণ করা অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত।ফলিক অ্যাসিড সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিপূরক যা আপনি গর্ভবতী হওয়ার পরিকল্পনা করার সাথে সাথে গ্রহণ করা শুরু করে গর্ভধারণের আগে পর্যন্ত সেটি চালিয়ে যেতে পারেন। ফলিক অ্যাসিড একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করে এবং আপনার শিশুর কোনওরকম নিউরাল টিউব ত্রুটি হওয়ার ঝুঁকিও হ্রাস করে।
2. জন্মপূর্ববর্তী আপনার ডাক্তারের সাক্ষাৎকারগুলিঃ
আপনি আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আপনার শিশুর জন্মপূর্ববর্তীকালীন সাক্ষাৎকারগুলির পরিকল্পনা শুরু করতে পারেন। আপনি উপলভ্য বিভিন্ন বিকল্পগুলির মধ্যে পছন্দ করে বেছে নিতে পারেন কিম্বা তুলনা করতে পারেন এবং আপনার প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী যথাযথ উপযুক্ত একটি নির্বাচন করতে পারেন।সঠিক ডাক্তার নির্বাচন ক্লান্তিজনক বলে মনে হতে পারে কিন্তু এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আপনি এর জন্য আবার আপনার পরিজনবর্গ এবং বন্ধুবান্ধবদের থেকে উপযুক্ত পরামর্শও গ্রহণ করতে পারেন।
3. একজন উপযুক্ত তত্ত্ববধায়ক চয়নঃ
আপনি আবার আপনার জন্য একজন যথাযথ তত্ত্বাবধায়কের চয়ন করা পছন্দ করতে পারেন।পরিজনবর্গ এবং বন্ধু বান্ধবদের থেকে প্রস্তাবনাগুলি এক্ষেত্রে সহায়ক প্রমাণিত হতে পারে।
4. নিজে নিজেই ওষুধ গ্রহণ বা স্ব–নির্ধারিত ওষুধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকুনঃ
আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা না করে কোনও রকম ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধগুলি গ্রহণ না করার পরামর্শই আপনাকে দেওয়া হচ্ছে।কোনওরকম সন্দেহ থাকলে যেকোনও জটিলতার সম্ভাবনা এড়াতে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করুন।
5. স্বাস্থ্য বীমাঃ
বেশিরভাগ কাজের জায়গায়, তাদের কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা পরিকল্পনা রয়েছে যা সন্তানের প্রসবপূর্ববর্তীকালীন যত্ন এবং প্রসবের ব্যয়কে অন্তর্ভুক্ত করে।আপনার মাতৃত্বকালীন সুবিধাগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে HR বা মানবসম্পদ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ আপনাকে দেওয়া হচ্ছে।
যেকনও গর্ভাবস্থা নিরীক্ষণের জন্য তার একটি দিনপঞ্জী তৈরী করা এবং তার শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত তথ্য নথিভুক্ত রাখা একটি ভাল ধারণা।এই উপায়ে কেবল আপনিই নন আপনার তত্ত্বাবধায়কও আপনার গর্ভাবস্থার অগ্রগতি এবং আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যের উপর নজর রেখে তার একটি রেকর্ড রাখতে সক্ষম হবেন।
গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে অবলম্বন করা সতর্কতাগুলি–করণীয় এবং করণীয় নয়
একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা এবং জন্মদানের জন্য আপনার জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।এই পরিবর্তনগুলির মধ্যে কিছু করণীয় এবং করণীয় নয় এমন কিছু অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে যা আপনাকে আপনার গর্ভাবস্থায় সহজভাবে অগ্রসর হতে সহায়তা করবে।
আপনার যেগুলি করা উচিত
নিম্নলিখিত কয়েকটি বিষয় যেগুলি আপনার করা উচিতঃ
1. আপনার তরল গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধিঃ গর্ভাবস্থায় আপনার হাইড্রেট থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ শরীরের জলশূণ্যতা এক্ষেত্রে নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।হাইড্রেট থাকার সর্বোত্তম উপায় হল আপনার প্রতিদিনের পান করা জলের পরিমাণ বৃদ্ধি করা।আপনি একটি অ্যালার্ম বেল ঠিক করতে পারেন যা আপনাকে জল পানের কথা মনে করিয়ে দেবে।বিকল্পরুপে আপনি ফলের রস,সবজির রস কিম্বা স্যুপ পান করার দ্বারা আপনার তরল গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে পারেন।
2. তন্তু জাতীয় খাদ্যের আরও অন্তর্ভূক্তিকরণঃ হরমোনগুলির ক্রম পরিবর্তন ঘটার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।অতএব,আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম মাসের ডায়েটে আপনার আরও তন্তুযুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। শিম্বজাতীয়,সবুজ শাকসব্জী, দানা শস্য এবং অঙ্কুরিত তন্তুযুক্ত খাবার খাওয়া হল এক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিণ্য এড়ানোর ও সুগর্ভাবস্থা বজায় রাখার ভাল উপায়।
3. যোগ ব্যায়ামঃ সুস্থ এবং স্বাস্থ্যকর থাকার জন্য নিয়মিত যোগ ব্যায়াম অনুশীলন করা সবসময়ের জন্যই ভাল ধারণা।যা গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রেও অনুরূপ।গর্ভাবস্থায় আপনার শারীরিক ক্রিয়াকলাপ সঠিকভাবে হওয়ার জন্য আপনার হালকা অনুশীলন করা উচিত।শরীরচর্চায় অযৌক্তিক পরিশ্রম ঘটায় না বলে হাঁটা অনুশীলনের আদর্শ উপায়।তবে অনুশীলনের যে কোনও রুটিন অনুসরণ করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা অবশ্যই উচিত।
4. পর্যাপ্ত ঘুমঃ গর্ভাবস্থায় আপনার দেহ বহুবিধ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়,যা আপনাকে ভীষণভাবে ক্লান্তি এবং অবসন্নবোধ করাতে পারে।সুতরাং আপনার এই সকল হারিয়ে ফেলা শক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য গর্ভাবস্থায় আপনার পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো অত্যন্ত জরুরী।
5. সর্বদা ইতিবাচক থাকুনঃ আপনার শারীরিক এবং মানসিক উভয় স্বাস্থ্যই আপনার অনাগত সন্তানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।সুতরাং ভাল সংগীত শোনা কিম্বা একটি ভাল বই পড়া বা আপনাকে খুশি করে এমন যেকোনও ক্রিয়াকলাপ নিষ্ঠাভাবে অনুসরণ করা উচিত।
6. যোনির স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন; গর্ভাবস্থায় আপনার হরমোনের স্তরগুলির উত্থান পতনের প্রবৃত্তির সাথে সাথে যোনি ক্যানডিডিয়াসিসের মত সংক্রমণগুলির প্রতি আপনি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন। অতএব, এ জাতীয় সংক্রমণ উপশম করতে যোনির সু–স্বাস্থ্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার যেগুলি করা উচিত নয়
এখানে এমন কিছু বিষয় রইল যেগুলি করা থেকে আপনার বিরত থাকা উচিতঃ
1. ক্যাফিন জাতীয় পানীয়গুলি এড়িয়ে চলুনঃ গর্ভাবস্থায় কোলা,চা এবং কফির মত ক্যাফিনযুক্ত পানীয়গুলি গ্রহণ করা উচিত নয়।ক্যাফিন আপনার অনিদ্রা,অম্বল এবং উদ্বিগ্নতার কারণ হতে পারে।এবং এটি আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।এটি আবার আপনার অকাল প্রসব ঘটাতে পারে, বা আপনার শিশুর জন্মের সময় কম ওজনযুক্ত হওয়ার কারণ হতে পারে।
2. অস্বাস্থ্যকর খাবার বর্জন করুনঃ অস্বাস্থ্যকর বা তেল মশলাযুক্ত জাঙ্ক ফু্ডগুলি খেলে তা আপনার ওজনকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে যার ফলে গর্ভাবস্থায় গর্ভাবস্থাকালীন রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।ভাজা এবং তৈলাক্ত খাবারগুলি আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে এবং অস্বাস্থ্যকর ফ্যাটগুলি আপনার বা আপনার শিশুর পক্ষেও ক্ষতিকারক।সুতরাং,এই সকল খাদ্য সামগ্রী গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে এড়িয়ে চলাই বাঞ্ছনীয়।
3. অ্যালকোহল বা মাদক দ্রব্য ত্যাগ করুনঃ যে সকল মায়েরা গর্ভাবস্থার প্রথম মাসেও অ্যালকোহল বা মাদক সেবন করেন তাদের সন্তান প্রসবের সময় ত্রুটিযুক্ত শিশুর জন্মদানের সম্ভাবনা বেশি।এক্ষেত্রে জন্মগতভাবে ত্রুটিযুক্ত শিশুর জন্ম হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
4. ধূম্রপান করবেন নাঃ আপনার গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হবে যদি আপনি ধূমপান করেন।অন্তঃসত্ত্বা যেসকল মহিলারা ধূমপান করেন দেখা গেছে তারা কম ওজনের শিশুর জন্ম দেন অথবা তাদের শিশুদের জন্মগত শ্বাসকষ্ট হয়।শুধুমাত্র সক্রিয় ধূমপান নয় নিস্ক্রিয় ধূমপানও অনাগত সন্তানের সমান ভাবে ক্ষতি করে।
5. আঁটোসাটো পোশাক পরা এড়িয়ে চলুনঃ গর্ভাবস্থায় আপনার দেহ নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলে।এই সময়ে শরীরের আরামের জন্য ঢিলেঢালা পোশাক পরুন।আঁটোসাটো পোশাক পরা এড়িয়ে চলুন বিশেষত তলপেট অঞ্চলে।
6. অতি পরিশ্রমসাধ্য কাজকর্ম করবেন নাঃ গর্ভাবস্থায় নিচু হয়ে ঝুঁকে কোনো ভারী জিনিস তোলা একদম নিষিদ্ধ।এই ধরনের কাজের ফলে আপনার তলপেটে প্রচন্ড চাপ পরে যা আপনার গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি করে।
7. দূরভ্রমণ পরিত্যাগ করুনঃ গর্ভাবস্থার প্রথম মাসটি খুবই কঠিণ সময় তাই এই সময় আপনার দেহের উপর কোনো ধকল দেওয়া যাবে না।দূরে ভ্রমনের পরিকল্পনা বাতিল করাই উচিত।
8. সউনা বা গরম স্নান থেকে বিরত থাকুনঃ আপনি আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে সউনা বা গরম জলে স্নান করা থেকে বিরত থাকুন।আপনার দেহের তাপমাত্রার থেকে বেশী তাপমাত্রায় স্নান আপনার গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতিসাধন করতে পারে।উচ্চ তাপমাত্রা আপনার সন্তানের বৃদ্ধি এবং বিকাশের ক্ষতিসাধন করতে পারে।
গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে অবলম্বিত অন্যান্য সাবধানতাগুলি
উপরে উল্লেখিত করণীয় এবং অকরণীয় বিষয় গুলো ছাড়াও যে ব্যাপার গুলোতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে সেগুলো নিম্নরূপঃ
- প্রথম দুই মাস সঙ্গম করা থেকে বিরত থাকুন অথবা সুরক্ষিত উপায়ে সঙ্গম করুন (এ ব্যাপারে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলে নিন।)
- কোনো রকম ক্ষতিকারক রাসায়নিক ব্যবহার করবেন না।
- এই সময় আপনার রক্তে শর্কারার মাত্রা এবং রক্তচাপ ঠিক রাখা খুব দরকার এজন্য সঠিক আহার গ্রহণ করুন।
- পোষ্যের বর্জ্যের সংস্পর্শে আসবেন না(সেটা বেড়াল,কুকুর, পাখি ইত্যাদি যা কিছু হতে পারে)।
- যখন রান্নাঘরে বা বাগানে কাজ করবেন তখন সাবধানতা অবলম্বন করবেন।দস্তানা পরে কাজ করবার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- যেকোনো ভিডিও টারমিনাল ডিসপ্লে থেকে দূরে থাকুন।
হবু বাবাদের জন্য পরামর্শ
হবু মায়েরা যেমন তাদের গর্ভস্থ সন্তানের ভালোর জন্য যত্ন নেন তেমনি হবু বাবাদেরও সেটা করা প্রয়োজন।এখানে হবু বাবাদের জন্য কয়েকটি পরামর্শ রইল।
1.পেরেন্টাল এবং প্রসব পরবর্তী যত্নের বিষয়ে জ্ঞানঃ গর্ভাবস্থা সম্পর্কে হবু বাবাদের জ্ঞানলাভ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।এটা আপনার সঙ্গীকে পথ দেখাতে সাহায্য করবে। সব থেকে ভাল ব্যাপার হল বিশিষ্ট লেখকদের লেখা থেকে গর্ভাবস্থা সম্বন্ধে জানা।আপনি আবার ইন্টারনেট থেকে সার্চ করে নিতে পারেন।আপনার প্রশ্নাবলী এবং জানার বিষয়গুলো নিয়ে ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করে নিলে সবচেয়ে ভাল হয়।
2.খাতাপত্রের কাজকর্মঃ গর্ভাবস্থার জন্য আপনাকে নানা ধরণের খাতাপত্রের কাজ করতে হতে পারে বিশেষত যদি বিমা করা থাকে।আপনার সাথীর বিভিন্ন লেখালেখিতে আপনি তাকে সাহায্য করতে পারেন। এবং তার অর্থনৈতিক কাজকর্মে সহযোগিতা করতে পারেন।
3.ধৈর্য্যশীল হনঃ গর্ভাবস্থায় হবু মায়েদের মেজাজী, খিটখিটে করে তোলে।এটা খুব স্বাভাবিক যেহেতু এই সময় তাদের দেহে হরমোনের নানা পরিবর্তন ঘটে থাকে। আপনি হয়ত তার অস্বাভাবিক খাবারের বাসনা দেখে অবাক হতে পারেন।তবে আপনাকে এই সময় ঠান্ডা মাথায় ধৈর্য্য সহ আপনার সঙ্গীর সাথে আচরণ করতে হবে। এই কঠিণ রাস্তায় খুব সাবধানে আপনার সাথীকে সঙ্গে করে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।
আপনি গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে যাত্রা শুরু করেছেন আপনাকে আরও আটমাস এই পথে চলতে হবে।আপনি হয়ত ক্লান্ত আর অবসন্ন হয়ে পরবেন কিন্তু আপনার সন্তানকে কোলে নেবার আনন্দ নিশ্চিতভাবেই আপনার সমস্ত কষ্ট ভুলিয়ে দেবে।