জনপ্রিয় মাধ্যমে গর্ভাবস্থার চিত্রাঙ্কণে মাঝেমধ্যে বাস্তব জীবনে মাতৃত্বের সহিত জড়িত বহু জটিলতার থেকে কম দেখানো হয়ে যায়।এই ধরনের একটি উদাহরণ হল ক্ষুধার্থ মায়ের চিত্র,যাঁর প্রচন্ড ক্ষুধাটি সাধারণ একজন মানুষের ক্ষুধার তুলনায় কৌতুকপ্রদ করে বেশী দেখানো হয়েছে।ক্ষুধার্থ মায়েদের যারা পিজা থেকে শুরু করে কাঁচা আচার পর্যন্ত সবকিছুই গোগ্রাসে খেয়ে ফেলেন তাদের এই জনপ্রিয় চরিত্রগুলি দেখার পরে বাস্তব দুনিয়ায় প্রত্যাশী মায়েরা তাদের দ্বারা অনুভূত অভিজ্ঞতার প্রতি হয়ত গুলি খাওয়ার মতই বিস্মিত হয়ে উঠতে পারেন।
অনেকেই ভাবতে শুরু করতে পারেন যে,এই গর্ভাবস্থার বিবেচনায় মহিলাদের প্রাপ্ত বয়স্ক জীবনে এটি হল একমাত্র সময়,যেখানে তারা খাওয়ার প্রতি উৎসাহ পেয়ে থাকেন এবং তারা যা কিছুই চান সেগুলিকে গোগ্রাসে গেলার অনুমতিপত্র তাদের আছে,তাই খাওয়ার প্রতি কোনও অপরাধবোধ এক্ষেত্রে গুরুত্ব পাবে না।তবে,সাধারণত এটি হয় না বরং এর পরেই তাদের মধ্যে ক্ষুধা হ্রাসের আকস্মিক আঘাত আসায় মহিলাটি তখন নিজের মধ্যেই হয়ত পরিলক্ষিত করতে পারেন যে তাদের একদা অত্যন্ত পছন্দের খাদ্যগুলিকে দেখলে ও সে্গুলির গন্ধ তাদের নাকে যাওয়া মাত্রই তাদের গা গুলিয়ে বমি পেতে পারে।
যদিও আপনার একজন প্রত্যাশিত মা হিসাবে আপনার বাহ্যিক চেহারায় কোনও পরিবর্তন প্রথম ত্রৈমাসিকের কারণে নাও হতে পারে , তবে শিশুর বিকাশের ভিত্তি শরীরের মধ্যে স্থাপিত হচ্ছে।হরমোনীয় পরিবর্তনগুলি সংঘটিত হতে থাকে এবং এগুলি সরাসরি মায়ের মধ্যে মর্নিং সিকনেসের কারণ হয়ে ওঠে।প্রথম ত্রৈমাসিকের মধ্যে, প্রত্যাশিত মায়েদের ওজন প্রতি সপ্তাহে প্রায় এক পাউন্ডের কাছাকাছি বৃদ্ধি পায় এবং ভ্রূণের ছোট ছোট প্রয়োজনগুলিকে সমর্থন করার জন্য তারা যথেষ্ট সমর্থ হবে।
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে,মহিলাদের মধ্যে সাধারণত মর্নিং সিকনেসের সূত্রপাতের সাথে ক্ষুধামান্দ্য হয়ে থাকে।এটি অনুমান করা হয় যে,মোটামুটি প্রায় 70-85% গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যেই ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়,যা চলচিত্র এবং প্রদর্শনীগুলিতে প্রদর্শিত গর্ভবতী মহিলাদের চিত্রাঙ্কণের সহিত অসদৃশ।
মায়ের দ্বারা গৃহীত কোনও প্রকার ক্ষতিকারক খাদ্য পদের থেকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভ্রূণকে রক্ষা করার একটি সহজাত পদ্ধতি রূপে মায়ের মধ্যে মর্নিং সিকনেসের বিকাশ হয়ে থাকে।এই কারণে প্রথম ত্রৈমাসিকে মায়ের মধ্যে ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়।ইস্ট্রোজেন এবং গর্ভাবস্থাকালীন হরমোনের সাথে আবার hCG -এর বৃদ্ধি পাওয়া গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেওয়ার উপরে অবদান রাখে।এই পরিবর্তনগুলি একজন মাকে অত্যন্ত সংবেদনশীল করে তোলে তার চারপাশের গন্ধের প্রতি এবং গা গোলানো ও বমন-উদ্রেকের প্রতি তাকে আরও বেশী সমর্থ করে তোলে।কিছু মহিলা আবার খাবারে কোনও স্বাদ পান না,তাদের সম্পূর্ণ জিহ্বার মধ্যে একটি ধাতব স্বাদের সহিত তাদের মুখ এমনই বেস্বাদ হয়ে ওঠে যে তাদের পছন্দের খাবারগুলির প্রতিও তারা বিরূপ হয়ে ওঠেন।
যদিও কিছু ক্ষেত্রে ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া সুবিধাজনক,তবে এটির কারণে আবার মায়ের পুষ্টি চাহিদাগুলি অবহেলিতও হতে পারে।এই চাহিদাগুলির প্রতিবিহিত করা দরকার এবং এর উপযুক্ত প্রতিকারগুলি হলঃ
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকটি সাধারণত প্রথম ত্রৈমাসিকের মত অতটা খারাপ নয়,কারণ বেশীর ভাগ মহিলারাই এই সময়ে তাদের মধ্যে পুনরায় ক্ষিদে ফিরে পান।এই সময়টিকেই গর্ভাবস্থার সব থেকে সেরা পর্ব হিসেবে ব্যাপকভাবে গণ্য করা হয়ে থাকে,যেহেতু এই সময় আপনি সকল সুবিধাগুলি পেয়ে থাকেন,যার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে বুভুক্ষিত ক্ষুধা,উজ্জ্বল ত্বক,যদিও এখনও শিশু-বাম্পটি গড়ে ওঠে না।তবে,কিছু ক্ষেত্রে এটি সবসময়েই সহজেই বয়ে চলা নৌযান নাও হতে পারে,কারণ আপনি হয়ত নিজেকে সবকিছু খাওয়ার ক্ষেত্রে অসমর্থ হয়ে উঠতে দেখতে পারেন এবং প্রস্রাব করার সময় অনেক সময়েই অবনমিত হতে নাও পারতে পারেন।
গর্ভাবস্থাকালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় হিসাবে ব্যাপকভাবে বিবেচিত হয়, কারণ এই সময়ের মধ্যেই ভ্রূণের প্রধান বিকাশ ঘটে থাকে।অতএব, ভ্রূণের স্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ আবশ্যক। এই সময়ের মধ্যে সন্তানের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে আপনাকে দু’জনের জন্য খেতে হবে।মায়েদের ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া আদর্শ নয়, কারণ শিশুর বিকাশ সরাসরি এর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।
এই পর্যায়ে,সাধারণত হজম প্রক্রিয়ার ধীর গতির কারণে গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়।তলপেট অঞ্চলে জরায়ুর আকার ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে,এটি পাকস্থলী এবং পাচন তন্ত্রের উপর ক্রমশ চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।যার ফলে কোষ্ঠকাঠিণ্য এবং ক্ষুধামান্দ্য হয়ে থাকে।এছাড়াও আবার এই সময় মায়ের দেহে প্রোজেস্টেরণ হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়,যার ফলস্বরূপ গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিণ্য দেখা দেয় এবং খিধেবোধ হয় না।
তৃতীয় ত্রৈমাসিকের মধ্যে আপনি দেখতে পাবেন যে একটি ক্রমবর্ধিত পেট এবং বুভুক্ষিত ক্ষুধার সহিত দ্রুত আপনি একজন সম্পূর্ণ প্রকৃতির গর্ভবতী মহিলা হয়ে উঠেছেন।তবে এর অর্থ এই নয় যে আপনি আপনার হৃদয়গ্রাহী উপাদানগুলি সব খেতে পারবেন,কারণ দেখতে পাবেন যে যদিও আপনি ক্ষুধার্থ তবুও আপনার ক্ষুধা ক্রমশ অসম্ভব কমে গেছে।তবে ভাল অংশটি হল এই যে,সাধারণত এই সময় থেকে আপনার গা গুলানো ও বমি বমি ভাবটি উধাও হয়ে যায় এবং সেই জায়গায় প্রতিস্থাপিত হয় একটি বৃহৎ পেট।
গর্ভাবস্থার এই পর্যায়ে,আপনার ক্ষুধামান্দ্যের কারণ হয়ে উঠতে পারে আপনার বৃহৎ পেট।এই সময়ের মধ্যে জরায়ুটি বৃদ্ধি পেয়ে আকারে বৃহৎ হয়ে ওঠে এবং অন্যান্য অঙ্গাণুগুলিকে তাদের ক্রিয়া করার জন্য খুব কম জায়গা ছাড়ে।পাকস্থলি এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের মত অঙ্গাণুগুলিকে তাদের স্বাভাবিক জায়গা থেকে ঠেলে বের করে দেয় এবং তার পরিণতিতে তারা স্বাভাবিক ভাবে কাজ করতে পারে না।
এই স্থান চ্যুতির অপর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াটি হল হৃদয় জ্বলন বা অম্বল গলা বুক জ্বালা এবং মশলাদার ও অম্লতাপূর্ণ খাবারগুলির প্রতি আপনার খাদ্য অনীহা জাগিয়ে তোলে।প্রোজেস্টেরন-প্ররোচিত কোষ্ঠকাঠিন্য মায়ের মধ্যে থেকে যায় এবং তা ক্ষুধা হ্রাসেও বিশেষ অবদান রাখে।এটি হল এই সকল উপাদানগুলির একটি সমন্বয় যা একজন মাকে তার তৃতীয় ত্রৈমাসিকে তার হৃদয়গ্রাহী উপাদান্গুলির দ্বারা পূর্ণ হওয়ার থেকে অক্ষম করে তোলে।
প্রারম্ভিক গর্ভাবস্থায় ক্ষুধামান্দ্য যতটা না হয়ে থাকে এটি তার থেকেও বেশি সাধারণ ব্যাপার।এই অনুভূতিটি গর্ভাবস্থার যেকোনও সময়েই হয়ে থাকতে পারে এবং সাধারণত এটি হয়ে থাকে গর্ভধারণের চার সপ্তাহের মধ্যে।যে সকল খাবারগুলি পূর্বে এক সময় সবচেয়ে প্রিয় ছিল এই সময় সেগুলিই সবচেয়ে অপছন্দের তালিকায় চলে যায়,এটি হয়ে থাকে হরমোনের বহু পরিবর্তনের কারণে,যা গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার শরীরেই হয়ে থাকে।আপনার শরীর কি বলে তাই শুনুন এবং ক্ষুধার ইঙ্গিতগুলিতে সাড়া দিন এবং গর্ভাবস্থার প্রতিটি পর্যায়ে আপনার দেহের প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টিই আপনার পাওয়া নিশ্চিত।