গর্ভাবস্থায় চিংড়ি সেবন- এটি কি নিরাপদ?

গর্ভাবস্থায় চিংড়ি সেবন- এটি কি নিরাপদ?

আপনার মনে কি কিছু সুস্বাদু চিংড়ি খাওয়ার বাসনা? বাটার গার্লিক প্রন, চিংড়ি কারি, শসে ডুবিয়ে স্টারফ্রাইড চিংড়ি, চিংড়ি বিরিয়ানি, মরিচ চিংড়ি…. তালিকাটি ক্রমশ এগিয়েই চলে।চিংড়িগুলি হল সামুদ্রিক প্রাণী জগতের ক্রাস্টেশিয়ান গ্রুপের অন্তর্ভূক্ত এবং বেশ সুস্বাদু।তবে চিংড়ির থেকে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ায় ভুগে থাকার কারণে গর্ভাবস্থায় চিংড়ি খাওয়া নিরাপদ কিনা তা অনেকের মধ্যেই বিস্ময় সৃষ্টি করে।

অন্তঃসত্ত্বাকালে চিংড়ি খাওয়া কি নিরাপদ?

যদিও গর্ভাবস্থায় কিছু সামুদ্রিক খাদ্যকে এড়িয়ে চলা প্রয়োজন, তবে চিংড়ি সাধারণত সে দিক থেকে নিরাপদ যখন সেটি অদূষিত উৎস থেকে আহৃত হয় এবং ভালভাবে যথাযথভাবে রান্না করা হয়।যাইহোক, তবে গর্ভাবস্থায় আপনার খাদ্য তালিকায় সংযুক্ত করা প্রতিটি খাদ্যের ক্ষেত্রেই সংযমই হল মূল ব্যাপার।অত্যধিক মাত্রায় চিংড়ি সেবন কিম্বা চিংড়ি খাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় কয়েকটি নির্দিষ্ট সাবধানতা অবলম্বন না করলে তা গর্ভাবস্থায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।কোনও ক্ষেত্রে কোনও রকম সন্দেহের অবকাশ থাকলেই, গর্ভাবস্থায় যেকোনও খাদ্য সেবন করার পূর্বে সর্বদা আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ গ্রহণ করুন।

চিংড়ি খাওয়ার স্বাস্থ্যকর উপকারিতাগুলি

সুস্বাদু তো বটেই, তা ছাড়াও চিংড়ি আবার হবু মায়েদের জন্য অপরিহার্য একাধিক ভিটামিন এবং খনিজতে ভরপুর।

প্রোটিনে পরিপূর্ণ

চিংড়ি গর্ভাবস্থায় প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস।প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যগুলি রক্ত শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিসকে নিরীক্ষার মধ্যে রাখতে সহায়তা করে।ক্যালোরি এবং ফ্যাট জাতীয় উপাদান এর মধ্যে কম মাত্রায় থাকায় চিংড়ি আপনাকে সুস্থ মাংস পেশী গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।

ভিটামিনে সমৃদ্ধ

চিংড়ি হল ভিটামিন D, ভিটামিন B-12, আয়রণ, জিঙ্ক, কোলাইন, আয়োডিন, কপার এবং ফসফরাসের সমৃদ্ধ উৎস।এটি অনাক্রম্যতার উন্নতি সাধনে, থাইরয়েডের কার্য এবং মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য অপরিহার্য।এছাড়াও এটি আবার হাড় এবং দাঁতের বিকাশের ক্ষেত্রেও বেশ সহায়ক।

কম ক্যালোরি

গর্ভাবস্থায়, পর্যাপ্ত পুষ্টি পাওয়া এবং একটা স্বাস্থ্যকর ওজন লাভ করা গুরুত্বপূর্ণ। চিংড়িগুলি সাধারণত কম ক্যালোরি যুক্ত হয় এবং তাই, অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট গ্রহণ করা ব্যতীতই একটি পুষ্টিকর সংযোজন হিসেবে চিংড়ি একটি স্বাস্থ্যকর পছন্দ হয়ে ওঠে।

ওমেগা 3 তে সমৃদ্ধ

এই ফ্যাটি অ্যাসিডটি চিংড়ির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি ভ্রূণের মধ্যে চোখ এবং স্নায়ুর সংযোগ বিকাশে সহায়তা করে।

গর্ভদশায় কি চিংড়ি খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত?

যেমনটি আমরা আলোচনা করেছি, সেই মতই গর্ভাবস্থায় চিংড়ি খাওয়ার বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে।তবুও এটি পরামর্শ দেওয়া হয় যে, চিংড়ি অথবা অন্য যেকোনও সামুদ্রিক খাদ্যগুলিকে আপনি গ্রহণ করার আগে সেগুলির সাথে যুক্ত ঝুঁকিগুলির ব্যাপারে একবার আপনার ডাক্তারবাবুকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে তাঁর পরামর্শ নিয়ে নিন।আপনি যদি এখনও অনিশ্চিত থাকেন, তবে অল্প পরিমাণ দিয়ে সেটি শুরু করুন এবং দেখুন আপনার শরীর তাতে কীরকম প্রতিক্রিয়া করে।তারপর আপনার খাদ্য তালিকাটি সেই মত পরিবর্তন করতে পারবেন।যেকোনও ক্ষেত্রেই সংযম করার অভ্যাসটি অনুশীলন করুন এবং কোনও খাদ্যই একেবারে পরিত্যাগ করবেন না।আপনার শরীরে যদি সহ্য হয়, চিংড়ি আপনার এবং আপনার সন্তান উভয়ের জন্যই বেশ স্বাস্থ্যকর এবং ভীষণ পুষ্টিকর হয়ে উঠতে পারে।

কিছু গর্ভবতী মহিলা আবার তাদের গর্ভাবস্থায় হয়ত চিংড়ি থেকে অ্যালার্জির ঝুঁকির মুখোমুখি হতে পারেন।গর্ভাবস্থায় চিংড়ি খাওয়ার সাথে সম্পর্কিত কিছু ঝুঁকি এবং আপনার নজরদারির মধ্যে থাকা প্রয়োজন কিনা সে ব্যাপারে কিছু তথ্য এখানে দেওয়া হলঃ

  • কোলেস্টেরলঃ চিংড়ি হল কোলেস্টেরলের সমৃদ্ধ একটি উৎস।আপনার যদি উচ্চ কোলেস্টেরল থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার এবং আপনার অনাগত শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য চিংড়ি ভাল নাও হতে পারে।
  • অ্যালার্জিঃ এই একই জাতীয় খাবারে যদি আপনার মধ্যে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে চিংড়ি থেকে দূরে থাকারই পরামর্শ আপনাকে দেওয়া হয়।এগুলি থেকে দেখা দেওয়া প্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে পেটে ব্যথা, চুলকানি, র‍্যাশ দেখা দেওয়া এবং প্রদাহ অন্যতম।
  • মার্কারি বা পারদের বিষক্রিয়াঃ আপনি যদি দূষিত জলের উৎসগুলি থেকে প্রাপ্ত চিংড়িগুলি সেবন করে থাকেন, সেক্ষেত্রে জল দূষণকারীগুলি এবং বিষাক্ত রাসায়নিকের বর্ধিত মাত্রা আপনার স্বাস্থ্যজনিত সমস্যাগুলি সৃষ্টি করতে পারে। চিংড়িগুলি তাদের দেহের মধ্যে দূষকগুলিকে শোষণ করে নেয়।সামুদ্রিক চিংড়িগুলিতে উচ্চ মাত্রায় মার্কারি থাকতে পারে যা শিশুর স্নায়ু তন্ত্রের বিকাশে ভীষণ খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।দূষিত নদী বা হ্রদের জলে উচ্চ মাত্রায় পলিক্লোরিনযুক্ত বাইফেনল থাকে এবং তা আপনার এবং আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যজনিত ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
  • সংক্রমণঃ এটি সর্বদাই সুপারিশ করা হয় যে, আপনি গর্ভবতী থাকাকালীন সবসময়েই ভালভাবে রান্না করা চিংড়ি গ্রাস করুন।কাঁচা অথবা আর্ধ রান্না করা চিংড়িগুলি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিকারক এবং রক্ত বিষক্রিয়া, খাদ্য বিষক্রিয়া অথবা আপনার সন্তানের ক্ষেত্রে অন্যান্য ক্ষতিকারক সংক্রমণগুলির মত একাধিক স্বাস্থ্য জনিত ঝুঁকিরগুলির সাথে সম্পর্কিত।

গর্ভদশায় কি চিংড়ি খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত?

গর্ভাবস্থাকালে চিংড়ি খাওয়ার পরামর্শগুলি

  • সর্বদা বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য উৎসগুলি থেকেই চিংড়িগুলি ক্রয় করুন।সেগুলি বেশ পুরু এবং উজ্জ্বল হওয়ার ব্যাপারটিকে নিশ্চিত করুন, বর্ণহীন চিংড়ি বা সেগুলি সঙ্কুচিত চোখ বিশিষ্ট হলে কিনবেন না।
  • শুসির ন্যায় কাঁচা সামুদ্রিক খাদ্য পণ্যগুলি গর্ভাবস্থায় খাওয়া এড়িয়ে চলুন।চিংড়ির শুঁটকিগুলি গর্ভাবস্থায় সেবন করার পক্ষে ঠিকঠাক যদি সেগুলি ভালভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে ঠিক মত রান্না করা হয়ে থাকে।
  • আপনার যদি তাজা চিংড়ি সেবনের কোনও সুযোগ না থাকে, তবে ভাল মানের হিমায়িত কোনও একটিকে বিকল্প হিসেবে বেছে নিন এবং রান্না করার আগে সেগুলিকে ডিফ্রস্ট করে নিন।
  • রান্না করার আগে সেগুলিকে যথাযথভাবে পরিষ্কার করে নেওয়াকে নিশ্চিত করুন।আপনি সেগুলিকে খোসা ছাড়া বা খোসা সুদ্ধই রান্না করতে পারেন। শিরাগুলির সহিত কিম্বা সেগুলিকে ছাড়িয়ে নিয়ে রান্না করাটা হল আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ।
  • ভালো ভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে সেগুলিকে যথাযথভাবে রান্না করুন।ভাল ভাবে রান্না করা চিংড়ির লক্ষণগুলি হল তার খোসাটি হবে লাল এবং মাংসল অংশটি হবে মুক্তো সাদা অথবা অস্বচ্ছ।রান্না করার আগে আপনি সেগুলিকে 10 মিনিটের জন্য লবণ মেশানো হালকা গরম জলের বাটিতে ডুবিয়ে ভিজিয়ে রাখতে পারেন।
  • রেস্তোরায় পরিবেশিত সামুদ্রিক খাদ্যগুলি এড়িয়ে চলুন।
  • সম্পূর্ণরূপে রান্না না হওয়া পর্যন্ত সেগুলিকে ভাপান কিম্বা সাঁতালাতে থাকুন।সেগুলির মাংসল অংশটি বেশ দৃঢ় এবং বাউন্স হওয়ার মত ব্যাপারটিকে নিশ্চিত করুন।

গর্ভাবস্থায় যতক্ষণ সংযমের সাথে চিংড়ি সেবন করা হয় এবং নির্ভরযোগ্য উৎসস্থল থেকে সেগুলিকে আহৃত হয়ে থাকে, কোনওরকম সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।আপনি যদি এগুলি থেকে কোনওরকম অস্বস্তি কিম্বা অ্যালার্জির লক্ষণ অনুভব করেন, অবিলম্বে আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন।